"মীনা,রাজু ও মিঠু"

0 20
Avatar for MasudRanaPro
4 years ago

মীনা,রাজু ও মিঠুর গল্প 🟥 কি তাদের আসল পরিচয়?

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°° °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

আমি বাবা-মায়ের শত আদরের মেয়ে

আমি বড় হই সকলের ভালোবাসা নিয়ে ...

আশি বা নব্বইয়ের দশকের প্রজন্মের কাছে লাইন দুটি বেশ সুপরিচিত।তাই ক্ষণিকের জন্য নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

তখন এর মানে একটাই বুঝতাম যে,বিটিভিতে মীনা কার্টুন শুরু হয়ে গেছে।

তখন আমরা কম বেশি সবাই এই কার্টুনটি দেখেছি কিংবা না দেখলেও নামটা অন্তত শুনেছি। কিন্তু এই কার্টুনের পেছনে যারা ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন তাঁদের কথা আমরা কজনই বা জানি।

আজ ২৪ শে সেপ্টেম্বর,মীনা দিবস।১৯৯৮ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এই দিনটিকে দেশব্যাপী মীনা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।

মীনা’-র পরিবারে সদস্যরা হচ্ছে মা-বাবা, ভাই রাজু, বোন রাণী, দাদী, গাভী লালী ও পোষা টিয়াপাখি মিঠু।

আজকের এই লেখায় আপনাদের সেই সব মানুষদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যারা তাদের সুমধুর যাদুমাখা কন্ঠ দিয়ে আমাদের ছেলেবেলাকে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন।

মীনা কার্টুনের রাজ্যে একটা দীর্ঘ যাত্রার জন্য তৈরিতে তো‌ সবাই....👉

🟥 মীনা : 🟥

মীনা কার্টুনের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম হল 'মীনা'। নয় বছর বয়সী মীনা সমাজের নানান অসঙ্গতি,কুসংস্কার দূরীকরণে সবাইকে সচেতন করে থাকে। বাবা-মার সবচেয়ে আদরের

এই মীনা চরিত্রের ভোকাল আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন "প্রমিতা গাঙ্গুলি"।

সেই সময়ের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন,"তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি আমি। ২০০৫ সাল। মীনার কণ্ঠের জন্য অডিশন দিলাম। ভাবতে পারিনি, আমাকেই নির্বাচন করবে।খুব ভালো লেগেছিল আমার প্রিয় একটা চরিত্রে কণ্ঠ দিতে পারব ভেবে"।

"খুব সম্ভবত আমার বলা প্রথম ডায়ালগটি ছিল—'ও রাজু ইশকুলে যাইবা না? ওহ্ মিঠু।'একটা পর্যায়ে আমাকে সিলেক্ট করা হলো। কী যে খুশি হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারব না। এরপর একে একে ১১টি পর্বে কণ্ঠ দিয়েছি। এর মধ্যে আছে ‘আজব দেশ’, ‘বন্যায় নিরাপদ থাকি’, ‘জাদুর পাথর’, ‘অটিজম’ ইত্যাদি।

আমি পড়তাম উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। স্কুলে গেলেই বন্ধুরা বায়না ধরত—এই একটু মীনার মতো করে কথা বল। এটা বেশ মজার ছিল।

একদিনের রেকর্ডিংয়ে গোল বেধেছিল। মীনার কান্নার একটি দৃশ্য ছিল সেদিন। আমি কোনোভাবেই তা ঠিকঠাক করতে পারছিলাম না। পরে পেছন থেকে কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর তারপর আমি কেঁদে ফেলি। হাসির দৃশ্যেও আমাকে কাতুকুতু দিয়ে হাসানো হয়েছে।" 😁

এই করোনাকালে মীনা কার্টুনের সচেতনতামূলক একটি পর্বে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।

ছোট্ট সেই 'প্রমিতা' এখন কিন্তু আর ছোট নেই। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইইই(EEE) তে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন এবং পরবর্তীতে ফিন্যান্সের উপর এমবিএ সম্পন্ন করেন। একটা সময় তিনি শিক্ষকতাও করেছেন।বর্তমানে তিনি সংসার জীবনে থিতু হয়েছেন।

ছোট্ট আদুরে প্রমিতা গাঙ্গুলী'র জাদুকরী কন্ঠের প্রশংসা করতে গিয়ে ‌আমিনুর রহমান তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে বলেন,"ইউনিসেফের সাথে আমার সংস্থা এভিকমের অডিওভিজ্যুয়াল প্রোগ্রাম নির্মাণের চুক্তির আওতায় অডিও অংশ তৈরি শুরু করি।

সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন চরিত্রগুলির কন্ঠ যা ইতিপূর্বে ভারতীয় শিল্পীদের দিয়ে করানো হয়েছিল সেগুলো একইরকম কন্ঠের হতে হবে। শুরু হলো ব্যাপক অডিশন।মীনার কন্ঠের মতো একজনের কন্ঠ কানে ভাসতো। সে আমারই ক্যামেরা গুরু প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক বেবী ইসলামের ছোট শ্যালিকার মেয়ে প্রমিতা গাঙ্গুলী।

অনেক কিশোর কিশোরীই বড় হয়ে যাওয়া কিংবা বয়ঃসন্ধিকালের জন্য কন্ঠ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার জন্য কিছুদিন পর বাদ পড়লেও সেই প্রমিতা কিশোরী বয়স থেকে মীনা শুরু করেও এখন ইউনিভার্সিটি শেষ করে বিয়ে টা করেও কন্ঠ পরিবর্তন হয়নি। এখনও সে মীনা-কন্ঠী হয়েই আছে। সত্যি আশ্চর্য!"(সংক্ষেপিত)

কিন্তু কে এই আমিনুর রহমান সেটা এখন বলা যাবেনা 🤭

⭕কিন্তু এই মীনা নামটি কিভাবে এলো?⭕

১৯৯১ সালে শুরু হয় মীনা কার্টুন।সে সময় ইউনিসেফের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনিই "মীনা" নামটি প্রস্তাব করেন এবং পরবর্তীতে এই নামটিই নির্বাচিত হয়।

এখানে বলে রাখা ভালো,ভারতের শিল্পী রাম মোহন কে বলা হয় মীনা কার্টুনের রূপকার। তিনি চরিত্রগুলোর অবয়ব, পোশাক-আশাক নকশা করেছিলেন। প্রকল্পটির ফিল্ম ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি।

👉 লেখাটির শেষে একটি চমক অপেক্ষা করছে 👈

🔴 রাজু : 🔴

মীনার ছোট ভাই রাজুর কথা আমাদের সবারই মনে আছে। রাজু সব ধরনের দুষ্টুমিতে মীনাকে মাতিয়ে রাখে। রাজুর ভূমিকায় কণ্ঠ দিচ্ছে "আবরার সাজিদ পাশা"। অবশ্য বাবা-মা তাকে রোদ্দুর বলে ডাকেন।

প্রথম যখন অডিশনে রাজুর ভূমিকায় কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, তখন সে পড়ত প্রথম শ্রেণীতে। কথায় কথায় সেটাই জানিয়ে দেয় আবরার। প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আবরার বলে,"রাজুর ভূমিকায় কণ্ঠ দিতে বেশ ভালো লাগে। বিভিন্ন পর্বে অনেক ভালো ভালো কথা বলে মানুষকে অনেক তথ্য জানাতে পারি।"

বাংলাদেশ বেতার থেকে এখনো "আমি মীনা বলছি" এই অনুষ্ঠানটি প্রতি শুক্রবার সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ইচ্ছা করলে আপনি ফেসবুক পেইজ "আমি মীনা বলছি" থেকে এটি লাইভ সেটা শুনতে পারবেন।

🔴 দুষ্টু মিষ্টি পাখি মিঠু : 🔴

পাঠকগন এবার বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, এবার আমি কার কথা বলব! মীনার ছোট্ট আর দুষ্টু টিয়াপাখি মিঠু কথা বলবো। ওর কথা তো সবার মনে আছেই।

"আমার নাম মিঠু... এই একটা কথাই তখন আমাদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াতো।আর ডানা ঝাপটানো! সেই শব্দ টা আজও ভোলার নয়।"

আর টিয়াপাখি মিঠুর এই মধুর কণ্ঠ দিয়েছেন কামাল আহসান। এক সাক্ষাৎকারে কবে থেকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন,"আমি শুরু থেকেই মুস্তাফা মনোয়ার স্যারের সঙ্গে পাপেট শো করতাম। সেখানে বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠ দিতে হতো।

"১৯৯৮ সালে সবেমাত্র ডিগ্রি পাস করেছি। আমাকে বলা হলো টিয়াপাখির মতো করে কণ্ঠ দিতে। আমি চেষ্টা করলাম। আর আমাকে নির্বাচনও করা হলো।

টিয়া পাখির কণ্ঠ দিতে সমস্যা হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"যখন আমাকে টিয়াপাখির ভূমিকায় নেওয়া হলো, তখন থেকেই পাখিদের আচরণ দেখতে শুরু করলাম। পাখি কেমন করে বসে, কেমন করে খায়, কেমন করে ডানা ঝাপটায়—এগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলাম।

যেহেতু আগে থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত, জাদুকরি যদি (ম্যাজিক ইফ) তত্ত্বটা জানাই ছিল। নিজেকে পাখির মতো ভাবতে শুরু করলাম। বাতাস এলে পাখি কী করে, পর্যবেক্ষণ করতাম। ধীরে ধীরে ট্যার..ট্যার..ট্যাট এই রকম অনেক শব্দ নিজেই রপ্ত করে ফেললাম।"

যখন অন্যরা জানতে পারেন তিনি মিঠুর চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন তখন প্রায়ই তাকে মিঠুর মত করে একবার কথা বলতে প্রায় আবদার করতো। তিনি স্বভাবসুলভভাবেই এই আবদার রক্ষা করতেন।

মিঠুর চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়াটা আমার জীবনের একটা বড় ঘটনা হিসেবে কমাল আহসান উল্লেখ করেন।

🔴 দুষ্টু দোকানদার : 🔴

ওজনে কম দেয়া কিংবা অহরহ লোক ঠকানো জন্য দোকানদার চরিত্রটি মীনা কার্টুনে একটি খলনায়ক চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছিল।

আর এই দুষ্টু দোকানদারের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন "আমিনুর রহমান বাচ্চু"।

পাঠকগণ এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন তখন কেন আমি তার পরিচয় বলতে চাইনি।

সম্প্রতি তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ প্রসঙ্গে বলেন,"বাংলাদেশের পর্ব গুলোতে দুষ্ট দোকানদারের কন্ঠ পাওয়া মুশকিল হচ্ছিল দেখে আমাকেই গলায় গামছা বেঁধে দোকানদারের কন্ঠ দেওয়া শুরু করতে হলো।" 😀

এই যা! এতক্ষণ তো সবার কথাই বললাম কিন্তু একজন বাদ পড়ে গেছে। তাকে নিয়ে না লিখলে লেখাটাই কোনমতেই সম্পূর্ণ হবে না।

🟥 কে সেই কণ্ঠশিল্পী ? 🟥

শেষের দিকে সম্মানিত পাঠকদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই।

বলুনতো আমাদের সবার পছন্দের মীনা কার্টুনের সূচনা সঙ্গীতে কে কণ্ঠ দিয়েছেন?

নাহ্ শেষের দিকে আর কোন ভনিতা করবো না।অসম্ভব সুন্দর এই গানটি রচনা করেছেন প্রখ্যাত সঙ্গীতকার "আরশাদ মাহমুদ" এবং "ফারুক কায়সার"।

আর গানে মিষ্টি কণ্ঠটি দিয়েছেন "পূর্ণিমা শ্রেষ্ঠা" যিনি "সুষমা শ্রেষ্ঠা" নামেও পরিচিত, তিনি সেই সত্তরের দশকের শুরু থেকে বিগত দশক পর্যন্ত দর্শক শ্রোতাদেরকে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন।

৯০ দশক পর্যন্ত তিনি বলিউডের প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে বেশ ভালই পরিচিত ছিলেন। মীনা কার্টুনের থিম সং পাকিস্তানে রচনা ও রেকর্ড করা হয়।

বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি সংস্করণেও গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। ইউটিউবে খুঁজলে আশা করি তা পেয়ে যাবেন।

বাংলাদেশেই প্রথম মীনা সম্প্রচারিত হয়, যেখানে স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়েটির সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়। ‘মুরগিগুলো গুনে রাখো’ শিরোনামে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে’ সম্প্রচার হয়েছিল এর প্রথম পর্ব।

১৯৯৩-২০১১ থেকে বাংলাদেশ বিমান তাদের চলতি ফ্লাইটে মীনা কার্টুন দেখাত।

২০১২ সালে ইউনিসেফ একটি সরাসরি রেডিও শো শুরু করে যেখানে মীনা, মিঠু ও রাজুকে উপস্থাপক হিসাবে দেখানো হয়। এক ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান চলাকালেই সারাদেশ থেকে প্রায় এক হাজার শিশুর ফোন আসে।

২০১৬ সালে ইউনিসেফের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ ‘Meena Game' একটি গেমিং আ্যাপ উন্মুক্ত করে এবং এটি এখন পর্যন্ত দশ লাখের বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে বলা আছে যে,বাংলাদেশে ইউনিসেফের বড় অর্জনগুলোর একটি ‘মীনা’।

ইউনিসেফ কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে,বাংলাদেশে শহরের প্রায় ৯৭ শতাংশ শিশু এবং গ্রামের ৮১ শতাংশ শিশু ও কিশোর/কিশোরী মীনাকে চেনে।

সংবাদমাধ্যমে শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদন যাতে আরও ভালো হয় সেলক্ষ্যে সাংবাদিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ২০০৫ সালে মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড চালু করে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।

মীনা কার্টুন নিয়ে আপনি কি আজও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন?

শৈশবের রঙিন কার্টুন কে নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন তা আমাদেরকে কমেন্ট করে জানান।

ধন্যবাদ 🌺

1
$ 0.00
Avatar for MasudRanaPro
4 years ago

Comments