নির্বাক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনিলা বললো, "মানুষ কীভাবে এতো বদলে যায়?"
"মানুষ বদলায়। কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো বা বাধ্য হয়ে। তবু, মানুষ বদলায়।"
"কিন্তু, কেনো?"
"না বদলালে যে অতীত মানুষকে থামিয়ে দেয়। আঘাত পেয়ে মানুষ বুঝে যায় এভাবে থাকলে আরও বেশি আঘাত পেতে হবে। তাই, সে নিজেকে আরও বেশি করে বদলে ফেলে।"
"কিন্তু, এই পরিবর্তনটা যে মানুষটাকেই হারিয়ে ফেলে?"
"প্রতিনিয়ত দুঃখ পেয়ে মরে মরে বেঁচে থাকার চেয়ে, নিজেকে হারিয়ে ফেলে নতুন করে বেঁচে থাকা ভালো নয়?"
"নতুন করে কী বেঁচে উঠা যায়? ভেতরে ভেতরে কী অতীতের সেই গভীর ক্ষত সে বয়ে বেড়ায় না? নতুন মানুষটার ভেতরে কী থেকে যায় না ক্ষতটির স্থায়ী দাগ?"
আনিলার কথা শুনে শুভ্র চুপ হয়ে গেলো। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটি সিগারেট জ্বালিয়ে নিলো। তারপর, সিগারেটের প্যাকেটটি বাড়িয়ে দিলো আনিলার দিকে। আনিলা সঙ্কোচে প্যাকেট থেকে তুলে নিলো একটি সিগারেট। শুভ্র আনিলাকে সিগারেট জ্বালাতে সাহায্য করে বললো, "বদলে গেছি, এইতো বেশ ভালো আছি।"
"তুমি কী আসলেই বদলে গেছো?"
"হ্যাঁ।"
"কিন্তু, কেনো?"
"ভালোবেসেছিলাম যে একজনকে।"
"সে কি ভালোবাসেনি?"
"বেসেছিলো। খুব বেশি করেই বেসেছিলো।"
"তাহলে?"
"খুব বেশি করে ভালোবাসার পর চলে গিয়েছে। অল্প ভালোবাসার দুঃখ খুব সহজে কাটিয়ে উঠা যায়। কিন্তু, অনেক বেশি ভালোবাসা পাবার পর সেটাকে হারিয়ে ফেলার দুঃখ ভোলা যায় না।"
শুভ্রের কথা শুনে আনিলা বললো, "তোমাকেও কেউ ভালোবেসে ছেড়ে চলে যেতে পারে?"
"হ্যাঁ, পারে।"
"কীভাবে? তোমার এতো ভালোবাসা পাবার পরও ছেড়ে দিয়ে মানুষ কীভাবে থাকতে পারে?"
"মানুষ ভালোবাসে। কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবাসে। তারপর, একসময় তার মনে হয় নতুনত্ব বলে কিছু নেই। সবই সাধারণ। ঠিক সেসময় নতুনত্বের সন্ধানে পুরনোকে ফেলে ছুটে যায় নতুনের কাছে। তারপর, যেদিন তার মনে হয় আগেই ভালো ছিলাম; সেদিন তার ফিরে আসতে ইচ্ছে হয়। সেসময় কেউ ফিরে এসে দেখে যেই মানুষটাকে রেখে গিয়েছিলো, সেই মানুষটা আর আগের সেই মানুষটা নাই। কিংবা, ফিরে আসতে গিয়েও আসতে পারে না, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে।"
"মানুষ সারাজীবন ভালোবাসা খোঁজে। কিন্তু, ভালোবাসা পাবার পরও কেনো সে সবকিছু ছেড়ে যায়?"
"মানুষ ভালোবাসা পেতে ভালোবাসে। ভালোবাসে, ভালোবাসা পাবার জন্য অপেক্ষা করতে। কিন্তু, যখন সে সবকিছু পেয়ে যায়, তখন সবকিছু কেমন যেনো ফিঁকে হয়ে উঠে। তবু, মানুষ সন্ধান করে ভালোবাসা নতুনের কাছে। অথচ, তার জন্য যে অসীম ভালোবাসা রয়েছে যার কাছে, তাকে সে উপেক্ষা করে। কেননা, ততদিনে তার ভালোবাসা সে আর চায় না। চায় নতুন কারো ভালোবাসা।"
শুভ্রর কথা শুনে আনিলা চুপ করে রইলো। এই ছেলেটাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু, ছেলেটা তা জানে না। মাঝেমাঝে কিছু ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় না। আনিলা জানে, চাইলেই সে এখন শুভ্রের পাশে থেকে খুব সহজে সম্পর্কে জড়িয় যেতে পারবে। পারবে শুভ্রের প্রাক্তনের দেওয়া কষ্টটাকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে। কিন্তু, আনিলা এটাও জানে, শুভ্র ঐ মেয়েটাকেই ভালোবাসে। সে সাময়িকভাবে শুভ্রকে ভুলিয়ে রাখতে পারলেও, একটা সময় আর পারবে না। আর তখন সমাপ্তি ঘটবে তাদের সম্পর্কের। অধিকাংশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা হয় আরকি। কষ্টকে পুঁজি করে সাময়িক ভালোবাসা অর্জন করা যায়, যায় সাময়িক কমফোর্ট জোন। তারপর, যেদিন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন মানুষটা বুঝতে পারে, এখানে কমফোর্টজোনের জন্য থাকা হয়েছিলো, ভালোবাসার জন্য না। আর ঠিক তখনই সমাপ্তি ঘটে সম্পর্কের। কিন্তু, সাময়িক এই সম্পর্কের জন্য তার এতোদিনের বন্ধুত্ব, প্রেমিক না হলেও বন্ধুর মতো করে কাছে পাওয়া কোনোটাকেই সে বিসর্জন দিতে পারবে না।
আনিলার এই নীরবতা দেখে শুভ্র বললো, "কি ব্যাপার চুপ হয়ে রইলে যে?"
আনিলা তখন বললো, "শুভ্র তুমি বদলাওনি। চেষ্টা করছো বদলাতে। উপর থেকে দেখাচ্ছো বদলে গেছো। কিন্তু, ভেতরে আজও রয়ে গেছে সেই গভীর ক্ষত।"
আনিলার কথা শুনে শুভ্র বললো, "যাকে ভালোবাসি, তাকে কী ভুলে যাওয়া যায়? সে থাকবে, গভীর ক্ষত হয়েই হয়তো থাকবে। তবু, সে থাকবে।"
"কিন্তু, এই ক্ষত কী তার প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করবে না?"
শুভ্র তখন বললো, "ভালোবাসার মানুষকে কখনো ঘৃণা করা যায় না। যদি কখনো কেউ ভালোবাসার মানুষটির প্রতি অভিযোগ করে, তবে সেটা ঘৃণা নয়, সেটাও এক প্রকার ভালোবাসা।"
"আর যদি ক্ষতি করে?"
আনিলার প্রশ্ন শুনে নির্বাক দৃষ্টিতে শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,
ভালোবাসার মানুষের কখনো ক্ষতি করা যায় না। যদি কখনো করা হয়, সেই ক্ষতিতে ঐ মানুষটা যতোটা কষ্ট পায়, তার চেয়ে বেশি পায় যে করছে। তাই, ক্ষতিটা যতোটা হয় ঐ মানুষটার, তারচেয়ে বেশি হয় যে করেছে তার...
(ধন্যবাদ সবাইকে ।
ভালো থাকবেন, শুভ রাত্রি 🙃☺️🤗)
Great brother