🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
আলমারির মধ্যে কিছু জিনিস দেখে তনয়ার বুক কেঁপে উঠলো।
তনয়া জিনিস গুলো দেখে ওর চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল ঝরছে। আর ভাবছে এগুলো ওর কাছে কিভাবে এলো? কে আয়াত? কি সম্পর্ক ওর আমার সাথে নাকি তার সাথে?
নাহলে এ জিনিস গুলো ওর কাছে কিভাবে এলো? নাকি সবটা আমার মনের ভুল। মাথায় ডুকছে না কিছু। তারপর জামাকাপড়ের মধ্যে একটা নীল রঙের ডায়রি পেয়েছে। সেটা পড়তে যাবে অমনি ছো মেরে আয়াত তনয়ার হাত থেকে ডায়রিটা নিয়ে বললো------
আয়াতঃ আমার জিনিসে হাত দেয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়?
তনয়াঃ কে আপনি? আর কে সে? তার সাথে কি সম্পর্ক আপনার ? আর আমার উপর বা কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন?
আয়াত তনয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে জাস্ট সেটাপ বলে তনয়াকে চড় মারার জন্য হাত উঠালো কিন্তু চড় মারলো না। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দেয়ালের উপর সজোড়ে একটা ঘুষি মারলো। আর বললো-------
আয়াতঃ এ প্রশ্নের উত্তর জানার মত অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো। তোমার মত মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে।
আয়াতের কথা শুনে তনয়ার ভিষন কষ্ট লাগলো তাই রাগ করে বললো---
তনয়াঃ ও তাহলে আমাকে বিয়ে করতে আপনার রুচিতে বাঁধেনি?
আয়াত তনয়াকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বললো
আয়াতঃ বললাম না প্রতিষোধ নিবো। চরম প্রতিশোধ।
তারপর রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলো। তনয়া খুব কান্না করছে। ভিষন কান্না। আর ভাবছে কি হচ্ছে আমার সাথে? কি করেছি আমি ওর সাথে?
প্রায় সন্ধ্যার আগে আগে আয়াত রুমে এসে বললো তৈরী হয়ে নাও। আমাদের বেড়োতে হবে।
তনয়াঃ কোথায়?
আয়াতঃ আমার বিয়ে উপলক্ষে বন্ধুরা পার্টি দিচ্ছে সেখানে।
তনয়াঃ আমি যাবো না।
আয়াতঃ খামোখা সিন ক্রিয়েট করো না। তুমি জানো তোমাকে না নিয়ে আমি যাবো না। সো তৈরী হয়ে নাও। আর হ্যা শাড়ি পরবে।
তনয়া রাগ করে শাড়ি না পরে একটা সিম্পল থ্রিপিচ পরে বের হলো।
আয়াতঃ তোমাকে না বললাম শাড়ি পরতে?
তনয়াঃ আপনার কথা মানতে আমি বাধ্য নই?
আয়াতঃ তুমি নিজে শাড়ি পরবে নাকি আমি পরিয়ে দিবে। আমি পরালে কিন্তু ব্লাউজ পেটিকোটটাও আমিই পরিয়ে দিবে? সো---
তনয়াঃ এই না না। আমি নিজেই পরছি। তনয়া মনে মনে বলছে একে বিশ্বাস নেই।
তাই শাড়ি পরেই পার্টিতে গেলো। পার্টি থেকে কাঁদতে কাঁদতে তনয়া ফিরলো। আর আয়াতকে বললো----
তনয়াঃ আমি জানিনা আমি কি অন্যায় করেছি আপনার সাথে? কিন্তু আপনি আজ এতগুলো লোকের মাঝে আমাকে এভাবে অপমান না করলেও পারতেন? নিজের স্ত্রীকে যে অন্যের লোকের সামনে অপমান করে সে ঠিক কোন ধরনের মানুষ তা বোঝাই যাচ্ছে।
তনয়ার কথা শুনে আয়াত হতবাগ হয়ে গেলো। কারন আয়াত সত্যিই জানতো না যে আজ পার্টিতে এমন কিছু হবে?
🍀🍀
আয়াত আর তনয়া একসাথে পার্টিতে গেলো।
পার্টির মধ্য মনি হয়ে ছিলো তনয়া। আয়াত সবার সাথে তনয়ার পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই তনয়ার খুব প্রশংসা করছে কারন তনয়া দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার আচার ব্যবহার মার্জিত।
আয়াত ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ছিলো। তনয়া দুটো মেয়ের সাথে কথা বলছিলো। আয়াতের এক বন্ধু নাম ফাহাদ। ফাহাদকে দেখে তনয়ার মোটেও সুবিধার মনে হয়নি। কারন ফাহাদ বার বার বিচ্ছিরি নজড়ে তনয়ার দিকে তাকাচ্ছিলো। তনয়ার খুব অসস্থি বোধ হচ্ছিলো।
তনয়া এমনিতেও এসব পার্টি করা আড্ডা দেয়া তেমন পছন্দ করে না। তাই চুপচাপ এক জায়গায় বসে রইলো। ফাহাদ এসে তনয়ার অনেকটা কাছে বসলো। তনয়া কিছুটা সরে যাওয়ায় ফাহাদ আরো তনয়ার কাছ ঘেসে বসলো। তনয়ার খুব বিরক্ত লাগছিলো তাই উঠে যাবে এমন সময় ফাহাদ বললো
ফাহাদঃ ভাবি আপনি আয়াতের উপর খুশিতো?
তনয়াঃ মানে?
ফাহাদঃ বুঝেও না বোঝার ভান কেন করছেন ভাবি? মানে আয়াত আপনাকে খুশিতে রাখছে তো? (খুব বাজে ইঙ্গিত দিয়ে)
তনয়াঃ জাস্ট সেটাপ। বাজে কথা একদম বলবেন না।
ফাহাদঃ আরে ভাবি এত রাগ করছেন কেন? এমন ভাব করছেন যেনো আপনি কত সতী? বিয়ের আগে যে আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিলো তা তো আমরা জানি। আর তার সাথে যে আপনি কিছুই করেনি নি তাকি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? তার থেকে চলুন মিলে মিশে এনজয় করি।
তনয়ার ভিষন রাগ উঠে গেলো ঠাস করে ফাহাদকে একটা চড় দিয়ে বসলো। ওখানের সবাই হতবাগ হয়ে গেলো। ফাহাদ রাগি চোখে তনয়ার দিকে তাকালো। আয়াত তনয়ার কাছে এসে কি হয়েছে তা জানতে চাইলো----
আয়াতঃ কি হয়েছে তনয়া?
ফাহাদঃ ও কি বলবে? আমি বলছি? আমি তোর বৌকে বললাম আমার সাথে একটু ডান্স করতে ওমনি আমাকে একটা চড় মেরে দিলো!
তনয়াঃ আরেকটা মিথ্যা কথা বললে জুতা পিটা করবো। নোংড়া লোক কোথাকার? আয়াত ওনি আমার সাথে নোংড়ামি করতে চেয়েছিলো। তাই আমি ওনার নোংড়ামির প্রাপ্য জবাব দিয়েছি।
ফাহাদঃ ঐ বেশি সতী সাজার চেষ্টা করিস না। তোর বিয়ের আগের বয়ফ্রেন্ড এর কথা আমরা জানি। আয়াত তোর বৌকে পরীক্ষা করে দেখিস ঠিক আছে কিনা? কে জানে বয়ফ্রেন্ডর এর সাথে কি না কি করেছে?
ফাহাদের কথা শুনে আয়াতের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ভিষন রাগ চেপে গেলো। ধুমধাম ফাহাদকে কয়েকটা ঘুষি মারলো। দুজনের হাতাহাতি হতে লাগলো। সবাই মিলে ওদের ছাড়িয়ে দিলো। আয়াত রাগ করে তনয়ার হাত ধরে পার্টি থেকে চলে আসে। সারাপথ তনয়া কান্না করতে ছিলো। বাড়ি এসেই তনয়া আয়াতকে বললো-----
তনয়াঃ আপনি এমন না করলেও পারতেন?
আয়াতঃ মানে? কি করেছি আমি?
তনয়াঃ দেখুন একদম নাটক করবেন না?
আয়াতঃ কি নাটক করলাম?
তনয়াঃ বিয়ের আগে আমার রিলেশনের কথা আপনিই আপনার বন্ধুদের বলেছেন তাই না? আমি কি এমন দোষ করেছি যার কারনে আপনি আমাকে সবার সামনে এভাবে হেনস্তা করলেন? আর মানলাম নাহয় আমি অন্যায় করেছি? তাই বলে আপনি নিজের স্ত্রীকে এতগুলো লোকের সামনে ছোট করলেন? আপনি ভুলে গেলেন যে আমরা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী!
আয়াতঃ চুপ একদম চুপ। আমি তোমার পুরোনো রিলেশনের কথা কাউকে বলিনি।
তনয়াঃ তাহলে আপনার বন্ধুরা কিভাবে জানলো?
আয়াতঃ সেটাতো আমিও ভাবছি?
তনয়াঃ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করবেন না?
আয়াতঃ তনয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি কি তোমাকে ভয় পাই যে তোমার কাছে মিথ্যা কথা বলবো? আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই ঠিকই কিন্তু তোমার সম্মান নষ্ট করে না। কারন আমি মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করি। আর তুমি সেটা বিশ্বাস করো আর না করো তাতে আমার কিছু আসে যায় না। হু কেয়ার'স। কথাগুলো বলে আয়াত রাগ করে ছাদে চলে গেলো।
আয়াত তনয়াকে টাওয়াল পেচিয়ে কোন মতে রুমে নিয়ে গেলো। কিন্তু তনয়ার কাপড় পাল্টে দিবে কি দিবে না তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে। ওর মাকে যে বলবে তার ও উপায় নাই। মা হাজারটা প্রশ্ন করবে?
- শেষে আয়াত নিজের চোখ বন্ধ করে কোন মতে তনয়ার শাড়িটা পাল্টে দিলো। অতিরিক্ত ভেজার কারনে তনয়ার ভিষন জ্বর আসছে। আয়াত সারা রাত তনয়ার সেবা করলো। মাঝে মাঝে তনয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো---
আয়াতঃ তোমার দিকে তাকলে তোমাকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা করেনা। ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। খুব ভালো। কিন্তু তোমার দেয়া আঘাতটা মনে পড়লে তোমাকে আর দ্বিতীবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না।
তনয়া জ্বরের ঘোরে অনেক প্রলাব করেছে। আয়াত ওকে জ্বরের ঘোরেই খাবার আর ঔষধ খাইয়ে দিলো। শেষ রাতের দিকে তনয়ার জ্বর ছেড়ে গেলো। আয়াত তনয়াকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে,,,
Nice