#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে_এক_আপুর_জীবনী_থেকে_নেওয়া

0 21
Avatar for Madmax
Written by
4 years ago

হুম আমাদের বিয়ে১০বছর। আর প্রেমের সম্পর্ক ছিল ৫ বছর। ৫ বছর প্রেম এর পর পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল আমাদের। টোটাল ১৫বছর ধরে আমরা একে ওপরের জীবন ছিলাম। আমি দেখতে মোটেও ভালো না অপর দিকে আমার উনি তো মাশাআল্লাহ্! যেমন সুদর্শন_সুন্দর স্মার্ট তেমনি ভদ্র। স্টুডেন্ট লাইফে বিয়ে হওয়ার জন্য অনেক কঠিন সময় ও কষ্ট আমাদের কে সহ‍্য করতে হয়েছে। কিন্তু যখনই সে একটা ভালো জব পেয়ে গেল বেশি দিন আর সে কষ্ট আমাদের ছিলো না। আগেই বাসার ভাগ পেয়েছিলাম।৪ বছর পরেই বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ও আব্বু আম্মু সহযোগিতা নিয়ে আমরা ছোট্ট দুই রুমের একটা বাসা বানিয়ে ফেললাম। আল্লাহ্ র রহমতে কোনো কিছুর ই অভাব ছিলো না আমাদের,শুধুমাএ একটা সন্তান ছাড়া। আমার হাজবেন্ড খুব পরিশ্রমী ও সৎ মনের একজন মানুষ কিন্তু প্রচন্ড রাগী ছিলেন। খুব ভালোই জীবন চলছিল আমাদের।

আমার মেরুদণ্ডের সমস্যা আছে, যা মাঝে মাঝেই আমাকে বিপাকে ফেলে। সেই দিনও সেম একই অবস্থা। হঠাৎ ও এসে বললো আপু বার বার ফোন দিচ্ছে মা না কি খুবই অসুস্থ হয়েগেছে, আমাকে এখনই যেতে হবে। আমি বললাম আমিও যাবো কিন্তু ও বললো তুমি অসুস্থ এই অবস্থায় তুমি কি করে যাবা? আরো অসুস্থ হয়ে যাবা তুমি বাসায় থাকো। মানলাম না ওর কথা,ওর সাথেই গেলাম।

আপু ভাইয়ারা সবাই চলে এসেছে। বাসায় যাবার পর দেখলাম আমার শাশুড়ি বিছানায় শুয়ে আছে খুব একটা অসুস্থ মনে হচ্ছে না। ও রুমে ঢুকেই বললো মা কি হয়েছে তোমার, এ কথা শুনে শাশুড়ি উঠে বসে ওর হাত ধরে কান্নাকাটি শুরু করলো। এতো কান্না যে কথা বলতে পারছে না। ভাইয়ারা সবাই থামানোর চেষ্টা করলো থামছেই না। অনেকক্ষন পর শাশুড়ি ওকে বললো আমি আমার পোতার মুখ কি দেখতে পাবো না আব্বা? ও হেসে বলে উঠলো ওহ্ এইজন্যই তুমি অসুস্থ!আল্লাহ যখন চাইবে তখনই হবে, তুমি মন খারাপ করছো কেন তাছাড়াও ভালো ডাক্তার দেখাবো একটু র্ধয‍্য ধরো মা। শাশুড়ি এবার রেগে গেলেন বললেন বাচ্চা হলে এতো দিন হয়ে যেত, এই বউ দিয়ে কিছু হবে না। আমি তোর জন্য মেয়ে দেখেছি তুই ঐখানেই বিয়ে করবি। আমার ছেলে বাঝা হয়ে থাকবে এটা আমি মানবো না। আমার মাথা ঘুরে উঠে ছিলো কিছুই বলতে পারছিলাম না।

ও খুবই চিৎকার চেচামেচি করে আমাকে নিয়ে বাইরে চলে আসলো। শাশুড়ি পেছন পেছনে এসে বললো সবাই শুনে রাখ আজ থেকে আমি পানিও খাবো না।

বাসায় আসলাম রাতে আর কোনো কথা হলো না আমাদের। ভোরে সে আমাকে বললো মন খারাপ করোনা আমি এমন কোনো কিছুই করবো না, আমরা এমনই ভালো আছি।

শান্তি পেলাম আমি।

সকালে আমার ফোন আসলো শাশুড়ির আমাকে অনেক বোঝালেন বাচ্চা ছাড়া জীবন অচল, বাচ্চা ছাড়া ছেলে মানুষের কোনো মূল্য নাই, বাইরের মানুষ তোমার স্বামী কে ছোট করে দেখবে তোমার কি ভালো লাগবে, আরো অনেক কিছু বললেন। শেষে বললেন তুমি বলো তাহলেই আমার ছেলে বিয়ে করবে। সাথে সাথেই আমি বললাম আমি ওকে হারিয়ে দিতে পারবো না। আমি কখনোই এই কাজ করতে দিবো না।

৫দিন পর রাতে ফোন আসলো শাশুড়ি মেডিক্যালে ভর্তি। সে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। জানতে পারলাম ৪দিন থেকে না খেয়ে ছিলেন উনি আর বয়স বেশি হওয়ার কারণে খুব খারাপ অবস্থা।দুই দিন পার হয়ে গেল তেমন কোনো উন্নতি নাই। কিছুইতে উনাকে খাওয়ানো যাচ্ছে না।তখন ই আবার খবর আসলো শশুর অসুস্থ, তিনিও অনশন করছেন। আপু আর ভাইয়ারা রেগে গেল ওর ওপর। মেডিক্যালের মধ্যেই লেগে গেল গন্ডগোল। মেজো ভাইয়া যা মনে আসলো তাই বললো, শেষে বললো তোর খুশির জন্য তোর বাচ্চার জন্য আজ আমাদের মা বাপ মরে যাচ্ছে আর তুই তোর বউকে ছাড়তে পারছিস না। ও কিছু না বলে আমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।

কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর আমাকে কাছে টেনে নিয়ে ভেজা ভেজা কন্ঠে বললো এমনও একটা দিন আমাদের আসবে কখনও চিন্তা করিনি। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।কিন্তু আব্বা মা র জন্য হয়তো আমাকে এই কাজ করতেই হবে না হয় আমার মা মরে যাবে, আমি নিরুপায় বলেই কাদতে লাগলো সে। আমি রাগে কষ্টে কান্নাকাটি চিল্লাচিল্লি সব কিছু এক সাথেই করে ফেললাম। আব্বু আম্মু কে ফোন দিয়ে বাসায় ডেকে নিলাম (৪ টা বাসার পরেই আব্বুর বাসা) আমার ভাইয়ারাও সাথে আসলো। বাসার সবাই আগে থেকেই জানতো এই ঝামেলা চলছে তারপরও সে সব কিছু খুলে বললো। সবাই রাগ করলো বোঝালো, বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু আমি বন্ধা হওয়ায় আমার আব্বু আম্মু বা আমি কিছুই করতে পারলাম না। সে চলে গেল। আমি কোনো দিক পাচ্ছিলাম না, কি দিয়ে আমি ওকে ধরে রাখবোতিন দিন পর বাসায় আসলো। শুধুই কাদলাম। ও জোড়িয়ে ধরে কাদলো আর বললো বিয়ে শেষ সবার আশা পূরণ করে দিলাম আর যাবো না।

সে দিন থেকেই শুরু হলো শশুর শাশুড়ি আর তার নতুন বউ এর ফোন। দুই দিন পর ওর নতুন শশুর আর ভাইরা চলে আসলো আমাদের বাসায়। ও ঝামেলা এড়াতে প্রায় দুই দিন পর পরই তার নতুন বউ এর সাথে দিনে দেখা করে আসতো। কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমার কাছেই থাকতো। কিন্তু আগের মত আর কথা হয় না আমাদের। বিয়ের ৯ মাসের সয়ম আমার শাশুড়ি আমাকে ফোন দিয়ে বললেন নতুন বউ এর বাচ্চা হবে, ও সামনেই ছিল। ওর দিকে তাকাতেই ও মাথা নিচু করে বললো কষ্ট পাবা তাই বলতে পারিনি। সত্যি কষ্ট পেলাম কি যে কষ্ট বলে বোঝানোর মত না

আমি জানার পর থেকে ও প্রায় ওর নতুন বউয়ের কাছেই থাকতো। দুই এক দিন পর পর ফোন দিতো আমাকে। মেনেই নিয়েছিলাম এভাবেই আমার জীবন যাবে।বাচ্চা হলো ক্লিনিকে বাচ্চা দেখে আসলাম। বাচ্চার বাবার আনন্দ দেখে ভালো লাগছিল কিন্তু কোথায় যেন এক চাপা কষ্ট ছিলো চোখে পানি আটকে রাখতে পারছিলাম না। বাবুর আকিকা হলো জমকালো অনুষ্ঠানে, কেউ আমাকে ডাকলো না বাচ্চার বাবাও না। হয়তো ভুলে গেছে।

সপ্তাহে দুই দিন ও আমার কাছে থাকতো বাকি ৫ দিন তার পরিবারের সাথে। আস্তে আস্তে বাসায় আসা আরো কমিয়ে দিলো। ১৫ দিন পর পর আসতো। প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলতো না, খাবার খেতো না, ঠিক মতো ঘুমাতো না। সারা রাত সোফায় শুয়ে থেকে পার করে দিতো, একটু পর পর তার বউ ফোন দিতো ভিডিও কল দিতো। কিছু ক্ষন পর পর ও ছেলের ছবি দেখতো আর ছটপট করতো। সবই বুঝতাম কিন্তু কিছুই করার ছিলো না আমার। মনে হতো এক অপরিচিত মানুষের সাথে আছি আমি।এভাবেই আমার দিন পার হয়ে যাচ্ছিলো।

হঠাৎ এক দিন শুনলাম বড় চাচা শশুর মারা গেছেন। আমি আর আব্বু আম্মু দেখতে গেলাম। আমি আমার চিরোচেনা রুমে ঢুকতে পারছিলাম না। যাদের সাথে আমি ১০বছর ভালো মন্দ সময় পার করেছি সেই মানুষ গুলোই এড়িয়ে যাচ্চে,তেমন কথা বলছে না। মনে হচ্ছে আমি কোনো অপরাধ করেছি অনেক এদিকে ওদিকে ঘুরে রুমে গিয়ে বসলাম। ও রুমে আসলো আমার থেকে একটু দূরে বসলো কিছুক্ষণ পর ওর বউ রুমে আসলো ৬মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে, বাচ্চা কে ওর কোলে দিলো আর পাশে ওর বউ বসলো। কথা বলতে বলতে ও বাচ্চা কে নিয়ে খেলা শুরু করলো। তিন জনের মুখে আনন্দ, সুখ -শান্তি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো, কি সুন্দর একটা মুহূর্ত তাদের। সে দিন আমি আমার স্বামীর চোখে কোথাও নিজেকে খুজে পেলাম না। আমার ১০ বছরের সংসারজীবন কম পরে গেছে তার ২বছরের সংসারের কাছে। মনের মধ্যে কেমন করে উঠলো, আমি কি করছি এদের জীবনে!!!????এখানে কি আছে আমার!

নিজেকে তখন মা বাবার পঙ্গু সন্তানের মতো মনে হচ্ছিলো। পঙ্গু সন্তানদের কে মা বাবা যেমন ফেলেও দিতে পারে না আবার নিরুপায় হয়ে কষ্ট করে টানেও, ঠিক তেমনি ও আমাকে টানছিলো, আমি কোনো কিছুই ছিলাম না তার কাছে ।

চলে আসলাম আর আসার সময় বলে আসলাম দুই এক দিন মধ্যে বাসায় আসো, কথা আছে। ও আগিয়ে দিলো আমাদের কে। ও আসলো আবার আগের মতই কথা বলছে না ফোনেই ব‍্যস্ত।এক দিন পার হয়ে গেলো, রাতে চলে যাবে ও। সন্ধ্যায় বসলাম ওকে বললাম তোমাদের মধ্যে আমি শুধুই একটা বোঝা। আমি এইভাবে থাকতে পারবো না। তুমি হয়তো আমার থাকো আর না হয় আমরা আলাদা হয়ে যায়। প্রতিদিন আমি তোমার অপেক্ষায় রাস্তায় তাকিয়ে থাকি, ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি আমি আর সহ‍্য করতে পারছি না। ও বললো আমি আমার ছেলে কে ছাড়া থাকতে পারবো না, আর এতো ছোট্ট বাচ্চা মা ছাড়া থাকতে পারবে না। ও অনেক কাদলো আর বললো এই বাচ্চাটা যদি তোমার হতো তাহলে কোনো দিন এতো কষ্ট পেতে হতো না আমাদের কে।দুই জনই অনেক অনেক কাদলাম। জীবনের সব চেয়ে বড় সম্পদ কে আমি হারিয়ে দিতে যাচ্ছি ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমাকে ধরে রাখার কোনোই ইচ্ছাই তার মধ্যে দেখলাম না সেই দিন আর ও বাসায় গেল না, সারা রাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদলো

কিছু দিন পর আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেল, আব্বু আম্মু বাদে সবাই আমাকেই বকাবকী করলো, দোষী করলো।

আজ কত দিন যে তাকে দেখিনা, কিন্তু এমন একটা মুহূর্ত নাই যে ওকে মনে পরে নাআমার জীবন জুড়ে শুধু ও আছে,থাকবে। আমি অসুস্থ একটা মানুষ, ও আমাকে এক বালতি পানিও আনতে দিতো না। অথচ এতো দিনে এক বারের জন্য খোঁজ নেই নি আমার হয়তো ও এতো দিনে আমাকে ভুলেই গেছে। এক সময় হয়তো ও এটাও ভুলেও যাবে যে ওর বিয়ে হয়েছিল, একটা বউ ছিলো মা বাবা সব সময় ভালোই চাই, ওর জন্য ওর মা বাবা ভালো চেয়েছিল বলেই সে আজ বাচ্চার বাবা।কষ্ট শুধু একটাই সে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে আমাকে নিঃসঙ্গ করে দিয়েছে

কিন্তু তারপরও এখন আমি ভালো আছি, বাসাটা ভাড়া দিয়ে আব্বুর বাসায় আছি, আর্থিক কোনো সমস্যা হয় না। আর সব চেয়ে কথা এখন আর রাস্তায় তাকিয়ে থাকতে হয় না ওর অপেক্ষায়, বার বার ফোন দেখতে হয় না যে এই বুঝি ফোন আসলোকারণ সে আর আমাকে চেনে না, সে আর কখনোই ফিরে আসবে না, কোনো দিনও না

ভালো থাকুক আমার ভালোবাসার মানুষটা পরিবার নিয়ে , সব সময় দোয়া করি

6
$ 0.31
$ 0.30 from @TheRandomRewarder
$ 0.01 from @sajid.
Avatar for Madmax
Written by
4 years ago

Comments