🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀
----তনয়া ঠিকানা অনুসারে সেখানে গেলো।
ছোট একটা চায়ের দোকান সেখানে এক বৃদ্ধ চাচা চা বিক্রি করে। তনয়া গিয়ে তারকাছে এক বছর না না প্রায় দেড় বছর আগের ঘটনা জানতে চাইলো? কিন্তু চাচা ঠিক মত মনে করতে পারছিলেন না। পরে তনয়া প্রায় অনেকক্ষন ধরে তার সাথে কথা বলার পর তার কিছু কথা মনে পড়লো। আর সে যা বললো তাতে তনয়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না!
তারপর চাচার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি আসলো। মাথাটা ঘুরছে, কান থেকে মনে হয় গরম ধোয়া বের হচ্ছে, চোখের সামনে ঠিক কি তা দেখতে পাচ্ছে না, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেছে। মনে হয় কোন ভ্রম চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। যেখান থেকে বের হবার যত চেষ্টা করে ততটাই পথ হারিয়ে তার জালে আটকে পরে।
মাথায় পানি দেয়া দরকার! নয়তো মাথাটা ফেটে যাবে। বেশ কিছুক্ষন মাথায় পানি দিলো। তারপর আয়াতের জন্য রান্না করলো আয়াতের পছন্দের খাবার গুলো।
রাতে আয়াত খাবার খেতে বসে বলে……
আয়াতঃ ওরে বাবা ! এতো এলাহী কান্ড! তা ম্যাডাম এত কিছু রান্না করার কারন?
তনয়াঃ এমনিতেই । ঘরে একা ছিলাম সময় কাটছিলো না তাই?
আয়াতঃ ওহ! তা সময় না কাটলে আবার গল্প লেখা শুরু করো?
তনয়াঃ নাহ! গল্পের কথা, শব্দ , অক্ষর সব হারিয়ে গেছে। সবাই ধোকা দিয়ে দূরে সরে গেছে।
আয়াতঃ তুমিও তাদের ধোকা দিতে পারো?
তনয়াঃ তোমার কি মনে হয়? সেটা আদৌ সম্ভব?
আয়াত আর কোন কথা বললো না। খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। আজ সন্ধ্যা থেকে আকাশটা খুব মেঘলা মনে হয় যে কোন সময় বৃষ্টি হবে। তনয়া বারন্দায় ফুল গাছ গুলো কাছে দাড়িয়ে আছে। ঝিরিঝিার বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু সেগুলো বাতাসের সাথে পেরে উঠছে না। বাতাসের সাথে বৃষ্টি লহড় গুলো দুলে দুলে উড়ছে। কিন্তু বাতাসের দোলান সময় শরীরকে হালকা স্পর্শ করে যায়। সে স্পর্শে তনয়া শিহরিত হয়ে ওঠে। মনটা অজানা এক ভালোলাগায় রোমাঞ্চিত হতে থাকে।
তনয়ার মনটা আজ বৃষ্টি চাইছে? ভিষন বৃষ্টি! যে বৃষ্টি ওর মনের গ্লানি গুলো ধুয়ে নিয়ে যায়। মনটাকে রোমাঞ্চিত করে দিয়ে যায়। বৃষ্টি স্পর্শে শীতল হতে চায় ওর মন। মনটা যে আজ ভিষন ব্যাকুল। মনটা আজ কারো ভালোবাসাময় স্পর্শ চাইছে। কারো ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে চাইছে। কারো কাঁধে মাথা রেখে বৃষ্টি স্পর্শ করতে চাইছে। বৃষ্টির নহড় গুলো যখন আমাকে ছুয়ে ব্যাকুল করে যাবে তখন কারো ছোয়া ব্যাকুলতা দূর করে দিবে অসীম ভালোবাসায়। তখন অতীতের সব গ্লানী ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাইছে। দূরে থেকে ভেশে আসছে কিছু রোমান্টিক ভালোবাসার গান। যেগুলো তনয়াকে আরো বেশি রোমাঞ্চিত করেছে। ইতিমধ্যে বিৃষ্টির ধারা প্রবল হয়েছে। মুশল ধারে নিজের খুশিতে ঝড়ছে।
তনয়া নিজের হাত দুটো মেলে বৃষ্টি উপোভোগ করছে। উপভোগ করছে প্রকৃতির ভালোবাসা। মিশে যেতে চাইছে প্রকৃতির সাথে। তনয়াকে খুজতে আয়াত সামনে এসে দেখে তনয়া হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে। আয়াত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে কিভাবে বৃষ্টির কনাগুলো তনয়াকে পরম আদরে স্পর্শ করছে। বৃষ্টির কনাগুলোর ওপর আয়াতের খুব হিংসা হচ্ছে। আজ আয়াত যেনো নিজেকে তনয়ার থেকে দূরে রাখতে পারছে না। কোন এক মাদকতা আয়াতকে তনয়ার দিকে টানছে।
আয়াত বারান্দায় গিয়ে তনয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আয়াতের স্পর্শে তনয়া কেঁপে উঠে। আয়াত তনয়ার ঘাড়ের কাছের চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ দেয়। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালোবাসি তোমায়। তনয়া কিছু বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে ও নিজেই নিজের মাঝে নেই। আজ আয়াতের মাঝে বিলীন হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। তনয়া আয়াতের দিকে ঘুরে দাড়ালো। আয়াত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনয়ার দিকে। তনয়া আয়াতের পায়ের উপর পা দিয়ে দাড়ায়। আয়াত তনয়ার কোমরটা জড়িয়ে ধরে। তনয়া আয়াতের ঠোটে নিজের ঠোট দুটো দিয়ে হালকা পরশ দিয়ে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকায়। আয়াত তনয়াকে কোলে তুলে নেয়-------------এক অদ্ভুদ মাদকতা একে অপরকে আকর্ষিত করে ফেলে।------------------
খুব সকালে তনয়ার ঘুম ভাঙলো। আয়াতের বুকের মাঝে ছিলো ও। আয়াত ঘুমাচ্ছে। তনয়া আয়াতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে আমি জানি তুমি কোন অন্যায় করোনি? তবুও তোমায় অপরাধী মনে হয়? কিন্তু মনের টান বড় টান। আমার মনটা তোমায় অপরাধী মানতে নারাজ! আমি ৪০% সত্যি জেনেছি এখনো বাকিটা জানতে হবে। বুঝতে পারছি না কে কার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে? আর কেনই বা নিচ্ছে? হ্যা আয়াত তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে কিন্তু অন্যায় তুমিও আমার উপর কিছু কম করোনি? কিন্তু তার জন্য তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি। ভবিষ্যতেও দিবো। কারন তোমায় আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার রাগটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর তোমার প্রতিশোধটাকেও ভালোবেসে ফেলেছি।
তনয়া ফ্রেস হয়ে আয়াতকে নামাজ পড়তে পাঠিয়ে নিজেও নামাজ পড়ে নিলো। আয়াত নামাজ পড়ে এসে দেখে তনয়া নাস্তা বানাচ্ছে। আয়াত কেন যেনো তনয়ার দিকে তাকাতে পারছে না। কিছু লজ্জাবোধ আর অপরাধবোধ ঘিরে ধরেছে আয়াতকে। আয়াত ভাবছে কাল রাতে যেটা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। আমার তনয়ার কাছে মাফ চাওয়া উচিৎ আমিইতো ওকে বলেছিলাম ওকে জোড় বসতো-------
তনয়া আয়াতকে নাস্তা দিচ্ছে।
আয়াতঃ তনয়া কাল রাতের জন্য--------
তনয়াঃ স্যরি বলার প্রয়োজন নাই। আপনি কোন অন্যায় করেনি। আর আমার সাথে জোড় বসতোও কিছু করেননি? সো নিজের ভিতর অপরাধ বোধটা না রাখলেই বেশি ভালো হবে। যা হয়েছে দু জনের ভালোবাসার টানে হয়েছে। পাঁপ কিছু হয়নি।
আয়াত তনয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে তনয়া সত্যি কি সেই অন্যায়টা করেছে যার শাস্তি ওকে আমি দিচ্ছি? পরোক্ষনেই আবার ভাবলো না না আমি আর নিজেকে ওর মায়ায় জড়াবো না! ওকে কষ্ট দিবো অনেক কষ্ট! কষ্ট দেয়ার জন্যইতো ওকে বিয়ে করেছি আমি।
আয়াত নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে গেলো। তনয়া ফোনটা নিয়ে নীলয়কে ফোন করলো।
নীলয়ঃ হাই সুইট হ্যার্ট
তনয়াঃ তোমাকে বলেছি আমার সাথে নোংড়ামি কথা বলবে না।
নীলয়ঃ কি করবো বলো? চেষ্টা করেও পারি না।
তনয়াঃ বাজে কথা বলতে আমি তোমাকে ফোন করিনি? কিছু জানতে চাই।
নীলয়ঃ ওকে বলো?
তনয়াঃ তোমাকে আমি যে চিঠি আর গিফ্ট দিয়েছিলাম সেগুলো কি তোমার কাছে এখনো আছে?
নীলয়ঃ কেন?
তনয়াঃ আমার সেগুলো ফেরত চাই। আর তোমার গুলো নিয়ে যাবে।
নীলয়ঃ তুমি আমার স্মৃতি থেকে দূরে থাকতে পারো? কিন্তু আমি তোমার স্মৃতি নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবো না? তাই ওগুলো আমি দিবো না।
তনয়া জানতো নীলয় ওগুলো দিবে না। তবুও সন্দেহটা ক্লিয়ার করলো।
নীলয়ঃ আচ্ছা তোমার সাইকো হ্যাজবেন্ড এর কি খবর?
তনয়াঃ নিজের বন্ধুর সম্পর্কে এমন কথা বলতে লজ্জা করে না?
নীলয়ঃ যা বাবা সাইকোকে সাইকো বললাম তাতে লজ্জার কি আছে? আরে সাইকো না হলে কেউ সামান্য একটা মেয়ের জন্য সুইসাইড করে? সাইকো না হলে কেউ কি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিয়ে করে?
তনয়াঃ কি বললা? কিসের প্রতিশোধ? কি জানো তুমি এ বিষয়ে?
নীলয়ঃ জানিতো অনেক কিছুই বাট তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না? বলতে পারি যদি তুমি তার বদলে আমায় কিছু দাও। (নোংড়া ভঙ্গিতে)
তনয়া রাগ করে
ফোনটা কেটে দিলো। তারপর ওর শ্বাশুরির কাছে ফোন দিলো।
তনয়াঃ আসসালামু আলাইকুম মা! কেমন আছেন?
আয়াতের মাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম! ভালো! তুমি কেমন আছো?
তনয়াঃ জ্বী ভালো। মা আপনার কাছে কিছু কথা জানতে চাইবো সত্যি করে বলবেন তো?
আয়াতের মাঃ হ্যা বলো?
তনয়াঃ মা আয়াত প্রায় দশ এগারো মাস আগে সুইসাইড করতে কেন গেছিলো?
আয়াতের মা প্রশ্নটা শুনে থমকে যায়! তারপর বলে?
আয়াতের মাঃ তোমাকে কে বললো?
তনয়াঃ সেটা বড় কথা না মা? আয়াত কেন এমন করেছিলো আপনি তার উত্তরটা দিননা মা! প্লিজ
আয়াতের মাঃ (একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে) সেটা সঠিক ভাবে আমিও জানিনা। আয়াতকে অনেক জিগেস করার পরও ও আমাদের প্রশ্নের কোন উত্তর দেয়নি। তবে যতটুকু জেনেছি আয়াত একটা মেয়েকে অসম্ভব পরিমান ভালোবাসতো কিন্তু মেয়েটা আয়াতকে ছেড়ে চলে যায়। আয়াতকে নাকি অনেক বাজে কথা বলেছিলো মেয়েটা। তার জন্যই আয়াত ডিপ্রেশনে চলে গেছিলো। আর তারপর দু বার নিজের প্রান নেবার চেষ্টা করেছিলো। তারপর ওকে আমরা আমাদের এখানে এনে রাখি। ভালো সাইক্রাটিস দেখাই। তারপর ধীরে ধীরে আয়াত সুস্থ হলো। তারপর একদিন তোমাকে দেখলো। আমাদের কাছে তোমার কথা বললো। তাই আমরা তোমাকে এ বাড়ির বৌ করে আনি।
তনয়াঃ (একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে) আচ্ছা মা মেয়েটার নাম কি? মানে আপনি কি মেয়েটাকে চেনেন?
আয়াতের মাঃ নারে মা! আয়াত কখনো বলেনি। তুই আবার আমার ছেলেটাকে কষ্ট দিসনা। ও এখন তোকে পাগলের মত ভালোবাসে। ওর খেয়াল রাখিস মা।
তনয়াঃ হ্যা মা! খেয়ালতো আমায় রাখতেই হবে?
তারপর তনয়া ফোনটা রেখে অনেক কিছু ভাবে। ভাবতে ভাবতে সবজি কাটতে গিয়ে হাতটা অনেকটা কেটে ফেলে। তনয়া কোন মতে বেঁধে নেয়। কারন আন্টি তার দেশের বাড়ি গেছে। আসতে আরো প্রায় একমাস সময় লাগবে। তাই ঘরের কাজ তাকেই করেতে হবে। তনয়া সব কাজ গুছিয়ে আয়াতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
দড়জায় বেল বাজতেই তনয়া দৌড়ে গিয়ে দড়জা খুলে। আয়াত ভিতরে ডুকে কিন্তু আয়াতকে দেখে মনে হলো প্রচন্ড রাগে আছে।
তনয়াঃ কি হয়েছে আয়াত?
আয়াত কোন কথা না বলে সজোড়ে তনয়াকে একটা চড় মারলো। তনয়া হতভম্ব হয়ে গেলো। আয়াত রাগ করে বললো------
আয়াতঃ আমি জানতাম তুমি লোভী খারাপ একটা মেয়ে কিন্তু তুমি এতটা নোংড়া তা আমার জানা ছিলো না। এই মেয়ে তোমার এক ছেলেতে হয়না? প্রথমে নীল , তারপর আমি, এখন আবার রাহাত?
আয়াতের কথাগুলো শুনে তনয়ার দম বন্ধ হবার অবস্থা হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো এখনি মারা যাবে।
আয়াতঃ ও আমিতো ভুলেই গেছিলাম যে রাহাতই তোমার নীল? তাই না?
তনয়া আয়াতের কথায় যতটানা হতভম্ব হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো এটা ভেবে যে আয়াত জানে রাহাত ই নীল!
চলবে,,,,