বিশ্বাসের অপর নাম সৃষ্টিকর্তা
বিশ্বাসের অপর নাম সৃষ্টিকর্তা ।আর আমি সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করি।কেন জানেন?তাহলে ঘটনাটা বলি।
কয়েকটা বছর আগের কথা।চাকরি পেয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেছি।হঠাৎ করেই আমার বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল।এতটাই বাড়াবাড়ি হল যে হসপিটালে অ্যাডমিট করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।বড় বড় হসপিটাল গুলোতে অ্যাডমিট করলে পকেটটাও দেখতে হয়।বলতে গেলে মোটা টাকার খেলা।সে যাইহোক,যেখানে সেখানে তো আর বাবাকে অ্যাডমিট করাতে পারি না।ঠিক করলাম নারায়ণাতেই অ্যাডমিট করব।কিন্তু সেই মুহুর্তে হাত খালি।সবে মাত্র কয়েক মাস হয়েছে তখন চাকরিটা পেয়েছি।যতটা আছে তা যৎ সামান্যই বলা যেতে পারে।মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি যত টাকাই লাগুক,বাবার চিকিৎসা করাতেই হবে।ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেব,বাবাকে ভালো করতেই হবে।কিন্তু লোন বললে তো আর সঙ্গে সঙ্গেই হয় না।দু তিনদিন তো টাইম লেগেই যায়।ব্যাঙ্কে যেতে হবে,কাগজ পত্র রেডি করতে হবে।তারপর টাকা হাতে আসবে।কিন্তু সেই মুহূর্তে টাকাটা অন্য কোথা থেকে ধার নিতে হবে আমাকে।এমার্জেন্সি পার্পাস।দু তিনজনকে কল করে বলতে শুরু করেছি।মানে যার থেকে যতটুকু ধার পাওয়া যায় আর কি।
তবে দেখবেন আপনি যখন বিপদে পড়ে কারো কাছ থেকে হেল্প চাইবেন,তখন কারো থেকেই পাবেন না।তখন যেন সবাই আপনার মত বিপদে পড়ে আছে।পড়ে না থাকলেও আপনার দুরবস্থার মধ্যে তার দুরবস্থার কথা শোনাবেই।আমার ক্ষেত্রেও অবশ্য তার ব্যতিক্রম হয় নি।আমিও খুব চিন্তায় পড়লাম।এদিকে বাবাকে নিয়ে যেতে হবে।অ্যাম্বুলেন্সকে কল করতে অ্যাম্বুলেন্স চলে এসেছে।আমি ভাবলাম আর দেরি করে লাভ নেই,আগে তো গিয়ে পৌঁছাই,তারপর না হয় দেখা যাবে।মাথার ওপর ভগবান ভরসা।উনি তো আছেন।দেখিই না কি হয়?
বাবার শরীর অসুস্থ দেখে আশে পাশের বাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন বাবাকে দেখতে এসেছেন।ইতি মধ্যে একজন প্রতিবেশী আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন,
-বাবাকে কোন হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছ?
-ঠিক করেছি তো নারায়ণাতেই নিয়ে যাব।
পকেট থেকে টাকাটা বের করে বললেন,
-তিরিশ হাজার আছে।রাখো।
আমি মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক বললাম,
-আপনি...?
-আরে টাকাটা ধরো।তোমার কাজে লাগবে।বাবার চিকিৎসা করাও আগে।
-আপনাকে যে কি বলে...
উনি আর কথা বলতে দিলেন না।বললেন,
-ও সব কথা পরে বলবে।আমি মানুষ চিনি।বাবাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাও।
সেদিনের ওই তিরিশ হাজার টাকা আমার কাছে তিরিশ কোটি টাকার চেয়েও বেশি মূল্যবান ছিল।জানিনা ওই প্রতিবেশী ভদ্রলোক বুঝলেন কি করে যে আমার সত্যিই টাকার দরকার ছিল?সেদিন যে কতটা উপকার করে ছিলেন উনি সেটা এক মাত্র আমিই বুঝে ছিলাম।
আমার বাবা একটা কথা প্রায়ই বলতেন,
তুমি যদি কারো জন্য ভালো কাজ করো,কারো উপকার করো,সে যদি তোমার জন্য কিছু নাও করে তবে তুমি দুঃখ পাবে না।তুমি ভালো কিছু করলে তোমার ভালো করার জন্য সে না করলেও কেউ না কেউ আসবেই।ভগবান ওপরে বসে সব দেখেন।তিনি নিজে আসেন না।তিনি কাউকে না কাউকেই পাঠিয়ে দেবেন।
বাবার কথাটাই সেদিন সত্যি হয়েছিল।আসলে মানুষই ভগবান।তাই বিশ্বাসটা রাখতে হয়।বুঝলাম ভগবান মানুষের মধ্যেই আছেন।তা না'হলে সেদিন ওই মানুষটাই বা আসবেন কেন সাহায্য করতে?উনি আমার আত্মীয় ছিলেন না,অথচ বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে সব থেকে বড় আত্মীয় সেদিন উনিই ছিলেন।আমার বাবা ভীষণ সৎ মানুষ ছিলেন।সৎ মানুষের পাশে বোধহয় আর একজন সৎ মানুষ এসেই দাঁড়ায়।
আজ এত গুলো বছর পরেও সেই বিশ্বাস নিয়ে আজও চলছি।বাবা আজ আর নেই।অথচ বাবার কথা গুলো মনে প্রাণে মেনে চলছি।অনেকেই ঠকিয়ে দেয়,তবে সততা আর বিশ্বাস কখনো হারাই নি।বিশ্বাসটাই বড় পুঁজি। আমার এই বিশ্বাসটার নাম ভগবান।
কলমে:সরজিৎ ঘোষ। Sarajit Ghosh
lead image from unsplash.com
You are writing in Bangla!