একদিন ছেলে বসে পড়ছিল তখন বাবা ছেলের পাসে বসল-
বাবা: তুই সারাদিন এমন চুপ চাপ থাকিস কেন?
ছেলে: কেন বাবা আমিতো কথা বলি।
বাবা: তোকে অযথা এত বকাঝকা করি অথচ কিছু বলিস না। প্রতিবাদ করিস না।
ছেলে: কেন বাবা, আমিতো প্রতিবাদ করি।
বাবা: কই করিস? আমি যে দেখি না।
ছেলে: কেন বাবা তুমি বকা দিলে আমি টয়লেটে যাই।
বাবা: টয়লেটে গেলে কি রাগ কমে? টয়লেটে গিয়ে কি করিস যে রাগ কমে?
ছেলে: টয়লেট ব্রাশ করি।
বাবা: টয়লেট ব্রাশ করলে কি রাগ কমে?
ছেলে: কেন আমি তোমার ব্রাশ (দাঁতের) দিয়ে টয়লেট ব্রাশ করি।
গল্প 6 : গাধার বাচ্চা
সৈয়দ রহিম মিঞার মেজাজ ভীষণ খারাপ। তার একমাত্র ছেলে মন্টু মিঞা এইবার তৃতীয়বারের মত এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে। ফলাফল সম্ভবত একই। কারন আজ পরীক্ষার রেজল্ট হবার কথা। একারনেই হয়ত সকাল থেকেই মন্টুর কোন খোজ নেই। রহিম মিঞা মন্টুকে খুজে না পেয়ে যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। হতচ্ছাড়া, নালায়েক পোলা আবার ফেল করেছে। পোলাকে সামনে না পেয়ে রাগটা গিয়ে পড়ল স্ত্রীর উপর। কান ফাটানো শব্দে চেচিয়ে উঠলেন, “মন্টুর মা, ও মন্টুর মা. . . . গেলা কই। মরলা নাকি?” মন্টুর মা ই বা কম যায় কিসে? হাজার হোক, তিনি সৈয়দ বাড়ীর বউ। সমান তেজে জবাব দিলেন, “কি কইবা, কও। আমি শুনতাছি।“
- “তোমার নালায়েক পোলা কই পালাইছে?”
- “পোলা কি শুধু আমার? তুমি খোজ রাখবার পার না?
- “দেখ মন্টুর মা, তোমার লাই পায়া পায়া পোলা গোল্লায় গেছে। কই লুকায়া রাখছ কও? আইজ আমার সাধের লাঠি ওর পিঠে আমি ভাঙ্গুমই ভাঙ্গুম।“
- “কেন? আমার পোলায় কি করছে?”
- “কেন? তুমি বোঝ না? এত বেলা হইল পোলার কোন খবর নাই। আইজ পরীক্ষার রেজল্ট দিতাছে। গাধার বাচ্চা নিশ্চই ফেল করছে। না হইলে পলাইব কেন?”
- “তাইত কই! পোলা আমার পত্যেক বার ফেল করে কেন? গাধার বাচ্চা কোন সময় পাশ করবার পারে? গাধার বাচ্চাতো সারা জীবন গাধাই থাকে।“
রহিম মিঞা রাগের মাথায় ভুল করে মিসটেক করা বাক্যটার হাত থেকে রেহাই পেতে লাঠি হাতে ছেলের খোজে বের হয়ে গেল।
যথাসময়ে পরীক্ষার রেজল্ট পাবলিশ হল। রহিম মিঞার ধারণা সত্য প্রমাণ করার জন্যই মনে হয় অনেক খুজেও মন্টু তার রোল পাশকরা ছাত্রদের মধ্যে দেখতে পেল না। মনের মধ্যে দশ নম্বর বিপদ সংকেত শুনল। আর দেরী নয়, ঝেড়ে দৌড় লাগাল মন্টু মিঞা। পরবর্তী দৃশ্য বড়ই মনোরম। মন্টু মিঞা দৌড়াচ্ছে। পিছনে লাঠি হাতে রহিম মিঞা। সমান তালে চেচ্চাচ্ছেন তিনি। “ধর, ধর”।
মন্টু জান প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে মন্টুর বন্ধু হাবলু ভাবল মন্টু নিশ্চই বিপদে পড়েছে। নিশ্চই তারে পাগলা কুত্তা তাড়া করছে। না হইলে এই ভাবে দৌড় দিবে কেন? সে আপন মনে দৃশ্যটা কল্পনা করে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। রহিম মিঞা হাবলুকে পাশ কাটনোর সময় তাকে এভাবে হাসতে দেখে অবাক হলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হইছেরে হাবা? এমুন কইরা হাসতাছস কেন?” হাবলু হাসতে হাসতে জবাব দিল, “কুত্তার তাড়া খায়া মন্টু এমুন দৌড় দিছে! দেইখা হাসতাছি।“ রহিম মিঞা হুংকার ছেড়ে বললেন, “কি? আমি কুত্তা? এত বড় সাহস!” মুহুর্তের মধ্যে রহিম মিঞার লাঠির দু ঘা হাবলূর পিঠে পড়ল। আর হাবলু? কিছু বুঝতে না পেড়ে জান বাচাতে মন্টুর সঙ্গী হল।
এদিকে মন্টু দিক বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে দৌড়াতে গিয়ে ধাক্কা খেল পাশের বাড়ির হালিমের সাথে। হালিম আর মন্টু ধাক্কা খেয়ে চিৎপটাং। হালিম লাফিয়ে উঠে মন্টুকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার শুরু করল, “চোর! চোর!. . . .” মন্টু হালিমের হাতের চিপায় পড়ে চিও চিও করে বলে, “আমি চোর না। আমি মন্টু।“ হালিম মন্টুকে না ছেড়েই বলে, “ তাইলে এইভাবে চোরের লাহান দৌড় দিছিস কেন?” মন্টু হালিমের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য বলল, “দেখতেছিস না আব্বারে একটু দৌড় শিখাইতেছি। এইবার ছাড় নারে ভাই, আমি পালাই।“ হালিমের তবুও সন্দেহ যায় না। বলল, “একটু খাড়া। চাচা আসুক। আসল ঘটনা জাইনা লই।“ মন্ট ভাবল, ‘আমি এইবার শেষ।“ কি করা যায়? এমন সময় হালিম দেখল গগন বিদারী চিৎকার করতে করতে হাবলূ ছুটে আসছে। পিছনে লাঠি হাতে রহিম চাচা। মুহুর্তের মধ্যে মন্টুর হাত ছেড়ে সেও দৌড় দিল। পিছনে পড়ে রইল তার বিদায়ী বানী, ”চাচায় ক্ষেপছে।“ ছাড়া পেয়ে মন্টুইবা দেরী করবে কেন? সেও হাওয়া হল।
রহিম মিঞা বুড়া মানূষ। বেশিক্ষণ মন্টুর পিছে তাড়া করতে পারল না। সে হাটতে হাটতে এগিয়ে চলল। এই ফাকে মন্টু দৌড়ে তাদের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিল। এক পর্যায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত মন্টু একটা খরের গাদা দেখতে পেয়ে সেখানে আরাম করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। মন্টু এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোনদিন বই খুলে দেখছে কিনা সন্দেহ আছে। তাই সে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটাও হয়ত জানে না। রহিম মিঞা হাটতে হাটতে খরের গাদার সামনে এসে হাজির হল। দেখল মন্টু আরাম করে ঘুমাচ্ছে। দেখে তার মেজাজ আরো খারাপ হল। মনে মনে ভাবল, “আমি সারাদিন হেটে বেড়াচ্ছি। আর নবাবজাদা আরাম করে ঘুমাচ্ছে।“ দেরী না করে হাতের লাঠি দিয়ে খোচা দিলেন তিনি। খোচা খেয়ে মন্টুর ঘুম একটু পাতলা হল। ঘুম জড়ানো কন্ঠেই সে বলল, “কোন শালারে?” এইবার রহিম মিঞা দু ঘা লাগিয়ে দিয়ে বললেন, “শালা না, আমি তোর বাপ।“ দু ঘা খেয়ে মন্টুর ঘুম বাপ বাপ করে পালাল। সেই সাথে সেও বাপ বাপ করে বলল, “আব্বাগো, এই বারের মত মাফ কইরা দাও। আমি আর জীবনেও ফেল করমু না।“ রহিম মিঞা আরোও দু ঘা লাগিয়ে বললেন, “গতবারও এই কতাই কইছিলি।“ মন্টু এই বার কাদতে কাদতে বলল, “আর কোন দিন কমু না। আবার যদি ফেল কার তবে তুমি কওনের সুযোগ দিও না। কওনের আগেই. . . . .“ রহিম মিঞা উত্তেজিত হয়ে বলল, “কি? কি কইতে চাস? কওনের আগেই তোরে জানে মাইরা ফালামু?” মন্টু ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, “না। আমি কইতে চাইছিলাম, কওনের আগেই মাফ কইরা দিও।“ রহিম মিঞার লাঠির আরো দু ঘা পড়ল মন্টুর পিঠে। মন্টু এইবার বাবার পা ধরে বলল, “এইবরের মত মাফ কর বাজান। দোষী তো খালি আমি একা না।“ রহিম মিঞা অবাক হলেন। বললেন, “দোষী তুই একা না, মানে?” মন্টু এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “সব দোষ বুঝি আমার? স্যারগরে দোষ নাই। স্যাররা যদি আমারে পড়াইতো, আমি কি ফেল করতাম?” রহিম মিঞা ভেবে দেখল, “তাইত! স্যারেরা যদি ঠিকমত পড়াইতো, তবে কি আর তার ছেলে ফেল করত? এইবার স্যারগরে ধরতে হইব।“ ছেলের হাত ধরে সে চলল হাইস্কুলের দিকে। এদিকে স্কুলের অংক স্যার কুদরত আলী প্রাইভেট পড়ানোর জন্য হাতে ছাতা ঝুলিয়ে সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিল। স্যারকে দেখে রহিম মিঞা হাতের লাঠি উঠিয়ে ডাক দিল, “মাস্টার সাব, ও মাস্টার সাব।“ কুদরত স্যার ইতিমধ্যেই হাবলু আর হালিমের কাছে রহিম মিঞার ক্ষেপে ওঠার ঘটনা জেনে গেছে। লাঠি হাতে রহিম মিঞাকে ছুটে আসতে দেখে তার মনের মধ্যে কু ডাক ডেকে উঠল। তিনি আর দেরী করলেন না। উল্টা দিকে ঘুরে ঝেড়ে দৌড় লাগালেন। কিন্তু তার ভাগ্য হাবলু আর হালিমের মত ভাল হল না। অনভ্যস্ত শরীরে দৌড়াতে গিয়ে খেলেন আছাড়। আছাড় খেয়ে পায়ের জুতো কোথায় গেল কে জনে? ছাতাটাও গেল বাকা হয়ে। কোন মতে হাচরে পাচরে উঠে দাড়ালেন। ততক্ষণে রহিম মিঞা মন্টুকে নিয়ে পৌছে গেছেন। কুদরত স্যার পালানোর আর পথ পেলেন না। ছাতা সারা আর জুতো খোজায় মন দিলেন। রহিম মিঞা কাছে এসে জানতে চাইলেন, “ওকি মাস্টার সাব। ওভাবে দৌড় দিলেন কেন?” কুদরত স্যার নিজেকে সামলে নিয়ে বলরেন, “ও কিছু না। আমাদের গেম স্যার আমাকে সকালে আধাঘন্টা আর বিকালে আধাঘন্টা করে এক ঘন্টা দৌড়াতে বলেছেন। তাইলে নাকি আমার শরীর ভাল থাকবে।“ ত্যাদর মন্টু হেসে বলল, “কিন্তু স্যার, এখনওতো বিকাল হয় নাই। এখন দুপুর বলা চলে।“ “চুপ কর বেয়াদব।“ কুদরত স্যার ধমকে উঠলেন। “তুই জানিস না, আমি অংকের স্যার। আমি অংক কষে বের করলাম, গড়ে সকালে ২০ মিনিট, দুপুরে ২০ মিনিট আর বিকালে ২০ মিনিট দৌড়ালে আমার একঘন্টা দৌড়ানো হবে। তাই সেভাবে দৌড়াই।“ এরপর রহিম মিঞার হাতের লাঠি দেখিয়ে কুদরত স্যার জানতে চাইলেন, “ওটার কাজ কি? লাঠি নিয়ে ঘুড়ছেন কেন? রহিম মিঞা দাত কিরমির করে বললেন, “গাধা পিটামু।“ এইবার কুদরত স্যার রেগে গেলেন। বললেন, “দেখেন, বিনা কারনে লাঠি নিয়ে তাড়া করলেন। আবার গাধা বলে গালি দিচ্ছেন। ভাল হচ্ছে না কিন্তু।“ রহিম মিঞা অবাক হয়ে বললেন, “আমি আবার আপনারে তাড়া করলাম কখন? আর গাধাই বা বললাম কখন? আমিতো গাধা কইছি আমার পোলা মন্টুরে।“ কুদরত স্যার হাফ ছেড়ে বাচলেন। বললেন, “কেন, কেন? মন্টুকে গাধা বলছেন কেন? কি করেছে আমাদের মন্টু?” রহিম মিঞা বললেন, “কি করেছে মানে? কি করে নাই সেইটা কন?” কুদরত স্যার তারাতারি শুধরে নিয়ে বললেন, “কি করে নাই মন্টু?” রহিম মিঞা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “পাশ। পাশ করে নাই মন্টু।“ কুদরত স্যার হতাশ গলায় বলেন, “আবারও ফেল।“ মন্টু দাত বের করে হাসতে হাসতে স্যারের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলল, “জ্বী স্যার, আপনাদের বদ দোয়া।“ কুদরত স্যার লাফিয়ে তিন হাত পিছনে সরে গিয়ে বললেন, “বদ দোয়া মানে?” মন্টু দাত বের করেই উত্তর দিল, “স্যার, পাশকরা ছাত্ররা আপনাদের পায়ে হাতদিয়ে সালাম করে বলে ‘আপনাদের দোয়ায় পাশ করছি’। তাই আমি কইলাম, আপনাদের বদ দোয়ায় ফেল করছি।“ কুদরত স্যার ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন। আর রহিম মিঞা দ্বিতীয় বারের মত মন্টুকে বললেন, “গাধার বাচ্চা।“