বিহারীলাল চক্রবর্তী প্রবর্তিত আদর্শের অনুসরণকারীদের মধ্যে দেবেন্দ্রনাথ সেন একজন বিশিষ্ট কবি।দেবেন্দ্রনাথ সেন জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৮ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯২০ সালে।জীবন ও সংসার অবলম্বনে তার কাব্য প্রকাশিত হয়েছিল।তাই নারী প্রেমের বিচিত্র প্রকাশ তার কাব্যে স্পট।বাঙালীর গার্হস্থ জীবনের পরিচয় সেখানে সহজলভ্য।বাঙালী জীবনের বাতসল্যরস, দাম্পত্যপ্রণয় , পারিবারিক বৈশি, মানব জীবনের সুখ দুঃখ,মান অভিমান প্রভৃতি তার কাব্যে উপজীব্য হয়েছিল।রবিন্দ্রনাথের ভাষায় দেবেন্দ্রনাথ সেন "অশোক মঞ্জরী হইতে তাহার তরুনতা বধূর ভূষণঝংকার হইয়ে তাহার রস চুরি করিয়া লইতে পারেন"। এই তরুনতা ও রহস্যকে সেই অরুপ সৌন্দর্যের রুপ বিভায় ব্যঞ্জিত করতে পেরেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ সেন। তার নিজস্ব রচনা রীতিরও বেশ গুরুত্ব ছিল। সনেট রচনায় তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। নারী প্রেমের অনাবিল মাধুর্য তার সনেটে বিধৃত হয়েছে। যেমনঃ
নয়নে নয়নে কথা ভালো নাহি লাগে,
আধ গ্লাস জল যেন নিধাঘের কালে;
চারিধারে গুরুজন;চল অন্তরালে
দোহার হিয়ার মাঝে কি অতৃপ্তি জাগে।
কে যেন গো কানে কানে কহিছে সোহাগে,
'আন থালা ;ক্ষুদ্র এই কলার
একরাশ শেফালিকা কুড়ান কি যায়?
শুধ নয়নের দৃষ্টি ভালো নাহি লাগে।
বন্দী হয়ে সনেটের ক্ষুদ্র কারাগারে
কাদে যবে সুকবিতা গুমরে গুমরে
মনোদুঃখে,ঘোমটার জলদ আধারে
তোমার অই মুখ শশী কাদিছে কাতরে!
ছাদে চল;মুক্ত বায়ু,বহিছে তটনী
দ্রৌপদীর শাড়ি সম সচন্দ্র যামিনী।
দেবেন্দ্রনাথ সেনের উপর মাইকেল ও বিহারীলাল উভয়ের প্রভাব বিদ্যমান। 'উর্মিলা'কাব্য রচিত হয়েছিল মাইকেলের অনুসরণে। তার মধ্যে বিহারীলালের রোমান্টিক স্বপ্নকল্পনা স্বচ্ছ ও সহজ ব্যঞ্জনা লাভ করেছে। তার কাব্যের মৌলধরম ছিল রোমান্টিকতা। পুষ্পপ্রীতি দেবেন্দ্রনাথের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার প্রথম কাব্য 'ফুলবালা'র কবিতা ফুলবিষয়ক। 'অশোক গুচ্ছ' 'শেফালি গুচ্ছ' পারিজাতগুচ্ছ' ' গোলাপগুচ্ছ' কাব্যের নামের মাধ্যমেও কবির পুষ্পপ্রীতি ফুটে উঠেছে।
Nice artical