এ গুলো দেখে তনয়া হারিয়ে গেলো তার দেড় বছর আগের ঘটনায়।
দেড় বছর আগে-------
তনয়া তখন অনার্স তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে পড়ে। ফেইসবুকে টুকিটাকি লেখা, পরিবার আর লেখাপড়া নিয়েই ওর জগৎ। একদিন একজন কুরিয়ার বয় এসে তনয়ার কাছে একটি র্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটি খাম দিয়ে বললো তনয়া ম্যামের জন্য।
তনয়া কৌতুহল বসতো রুমে এসে উপরের র্যাপিং পেপার খুলে দেখে ভিতরে খুব সুন্দর একটি খাম। খামটি দেখেই বোঝা যায় যে, কেউ খুব যত্ন করে খামটি বানিয়েছে। তনয়া খামটা খুলে ভিতরে একটি নীল কাগজ আর তাতে কিছু লেখা। তনয়া পড়তে শুরু করলো
💖💖তনয়া,,,
জানি তুমি এখন অনেক বিস্ময়ে আছো! আর থাকবেই বা না কেন? এ যুগে কাউকে চিঠি দেয়াটা সত্যিই বিস্মেয়ের বিষয়। কিন্তু জানো তনয়া চিঠিতে ভালোবাসার যে গভীরতা প্রকাশ পায় তা অন্য কোন কিছুতে প্রকাশ পায় না।
জানি তুমি এখন মিষ্টি করে হাসছো। এই ওয়েট তনয়া! ও ভাবে প্লিজ হেসো না। আমি পাগল হয়ে যাবো। এই তুমি এখন খুব জোড়ে জোড়ে হাসছো কিন্তু? এটা কিন্তু ঠিক না।
(তনয়া চিঠিটা পড়ছে আর সত্যিই হাসছে)
এখন মূল কথায় আসি? তনয়া আমি তোমার কথার মায়ায় পড়েছি। তোমার হাসির মায়ায় পড়েছি। তোমার চোখের চশমার মায়ায় পড়েছি। আর তোমার শব্দের জালের মায়ায় পড়েছি। মানে তোমার লেখনীর মায়ায়। তুমি যেমন অক্ষর দিয়ে খেলতে ভালোবাসো ঠিক তেমনি আমিও।
এতটা পড়ার পর নিশ্চই ভাবছো আমি কে? সেটা নাহয় কিছুদিন অজানাই থাক? তবে হ্যা তোমার আইডিতে নীলয়ের নীল নাম থেকে অনুরোধ পাঠাইছি। দয়াকরে গ্রহন করে আমাকে ধন্য করুন। তবে হ্যা তোমায় আমি প্রত্যেক মাসে দুটো চিঠি দিবো। আর আমি জানি চিঠির উত্তর তুমি দিবে। কারন তুমিও আমার মত এনালগ যুগের চিঠি প্রথা পছন্দ করো। এখন ভাবছো আমার ঠিকানা কোথায় পাবে? নিচে দেয়া আছে। কিন্তু এ ঠিকানায় তুমি কখনো আমায় পাবে না। তাই খোজার বৃথা চেষ্টা করবে না। শুধু চিঠি দিবে।
চলো না আমরা কিছুদিন শব্দের সাথে খেলি। আর হ্যা এখন হাসিটা বন্ধ করো। আমায় পাগল বানানোর কনট্রাক্ট নিয়েছো নাকি?
ইতি______
নীলয়।
তনয়া চিঠিটা পড়ে হাসছে। আর ভাবছে লোকটা কি পাগল নাকি? যাক ফোন চেক করে দেখি। এফবিতে নীলয়ের নীল আইডিটা কনফ্রিম করার সাথে সাথে মেসেস আসলো।
নীলয়ঃ তা ম্যাডাম চিঠিটা কেমন লাগলো?
তনয়াঃ খুব বাজে!
নীলয়ঃ আচ্ছা! তাহলে মুখ ভর্তি তোমার এত হাসি কেন?
তনয়াঃ কিভাবে দেখলেন?
নীলয়ঃ;মনের আয়নায়।
এভাবে টুকটাক কথা হতে থাকে ওদের ভিতর। তনয়া পরের দিন নীলয়কে একটা চিঠি দিলো। চিঠিতে লিখেছে
**নীলয়
আপনার লেখার আন্দাজ সত্যিই অতুলনীয়। তাই উত্তর না দিয়ে পারলাম না। তবে পরিচয়টা দিয়ে আমাকে বাধিত করবেন? আর মনেহয় আপনি আমাকে চেনেন? কিন্তু আমকেও চেনার সুযোগ দিন?
ইতি_____
তনয়া
নীলয়ের উত্তর
💖💖তনয়া,
পরিচয় দিবো কিন্তু ধীরে ধীরে। আর তোমার সাথে ঠিক ছয় মাস পর দেখা করবো। একটা গিফ্ট পাঠালাম গ্রহন করে এই অধমকে ধন্য করুন।
ইতি_____
নীলয়
একটা ছোট হার্ট শেপ লাভ দেয়া ছিলো গিফ্ট বক্সের ভিতর।
এভাবে রোজ ওদের মাঝে মেসেস এ অনেক কথা হতে থাকে। আর প্রত্যেক মাসে দুটো চিঠির আদান প্রদান হয়। নিজেদের পছন্দ অপছন্দ সব একে অপরে জেনে নিলো কিন্তু নীলয় তার পরিচয়টা দিচ্ছিলো না। তনয়া নিজের অজান্তেই নীলয়কে ভালোবেসে ফেলে।
ছয় মাস পর নীলয় তনয়ার সাথে দেখা করতে ওদের শহরে আসে। তনয়ার সাথে নীলয়ের দেখা হয়। কিন্তু------
হঠাৎ ফোনের রিং বেজে ওঠে। তনয়ার কল্পনায় ছেদ পড়ে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নীলয় ফোন করেছে।
তনয়াঃ হ্যা বলো?
নীলয়ঃ হাই সুইট হার্ট! কেমন আছো?
তনয়াঃ জাস্ট সেটাপ।
নীলয়ঃ তনয়া তুমিতো আমায় জানাওনি যে তোমার বিয়ে আমার বন্ধুর সাথে হচ্ছে?
তনয়াঃ আমি কিভাবে জানবো যে আয়াত তোমার বন্ধু?
নীলয়ঃ সিট! আমি যদি জানতাম আয়াত তোমাকে বিয়ে করছে তাহলে কখনো আয়াতের সাথে তোমার বিয়ে হতে দিতাম না।
তনয়াঃ মানে?
নীলয়ঃ আমার ইউস করা জিনিস আমি কিভাবে আমার বন্ধুকে দেই বলো?
তনয়াঃ বাজে নোংড়া কথা বন্ধ করো। তোমার সাথে আমার মাত্র তিনবার দেখা হয়েছিলো। আমি তোমার হাত পর্যন্ত ধরিনি।
নীলয়ঃ সেটাই তো আফসুস। যেটা আমি করতে পারিনি সেটা আয়াত অনায়াসে করছে। আচ্ছা আমার মধ্যে কি প্রবলেম ছিলো?
তনয়াঃ সমস্যা তোমার মানুষিকতায় ছিলো। আর আয়াত আমার হ্যাজবেন্ড ও চাইলে আমার সাথে সব করতে পারে। সে অধিকার ওর আছে।
নীলয়ঃ ও তো একটা সাইকো। তা জানো না?
তনয়া রাগ করে ফেনটা কেটে দিলো।
তনয়া ভাবছে নীলয়ের কথায় বোঝা যায় ও জানতো না আমার বিয়ে আয়াতের সাথে হয়েছে। তাহলে কি আয়াত? না না আয়াত কখনো এমন কাজ করতে পারে না?
নাহ সত্যিটা জানতে হবে। আর সেটা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে আগে নীলয়ের বিষয়ে সব কিছু জানা। তাহলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবো? আমি সেই ঠিকানায় যাবো যে ঠিকানায় আমি নীলয়কে চিঠি পাঠাতাম? দেখি যদি কিছু পাই?
তনয়া পরের দিন আয়াত অফিসে যাওয়ার পর সে ঠিকানায় গেলো কারন ঠিকানা সিলেটের ছিলো। কিন্তু সে ঠিকানায় গিয়ে তনয়া যা জানলো তাতে ওর পুরো পৃথিবী বদলে গেলো________
চলবে,,,,,,,,,,,,