একটা কাল বৈশাখী ঝড়ে সব উলট-পালট হয়ে যায়।কাজি এসে গেছে এমন সময় খবর আসলো বরযাত্রীর সবাই বর সহ কার একসিডেন্টে মারা গেছে ।অদ্বিতীয়া কথাটা শুনে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায় ।
- হসপিটালে নেওয়ার পর ডাক্তার অদ্বিতীয়ার কিছু টেস্ট করে রির্পোটগুলো দেখে বললো,' মিঃ আরিফ সাহেব মিষ্টি খাওয়ান। অাপনার মেয়ে মা হতে চলছে।
- মিঃ আরিফ এমন কথা শুনবে ভাবতেও পারেনি। একদিকে বিয়ের রাতে মেয়েটার হবু স্বামীসহ পুরো একটা পরিবার রোড একসিডেন্টে মারা গেল। তার মাঝে অদ্বিতীয়াও অন্তঃসত্ত্বা! তার মেয়ে এমন একটা জঘন্য কাজ করবে সে কখনো কল্পনাও করেনি। এদিকে হসপিটাল থেকে অদ্বিতীয়ার প্রেগন্টের কথা ছড়িয়ে পড়ে। আরিফ সাহেব রাতেই অদ্বিতীয়াকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসে। বিয়ে বাড়িটা যেন এক মৃত্যুপুরী হয়ে যায়। আরিফ সাহেব অদ্বিতীয়ার রুমে গিয়ে বলে, 'মারে তোকে কিছু বলার ছিল।
- হ্যাঁ বাবা বলো?
- মা'রে তোকে জন্ম দেওয়ার সময় তর মা মারা যায়। তোর কষ্ট হবে ভেবে আর বাকি জীবনে সংসার পাতিনি। তোকে কখনি তোর মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। অভাব -অনটন তোকে ছুঁতে পারেনি। যখন যা চেয়েছিস তাই পেয়েছিস। তুই বললি, মেঘকে ভালোবাসিস। তোর কথা মতো সবটা মেনে নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু আল্লাহর কি খেলা কি থেকে কি হয়ে গেলো। এ দিকে হসপিটালে ডক্টর যা বললো তা আমি মেনে নিতে পারছি না। লোকে জানাজানি হলে গলায় দড়ি দিয়ে ছাড়া আমার কোন উপায় নেই।
- বাবা প্লিজ এমন বলো না। আমি সত্যিই ভুল করেছি বাবা। কিন্তু মেঘ আমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসতো বাবা।
- মারে তোকে একটা কথা বলি রাখবি
- হ্যাঁ বাবা বলো?
- মা'রে তুই তো জানিস তুই অবিবাহিত। আর অবিবাহিত মেয়ে প্রেগনেন্ট হওয়াকে সমাজ ভালো চোখে নেয় না। আমি বলি কি, তুই এর্বারশন করে নে।
- অদ্বিতীয়া এর্বারশনের কথা শুনেই শিউরে ওঠে বলে, ' বাবা আমি পারবো না মেঘের স্মৃতিচিহ্নটা মুছে দিতে। আমি যে সত্যি মেঘকে ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসার শেষ চিহ্নটা মুছে দিয়ো না বাবা। এই বলে অদ্বিতীয়া তার বাবার পায়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
- মারে এ সন্তানের পিতার কি পরিচয় দিবি। সবাই বলবে অবৈধ সন্তান। তারচেয়ে বরং এবার্রশনটা করে নে।
- বাবা তুমি আমাকে গলাটিপে মেরে ফেলো তবুও এর্বারশনের কথা বলো না। পারবো না মা হয়ে অনাগত সন্তানকে হত্যা করতে। দোষ আমি আর মেঘ করেছিলাম। কিন্তু তার পরিণাম কেন আমার গর্ভের সন্তান ভোগ করবে?
- অদ্বিতীয়া তোর বেবী নষ্ট না করলে আমার সুসাইড করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। যখন মানুষ বলবে ওই যে দেখ আরিফ সাহেবের মেয়ে বিয়ে ছাড়াই মা হয়েছে। প্লিজ মা আমি তোর কাছে আমার মানসম্মান ভিক্ষা চাইছি তুই এবার্রশনটা করে নে।
- অদ্বিতীয়া তার বাবার দু'পা ঝাপটে ধরে বললো," বাবা তুমি আমার সন্তানটার প্রাণ ভিক্ষা দাও। আমাদের ভালোবাসার শেষ চিহ্নটা মুছে দিয়ো না। এছাড়া তুমি যা বলবে তাই করবো।
- আরিফ সাহেব কিছু একটা ভেবে বললো," মারে তুই আরেকটা বিয়ে কর। তাহলে হয়তো বেবীটা বেঁচে যাবে।
- বাবা আমাকে এ অবস্থায় কে বিয়ে করবে?
- তোর সেসব চিন্তা করতে হবে না আমার কাছে আমাদের অফিসের একটা ছেলেকে খুব ভালো লাগে। আমি ওর সাথে কথা বলে দেখছি।
- অদ্বিতীয়া মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
-পরের দিন রাজ আরিফ সাহেব রাজকে তার ডেস্কে ডেকে পাঠায়।
- স্যার কিছু বলবেন আমায়?
- আচ্ছা রাজ তুমি কতদিন হলো অফিসে জয়েন করছো?
-স্যার দু'মাস হলো।
- আচ্ছা এরই মাঝে তুমি লোন চেয়ে আবেদন করছো।তাও পাঁচ লাখের। তুমি তো জানো দু'বছর চাকরির বয়স ছাড়া কর্মচারীকে লোন দেওয়া হয় না।
- স্যার টাকাটা আমার খুব দরকার ছিলো। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি লোনের টাকা শোধ না করে আমি আপনার অফিস ছেড়ে কোথাও যাবো না। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে রাজ কথাগুলো বললো।
- আচ্ছা আমি তোমাকে লোন না তার থেকে বেশি টাকা দিবো। তবে শর্ত হলো আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।
- রাজ কথাটা শুনে শিউরে উঠলো। বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো! বিয়ে!
- স্যার কি বলেন! সরি স্যার পারবো না। এছাড়া আমি বিবাহিত।
- হুম রাজ আমি জানি সব, 'তোমার স্ত্রী আর তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতেই লোন চেয়েছিলে। দেখো তুমি যদি আমার মেয়েকে বিয়ে করো তাহলে তোমার স্ত্রীর চিকিৎসার সব দায়িত্ব আমার। এখন ভেবে দেখ তোমার স্ত্রীকে বাঁচাতে বিয়ে করবে কি না? আর আরেকটা কথা আমার মেয়ে গর্ভবতী তার বেবি হওয়ার পর পারিবারিক ভাবেই ডির্ভোস এর ব্যবস্থা করে দিবো। বলো আমার চুক্তিতে রাজি কি না? আর হ্যাঁ ভেবো না তোমার বিষয়ে আমি কিছু জানি না? আমি কাল হসপিটালে ডাক্তার আর তোমার কথোপকথন শুনেছি।
- রাজ আর কিছু বললো না চেয়ার ছেড়ে উঠার আগে বললো,'স্যার আমি রাজি।
- তাহলে কালকেই বিয়ে কেমন?
- আচ্ছা স্যার আমি এখন আসি।
- রাজ অফিস থেকে বের হয়ে সোজা হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে দেখে কথা ঘুমিয়ে আছে। রাজ গিয়ে কথার পাশে বসে মাথায় হাত ভুলাতেই কথার ঘুম ভেঙে যায়।
- কথা চোখ খুলেই বলে, 'জীবন আমায়য় একটু বুকে নিবে?
- রাজ কথাকে তার বুকে টেনে নেয়! চোখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ললাটে চুমু এঁকে দেয়।
- কথা রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রাজ বুঝতে পারে কথা কাঁদছে।
- এই পাগলী কাঁদছো কেন?
- কথার কান্না আরো বেড়ে যায়।
- প্লিজ তুমি কান্না থামাও তোমার কান্না যে আমি সহ্য করতে পারি না।
- রাজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না।প্রয়োজন হলে নিজে হাতে আমাকে মেরে ফেলো তবুও আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আজ যখন ঘুমাচ্ছিলাম তখন বাজে স্বপ্ন দেখেছি। তুমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছো। জানো স্বপ্নটা দেখে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। বলো আমার মাথা ছুঁয়ে কসম করো আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমি তো বাঁচবো না। আমি সব বুঝি, মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় জানো। চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। বিলিভ করো মরে যাবো বলে ভয় পায় না। ভয় পায় তোমাকে হারিয়ে ফেলবো ভেবে।
- কথা প্লিজ বাজে কথা বলো না। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
- রাজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না আমায়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। রাজ কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু কথা কোন কথা বলছে না।
- ডাক্তার এসে কথাকে দেখে বললো,' কথা সেন্সলেস হয়ে গেছে।
- ও আচ্ছা ডক্টর আমার স্ত্রী কি আর ভালো হবে না?
- মিঃ রাজ দেখেন পেশন্টের একদিকে একটি কিডনী ড্যামেজ আরেকটা সেই পথে সাথে ব্রেইন টিউমার। হয়তো কয়েকদিনের মাঝে কোমায় চলে যাবে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তার মাঝে আরো একটা প্রাণ আছে। বাচ্চাটা জানি না দুনিয়ার আলো দেখবে কি না।
-রাজ আর কিছু বললো না কথার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হসপিটাল থেকে বের হতেই আরিফ সাহেবের ফোন।
- ফোন রিসিভ করতেই বললো,' হ্যালো রাজ তুমি কোথায়?
- তোমার জন্য বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে।
- আচ্ছা স্যার বাসায় যাচ্ছি রাজ বাসায় গিয়ে আরিফ সাহেবের রুমে ঢুকতে গিয়ে ভুল করে অদ্বিতীয়ার রুমে ঢুকে পড়ে। অদ্বিতীয়া রাজকে দেখেই গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,' ছোট্ট লোক তোর সাহস কি করে হয় লুকিয়ে আমার ড্রেস চেঞ্জ করা দেখার। অদ্বিতীয়ার চিৎকারে তার বাবা এসে বলে,' অদ্বিতীয়া এর সাথেই আজ রাতে তোর বিয়ে!
- কিহ বাবা! এই চরিত্রহীন ছেলেকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
- চলবে''''''''
nice one