বৃষ্টির শহর (পর্ব-৪)

0 7

- রাজ কথার মাথাটা তার উরুর উপর রেখে মাথায় হাতত ভুলাতে লাগলো। এক হাতে স্যালাইন এখনো যাচ্ছে কথার। রাজ সারারাত কথার মুখের দিকে তাকিয়েই সারাটা রাত পার করে দিল।

সকাল বেলা কথার কপালে চুমু দিয়ে বাসায় আসতেই অদ্বিতী বললো,' দাঁড়াও সারা রাত কোথায় ছিলে?কার সাথে রাত কাটিয়ে আসছো? বাবা দেখ এজন্যই বলেছিলাম এই ছোটলোকদের বিশ্বাস নেই।

- অদ্বিতীর বাবা রাজকে কিছু না বলেই ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দিল। এই সারারাত কোথায় ছিলি কোথায় রাত কাটিয়ে এলি?

- রাজ কথা বলছে না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

- অদ্বিতী একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে।

- এদিকে রাজ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। অদ্বিতী রুমে এসে রাজকে ঘুমাতে দেখে আরো খেপে গেল।

- কাজের মেয়েকে দিয়ে পানি এনে রাজের গায়ে ঢেলে দিতেই রাজের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই রাজ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,' ম্যাডাম কি হয়েছে? ''

- কি হয়েছে মানে? কয়টা বাজে তুই দেখছিস? অফিসে যাবি না?

- রাজ আর কিছু বললো না। জানে কথা বললে হিতে বিপরীত হবে। তাই ড্রেস চেঞ্জ করে অফিসে চলে গেল। অফিসে যেতেই সবাই আলাদা ভাবে রাজকে সমীহ করতে লাগলো। হাজার হলেও বসের মেয়ের জামাই।

- রাজ ডেস্কে বসতেই, হুমাইয়া একগুচ্ছ গোলাপ দিয়ে বললো স্বাগতম মিঃ রাজ আপনার তো কপাল খুলে গেছে। এখন এই অফিসটাই তো আপনার। আচ্ছা ট্রিট কবে দিচ্ছেন আপনি?

- রাজ মুচকি হেসে বললো,' আপু নেক্সট ফ্রাইডে কেমন?

- আমাকে আপনার আপু মনে হয়? এতকিছু বুঝেন আর আগে কেন দুষ্টমু করতাম বুঝতেন না। আপনার ট্রিট আপনি খান। কথাগুলো বলে হুমাইয়া উঠে গেল।

- অফিস শেষে রাজ বাসায় ফিরতেই দেখে বাসায় অদ্বিতী ও তার বাবা কেউ নেই।

- কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করতেই কাজের মেয়ে বললো,' স্যার ম্যাডাম তো খালুজানকে নিয়ে এয়ারপোর্ট গেছে। কে জানি আসবে। আপনি বসেন আপনাকে খাবার দিচ্ছি।

- এদিকে রাত্রি বেলা অদ্বিতীর সাথে আরেকটা ছেলে আসে। নাম হাসিব চৌধুরী। এতদিন নিউ ইর্য়ক ছিল। অদ্বিতীর কাজিন হয় নাকি। অদ্বিতী তাকে নিয়েই ব্যস্ত। এদিকে প্রায় মাসখানেক পর অদ্বিতীর বাবা হতাত করে প্যারালাইজড হয়ে যায়।

- অদ্বিতীর বাবার এমন অবস্থায় অদ্বিতী তার বাবার অফিসে বসেন। আর অদ্বিতীকে হেল্প করার জন্য হাসিব সবসময় তার সাথেই থাকে। ছোটবেলা থেকেই নাকি তারা ভালো ফ্রেন্ড ছিল।

- রাজের প্রথম দিন থেকেই হাসিবকে সুবিধার মনে হচ্ছে না। কেমন যেন মনে হয়।

- এদিকে অফিসের ফাইলের কাজ শেষ করে রাজ ডোর অপেন দেখে অনুমতি না নিয়েই অদ্বিতীর রুমে ঢুকে যায়। হাসিব আর অদ্বিতী বসে চা খাচ্ছে। রাজ ফাইলটা অদ্বিতীর দিকে বাড়িয়ে দিতেই হাসিব ইচ্ছা করেই হাত লাগিয়ে চায়ের কাপটা তার পায়ের উপর ফেলে দিয়ে আহ করে চিৎকার মারলো।

- রাজ কিছু বুঝে না উঠার আগেই হাসিব রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,' এই তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে চায়ের কাপ ফেলে দেওয়ার।

- অদ্বিতী দেখো আমার পা টা পুড়ে যাচ্ছে।

- স্যার আমি তো কিছু করিনি। আপনার হাত ফসকেই তো।

- অদ্বিতী তুমি তোমার বরকে দিয়ে আমাকে অপমান করার জন্য ডেকে এনেছ? আমি আসছি।

- হাসিব চেয়ার ছেড়ে উঠতে গেলেই অদ্বিতী হাসিবের হাতটা ধরে ফেলে। রাজের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে জানো হাসিব কাগজে সই করলে আর কবুল বললেই বিয়ে হয় না। আর তুমি কি করে ভাবলে ওর মতো একটা অনাতকে আমি বর বলে মেনে নিবো? তুমি তে জানতে আমি মেঘকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আল্লাহ তো আমাে বিয়ের রাতে আমার মেঘকে কেড়ে নিল। আর বাবার কথা মতো এমন একটা অনাথকে বিয়ে করতে হলো। আর কয়েকটা মাস। এ গল্পের সমাপ্তি করবো।

- রাজ অসহায়ের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে অদ্বিতীর দিকে।

- এই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার চোখের সামনে থেকে যাবি?

- রাজের চোখের জল আর বাঁধ মানছে না। এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে। রাজ আর কিছু বললো না। রুম থেকে বের হয়ে শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিল।

- ডেস্কে আসতেই কিছুক্ষণ পর হুমাইয়া সামনে এসে বসল। রাজ কোন কথা বলছে না। হুমাইয়ার দিকে তাকাচ্ছেও না। হুমাইয়া রাজের মুখ দেখেই বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। তাই ভনিতা ছাড়াই বললো,' কি রাজকুমার আকাশ মেঘলা কেন? বৃষ্টি হবে নাকি? দেখলাম ম্যাডাম সরি আপনার স্ত্রীর রুমে গেলেন হাসি মুখে আর বের হলেও মুখ গোমরা করে ব্যাপার কি?

- হুমাইয়া প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও।

- রাতে রাজ ডিনার করে ফ্লরে একটা বালিশ আর চাদর বিছিয়ে যখন শুবে তখন দেখলো অদ্বিতী রুমে নেই। বেলকণীর কাছে যেতেই শুনতে পারলো কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। কথা শুনে বুঝতে পারলো অদ্বিতী হেসে হেসে হাসিবের সাথেই কথা বলছে।

- কয়েকদিন পর রাজ সকাল সকাল হসপিটালে কথার সাথে করার জন্য যখন যাচ্ছিল তখন ডাক্তার সন্ধ্যার রুমে হাসিব আর সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে জানালা দিয়ে উঁকি দিল। ঠিক তখনি হাসিব বললো,' ম্যাম আমরা বেবিটা রাখতো চাচ্ছি না।

- তাহলে কি আপনারা এর্বারশন করতেই চাইছেন? আবারো ভেবে দেখেন।

-মেয়েটা হাসিবের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

- হাসিব দৃঢ় কণ্ঠেই বললো, ' হ্যাঁ ম্যাম আমরা অনেক ভেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। '

- ও আচ্ছা তাহলে কাল আসুন।

- হাসিব আর মেয়েটা ডাক্তারের রুম থেকে বের হতেই মেয়েটা বললো,' বাবু আমাদের বেবিটা রাখলে হয় না? চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি?

- হাসিব মেয়েটার হাত শক্ত করে ধরে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,' সুইর্টহার্ট কিছুদিন হলো বিদেশ থেকে আসলাম বাবার ব্যবসাটা হাতে নেই তারপর তোমাকে বউ করে নিতে কোন বাঁধা নেই।

- মেয়েটি আর কোন প্রশ্ন করলো না। দু'জনে মিলে গাড়ি চড়ে চলে গেল। তারা চলে যেতেই, 'রাজ কথার মাথার কাছে গিয়ে বসলো। কথা রাজকে দেখেই বললো,' জানু ডক্টর বলছে আমার নাকি মেয়ে হবে। আমাদের মেয়ে হলে নাম কিন্তু রাইসা রাখবে।

- রাজ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বাচ্চা বাচাঁতে গেলে মাকে যে মরতে হবে সে এটা কিভাবে বলবে। কথার হাসিখুশি মুখ দেখে রাজের বুকের ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে.

চলবে'''''''''

3
$ 0.00

Comments