মা'য়ের ভালোবাসায় কোন ধর্ম থাকে না। মা ই পরম ধর্ম পরম আরাধ্য ।

5 23
Avatar for MK_Husain
3 years ago

প্রত্যেকদিন পড়ানোর সময় স্টুডেন্টের পেট ব্যথা শুরু হয়। কি আজব!

কম হলেও দু বার সে ওয়াসরুমে যাবে। তখন ই আন্টি মানে স্টুডেন্টের মা এসে আমাকে বলেন..

দেখো মা ও একটু বজ্জাত বার বার পেট ব্যথার নাম করে ফাঁকি দেয় আর দেখি তো তোমাকে কতটা জ্বালিয়ে মারে বকবক করে। ওরে উঠতে দিও না একদম শুধু ফাঁকির ধান্দা।

আমিও হেসে বললাম ছোট তো তাই এমন করে বড় হলে আর এমন করবে না। সবে মাত্র সিক্সে পড়ে।

এতটুকু কথাবার্তা হওয়ার পর উনি উঠে গেলেন। প্রচন্ড মাথা ধরেছে রুমে গেলে একটু কড়া লিকারের চা খেতাম।

স্টুডেন্ট ওর জরুরি কাজ সেরে আসলো পড়া কমপ্লিট করে ছুটি দিয়ে বের হয়ে আসার সময় পেছন থেকে ডাক দিলেন আন্টি।

তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটা বাটি হাতে।

বেশ হাসিমুখ নিয়ে বললেন,

__শুটকি ভর্তা খুব পছন্দ করো তাই না! আমি বুঝেছি। একটু বানিয়ে ছিলাম নাও খেয়ে নিও।

তখন শুটকি ভর্তার ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগতে পেটে ইদুরের দৌড় শুরু হল।বাড়িতে গেলে মা বানায় তখন ওই ভর্তা দিয়ে ই ভাত খেয়ে নেই।

আন্টির কাছে থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলাম।

হোস্টেল লাইফের আধা কাঁচা সবজি আর মাছের গন্ধ যেন আর সহ্য হয় না। তবুও থাকতে হয় উপায় নেই আর বাড়ি থেকে প্রয়োজনের অধিক টাকার কথা বলতেও পারি না। এই দু/একটা টিউশন করিয়ে যা হয় তা দিয়ে নিজের চলার টুকটাক খরচ নিজেকে ই চালাতে হয়।

তবে অন্য টিউশন থেকে এই টিউশন টা অনেক ভালো। ভালো বলতে যে টাকা বেশি দেয় এমন না সবসময় টাকায় সবকিছু পরিমাপ হয় না। হ্যা, মাস শেষে বেতন যতটুকু তা ঠিক টাইমে ই দিয়ে দেন। বেশি হলে ৩/৪ দেরি হয়। যদিও অতটা স্বচ্ছল পরিবার না নিম্নমধ্য বিত্ত পরিবার।

সপ্তাহে একদিন হলেও ওই আন্টিরর সাথে আমাকে খেতে হয়। আমি হাজার মানা করা সত্ত্বেও উনার কাছে হার মানতে ই হয়।

খাবারে যে আহামরি কিছু থাকে এমনও না। সবজি মাছ মাঝে মাঝে মোরগের মাংস ডাল এগুলো ই কিন্তু সেই খাবারে এত তৃপ্তি থাকে বলার মত না!

এত আদর করে সামনে বসিয়ে খাওয়ান যেন নিজের মেয়েকে খাওয়াচ্ছেন মনে হয়।

ওইদিন হোস্টেলের খাবার নামক কুখাদ্য থেকে মুক্তি মিলে। অনেকটা অন্যরকম শান্তি পাই।

তাই স্টুডেন্ট যত ই বাঁদরামি করুক কিজানি একটা মায়ায় আটকে আছি এখানে।

স্টুডেন্টের পরিক্ষা তাই প্রতিদিন ই যাওয়া লাগে। আজ যেতে ই দেখলাম বেশ কয়েকজন মানুষের আনাগোনা হয়ত মেহমান এসেছে। আমি চেয়ারে বসতে ই আন্টি অন্যরুম থেকে তড়িঘরি করে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আসলেন। বললেন..

__আজ মেহমান ঘরে পড়ানো যাবে না। কাজের চাপে ফোন করতে ই ভুলে গেছেন।

__আচ্ছা আন্টি সমস্যা নেই। আমি চলে যাচ্ছি।

আন্টি তখনি বললেন, না। খেয়ে যাবে এত কষ্ট করে এসে না পড়িয়ে চলে যাচ্ছো খারাপ লাগছে।

না, আন্টি চলে যাই। বান্ধবীর সাথে একবার হাসপাতালে যেতে হবে।

বলে ই চলে আসছিলাম। তখন ই আন্টি আমার হাত টা ধরে সোফায় বসালেন।

মুখে একটু হাসি টেনে বললেন

__ জানো তো আমার ছেলেটাও তোমার মত ভার্সিটিতে পড়ে রাজশাহী তে। ওখানে কি খায় না খায়? হলের খাবার কি আর হবে! আর ছেলে মানুষ নিজে কি আর এত স্বাদ মত রান্না করতে পারে। বাড়িতে যখন আসে প্রত্যেকবার খেতে খেতে বলে ' মা, তোমার হাতের রান্না এত মজা কেন বল তো? '

আসলে বাইরে কি খায় কে জানে বাড়িতে আসলে মনে হয় ও প্রাণ ফিরে পায়।

যখন ই ঘরে টুকটাক রান্না করি ছেলেটার কথা মনে পরে যায়!

বিশ্বাস করো মা নিজের গলা দিয়ে আর খাবার নামে না। তোমাকে খাওয়ালে একটু শান্তি লাগে।

তুমিও তো পড়ালেখার জন্য বাবা মা'কে ছেড়ে থাকছো। আমার মত তোমার মাও হয়ত এমন করে চিন্তা করে আর চোখের জল ফেলেন তাই না!

অন্য মায়ের সন্তানে খাওয়ালেও মনে তৃপ্তি পাই যাই হোক কারো সন্তানকে তো খাওয়াচ্ছি।

কথাগুলো বলে ই আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন।

কথাগুলো একদম মনের মাঝে গেঁথে গেল। কখন আন্টির কথায় চোখ দিয়ে জল পড়ছিল খেয়াল ই করিনি।

মানুষ এত সুন্দর করে ভাবতে পারে! এত সুন্দর হয় মানুষের মন!

তখন ই নিজের মায়ের জন্য বুকের ভেতর টা হু হু করে উঠল!

নিজেকে সামলে নিলাম।

দেখলাম ঘরে বেশ মেহমান। বুঝিয়ে বললাম আজকে অনেক কাজ আপনার আন্টি বাড়তি ঝামেলার দরকার নেই আপনার রান্নাও বাকি মনে হচ্ছে হাতে হলুদের দাগ লাগানো। আজ এসব সামলান আমি অন্যদিন আপনার সাথে বসে খাবো। আজ তো আপনি আমার সাথে বসে খেতে পারবেন না!

উনি মেনে নিলেন তারপরও মেহমানদের আনা মিষ্টি না খাইয়ে ছাড়লেন না।

স্টুডেন্ট অসুস্থ থাকায় দুদিন যাওয়া হয় নি।

আজ যেতে ই হল ভেবে ছিলাম যাব না কিন্তু চলে গেলাম।

আন্টি নাস্তা নিয়ে আসলেন। তখনি বললাম আন্টি আজ তো আমি রোজা রেখেছি খাব না কিছু। আরো এক দেড় ঘন্টা পর ইফতার করবো রুমে গিয়ে।

আন্টি কিছু না বলে চলে গেলেন। কেমন জানি চুপচাপ চলে গেলেন হয়ত মন ভালো নেই।

পড়া শেষ করে নিলাম তাড়াতারি ইফতারের জন্য তো কিছু একটা বানাতে হবে রুমে গিয়ে সময় লাগবে।

পড়া দিয়ে টেবিল থেকে উঠে দরজার সামনে আসতে ই ডাক দিলেন।

__ কিছু মনে করো না। তোমার ইফতারের জন্য খিচুরি আর বেগুন ভাজি করেছি নিবে? আদা, পেঁয়াজ, কাচা মরিচ আর তেল ছাড়া আর অন্যকোন মসলা দেই নি। তোমাদের মুসলমানদের ইফতারে তো এগুলা খাও তাই না! নিবে আমার রান্না করা ইফতার!

কিরকম ইতস্তত আর কাচুমাচু হয়ে কথাগুলো বললেন।

বুকের মাঝে কেমন জানি ঝড় বয়ে গেল কথাটুকু শোনে।

আমি উনার হাত ধরে বললাম

__মা'য়ের ভালোবাসায় কোন ধর্ম থাকে না। মা ই পরম ধর্ম পরম আরাধ্য ।

#_মা

ফাবিহা ফেরদৌস

১২/০৩/২১

1
$ 0.00
Avatar for MK_Husain
3 years ago

Comments

চমৎকার 🤩

$ 0.00
3 years ago

ধন্যবাদ ভাই

$ 0.00
3 years ago

অনেক সুন্দর আর্টিকেল। এরকম লেখা আরো চাই,

আরো চাই। চমৎকার

$ 0.00
3 years ago

ধন্যবাদ

$ 0.00
3 years ago

Welcome boss

$ 0.00
3 years ago