#ভালোবাসার_আরেক_নাম_অনুভূতি💞
#পর্ব_1
নিথি:মা ও মা দেখো কে এসেছে কইগো তাড়াতাড়ি এসো কি যে কোরো না তুমি ।
নিথির মা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে বলল,,,,,,,
মা: ওমা রাহুল তুমি এসো এসো অনেক দিন পর এলে আমি ভাবছিলাম তোমাদের বাড়ি যাব তোমার মা এর সাথে দেখা করতে তোমরা বসো আমি একটু আসছি (রাহুল এর গালে হাত রেখে )।
নিথি: ওই এত কি ভাবছো হ্যা সামনে হবু বউ রেখে অনন্য দিকে মন একদম আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভাববে না বুঝেছেন মশায়(দুষ্টামি করে ) এই এত কি ভাবছো আমি কখন থেকে বকে যাচ্ছি এই ( ধমক দিয়ে )
রাহুল: ও কিছু বললে ( জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে )?
নিথি: কি হয়েছে বলতো তোমাকে খুব চিন্তিত দেখছি কিছু হয়েছে আমাকে বলো কি হয়েছে !!! ( অবাক হয়ে )
রাহুল: না নিথি কিছু হয়নি এমনি ভাবছিলাম একটু পানি দাও তো খাব গলা শুকিয়ে গেছে ।
নিথি: হ্যা আনছি ( সন্দেহ নিয়ে রাহুল এর দিকে তাকিয়ে )
নিথি রান্না ঘরে পানি আনতে গিয়ে ভাবতে লাগে রাহুল কে আজ কাল কেমন একটা অদ্ভুত লাগে আগের মতো নেই আগে আমার সাথে কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তো নিজের সব কাজ ফেলে আসতো আমাকে দেখার জন্য এমন কি আমার জন্য বেশিরভাগ সময়ই অফিস ও বন্ধ করতো আমার দের বিয়ের দিন যেদিন ঠিক করেছিল সেই দিন রাহুল কে সব থেকে বেশি খুশি লাগছিল মনে হচ্ছিল ওর থেকে খুশি আর কেউ নেই আর এখন ও আমার সাথে ভালো দেখা ও করে না কিছু তো একটা হয়েছে । নিথি ভাবতে ভাবতে গ্লাসএ পানি ভর্তি করে ফেলে সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই হঠাত নিথির মা রান্না ঘরে এসে চেঁচিয়ে বলে ওঠে ।
মা:এই নিথি এসব কি করেছিস পুরো রান্না ঘর পানি পানি করে দিয়েছিস তুই কি কোন কাজ ঠিক মতো করতে পারিস না এখন আমাকে এত কাজ রেখে পরিস্কার করতে হবে ( রেগে )
নিথি ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে বলল
নিথি:কি হয়েছে এত চেঁচাচ্ছো কেন সবসময়ই এইরকম করো কেন! !!!!!!
মাঃ এ মেয়ে বলে কি হ্যা বলি মহারানি নিচে দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন তাহলে সব বুঝতে পারবেন (মেঝের দিকে ইশারা করে) ।
নিথি পুরো ব্যাপারটা এতক্ষণে বুঝতে পেরে বলল, ,,
নিথি:সরি মা আসলে বুঝতে পারিনি আমি এখনই পরিস্কার করে দিচ্ছি ( নিচে দিকে মুখ নামিয়ে )।
মা: সে ঠিক আছে ছেলেটাকে কিছু খেতে দিয়েছিস নাকি দিস নি ।
নিথির এতক্ষণ পরে মনে পড়লো রাহুল কে পানি দিতে হবে । পানির গ্লাস টা নিয়ে তাড়াতাড়ি রাহুল এর কাছে গেলে ।
নিথি: পানি (রাহুল এর দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে )
রাহুলঃ এতক্ষণ পরে পানি! !!!( পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে )।
নিথি:সরি, রাহুল একটু আমাকে অফিসে ছেড়ে দেব আসলে একটা ফাইল আজই আফিস এ দিতে জমা দিতে হবে তুমি তো আজ অফিসে যাবে না মনে হয়?
রাহুল: না আজ আমার একটা কাজ আছে তাই যাবে না চলো তাহলে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আমি যাব । ( বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে )।
নিথির মা এসে রাহুল কে বলল, ,,
মাঃ এখনই চলে যাবে বাবা কিছু খেয়ে যাও আর একটু থাকে যাও ।(রাহুল এর দিকে তাকিয়ে )
রাহুল: আজ আর বসা হবে না আন্টি একটা জরুরি কাজ আছে যেতে হবে নিথি কে অফিস এ রেখে যাব, অনন্য একদিন আসবো আবার এখন আসি । নিথি চলো (নিথি কে ইশারা করে )।
নিথি: হুম চলো মা আসছি।
মা: আয় সাবধান যাবি ।
নিথি রাহুল এর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে উঠছে না এটা দেখে রাহুল বলল, ,
রাহুল:কি হলো ওঠো দেরি হয়ে যাচ্ছে তো (বিরক্ত হয়ে )।
নিথি:হুম চলো ( গাড়ি তে উঠে বসে সিডবেল্ট লাগাতে লাগাতে বলল )।
"অতীত"
রাহুল হলো নিথির বাবার বন্ধুর ছেলে নিথি আর রাহুল যখন ছোট্ট ছিল রাহুল এর বাবা নিথির বাবা কে বলেছিল
রাহুলের বাবা: আমাদের বন্ধুত্ব অটুট রাখার জন্য তোকে একটা কথা দিতে হবে ।
নিথির বাবা: কি কথা বল তোর আর আমার বন্ধুত্ব রাখার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি তুই শুধু একবার বলে দেখ।
সেই সময় নিথি আর রাহুল খেলা করছিল নিথি আর রাহুল একে অপর কে ছাড়া একদম থাকতে পারতো না নিথি বেশির ভাগ সময়ই রাহুল দের বাড়িতেই থাকতো ।
রাহুলের বাবা:ওদের দুজনকে দেখছিস কত সুন্দর লাগছে বলতো এরা একে অপর কে ছাড়া থাকতে পারে না এই দুটো বড়ো হলে এদের চার হাত আমারা যদি এক করে দিয় (রাহুল আর নিথির দিকে উদ্দেশ্যে করে ) কোন সমস্যা আছে?
নিথির বাবা: না না আমার কোন সমস্যা নাই যদি তোর ছেলে বড়ো হয়ে নিথি কে পছন্দ না করে তাহলে?
রাহুলের বাবা: তুই ও সব আমার হাতে ছেড়ে দে তুই শুধু রাজি থাক তাহলেই হবে আর আমার তো মনে হয় না রাহুল নিথি পছন্দ করবে না তা ছাড়া এরা দুজন দুজনের জান ।
তখন থেকে রাহুল আর নিথি বিয়ের কথা তাদের পরিবার ভেবে রেখেছিল হঠাত একদিন নিথির বাবা হাটব্লক হয়ে মারা যায় তার পর থেকেই রাহুলের বাবা নিশের সব দায়িত্ব নিতে লাগে এবং তারা বড়ো হলে বিয়ে দিন ও ঠিক করে রাখেন আর কিছু দিন পর নিথি আর রাহুল এর বিয়ে ।
"বর্তমান"
নিথি গাড়ি তে ঘুমিয়ে পড়ে ছিল অফিসের সামনে এসে রাহুল নিথি কে ডাকলো,,,
রাহুল:নিথি এই নিথি ওঠো চলে এসেছি নামো তাড়াতাড়ি আমাকে আবার যেতে হবে ।( নিথির দিকে তাকিয়ে )
নিথি: ও চলে এসেছি আসলে ঘুম চলে,,,,,,,,,,
বাকি টা রাহুল না বলতে দিয়ে বলল
রাহুল:হ্যা হ্যা বুঝেছি এখন তাড়াতাড়ি নামো তো (বিরক্ত হয়ে )
নিথি রাহুল এর কথায় কষ্ট পেল কিন্তু রাহুলের তাতে কিছু যায় আসে না নিথি গাড়ি থেকে নেমে অফিসে চলে গেলে ।
অফিসে ঢুকে প্রথমেই বস এর কেবিনে ঢুকলো ।
নিথি: স্যার আসবো?
বস: হুম এসো ।
নিথি: স্যার ফাইল টা ( বস এর দিকে এগিয়ে দিয়ে ফাইল টা )
বস: কাজ এত তাড়াতাড়ি শেষ করবে আমি ভাবিনি আজই দরকার ছিল ফাইল টা তাই তোমাকে ফোন করে ডাকলাম ।
নিথি: ওকে স্যার আমি আসি এখন ।
বস: নিথি শুনো ।
নিথি: হ্যা স্যার বলুন ।
বস: রাহুল আজ অফিসে আসেনি ও কথায় আছে জানো ।
নিথি: না স্যার ও বলল,,,,,,,,,,, কথাটা শেষ করার আগেই বস বলল।
বস: নিথি মা আমি কত বার বলেছি যে স্যার বলবে না কাকু বলবে আর কদিন পর তো আমি তোমার শশুর মশাই হব তখন আমাকে বাবা বলতে হবে কিনতু ( মুচকি হাসি দিয়ে )।
নিথি লজ্জা পেয়ে বলল ,,
নিথি: কাকু এখন আমি আসি তাহলে ।
বস: এসো ।
নিথি বসের রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের কেবিনে বসলো ।
মাথায় হাত দিয়ে বসে কোনো এক চিন্তার জগতে ভেসে ছিল হঠাত নিথির মা ফোন করলো ফোনটা রিসিভ করে বলল ।
নিথি:হ্যা মা বলো ।
মা: কখন বাড়ি আসবি এত বেলা হয়ে গেল তাড়াতাড়ি আয় এখন রাখি ।
নিথি ফোন টা রেখে দেয় বিকেল চারটে বাজে কিন্তু এতক্ষন নিথির কোন খেয়াল ছিল না ।নিথি তাড়াতাড়ি করে আফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা বেজে গেছে । কলকাতা শহরের রাস্তা রাত ঠিক বোঝা যায় না । বড়োবড়ো গাড়ি বিল্ডিং নানা রকম আওয়াজ ভিক্টোরিয়ার সাদা পাথরের নানা রকম আলো পরে ঝলমল করছে ভিক্টোরিয়া কে আরো সুন্দর লাগে রাতের বেলা একটা অসাধারণ পরিবেশ দেখার মতো একটা মূলত এই রাতের বেলা রাস্তায় সবসময়ই মানুষের ভিড়
জমে থাকে । এইসব দেখে নিথির মন ভালো হয়ে যায় ।হঠাত একটা বড়ো গাড়ি এসে নিথির সামনে ব্রেক করে নিথি ভয় পেয়ে গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে আর গাড়ি থেকে একজন চোখে সানগ্লাস পরা কালো কোট ভেতরে সাদা সার্ট ফরসা রং গোলাপি ঠোঁট একেবারে রাজপুত্র এর মতো । লোকটি নিথির সামনে এসে বলল কিছু বলার আগেই নিথি বলল
নিথি:চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি দেখতে পান না আপনারা নিজেদের কে কি মনে করেন হ্যা বড়ো গাড়ি চোরে মানুষ কে মানুষ মনে হয় না? ( রেগে )
মাহিন: what আপনি কি পাগল নিজে আমার গাড়ির সামনে এসেছেন আর উল্টে আমাকে কথা শুনেছেন । আমি ব্রেক না কষলে আপনি এতক্ষন আর বেঁচে থাকতেন না । আর আপনি কি অন্ধ? দেখে তো মনে হচ্ছে না ।
নিথি: কি বললেন আমি অন্ধ আপনি অন্ধ আপনার কোনো শিক্ষা নেয় মেয়েদের সাথে কি করে কথা বলতে হয় জানেন না ( মাহিন এর দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে )
মাহিন: কি বলেন আপনি আমার শিক্ষা নেই আপনি জানেন আমি কে আমি মাহিন চৌধুরী কলকাতার সব থেকে ধনী আমি ( অহংকার নিয়ে )।
নিথি: আপনি যেই হীনই হোন না কেন তাতে আমার যায় আসে না (মুখ বাঁকিয়ে )।
মাহিন: আমার নাম হীন নয় মাহিন আমাকে এত বড়ো অপমান করার আপনার সহস হয় কি করে ( রেগে )
ভুল টা আপনার তাই আপনি আমাকে সরি বলবেন ।
নিথি: কখোনো নয় আমি সরি বলবো না ।
পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক বললেন ।
ভদ্রলোক: কি হচ্ছে কি কেও একজন সরি টা বলে দিন তাহলেই হয় কত ভিড় হয়ে গেছে দেখুন আপনাদের জন্য সবার সমস্যা হচ্ছে । আরে ম্যাডাম ভুল কিন্তু আপনার তাই সরি টা তাড়াতাড়ি বলে দিন দয়া করে ।
মাহিল: আমার ওনার সরি লাগবে না ( সানগ্লাস টা চোখে পড়ে )
নিথি: অভদ্রতা ভালো জানেন ওনি আর রাতের বেলা কেও সানগ্লাস পরে (মুচকি হেসে )
নিথি তার পর একটা ট্যাক্সি কে ডাকলো ।
নিথি: এই ট্যাক্সি যাবেন?
ট্যাক্সি ড্রাইভার: কথায় যাবেন?
নিথি:ধর্মতলা কত ভাড়া?
ড্রাইভার: একশো ।
নিথি:একশো!!!!!! ( অবাক হয়ে ) আশি টাকা দেবে চলুন (ট্যাক্সি তে উঠে বসে )
ড্রাইভার: আরে নামুন আপনি আমি যাব না একশো টাকা দিলে যাব।
নিথি: আপনি যাবেন কি না যদি না যান আমি ট্রাফিক পুলিশ কে বলল আপনি আমাকে kidnap করে নিয়ে যাচ্ছেন ।
ড্রাইভার: কি মেয়েরে বাবা আমাকে পুরো ফাঁসিয়ে ছাড়বে ঠিক আছে কিন্তু আশি টাকার কম নেবনা বলে দিলাম ।
নিথি: ঠিক আছে চলুন তো ।
বাকি, ,,,,,,,,,,
1
41