আমরা শুনলাম। এরপর সুখী মানুষ হবার জন্য নেমে পড়লাম একটা দুরন্ত প্রতিযােগিতায়। এই প্রতিযােগিতা বড় হবার প্রতিযােগিতা। কাকে ছাড়িয়ে কে বড় হৰ। কাকে ছাপিয়ে কে এগিয়ে যাব। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারিত হলাে। কাড়ি কাড়ি টাকায় আমাদের ব্যাংক ভরতি থাকতে হবে। আমার নিজস্ব গাড়ি থাকতে হবে, বাড়ি থাকতে হবে। আমাকে জৈবিক সুখ দেওয়ার জন্য একদল সুন্দরী রমণী থাকতে হবে। যশ-খ্যাতি তাে অবশ্যই থাকা চাই। মিডিয়াতে আমি হব ‘টক অব দ্য টাউন, পত্রিকার টক অব দ্য ডে'। আমাকে নিয়ে ফিচার হবে, প্রদর্শনী হবে। আমাকে একনজর দেখার জন্য, আমার একটা অটোগ্রাফের জন্য মানুষ দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকবে, তবেই-না আমি সুখী মানুষ!
কর্পোরেট দুনিয়ায় খ্যাতিই সবকিছু। যার খ্যাতি নেই, সে সুখী নয়। সুখী হতে হলে তাকে খ্যাতি অর্জন করতে হবে। কিছুদিন আগে একটা গুঞ্জন চাউর হয়েছিল জোরেশােরেই। হলিউডের এক অভিনেত্রী তার যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়। অভিনয় জগতে খ্যাতির জন্য তাকে পর্দার পেছনের এবং সামনের পুরুষদের বিছানায় সঙ্গ দিতে হয়েছে। হতে হয়েছে অনেকগুলাে পুরুষের উপভােগের বস্তু। খ্যাতির তাড়না আর মােহে অন্ধ এই অভিনেত্রী হ্যামিলনের সেই বংশীবাদকদের সুরে নিজেকে একাত্ম করে রেখেছিল। ভেবেছিল, এতেই বুঝি সুখ। এতেই বুঝি জীবনের সকল প্রাপ্তি। সেই প্রাপ্তি আর সুখলাভের আশায় বিলিয়েছে নিজের সর্বস্ব। হয়েছে পুরুষদের বিছানার সামগ্রী। যখন তার হুঁশ ফিরল, যখন বুঝতে পারল যে, এটা আসলে সুখ নয়, মরীচিকা—তখন সে সােচ্চার হলাে, প্রতিবাদ জানাল। টুইটারে লিখল If you've been sexually harassed or assaulted, write 'me too' as a reply to this tweet'. 6211 গেল, এই টুইটের প্রতিউত্তরে হাজার হাজার টুইট আসতে লাগল। স্বপ্নিল বলিউড আর হলিউডের হাজার হাজার অভিনেত্রী সেই টুইটের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করে ‘Me To0' লিখে প্রতিবাদ জানাল। অর্থাৎ তারাও তাদের সেই সুখের দুনিয়ায় কোনাে-না-কোনভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার। যেই খ্যাতি আর সুখের জন্য মেয়েগুলাে নিজেদের ডুবিয়ে রেখেছিল পার্থিবতা লাভের মধ্যে, সেই সুখ অর্জন করতে গিয়ে নিজেকে বিকিয়ে বসা সেই অভিনেত্রীরা বুঝেছিল, চোখ ধাঁধানাে এই কর্পোরেট দুনিয়া আসলে আস্ত একখণ্ড নরক
2
11