#তুমি_অশরীর¿You Unphysical ( ভৌতিক প্রেমের গল্প)
পর্ব:-৪
----------------------------------'
সন্ধ্যার সময় মেহু আর অবন্তী বসে বসে গল্প করে।
--অবন্তী যা দুই কাপ কফি নিয়ে আয়।গল্প করতে করতে কফি পান করা যাক।
অবন্তী কে কফি আনার জন্য বলে মেহু।
.
--তুই একটু বস আমি এখুনি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
অবন্তী মেহুকে বলে কফি বানাতে চলে যায়।
.
অবন্তী কফি বানাতে গেলে মেহু জানালার কাছে একটা টুল টেনে নিয়ে বসে।বাইরের পরিবেশ দেখতে থাকে। এমন সময় হুট করেই তার গতো রাতের কথাগুলো মনে পড়ল।মেহু মনে মনে ভাবে, কি হচ্ছে এসব তার সাথে? কে এই ছেলে? আর রাতে এমন অবাক করা কান্ড সব হচ্ছে কেন? আর বাড়িটাতে কি আসলেই কেউ ছিল নাকি ছিল না? নিজে নিজেই প্রশ্নগুলো করছে মেহু।কিন্তু একটা উত্তরও সে পাচ্ছে না।
.
--এই নে মেহু কফি।খেয়ে দেখ কেমন হলো।
অবন্তী কফি নিয়ে এসে মেহু কে বলল।মেহু অন্যমনস্ক থাকায় অবন্তীর কথায় চমকে উঠল।
.
--হ্যাঁ কি বল।
মেহু অবন্তীর কথা ঠিক মতো না শুনেই উত্তর দিল।
.
--কি'রে কী হয়েছে চমকে উঠলি যে?
অবন্তী বলে উঠল।
.
--না না তেমন কিছু না।আসলে হুট করে কথা বললি তো তাই।দে কফি দে।
বলেই অবন্তীর হাত থেকে কফি নিয়ে খেতে লাগল মেহু।
.
অবন্তীও একটা টুল টেনে নিয়ে মেহুর পাশে বসলো।
--মেহু এখন ঠিক আছিস তো।শরীর ভালো আছে?
মেহুর অসুস্থতার কথা জানতে অবন্তী বলল।
.
--হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
উত্তরে মেহু বলল।
.
এরপর অনেকক্ষন দু'জনে নিরব হয়ে থাকল। কেউ কোনো কথা বলছে না।দূর থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনা যাচ্ছে।মৃদু বাতাস বইছে বাইরে।আকাশ মেঘলা হয়ে আছে।যেকোনো সময় অঝর ধারায় বইতে পারে বৃষ্টি।কফি শেষ হয়েছে অনেক আগেই।কাপ রেখে হাত দুট বুকের মধ্যে গুটিয়ে নিয়ে বসে আছে দু'জনে
.
--ক্লাশ কেমন হলো অবন্তী?
নিরবতা ভেঙ্গে মেহু বলে উঠল।
.
--হ্যাঁ আজকে তিন টা ক্লাশ হয়েছে।আমি তোকে বুঝিয়ে দিব সব।আর কালকে কিন্তু আমরা বই কিনে নিব।বই না নিলে তেমন একটা বুঝা যায় না।
অবন্তী বলে উঠল।
.
--আচ্ছা ঠিকাছে।অনেক রাত হয়েছে মনে হয়।চল খাওয়া সেড়ে নেই।
মেহু বলল।
.
এরপর দুজনে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল।যদিও মেহুর ঘুম আসছে না।সে অপেক্ষায় আছে গভীর রাতের।আজ তাকে জানতেই হবে ছেলেটার সম্পর্কে। কে এই ছেলে? তার নাম কী? দিনে তাদের বাড়িতে গিয়ে কোনো সাড়া পেল না কেন? সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য মেহু আজকে যাবে ছাদে।
.
রাত ১ টা বাজে।মেহু ধীরে ধীরে উঠে ছাদের দিকে যেতে লাগলো।দরজা পার হতেই হাতে থাকা মোবাইলে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে নিল।এখনও বাতাস বইছে।বৃষ্টি আসে নি।তবে যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।ছাদের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে, আজকে দেখা পাবে তো ছেলেটার? সে তার প্রশ্নের উত্তর দিবে তো? অনেক সংকচ নিয়ে ছাদে পৌঁছাল।
.
ছাদে গিয়ে চারপাশে ছেলেটাকে খুঁজতে লাগলো মেহু।বেশ কয়েকবার ডাক দিল তাকে।কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পেল না।মেহু মনে মনে বলছে, ছেলেটা ছাদেই কোথাও আছে কিন্তু সাড়া দিচ্ছে না।সে অপেক্ষা করবে।দেখবে কখন এসে সাড়া দেয়।মেহু ছাদের উপর পায়চারী করতে থাকে।
.
এদিকে অবন্তীর আজকে হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে নিজেও জানে না কেন এমনটা হলো।অন্ধকারে পাশে হাতরিয়ে দেখে মেহু নেই।অবন্তী ভাবল বাথরুমে গেছে।তাই অবন্তীও বাথরুমে যেতে লাগলো ঘরের লাইট অন করে।
.
--মেহু তুই কী ভিতরে আছিস?
বাথরুমের সামনে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল অবন্তী।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।তাই অবন্তী আবার ধাক্কা দিল।
.
--মেহু শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা? তুই কি ভিতরে আছিস?
.
এবার অবন্তী দেখে বাথরুমের দরজা খোলা আছে। অবন্তী খানিকটা চমকে উঠে।বাথরুমের ভিতরে দেখে কেউ নেই।মনে মনেই বলে উঠে অবন্তী, মেহু তাহলে কোথায়? এরপর প্রতিটা রুমে খুঁজে দেখে কোথাও নেই মেহু।মেহুকে না পেয়ে অবন্তী ভয় পেয়ে যায়।অবন্তী আর কিছু না ভেবে বাইরের দিকে যায়।দরজার কাছে এসে দেখে দরজা খোলা।এবার অবন্তী বুঝতে পারে মেহু বাইরে গেছে।কিন্তু কোথায় সেটা জানে না? আর তাই অবন্তী বাইরে যায় মেহুকে খুঁজার জন্য।
.
অনেকক্ষন হওয়া সত্যেও যখন মেহু দেখল কেউ আসছে না তখন সে ভাবে, হয় তো আজকে আর আসবে না।সে শুধু শুধুই চিন্তা করছে।কিন্তু তার ভাবনা কে ভুল করে দিল।হঠাৎই শুনতে পেল কেউ একজন গিটার বাজাচ্ছে।ঠিক সেই আগের মতো।করুন,বেদনাময় সুর।যে সুর শুনলে মনে হয় বুকের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক কষ্ট।তোলপার করে দিবে আকাশ পাতাল।চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো কোথা থেকে আসছে এই সুর।কিছুক্ষন চারপাশে তাকিয়েই মেহু দেখতে পেল কাঙ্খিত সেই মুখ খানা।
,
অবন্তী নিচে আসার সাথে সাথেই শুনতে পেল সেই গিটারের সুর।অবন্তী সুরটা শুনেই কানে হাত দিয়ে দিল।তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে এই সুর শুনে।চিৎকার দিতে গিয়েও দিতে পারল না।একটা সময় সে অন্যমনস্ক হয়ে গেল।কিছুই বুঝতে পারছে না তার কি হয়েছে? অবন্তী হাটা শুরু করল নিজের অজান্তেই।কথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।সে যেতে চাইছে না। কিন্তু কোনো এক অজানা শক্তী তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
,
--এই যে হ্যালো মিস্টার আপনি এই সুর বন্ধ করুন।
মেহু চেঁচিয়ে বলে উঠল।
.
--না আমার পক্ষে এই সুর বন্ধ করা সম্ভব না।
প্রতিউত্তরে বলে উঠল ছেলে টা।
.
--কেন সম্ভব না? আর আপনি কে? কী আপনার পরিচয়? দুপুরের দিকে আপনাদের বাসায় গেলাম কিন্তু কারো সাড়া পেলাম না কেন? বাড়িতে কী কেউ ছিলেন না?
একনাগাড়ে প্রশ্নগুলো করে যাচ্ছে মেহু।
.
--আমার পরিচয় পড়ে জানবেন।আগে আপনি আপনার ঘরে যান।নাহলে খুব বড় বিপদ হয়ে যাবে আপনার।
ভয়ে ভয়ে বলে উঠল ছেলেটা।
.
এদিকে বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করেছে।প্রবল বেগে বাতাসও বইছে।মাঝে মাঝে বিকট আওয়াজে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
.
--না আমি যাব না।আগে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন তারপর যাব।
মেহু রেগে গিয়ে বলল ছেলেটাকে।
.
--আমি আন্তের।কিন্তু আপনাদের মতো আমি নই। আমি অন্য জগৎ এর বাসিন্দা।আপনি প্লিজ আপনার ঘরে যান এখন, না হলে পড়ে আফসোস করবেন। আর শুনুন, এরপর কখনও আমাদের এই বাসার দিকে আসবেন না।এতে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।
কথাগুলো বলে উঠল ছেলেটা
.
ছেলেটার কথা শুনে মেহু থমকে দাঁড়ায়।কী বলল ছেলেটা? অন্য জগৎ এর বাসিন্দা? এর মানে কী? মনে মনেই ভাবছে কথাগুলো মেহু।
.
--কী হলো আপনি যাচ্ছেন না কেন? তাড়াতাড়ি চলে যান ঘরে।
ছেলেটা চিৎকার করে বলছে মেহুকে।
.
ছেলেটার কথায় মেহু হুস ফিরে পায়।মেহু দেখে বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে একাকার করে দিয়েছে।বাতাসের বেগ প্রচন্ড রকম বারছে। শুধু ছেলেটা মাতাল হওয়ার মতো এক ধ্যানে গিটার বাজাচ্ছে।ধীরে ধীরে তার শরীরে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।কেমন সাদা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে সে।এমনটা হতে দেখে ভয় পেয়ে যায় মেহু।সাথে সাথে এক দৌঁড় দিয়ে চলে আসে ঘরে। ঘরে এসে বিছানায় বসে হাঁপাতে থাকে সে।বেশ কিছুক্ষন পর মেহু লক্ষ্য করল ঘরের লাইট অন করা।কিন্তু তার মনে আছে সে লাইট অন করে নি।সাথে সাথেই বিছানার দিকে ভালো করে তাকালো মেহু।দেখেই আরো প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।কারন বিছানায় অবন্তী নেই।অবন্তী তাহলে গেছে কোথায়? বাথরুমে? বলেই দৌঁড়ে বাথরুমের কাছে গেল।কিন্তু না বাথরুমে কেউ নেই।তাহলে অবন্তী গেল কোথায়? নাকি তাকে খুঁজতে বাইরে গেছে? কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে যাবে কোথায়? মেহু আর কিছু ভাবতে পারছে না।সে কী করবে ভেবে উঠতে পারে না।মেহু বাইরের দিকে যেতে লাগলো।
.
অবন্তী ধীর পায়ে এগিয়ে চলছে সেই বাড়িটার দিকে।তার মনে হচ্ছে কেউ একজন তাকে ডাকতেছে।আর সেই ডাক তাকে বশ করে নিয়েছে যার কারনে কিছুই করতে পারছে না।
.
মেহু বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।কোন দিকে যাবে বুঝে উঠতে পারে না।বৃষ্টিটাও প্রবল বেগে ঝরছে।অবন্তী বলে ডাক দিলেও সেই ডাক বৃষ্টির বর্ষণের আওয়াজে মিলিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ মেহুর মনে পড়ে ছেলেটার কথা।ছেলেটা বলেছে তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে নাহলে পরে আফসোস করতে হবে।তার মানে ছেলে টা আগে থেকেই যানে অবন্তীর কিছু একটা হবে।এসব ভাবতেই মাথায় হাত দেয় মেহু।নিজেকেই নিজে গালি দিচ্ছে এমন বকামি করায়।কেন সে ছেলেটার কথা শুনল না।হঠাৎই মনে হলো মেহুর সেই বাড়ির কথা।আর কিছু না ভেবে সে তাড়াতাড়ি বাড়িটার দিকে যেতে লাগলো মেহু।
আর.....
,
চলবে_____
,
গল্প সম্পর্কে আপনাদের মতামত দিন।
0
30