বুকের ভেতর এক তীব্র অশান্তি নিয়ে কেটে যায় রাতের পর রাত। মনে হয়, বুকের ভেতর চলতে থাকা আর্তনাদগুলোকে শুনবার জন্য কোথাও কেউ নেই। তবু, খুঁজে নেই তাকে, যাকে সবচেয়ে আপন বলে মনে হয়। অথচ, বলবার সময় দেখি, যাকে ভাবি সবচেয়ে আপন, সে কথা শুনবার পাশাপাশি ডুবে আছে চারকোণা কাঁচের বাক্সের পৃথিবীতে। তখন, মনের মধ্যে কেউ এসে বলে, কি দরকার নিজেকে প্রকাশ করবার? তোমার কথা শুনবার মতো আগ্রহ আছে কার?
এভাবেই রাতের পর রাত নির্ঘুম পেরিয়ে যায়। আর আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকি আরেকটু বেশি করে। নিকোটিন পুড়িয়ে একলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবি, জন্মই আমার আজন্ম পাপ। তারপর, ভোর হয়। পুব আকাশে জেগে উঠে সূর্য। আর সেই সূর্যের জেগে উঠবার সময় জানালা পর্দা দিয়ে ঢেকে শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর আবার জেগে উঠি অদ্ভুত সব দু:স্বপ্ন দেখে। তারপর, খাটের পাশে রাখা বোতল থেকে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নেমে পড়ি আরেকটি দিন বাঁচবার যুদ্ধে। চেষ্টা করি, নিজেকে বোঝাতে, আজকের দিনটা ভালো কাটবে। অথচ, ব্যস্ততার মিথ্যে মেকিতে সময়ের পর সময় পার করে যখন নীরালায় বসি নিজের সাথে, তখন মনে হয়, "কী লাভ এতো চেষ্টা করে? একটা জীবন তো এভাবেই কেটে যাবে। সারাদিনে ব্যস্ততা, দিনশেষে নিসঙ্গতা। এ জীবনে কেউ তো আমার নয়।"
ভাবতে ভাবতে রাত গভীর হয়। নিসঙ্গতায় অস্থির হয়ে কল দিই প্রিয় মানুষটিকে। অথচ, রিং হয় না। মোবাইল স্কিন জানিয়ে দেয়, আপনি যাকে খুঁজছেন, সে ব্যস্ত আছে আরেকজনের সাথে। এভাবেই রাত বাড়তে বাড়তে থাকে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে চারের ঘরে চলে যায়। কিন্তু, তাকে আর পাওয়া যায় না। সে তখনও ডুবে থাকে অন্য একজনের সঙ্গে। কিংবা, ঘুমিয়ে যায় তাকে নিশ্বাসের শব্দ শুনতে দিয়ে।
মনের ভেতর তীব্র এক অস্বস্তি নিয়ে পুড়তে থাকে সিগারেট। বারবার জেগে উঠে প্রশ্ন, তবে কী আমার কেউ নেই?
তারপর, সকাল হয়। যেনো কিছুই হয় নি ভঙ্গিতে ইনবক্সে মেসেজ আসে, "গুড মর্নিং"। উত্তর না পাওয়ায় আবার অনেকক্ষণ পর মেসেজ আসে, "তোমার কি কিছু হয়েছে?"
মেসেজগুলো দেখে চুপচাপ বসে থাকি আমি। প্রশ্ন করি নিজেকে, আমারতো এমন করবার নয়, তবে কেন করছি এমন? পৃথিবীতে আমি দু:খ পেতে এসেছি, তবে কেন দু:খতে আমার এতো ভয়? কিংবা, আমার তো কখনো কেউ হবার নয়, তবে কেনো কাউকে আপন করে নেবার এতো চেষ্টা?
ভাবতে ভাবতে ছ'তলা ভবনের ছাঁদ থেকে নীচে তাকাই। দেখি, একটি সরু রাস্তা তাকিয়ে আছে আমার দিকে হেসে। বলছে, "লাফ দাও, আমি তোমাকে আলিঙ্গন করবো। আলিঙ্গন করে মুছে দিবো সব দু:খ তোমার।"
অবশ্য আমার আর লাফ দেওয়া হয় না। ধীর পাঁয়ে ছাঁদ থেকে নেমে রাস্তায় নেমে পড়ি। তারপর, একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিজেকে বলি, "একটি আত্নহত্যা স্থগিত হয়ে আছে সাহসের অভাবে। যতোদিন সেই সাহস সঞ্চয় না হয়, ততোদিন দেখে যাই।
এমনিতেও আমার বেঁচে থাকায় কিচ্ছু যায় আসে না, মরনেও না। তাই, আরেকটু বেশি বাঁচলে, আরেকটু বেশি অক্সিজেন অপচয় করলে; কারো কিচ্ছু যায় আসবে না।"
১৯.০৭.২০২০
আপনার লেখাটা পড়ে খুব কষ্ট লাগলো। কিন্তু কথাগুলো একদম হৃদয়ে এসে পৌঁছায়।