আমাদের পবিত্র কুরআন মাজীদে 114 টি সূরা রয়েছে। সব গুলো সূরা আমাদের জন্য আল্লাহ্ তাআলার একটি রহমত। কুরআন মাজীদ তেলওয়াতের মাধ্যমে আমরা ইসলামী দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করতে পারি। কুরআন মাজীদের সব গুলো সূরা আমাদের জন্য বরকতময়।এই সব গুলো সূরার মধ্যে আমার সব থেকে প্রীয় সূরা হচ্ছে সূরাতুল ইখলাস ।আজকে আমি এই সূরার ফজিলত নিয়ে আলোচনা করবো।
🌸🌸সূরাতুল ইখলাছের ফযীলত 🌸🌸
(1) কুরআনের এক তৃতীয়াংশ
-----------------------------
(১) সূরাতুল ইখলাস কুরআনের এই তৃতীয়াংশের সমান। একদিন আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
''তোমরা সবাই একসাথে আসো। কেননা আমি তোমাদের কাছে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ পড়াবো।''
এ কথা শুনে যারা আসতে পারলো তাঁরা চলে আসলো। এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সূরাতুল ইখলাছ পড়লেন। এরপর তিনি আবার ঘরে ঢুকলেন। একটু পরে তিনি আবার বের হয়ে বললেন,
''আমি তো তোমাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমাদের কাছে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ পড়বো। জেনে রাখো, এটিই কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগের সমান।'' [১] সুবাহানআল্লাহ
(২) আরেক হাদীসে এসেছে,
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেন,
''তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ পড়তে পারবে?''
সাহাবীরা এ কাজটিকে অনেক কঠিন কাজ মনে করলেন এবং বললেন,
''হে আল্লাহর রসূল, আমাদের মধ্যে কে আছে, যে এটা পারবে?''
তখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানালেন যে, সূরাতুল ইখলাছ হলো কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ। [২]
(৩) নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
''নিশ্চয়ই আল্লাহ কুরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। এরপর قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ (সূরাতুল ইখলাছ)-কে কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগে পরিণত করলেন।'' [৩]
(৪) আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে সূরাতুল ইখলাছ পড়তে শুনে বললেন,
''জরুরী হয়ে গেলো।''
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,
''কী জরুরী হয়ে গেলো?''
তিনি বললেন,
''জান্নাত।'' [৪]
(৫) একজন লোক আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো,
'' قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরাতুল ইখলাছ) সূরাটি নিশ্চয়ই আমি ভালোবাসি।''
এ কারণে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
''তোমার এই ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে ঢুকাবে।'' [৫]সুবাহান আল্লাহ্
(৬) আরেক হাদীসে এসেছে,
এক সাহাবী ক্বুবা মাসজিদের ইমাম ছিলেন এবং তিনি সলাতের প্রতি রাকয়াতে সূরাতুল ফাতিহার পরে সূরাতুল ইখলাছ পড়তেন। এরপর অন্য কোনো সূরা পড়তেন। মাসজিদের অন্য লোকেরা এ কাজকে পছন্দ করছিলো না। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সাহাবীর কাছে এমনটি করার কারণ জানতে চান। তিনি বলেন,
''হে আল্লাহর রসূল, আমি এই সূরাকে ভালোবাসি।''
এ কথা শুনে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
''নিশ্চয়ই এ সূরার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে ঢুকাবে।'' [৬]
(৭) আরেক হাদীসে এসেছে,
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে ছোট একটি সৈন্যদলের নেতা করে পাঠান। তিনি সেখানে সবাইকে নিয়ে সলাত পড়তেন এবং তিনিই সেখানে ইমাম ছিলেন। সলাতের প্রতি রাকয়াতে তিনি সূরাতুল ফাতিহার পরে সূরাতুল ইখলাছ পড়তেন। এরপর তারা যখন ফিরে আসলো তখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সূরাতুল ইখলাছ পড়ার বিষয়টি জানালো। বিষয়টি জানার পর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
''তাঁর কাছে জানতে চাও যে, সে এটা কেন করেছিলো?''
তখন লোকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন,
''আমি এমনটি করেছি এ কারণে যে, এ সূরায় রহমানের (দয়াময়ের) গুন সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই আমি এটি পড়তে ভালোবাসি।''
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা জেনে বললেন,
''তাকে জানাও যে, আল্লাহও তাঁকে ভালোবেসেছেন।'' [৭]
আবূ বাক্র ইবনুল আরাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ''আমি ২৮ জন ইমামকে দেখেছি যারা রমাদ্বান মাসের তারাবীর প্রতি রাকয়াতে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সূরাতুল ফাতিহা) ও قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরাতুল ইখলাছ) পড়েই তারাবী শেষ করেছেন মুসল্লিদের উপর হালকা করার জন্য এবং সূরাতুল ইখলাছের ফযীলতের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য।'' [৮]
(4) নির্দিষ্ট নিয়মে সকাল-বিকাল পড়লে সব বিষয়ের জন্যই যথেষ্ট হবে
---------------------------------------------------------------------
(৮) আরেক হাদীসে প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে বলেছেন,
'যখন সকাল হয় আর যখন বিকাল হয় তখন 'তুমি قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরাতুল ইখলাছ) ও মু'ওয়াওয়িযাতাইন (সূরাতুল ফালাক্ব ও সূরাতুন নাস) তিন বার করে পড়ো, সব বিষয়ের জন্যই যা তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।'' [৯]
(৯) এক হাদীসে এসেছে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবী উকবা রদিয়াল্লাহু আনহুকে সূরাতুল ইখলাছ, সূরাতুল ফালাক্ব ও সূরাতুন নাস পড়ালেন। এরপর বললেন,
''হে উকবা, তুমি এগুলো ভুলে যেও না এবং এগুলো না পড়ে রাতে ঘুমাতেও যেও না।''
উকবা রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
''তিনি যখন বললেন, ''তুমি এগুলো ভুলে যেও না'', তখন থেকে আমি এগুলো কখনো ভুলে যাইনি এবং রাতে এগুলো না পড়ে কখনো ঘুমাতেও যাইনি''। [১০]
(১০) আরেকটি হাদীস হতে জানা যায় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রাতে ঘুমানোর আগে সূরাতুল ইখলাছ, সূরাতুল ফালাক্ব ও সূরাতুন নাস, এ তিনটি সূরা পড়তেন। আয়িশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
''নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন বিছানায় (শুতে) আসতেন তখন তাঁর দু'ই হাতের তালু একসাথে মিলাতেন। এরপর দু'ই হাতের তালুর উপরে قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরাতুল ইখলাছ), قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (সূরাতুল ফালাক্ব) ও قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (সূরাতুন নাস) পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর দু'ই হাতের তালু দিয়ে যতটুকু পারতেন তাঁর শরীরে মুছতেন। দু'ই হাতের তালু দিয়ে মাথা ও মুখ থেকে মুছা শুরু করতেন এবং শরীরের সামনে যতটুকু আছে তাতে মুছতেন। এমনটি তিনি তিন বার করতেন।'' [১১]
(১১) প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘’যে দশ বার قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরাতুল ইখলাছ) পড়বে, আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাতে বাড়ি বানাবেন।’' [১২]
------------------
[১] মুসলিমঃ ৮১২
[২] বুখার
good