লোকসাহিত্যর প্রাচীনতম সৃষ্টি ছড়া। ছড়া গুলো বিশেষ কোনো ব্যাক্তির সৃষ্টি বলে মনে করা যায় না।এর সৃষ্টির পেছনে সমষ্টিমনের ভাব কার্যকর। ভাবের দিক থেকে তেমন কোনো পরিণতি ছড়ায় থাকে না।ভাবের অস্পষ্ট ও দুর্লক্ষ্য ইঙ্গিত তাতে বিদ্যমান। ছড়া গুলোতে রসের প্রাধান্য পায়। বুদ্ধি দিয়ে তাকে বিচার করা চলে না।ছড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো রচনাকাল নেই এবং রচয়িতারও কোনো পরিচয় মিলে না।চিরপুরাতন হয়েও ছড়া গুলো চিরনতুনের মর্যাদা পায়।ছড়া পরিবর্তনশীল।এরা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য রচিত নয়। নিছক আনন্দ সঞ্চারের লক্ষ্যেই ছড়া রচিত।
রবিন্দ্রনাথ 'লোকসাহিত্য' গ্রন্থে ছড়ার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন,
"আমি ছড়া কে মেঘের সহিত তুলনা করিয়াছি।উভয়ই পরিবর্তনশীল, বিবিধ বর্নে রঞ্জি, বায়ুস্রোতে যদৃচ্ছাভাসমান। দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক। ছড়াও কলা বিচার শাস্ত্রের বাহিরে,মেঘবিজ্ঞানও শাস্ত্রবিজ্ঞানের মধ্যে ভালো করিয়া ধরা দেয় নাই।অথচ জড় জগতে এবং মানব জগতে এই দুই উচ্ছৃঙ্খল অদ্ভুত পদার্থ চিরকাল মহত উদ্দেশ্য সাধন করিয়া আসিতেছে। মেঘ বারিধারায় নামিয়া আসিয়া শিশু শশ্যকে প্রানদান করিতেছে এবং ছড়াগুলিও স্নেহরসেবিগলিত হইয়া কল্পনা বৃষ্টিতে শিশুহৃদয়কে উর্বর করিয়া তুলিতেছে। লঘুকায় বন্ধনহীন মেঘ আপন লঘুত্ব এবং বন্ধনহীনতা গুনেই জগতব্যাপি হিতসাধনে স্বভাবতই উপযোগী হইয়া উঠিয়াছে এবং ছড়াগুলিও ভারহীনতা, অর্থবন্ধনশূন্যতা এবং চিত্রবৈচিত্র্যবশতই চিরকাল ধরিয়া শিশুদের মনোরঞ্জন করিয়া আসিতেছে। শিশুমনোবিজ্ঞানের কোনো সূত্র সম্মুখে ধরিয়া রচিত হয়নাই।"
একই শ্রেনীর ছড়ার মধ্যেও নানা রকম পারথক্য খুজে পাওয়া যায়।
ছেলে ভুলানো ছড়ার মধ্যে আছে ঘুমপাড়ানি ছরা(যার আব্বৃতিকার মা)।
কিন্তু শিশুরা নিজে আব্বৃতি করে এমন ছড়াও আছে।যেমনঃ'আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে।
ছড়ার ছন্দ বাংলা কবিতায় প্রাচীনতম ছন্দ।ছড়ার ছন্দ স্বরাঘাত বা শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ। পর্বের আদি স্বরে শ্বাসাঘাত পড়ে বলে এই নাম দেওয়া হয়েছে। একে লৌকিক ছন্দও বলা হয়।আধুনিক কালে এই ছন্দ ছড়ায় বিষয়বস্তুর পরিধি ছড়িয়ে নানা বিষয়ে বাহন হয়ে উঠেছে।
Nice article