---আজ বাড়িতে তানিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে।
সবাই ভিষন খুশি। খুশি হবার ই কথা কারন তানিয়া পরিবারের সবার চোখের মনি। সবার এত খুশির মাঝেও একজন খুশি হতে পারছে না আর সে হচ্ছে তানিয়া। সবার সাথে হাসি হাসি মুখ করে কথা বলছে কিন্তু ওর ভিতরে ভিতরে কেমন যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে।
কেনই বা হবে না? মনের কোনে যে অন্য কেউ বাসা বেঁধে বসে ছিলো। কিন্তু এখন তানিয়া তাকে ঘৃণা করে প্রচন্ড ঘৃণা। নীলয় নামের একটা ছেলেকে তানিয়া পছন্দ করত। হয়ত মনের কোনে নীলয়ের জন্য একটু ভালোবাসা নামক বিজ থেকে ছোট একটা চারার জন্ম হয়েছিলো। কিন্তু নীলয় সে চারাটা বেড়ে ওঠার আগেই মেরে ফেলেছে। কারন নীলয় তানিয়ার থেকে ভালোবাসা না অন্য কিছু নিতে চেয়েছিলো।
কিন্তু তানিয়া বিয়ের আগে এসব করাকে প্রচন্ড ঘৃনা করত তাই তো নীলয়ের উদ্দেশ্য বুঝে সব সম্পর্ক শেষ করে চলে এসেছে তানিয়া।
তানিয়ার বিয়ে হচ্ছে আয়াত এর সাথে। তানিয়ার পরিবারের সবাই আয়াতকে ভিষন পছন্দ করে। আয়াত একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের আগে আয়াত তানিয়ার সাথে দু তিনবার দেখাও করে। আয়াতের কথা বলার ধরন , ব্যবহার, সৌহার্দ্যপূর্নতা, গুরু জনদের সম্মান করা এসব বিষয় গুলো তানিয়ার খুব ভালো লেগেছে। তানিয়া আয়াতকে নীলয়ের বিষয় সব খুলে বলেছে। আয়াত তখন বলেছে,
আয়াতঃ দেখুন তানিয়া প্রত্যেকেরই একটা অতীত থাকে। আমাদের উচিৎ বর্তমান নিয়ে ভাবা! অতীতটাকে অতীতেই রেখে দেয়া বেটার।
আয়াতের ছোট ছোট বিষয় গুলো তানিয়ার কাছে বেশ ভালো লাগতে শুরু করে। তারপর সব দিকে বিবেচনা করে আয়াতকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো।
আর আজ ওদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তানিয়া খুশি হবার চেষ্টা করছে তারপরও খুশি হতে পারছে না। মনের মাঝে কোথায় যেনো একটা খুত খুত করছে। মনে হচ্ছে কিছু খারাপ হবে! ভিষন খারাপ। তানিয়াকে হলুদের সাজে সাজানো হয়েছে। বেশ সুন্দর লাগছে। আয়াতদের বাড়ি থেকে তানিয়ার জন্য হলুদের ত্বত্ত আসে। তানিয়াকে বসিয়ে সামনে বসে সবাই নাচ গান আনন্দ করছে। একটা ছোট বাচ্চা তানিয়ার কাছে এসে তানিয়াকে হাতে ছোট একটা চিরকুট দিয়ে বললো।
----মিষ্তি আন্তি এতা তোমাকে দিতে বলেছে?
তানিয়াঃ বাবু এটা তোমায় কে দিলো?
----ঐ যে আঙ্কেল? আলে আঙ্কেলতা গেলো তোতায়?
তানিয়াঃ ঠিক আছে বাবু্ আর খুজতে হবে না। তুমি তোমার মায়ের কাছে যাও।
তানিয়া চিরকুট খুলে পড়ার পর ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
চিরকুটে হাতের লেখা ছিলো না, টাইপ করা ছিল,
***তানিয়া! তুমি বিয়ে করছো! কনগ্রেচুলেশন! আর আমায় দাওয়াতও দিলে না? দ্যাট'স নট ফেয়ার? এর শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে। ভয় পেয়ো না আমি তোমার বিয়ে ভাঙবো না। কিন্তু হ্যাঁ তিলে তিলে তোমায় কষ্ট দিবো। আমার এতবড় ক্ষতি করলে আর আমি তোমায় শাস্তি দিবো না। তাকি হয় বলো?
এই না না। আমাকে একদম নীলয় ভাববে না। নীলয়ের এবং তোমার ধরা ছোয়ার বাইরের লোক আমি। তবে হ্যাঁ নীলয়ের মত লম্পটকে বিয়ে করোনি বলে আমি ভিষন খুশি। আর হ্যাঁ ভুলে যেও না যেনো শাস্তি! রোজ তোমায় শাস্তি পেতে হবে রোজ। কারন এটা আমার প্রতিশোধ। বাই ভালো থেকো। উইশ মেনি মেনি হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।
ইতি------
প্রতিশোধ ওহ স্যরি
তোমায় ঘৃনা করে।
চিঠিটা নিয়ে তানিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে। তানিয়ার ভিষন ভয় করছে এমনিতেই সকাল থেকে মনটা কেমন যেনো করছে। তারপর আবার এসব! চিঠিটা পড়ে তো বোঝা গেলো এটা নীলয় না কিন্তু তানিয়া তবুও শিওর হবার জন্য বাচ্চা মেয়েটাকে আবার ডেকে নীলয়ের একটা ছবি ছিলো সেটা দেখিয়ে বলল,
তানিয়াঃ বাবু এই আঙ্কেলটা ছিলো?----নাতো আন্তি
তানিয়া টেনশনে কি করবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিলো না। নীলয়ের সব ছবিগুলো ডিলিট করে ফেললো। সেদিন অনেক আনন্দ করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো।
রাতে তানিয়া বারান্দায় বসে চিঠিটার কথা ভাবছে এর মধ্যে আয়াতের ফোন আসলো
আয়াতঃ হ্যালে তানিয়া! কি করছো?
তানিয়াঃ না তেমন কিছু না। আপনি?
আয়াতঃ একটা পরীকে দেখছি। হলুদ কাপড় পরা গোলাপের সাজে সজ্জিত একটা হলুদ পরীকে দেখছি। মানে তার ছবি দেখছি।
তানিয়াঃ আপনি আমার ছবি কোথায় পেলেন?
আয়াতঃ আমি কি আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছি?
তানিয়াঃ ওহ! দ্যাট'স গুড।
তারপর আরো কিছুক্ষন কথা হলো ওদের মাঝে। তানিয়া একবার ভাবলো চিঠিটার কথা আয়াতকে একবার বলবে। কারন যার সাথে পুরো লাইফ শেয়ার করবে তার কাছ থেকে কিছু লুকানো ঠিক না। তারপর আবার ভাবলো থাক কি দরকার শুধু শুধু ওকে টেনশন দেয়ার? বিয়ের পর সব বলে দিবো।
আজ ওদের বিয়ে
ধুম ধাম করে ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। তানিয়া বিদায় বেলা কান্না করতে করতে প্রায় অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়লো। আয়াত গাড়িতে বসে তানিয়াকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। তাই আয়াত বলল,
আয়াতঃ এখন এতো কন্না করলে বাকি জীবন কি করবে?
তানিয়াঃ মানে?
আয়াতঃ মজা করলাম।
বধূবরনে সব রিতিনীতি শেষে তানিয়াকে আয়াতের রুমে দিয়ে আসা হলো। তানিয়া অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে কিন্তু আয়াত আসছে না। এদিকে তানিয়ার একা বসে থাকতে খুব বিরক্ত লাগছে।
কিছুক্ষন পর আয়াত আসলো। তানিয়া সালাম করলো। কিন্তু আয়াত সালামের কোন প্রতিউত্তর না দিয়ে সোজা আলমারিটা খুললো। তানিয়া কিছুটা বোকা হয়ে গেলো। তারপর আবার গিয়ে বিছানায় বসলো। আয়াত আলমারি থেকে কিছু একটা বের করে তাতে কিছু লিখলো। মনে হয় ডায়রি। তারপর আবার হনহন করে বাইরে চলে গেলো।
তানিয়া ভাবছে কি লোকরে বাবা? এতদিন তো এমন করেনি। আজ কি হলো? হঠাৎ তানিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলো আয়াত ফোন করেছে
তানিয়াঃ হ্যা বলুন? (বেশ রাগি মুডে)
আয়াতঃ একটু ছাদে আসবে? আমাদের রুমের ডান পাশ দিয়ে ছাদে ওঠার সিড়ি।
তানিয়াঃ যদি কেউ দেখে ফেলে?
আয়াতঃ সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
তানিয়া ধিমী পায়ে ছাদে উঠে ভিষন অবাক হলো। ছাদটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। তানিয়া ছাদে উঠতেই আয়াত বলে উঠলো
আয়াতঃ ওয়েল কাম টু হেল তানিয়া! আমার প্রতিশোধের জগতে তোমাকে স্বাগতম! আজকে মন ভরে কিছু সময় আনন্দ নিয়ে নাও। কারন এরপর আর কান্না ছাড়া কিছুই পাবে না । এই সাজ সজ্জা দেখে পুলকিত হয়ো না তানিয়া। কারন এরপর থেকে তোমার জীবন রংহীন হয়ে যাবে। আমি করে দিবো। এতোটা যা তুমি চিন্তাও করতে পারবে না। ওয়েল কাম টু হেল মিস তানিয়া ওহ স্যরি মিসেস আয়াত!
তানিয়াঃ কি বলছেন এসব? (অনেক অবাক হয়ে)
আয়াতঃ এত সহজে ভুলে গেলে তানিয়া? আর অবশ্য তোমার মত মেয়ের কাছে এটা বড় কিছু না। আমি তোমাকে ভালোবাসার জন্য বিয়ে করিনি। করেছি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। এখন থেকে প্রতিটা দিন তুমি অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করবে। যে কষ্ট তুমি আমায় দিয়েছো তার তিনগুন তোমায় ফিরিয়ে দিবো।
আয়াতের কথা গুলো শুনে তানিয়া অবাক হয়ে গেলো। তানিয়া ভাবছে কি কষ্ট দিয়েছি আমি ওনাকে? আমি তো ওনাকে আগে কখনো দেখিনি? এনগেজমেন্ট এর দুদিন আগে ওনার সাথে দেখা। তারপর এনগেজমেন্ট এর পর অবশ্য দুবার দেখা হয়েছিলো। আর আমি তো ওনার কাছে আমার বিষয়ে কিছু লুকায়নি? তাহলে কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে ওনি?
তানিয়ার ভাবনায় ছেদ পড়লো আয়াতের হাতের টানে। আয়াত তানিয়াকে টানতে টানতে রুমে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো। তানিয়া কপালে ভিষন আঘাত পাওয়ার ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে-------
চলবে,,,,