বৃষ্টির শহর (পর্ব-৬)

0 12
Avatar for LktzbnLktzbn203
3 years ago

- আচ্ছা আমি তাহলে আসি আর সত্যিটা সবাই জানুক।

- কি সত্যি জানবে বলেই অদ্বিতী রাজের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো টাকা চায় তোর দিচ্ছি। এই বলে ক্যাশিয়ারকে ফোন করে টাকা আনিয়ে রাজের সামনে ছুড়ে মেরে বললো,' নে ছোটলোক তোর টাকা।

- রাজ টাকাগুলো নিয়ে আর পিছনে ফিরে তাকালো না। অফিস থেকে সরাসরি হসপিটাল চলে গেল।

- এদিকে অদ্বিতী জিম ধরে তার চেয়ারে বসে আছে।

- হাসিব অদ্বিতীর হাতে হাত রেখে বললো, ' কি হয়েছে অদ্বিতী? কি সত্যি সবাই জানবে? আর তুমি এতগুলো টাকা দিয়ে দিলে?

- হাসিব তোমাকে কিভাবে বলবো! বাট এটা বলতে পারি আমি খুব কষ্টে আছি।

- অদ্বিতী আমার প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারো। সত্যি বলতে তোমার চোখে জল দেখলে আমার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে।

- হাসিব তুমি তো শুনেছ আমি মেঘ নামে একটি ছেলেকে ভালোবাসতাম। পারিবারিক ভাবে প্রথমে বাগদান। পরির্বতে বিয়ে ঠিক হলো মেঘ আমাকে তাদের বাংলো বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যায়। বাড়িতে প্রবেশ করতেই ঝুম বৃষ্টি নামে। আমি বেলকণী থেকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো স্পর্শ করছিলাম। এমন সময় মেঘ এসে আমাকে কুলে করে রুমে নিয়ে যায়। তারপর নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিষিদ্ধ ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই দুজনে। মেঘকে আমি প্রচন্ড বিলিভ করতাম। আমি জানতাম আমার কলিজাটা আমাকে কখনো ঠকাবে না। মেঘও নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো আমাকে। কত স্বপ্ন ছিল। দু' পরিবারে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। আমার এখনো মনে আছে সে দিনটার কথা। খুব সুন্দর করে সেজেছিলাম মেঘের জন্য। অপেক্ষা করেছিলাম কখন মেঘকে দেখতে পাবো। কিন্তু আমি তাকে দেখেছিলাম বরের সাজে নয়। সাদা কাফনে জড়ানো অবস্থায়। কথাগুলো বলে অদ্বিতী কেঁদে দিল। এদিকে আমি বিয়ের রাতে সেন্সলেন্স হয়ে গেলে। ডক্টর আমার রির্পোট দেখে বলে আমি নাকি প্রেগন্যান্ট!

- বাবা বলেছিল বেবিটা নষ্ট করতে। আমি পারিনি আমার আর মেঘের ভালোবাসার শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকু নষ্ট করতে। কিন্তু একদিকে বাবার মানসম্মান অন্যদিকে আমাদের ভালোবাসার উপহার। সবকিছুকে বাঁচাতে রাজ নামক ছোটলোকটাকে বিয়ে করা। তবে কি জানো ছোটলোকটাকে স্বামীর অধিকার দেয়নি। যেদিন আমার বেবিটা হয়ে যাবে তারপরেই ছোটলোকটাকে ডির্ভোস দিয়ে দিবো।

- হাসিব অদ্বিতীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো অদ্বিতী কষ্ট পেয়ো না আমি তোমার পাশে সবসময় আছি। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না?

- মানে কি বলছো এসব?

- বুঝোনি তোমার ফ্রেন্ড হয়ে থাকবো। রাখবে না বন্ধু বানিয়ে?.

- হুমম।

- আচ্ছা এবার হাসো একটু।

- হাসিব ভুলতে পারছি না ছোটলোকটা আমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেল করবে?

- অদ্বিতী তুমি কিছু ভেবো না। তুমি শুধু আমার কথা মতো কাজ করো। দেখবে কেমন খেলাখেলি। চাকরের মতো ব্যবহার করতে হবে এসব লোভীর প্রতি।

- হুম ঠিকআছে।

- আচ্ছা একটা অনুরোধ করবো রাখবে?

- হ্যাঁ বলো।

- চলো আজ তোমাকে নিয়ে আমার একটা প্রিয় জায়গায় ঘুরতে যাবো।

- ও তাই বুঝি? তোমার প্রিয় জায়গাটা কোথায়?

- আগে চলই না তারপর তো দেখতেই পারবে।

- এদিকে রাজ হসপিটালে টাকা পেমেন্ট করে। কথার কাছে গিয়ে বসে।

- কথা রাজের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে শব্দহীন চোখের পানি খসে পড়ছে। রাজ কথার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,' কি হলো আমার মহারানীটা কাঁদছে কেন? মহারানী জানে না সে কাঁদলে আমি কষ্ট পায়।

- কথার এবার ফুপিয়ে কান্না করে দিল। চোখের পানি গাল বেয়ে বালিশে পড়ছে।

- রাজ কথার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,' কি হলো আবারো কাঁদছো কেন?

- কলিজা আমার কেন জানি খুব ভয় হচ্ছে আমি বোধহয় তোমাকে হারিয়ে ফেলবো। জানো তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। রাজ আমি মরে গেলে আমাকে কখনো ভুলে যাবে না তো? আরেকটা বিয়ে করবে না তো? অন্য কাউকে বুকে নিবে না তো? আমি মরে যাবো হয়তো। মরে যাবো ভেবে আমার কোন কষ্ট হয় না। কিন্তু কষ্ট তখনি হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে এটা শুনে। কলিজা বলো তুমি অন্য কাউকে জীবন বলে ডাকবে না? অন্য কাউকে বুকে নিবে না? আমাদের বাবু হলে তাকে কষ্ট দিবে না?

- হুমম তোমার সব কথা শুনবো মহারাণী। তবুও মরার কথা বলো না।

- কলিজা আমার কপালে একটু আদর দিবে? খুব ইচ্ছে করছে তোমার ভালোবাসার স্পর্শটা পেতে।

- রাজ কথার ললাটের ঠিক মাঝখান টায় ভালোবাসায় স্পর্শ এঁকে দিল।

- কলিজা এখন আমাকে একটু বুকে নিবে? জানি না আর কোনদিন তোমার ওই বুকে যেতে পারবো কি না? নিবে তোমার ওই বুকে? রাজ কথাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বললো,' জীবন কি বাজে বকছো? আল্লাহ তোমাকে আমার কাছ থেকে নিবে না। তুমি ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচবো বলো? আমি যে তুমি ছাড়া সত্যি মরে যাবো।

- এদিকে নার্স এসে বললো, ' রাজ ভাইয়া আপনাদের কথা একটু তাড়াতাড়ি শেষ করেন।অপারেশন শুরু হবে ঘন্টা খানেক পরেই ।

- কথাটা বলেই নার্স চলে গেল।

- রাজ যখন কথাকে বুক থেকে ছাড়িয়ে নিতে যাবে এমন সময় কথা বললো,' কলিজা আর একটু বুকে রাখো না। আমার না খুব ভয় করছে। তুমিও চলো না অপারেশন থিয়েটারে।

- পাগলী আমি তো সবসময় তোমার সাথেই আছি। কথাটা বলে কথার কপালে চুমু এঁকে দিল।

- নার্স এসে স্টেচারে করে কথাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাচ্ছে। কথা তখনি রাজের হাতটি ধরেই ছিল।

- এদিকে প্রায় দু'ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার সাবিহা বের হয়ে বললো,' মিঃ রাজ আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। '

- আলহামদুলিল্লাহ! আচ্ছা ম্যাডাম বাচ্চার মা কেমন আছে?

- রাজ বিচলিত হবেন না। বাচ্চার মায়ের অবস্থা বেশি ভালো না। এমনেই কিডনীর প্রবলেম। আরো সিজার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা! আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ আল্লাহ করেন। যদি জ্ঞান না ফিরে তাহলে আর আশা নেই। উনাকে বলছিলাম। বাট উনি নিজ থেকেই এটা বেছে নিয়েছে।

- ডাক্তার বলেছিলাম না। বাচ্চা নয় মাকে বাঁচান।

- রাজ আমিও একটা মেয়ে তাই মিসেস কথারে বলছিলাম আপনাকে বাঁচাতে হলে আপনার বাচ্চাটাও মারা যেতে পারে।

- চলবে??

3
$ 0.00
Avatar for LktzbnLktzbn203
3 years ago

Comments