- আচ্ছা স্যার বাসায় যাচ্ছি রাজ বাসায় গিয়ে আরিফ সাহেবের রুমে ঢুকতে গিয়ে ভুল করে অদ্বিতীয়ার রুমে ঢুকে পড়ে। অদ্বিতীয়া রাজকে দেখেই গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,' ছোট্ট লোক তোর সাহস কি করে হয় না বলে রুমে ঢোকার। অদ্বিতীয়ার চিৎকারে তার বাবা এসে বলে,' অদ্বিতীয়া এর সাথেই আজ রাতে তোর বিয়ে!
- কিহ বাবা! এই চরিত্রহীন ছেলেকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। জানো বাবা কি করছে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার! এ পর্যন্ত বলে থেমে গেল।
-স্যার আমি আপনার রুম ভেবে ম্যামের রুমে ঢুকে পড়েছিলাম!
- এখন সাধু সাজা হচ্ছে! বাবা আমি পারবো না এমন ছেলেকে বিয়ে করতে। একে তো চরিত্রের ঠিক নেই তার উপর সাধারণ এক কর্মচারী হবে আমার বর।
- অদ্বিতী প্লিজ চুপ কর। বাবা রাজ তুমি কিছু মনে না করলে পাশের রুমে গিয়ে বসো। আমি অদ্বিতীর সাথে একটু আলাদা কথা বলে নেই।
- রাজ পাশের রুমে চলে যেতেই আরিফ সাহেব বললো,' মারে আমি তোর বিষয়টা বুঝি বাট এছাড়া আর আমার কোন উপায় নেই।
- বাবা তাই বলে সাধারণ একটা কর্মচারীকে। সুসাইটি বলেও তো একটা কথা আছে।
- প্লিজ তোর বেবীটা হয়ে নিলে তো আর কোন সমস্যা না। যদি কেউ জানতে পারে বিয়ের আগেই! ছিঃ আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোন রাস্তা থাকবে না।
-আচ্ছা বাবা তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো।
- আরিফ সাহেব মেয়ের কথা মতো বিয়ের ব্যবস্থা করে। সে রাতেই বিয়েটা হয়ে যায়।
- এসব ভাবতে ভাবতে রাজের চোখে জল এসে যায়। খুব করে মনে পড়ছে কথার সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা। ভালোবেসে দু'জন দু'জনকে বিয়ে করেছিল। বাসর রাতটি ছিল কতটা মধুর। জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল দু'রাকাত নফল নামাযের মধ্যে দিয়ে। ছোট্ট একটি সংসার। অর্থবিত্তের অভাব থাকলেও ছিলো না ভালোবাসার কোন অভাব। যেদিন প্রথম বাবা হওয়ার কথাটা কথা রাজকে বলে সেদিন রাজ খুশিতে কান্না করে দেয়। এতটা খুশি সে জীবনেও হয়নি। ছোট-বেলায় মা বাবা হারিয়ে অনাত আশ্রমে বড় হয়েছিল। ভালোবাসার মানুষ বলতে কথাই ছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সে ভালোবাসার মানুষকে আজ তার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। কথা যদি জানতে পারে সে আরেকটা বিয়ে করেছে সে পাগল হয়ে যাবে। কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায় নেই, ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে এটাই যে শেষ রাস্তা। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। এসব ভাবতে ভাবতে রাজ ঘুমিয়ে যায়।
- মাঝ রাত রাজ ঘুমালেও অদ্বিতয়া ঘুমাতে পারছে না। বারবার মেঘের রক্তমাখা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কত স্বপ্ন দেখেছিল দুজন দুজনকে নিয়ে। ফোনের ওয়েল পেপারে তার আর মেঘের ছবি গুলো স্ক্রুল করছে আর বলছে মেঘ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। পারলাম না তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে। তোমার আর আমার ভালোবাসার শেষ চিহ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়তো কবুল বলেছি কিন্তু স্বামীর অধিকারটা কখনো দিতো পারবো না। এই হৃদয়ে তুমিই ছিলে তুমিই থাকবে। ছবিটা সহ ফোনটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় অদ্বিতীয়া।
- এদিকে সকালে দরজায় নক করার শব্দে রাজের ঘুম ভাঙে। ঘুমে টুলুমুলু চোখ নিয়ে যখন অদ্বিতীর পাশ দিয়ে যাচ্ছে তখন দেখে অদ্বিতীয়ার শাড়ি ঠিক নেই এ অবস্থায় কেউ দেখলে ব্রিবতকর অবস্থায় পড়তে হবে। কি করবে বুঝতেই পারছে না। শাড়িটা কি ঠিক করে দিবে। না করে দিবে না। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে আবারো দরজায় নক পড়ল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা ছুঁই ছুঁই। রাজ আর কিছু না ভেবেই শাড়িটা যখন অদ্বিতীয়ার বুকে রাখতে যাবে এমন সময় অদ্বিতীয়া সজাগ পেয়ে যায়। আর রাজকে এ অবস্থায় দেখেই চমকে যায়।
- ছি! আমার বুকের কাপড় সরাতে বিবেকে বাঁধলো না তোর। ভেবেছিলাম তুই ভালো। কিন্তু না তুই আসলেই চরিত্রহীন।
- ম্যাডাম আপনি ভুল বুঝতেছেন। আপনার শাড়ি ঠিক ছিলো না। আর এই অবস্থায় কেউ যদি আপনাকে দেখতো তাহলে কি ভাবতো?
- আর তুই যে দেখলি?
- আমি আপনার স্বামী আমার দেখার মাঝে বৈধতা আছে।
- তাই বুঝি? নেক্সট টাইম স্বামীর কথা বলবি না। তোর মতো অনাতকে আমি স্বামী হিসেবে মানিনা আর কোনদিন মানতেও পারবো না। আর আমার শাড়ি ঠিক নেই তুই তো সেটা বলতে পারতি? না বলে নিজে হাতে ছি!
- রাজ আর কিছু বললো না, রুমের দরজা খুলে দিতেি কাজের মেয়েটা বললো, 'স্যার নিচে সবাই ওয়েট করছে। ম্যাডামকে নিয়ে খেতে আসুন। আর এই নেন চা।
- চা তুমি রেখে যাও। আমরা ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছি ।
- রাজ ফ্রেশ হয়ে যখন শার্ট গায়ে দিচ্ছিল ঠিক এমন সময় অদ্বিতীয়া শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল প্যাঁচিয়ে রুমে ঢুকতেই রাজ রুম থেকে বেরিয়ে এসে বেলকণিতে দাঁড়ালো। অদ্বিতীয়া কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বের হয়ে ইশারা করলো রাজকে তার সাথে যেতে। দু'জন নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আবার উপরে আসলে অদ্বিতী রাজকে বললো,' রাজ মনে রেখো বিয়েটা করেছি শুধু বাবার খুশির জন্য। আমাদের মাঝে যত মনোমালিন্য হোক না কেন সেটা যেন বাবা না জানে!
- আচ্ছা ম্যাডাম ঠিক আছে।
- এদিকে দু'দিন পর রাতে রাজ সুফায় শুয়ে আছে। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নার্স বললো,' হ্যালো মিঃ রাজ আপনার স্ত্রীর অবস্থা বেশি ভালো না আপনি একটু হসপিটালে আসেন? আচ্ছা আমি এখনি যাচ্ছি।
- রাজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই! অদ্বিতীকে যাওয়ার আগে শুধু বললো,' ম্যাডাম আমি বাহিরে যাচ্ছি দরজাটা লক করে দিয়েন। অদ্বিতী মনে মনে বললো,' লুচু তুই গেলেই বাঁচি। '
- রাজ বাসা থেকে বের হয়ে সোজা হসপিটালে। হসপিটালে গিয়ে দেখে কথার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। নার্স রাজকে দেখেই বললো,' ভাইয়া ঘন্টাখানেক আগে আপুর জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই। আপনার কথা জিজ্ঞেস করে। আপনার সাথে কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে যায়।
- আচ্ছা আপু।
- রাজ কথার পাশে বসে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে থাকে। কথার শরীরে জ্বর জ্বর ভাব এখনো কাটিনি। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ কথাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। রাজ নিজের অজান্তেই কথার কপালে চুমু এঁকে দেয়। এদিকে মাথায় কারো হাতের স্পর্শে কথা চোখ খুলে রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
- কি হলো কাঁদছো কেন?
- রাজ আমার খুব ভয় হয়। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। জানো সারাক্ষণ আল্লাহর নামের জিকির করি আর ভাবি আল্লাহ আমাকে নিয়ে নিলেও আমার বেবিটাকে যেন সুস্থ রাখে। আচ্ছা রাজ আমি যদি বেবি রেখে মরে যায় তুমি কি আমার বেবি রেখে আরেকটা বিয়ে করবে?
- কথা প্লিজ এসব বলো না আর। তোমার কিছু হবে না।
- রাজ আজকের রাতটা আমার পাশে থেকো না। কতদিন হলো ঘুমায় না তোমার কুলে। তোমার কুলে মাথা রেখে ঘুম পাড়িয়ে দাও না?
- রাজ কথার মাথাটা তার উরুর উপর রেখে মাথায় হাতত ভুলাতে লাগলো। এক হাতে স্যালাইন এখনো যাচ্ছে কথার। রাজ সারারাত কথার মুখের দিকে তাকিয়েই সারাটা রাত পার করে দিল। সকাল বেলা কথার কপালে চুমু দিয়ে বাসায় আসতেই অদ্বিতী বললো,' দাঁড়াও সারা রাত কোথায় ছিলে?কার সাথে রাত কাটিয়ে আসছো? বাবা দেখ এজন্যই বলেছিলাম এই ছোটলোকদের বিশ্বাস নেই।
- অদ্বিতীর বাবা রাজকে কিছু না বলেই ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দিল।
- চলবে'''''''''