আজকের পভোগৌলিকভাবে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে বিষুব রেখা, কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখা। অন্যদিকে, উত্তর-দক্ষিণে পৃথিবী বিস্তৃতকারী চারটি দ্রাঘিমা রয়েছে। এগুলো ০ ডিগ্রি, ৯০ ডিগ্রি পূর্ব, ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব-পশ্চিম ও ৯০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমা। এই রেখা ও দ্রাঘিমা পৃথিবীর মহাকাশকে মোট ১২টি বিন্দুতে ছেদ বা স্পর্শ করেছে। এর ১০টি ছেদস্থল বিভিন্ন সাগর-মহাসাগরের ওপরে অবস্থিত। মাত্র দুটি ছেদস্থল মাটির ওপরের মহাকাশে। এর একটি সাহারা মরুভূমিতে, অন্যটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের দক্ষিণ অংশে। ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে কর্কটক্রান্তি রেখা ও ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা মিলিত হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে একটি মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১০০ মিটার উচ্চতার এই স্পেস অবজারভেটরি সেন্টার বা অবলোকন কেন্দ্র স্থাপনে ২২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ওই কেন্দ্র থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশ অবলোকন করতে পারবেন দেশ-বিদেশের মানুষ। এতে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার হবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।
এর আগে একই স্থানে 'বঙ্গবন্ধু মানমন্দির' স্থাপনের আলোচনা হয়। এ নিয়ে গত বছরের ২৯ জুন সমকালই প্রথম একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, সাহারা মরুভূমির যে স্থানে ছেদস্থলটি রয়েছে, সেখানে মানুষের যাতায়াত সহজ নয়। তাই একমাত্র ছেদস্থল ভাঙ্গায় অবলোকন কেন্দ্র স্থাপন করা হলে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রনমি বা অ্যাস্ট্রফিজির অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা এসে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা পরিদর্শন করতে বিদেশি পর্যটকদেরও আগমন ঘটবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সমকালকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রাথমিক নকশা করা হয়েছে। তবে করোনার কারণে নকশা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুবই আকর্ষণীয় একটি কাজ হবে। কারণ মাটির ওপর এমন রেখার মিলনস্থল ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে বাংলাদেশেই এমন একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে সহজে মানুষের যাওয়ার সুযোগ আছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে, তাতে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এই সেন্টার স্থাপন শেষ করার কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি ডিপিপি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। কর্কটক্রান্তি রেখা ও ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার মিলনস্থলের তথ্য গত বছর প্রথম উল্লেখ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সভায় ছেদস্থলে 'বঙ্গবন্ধু মানমন্দির' স্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি। এতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন এবং এ বিষয়ে প্রকল্প নিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই অবজারভেটরি সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) নামে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা রয়েছে। এই সংস্থা মহাকাশ বিজ্ঞান ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তি, বন ও পরিবেশ, কৃষি, মৎস্য, ভূতত্ত্ব, মানচিত্র অঙ্কন, ভূমি ব্যবহার, আবহাওয়া, ভূগোল ও সমুদ্রবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে। এজন্য মানমন্দিরের পরিবর্তে স্পারসোর সঙ্গে সমন্বয় করে অবজারভেটরি সেন্টার স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১০ একর ভূমির ওপর পাঁচতলা এনুলার ভবনের মাঝ থেকে পৃথক স্থাপনার ওপর ভূমি থেকে ১০০ মিটার উচ্চতায় এক মিটার ব্যাসের প্রতিফলক টেলিস্কোপের উপযোগী ১০ মিটার ব্যাসের মূল অবজারভেটরি সেন্টার করা হবে। এটি আনুভূমিকভাবে স্থাপিত প্ল্যাটফর্মের বেষ্টনীর মধ্যে রচিত হবে। অবজারভেটরির ঠিক নিচতলাটি এবং সংযুক্ত এনুলার প্ল্যাটফর্মটি সহযোগী অবজারভেটরি হিসেবে কাজ করবে। ১০০ মিটার উচ্চতার তাৎপর্য হলো, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এটি স্থাপিত হতে যাচ্ছে। পাঁচতলা এনুলার ভবনে থাকবে অফিস কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার ও আবাসগৃহ। প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্প স্থানটি ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রকল্প এলাকা ভ্রমণ করবেন। সে বিবেচনায় প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্যের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। তিনি ভবনের নকশা আকর্ষণীয়ভাবে প্রণয়ন এবং সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ রোপণের ওপর গুরুত্ব দেন।
ডিপিপি ও পিইসি সভার মিনিটস থেকে জানা যায়, প্রকল্পে ফার্নিচার, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে ১১ জন কর্মকর্তার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণে এক কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পিইসি সভায়। তখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনির চৌধুরী বলেন, রাজস্ব বাজেট থেকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করা হলে প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
you writing a wonderful article bro