যেমন ধরুন পলিথিন। তৈরি করা হয় মানুষের কাজে সাহায্য করার জন্য। যখন কাজ শেষ হয়ে যায়, তখন সে পলিথিনের স্থান হয় আবর্জনার স্তূপে।
কাঁটাতারে পেঁচানো সেই পলিথিন যখন বাতাসে ফাত ফাত করে উড়ে, তখন চারিদিকে মৃত্যুর সুরের মত পিয়ানোর সুর বেজে উঠে। সে পিয়ানোর সুর এমন এক অদ্ভুত অনুরণন তুলে, যা শুনলে আপনার প্রতিটি স্পন্দনে ঘিরে ধরে বিষাদ। ঘোর তোলা বিষন্ন বিষাদ......
স্পয়লারবিহীন
২০১০ সালের এই মুভিটি দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। এমন অদ্ভুত চিন্তাও মানুষের হয়! অথচ Kazuo Ishiguro লোকটা ২০০৫ সালেই এমন একটি গল্প নিয়ে উপন্যাস লিখে ফেলেছিলেন। উপন্যাসের নাম দিয়েছিলেন Never Let Me Go। বিশ্বব্যাপী বেশ সাড়াও ফেলেছিলো উপন্যাসটি।
সেই সাড়া জাগানো উপন্যাস থেকেই গল্পটি ধার নিয়ে মুভি নির্মাণে এলেন Mark Romanek। স্ক্রিণপ্লে সাজালেন Alex Garland। প্রথম দিকে ৯৬ পৃষ্ঠার স্ক্রিপ্টটি কাটছাঁট শেষে ফুটে উঠলো ১৯৫২ সালের গল্প।
IMDB: 7.1/10
Rotten Tomatoes: 70%
Metacritic: 69%
গল্পটা খুবই বাজে চিন্তার একটি গল্প। কেমন যেন বিষাদ মাখা মৃত্যুর গল্প বলে চলে। যে গল্পে অবিকল মানুষের মত দেখতে কিছু আবর্জনার গল্প বলা হয়।
হুম উপরে যে পলিথিনের কথা বলা হয়েছে। এই গল্পের চরিত্রগুলোও পলিথিনের মত। তাদের কোনো বাবা মা নেই। তাদের কোনো পরিচয় নেই। তাদের কোনো স্বপ্ন জয়ের চাহিদা নেই। তাদের ডক্টর-ইঞ্জিনিয়ার-চাকর-রিক্সাওয়ালা-কাজের বেটি রহিমা হবারও তাগিদ নেই। তাহলে তাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কি?
.
উদ্দেশ্য একটাই মানব কল্যাণ। আরও খোলাসা করে বললে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুমাত্র অর্গান ডোনেট করার জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর পরই এই মহান কাজটি শুরু করে দিতে হয়। তাই মানুষের হাত পা চোখ কিডনি হ্নদপিন্ডের দরকার পড়লে, তারাই এসে তাদের শরীরের কলকব্জা ডোনেট করে দেয়। এভাবে সর্বোচ্চ ৩/৪ বার কলকব্জা ডোনেট করার পর তাদের স্থান হয় আবর্জনার স্তূপে।
কিন্তু প্রতিদানে তারা কি পায়? কিছুই না। যাদের জন্মই হয়েছে শুধুমাত্র ডোনেট করার জন্য, তাদের আবার প্রতিদানের প্রশ্ন কোত্থেকে আসে।
অথচ তারাও অবিকল মানুষের মত। একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষের মতই তাদের জন্ম দেয়া হয়। কিন্তু ফারাক হচ্ছে চিন্তায়, মস্তিষ্কে, জীবন ধারণে। কারণ তাদের যেখানে বড় করা হয়, সে স্কুল থেকেই তাদের জন্মের পর থেকে এই ব্রেইন-ওয়াশ করানো হয়। তাই তারা মানুষের মত হলেও তাদের জীবন-যাপন হয়ে উঠে অন্যরকম।
সেই অন্যরকম জীবন দান দেয়ার স্কুলের নাম হেলসহ্যাম। সেখানে শত শত বাচ্চাদের মাঝখানে তিনটি বন্ধুর গল্প উঠে আসে।
সাই-ফাই রোমান্টিক জনরার এই মুভির গল্পটি ধীর গতিতে এগুতে এগুতে ত্রিভোজ প্রেমের গল্পে মোড় নেয়। সাই-ফাই ঠিক যেমন দেখি, তেমন সাই-ফাই নয়। বলা যায় অদূর ভবিষ্যতের বাস্তবিক গল্প। তাই এখানে সায়েন্স কম, কিন্তু বাস্তবিক ফিকশান আপনাকে ঘিরে রাখবে।
মুভির সারা স্ক্রিণজুড়ে সেই ত্রিভোজ প্রেমের টানাপোড়েনে একটু একটু করে উঠে আসে তাদের জীবনযাত্রা।
কিন্তু অনুভূতি নির্ভর এই মুভিটির গল্পে চমক তৈরি হয়, যখন ডিফারাল নামক একটি প্রক্রিয়ার নাম উঠে আসে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা সত্যিকার প্রেমিক-প্রেমিকাকে অর্গান ডোনেশান করতে বিলম্বিত করে। তাদের জীবনকে উপভোগ করার জন্য আরও ৪/৫ বছর সময় দেয়া হয়। কিন্তু লোকমুখে শুনা সে ডিফারাল প্রক্রিয়াটি সত্যিই কাজে দিবে?
নাকি ঘটাবে অন্যরকম অনুভূতির?
মুভির ২০ মিনিটের দিকে যখন হেলসহ্যাম স্কুলের কোমলমতি বাচ্চাদের বলা হয়, তাদের জীবনের উদ্দেশ্য। তখন প্রতিটি বাচ্চাকাচ্চাদের মুখের প্রতিচ্ছবি হয়ে ভেসে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা পাথরের মূর্তি। আর শেষদিকে সেই রাস্তার দৃশ্য.....