তুমি আছো রিদয়ে২

0 17
Avatar for Koly
Written by
3 years ago

তুমি আছো হৃদয়ে

পর্ব-০২

মায়ের মায়ের ভাষ্যমতে,

"তোকে আর অন্য কারো অনুগ্রহ নিয়ে থাকতে হবেনা।আমি ভালো ছেলে,ভালো ফ্যামিলি দেখে তোর বিয়ে দিয়ে দেবো।তুই নিজের একটা পরিবার পাবি।পড়াশোনা করবি।সুখে থাকবি।"

--দূরর!!বিয়ে কে করে?মা আমি বিয়ে করতে চাইনা।(মনে মনে)

বাট মুখে কিছুই বলতে পারলাম না।চুপ করে বসে ছিলাম।ফলস্বরূপ রেজাল্টের এক সপ্তাহের মাথায় বিয়ের সমন্ধ এসেছে।আমাকে দেখতে এসেছে।।যদিও বাবা একটুও রাজি না।

আমি আবার বেডে এসে বসলাম।বিয়ে করে সংসার করা কিংবা পড়াশোনা করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কোনোটাই আমার ইচ্ছে নয়।আমার ইচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া।সবাই বলে আমার ড্রেস ডিজাইন আর কালার সেন্স অনেক ভালো।আমার বইখাতায় বিভিন্ন ডিজাইন আর্ট দিয়ে ভর্তি।প্রতি পাতায় পাতায় এসব আকা ছিলো।আমার ফ্রেন্ড কিংবা অন্য কেউ ওসব দেখলেই বললো, ওয়াও!

রাহাত বলেছিলো,

--দেখ তানহা তুই কোনো দিন তোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবি কিনা জানিনা।তবে এগুলো এখানে সেখানে না করে আলাদা রাফ খাতা বানিয়ে নে।সেখানে সব কিছু একত্রিত করে রাখ।ভবিষ্যতে কাজে দিতে পারে।

আমি তাই করেছি।আলাদা খাতা বানিয়ে ডিজাইন করে জমা করেছি।নিজের ডিজাইন করা অনেক ড্রেসও বানিয়েছি।

কিছুক্ষণ পর মা আমাকে এসে নিচে নিয়ে গেলো।মাথা নিচু করে ঘুমটা টেনে বসে আছি।কোনো দিকে তাকাচ্ছিনা।কে এসেছে,কারা এসেছে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

সোফার পেছনে থেকে রাহাত ফিসফিস করে বললো,

--দোস্ত দেখ,হ্যাবলাকান্ত কেমন হ্যাংলার মতো চেয়ে আছে।মেয়ে নয় যেন এলিয়েন দেখছে।হিহি।

আমি ওর কথা শুনে চোখের কোনা দিয়ে হ্যাবলাকান্তের দিকে চাইলাম।আসলেই সে হ্যাংলার মতো চেয়ে আছে।ইচ্ছে করছে মিষ্টির উপর রাখা কাটা চামচ দিয়ে ব্যাটার চোখ গেলে দেই।কিন্তু আমি নিরুপায়।

চুপচাপ বসে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।

ওরা চলে যাওয়ার পর ছাদে উঠি।ছাদে উঠে দেখি রাহাত ছাগলের ছানা কেমন গাইয়া পার্ট নিয়ে,মাথায় গামছা বেঁধে বিভিন্ন কায়দায় ছবি তুলছে আর ছবি তুলে দিচ্ছে তুহিন।আমাকে দেখে রাহাত বললো,

--দোস্ত দেখতো কেমন লাগছে?

আমি আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে বললাম,

--কোথায় গিয়েছিলি কামলা দিতে?

--কি!!কামলা দিতে?

--হুম দেখে তো মনে হচ্ছে পাট ক্ষেতে কামলা দিতে গিয়েছিলি।কেন রে কাকাই কি তোকে হাত খরচ দেয়না?

--তানহা তুই সবসময় আমাকে পচাস।একটু ভালো কমপ্লিমেন্ট দিলে কি তোর মুখ খয়ে যাবে।

--না,,মিথ্যা কথা বললে মুখ খসে পড়বে তাই সত্যি কথা বললাম।

বলেই চিলেকোঠার ছাদে উঠে গেলাম।আমার মন খারাপ হলেই আমি চিলেকোঠার ছাদে গিয়ে বসে থাকি।চিলেকোঠার ছাদের রেলিঙ খোলার সিস্টেম আছে।আমি চাবি দিয়ে তালা খোলে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম।এখান থেকে পড়লে বাচার চান্স নেই বললেই চলে।সামনে বিশাল পুকুর।আর পুকুরের পাড়ে সিমেন্ট আর ইটের তৈরি উঁচু নিচু টিবি।ভাংগা অংশবিশেষ।ওখানে পড়লে নির্ঘাত মগজ বেরিয়ে যাবে।তবুও আমার ভয় করেনা।

রাহাত আমার পাশে এসে বসে বললো,

--মরার ইচ্ছে হয়েছে নাকি?

--সে ইচ্ছে থাকতে নিচে ঝাপ দিতাম এখানে বসে থাকতাম না আহাম্মক।

--তুই মন খারাপ কেন করছিস?আরে এখানে তোর বিয়ে হবেনা।

--মন খারাপ করেছি কে বললো?

--তোর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

--তাই!!

আমি চুপ করে পুকুরের দিকে চেয়ে রইলাম।রাহাত আমার মন ভালো করার জন্য বললো,

--তোর হাত দে দেখে দেই, দেখি নতুন কি যোগ হয়েছে।

আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম।ও প্রায়ই সবার সাথে এমন করে মজা করে হাত দেখে উল্টো পাল্টা কথা বলে।সবাই ফান হিসেবেই নেয়।আমার রেজাল্ট দেওয়ার আগে আমার হাত দেখে বলেছিলো,

--বালিকা তুমি অযথাই ভাবছো।তোমার হাতের রেখা বলছে তোমার গোল্ডেন পাওয়া অনিবার্য।

এটা শুনে আমি ওকে খুব মেরেছিলাম।যদিও মজা করেছে।

আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম।দেখি নতুন করে কি বলে।কি মজা করে।কিছুক্ষণ আমার হাত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার ভাব করে বললো,

--বালিকা তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন।অতি শীঘ্রই তোমার স্বপ্নের পুরুষ আসছে চলেছে।তোমার রাজকুমার।

আমি ওর মাথায় গাট্টি মেরে বললাম,

--শয়তান,বলার আর কিছু পেলিনা।

--হু,,ভালো কথার ভাত নেই।

--তুই ফ্যান খা।

এবার সিরিয়াস ভংগী করে বললো,

--দেখিস একদিন সত্যি সত্যিই কেউ একজন আসবে।যে তোর সব স্বপ্ন পূরণ করবে।আমি সেই প্রার্থনাই করি।

--যা নয়তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।

রাহাত উঠে চলে গেলো। আমি ভাবছি,

--সত্যি কি আমার জীবনে এমন কেউ আসবে।আমার জীবন থেকে অন্ধকার দূর করে দেবে?।দূর আমি কি ভাবছি।কে আসবে কেউ আসবে না,,।

রাতের বেলা লিভিং রুমে বসে আছি।টিভি দেখছি।তখনই কাকিমা হাসি মুখে এসে দাড়ালো তারপর বললো,

--ওদের তানহাকে পছন্দ হয়েছে।

রাহাত হুট করে বললো, কিন্তু মা,ওই ছেলে আমার পছন্দ হয়নি।

তুহিন বললো,আমারো।

সবাই অবাক হয়ে ওদের দেখছে।কাকিমা মুখ ভার করে আমার সামনে এসে বললো,

--তানহা তুই ওদের এসব শিখিয়েছিস?

আমি মাথা নেড়ে বললাম, না আমি কিছু বলিনি।

মাকে বললাম,

--আমি সত্যি বলছি আমি ওদের কিছুই বলি নি।ইনফ্যাক্ট এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলিনি।

মা বললো,ঠিক আছে,তুই উপরে যা।

আমি উঠে উপরে চলে গেলাম।শুধু শুধু আমাকে দোষারোপ করে।কিছু না করলেও আংগুল আমার দিকে তুলে।

নিচে--

কাকিমা রাহাত আর তুহিনকে বললো,

--তোরা এমন কথা কেন বললি?কেন পছন্দ হয়নি?তানহা শিখিয়ে দিয়েছে?

রাহাত বললো,মা আমি কুচি খোকা নই যে কেউ আমাকে বলতে শিখাবে আর আমি বলবো?এটা আমার পার্সোনাল মতামত।আমি তানহার চেয়ে ১বছরের বড় তাই আমি ওর কাছে কথা শিখতে যাবোনা।

ছেলেকে দেখেই বুঝা যায় একটা হ্যাংলা টাইপ ছেলে।কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই।কেমন করে তাকিয়ে ছিলো আমি সব দেখেছি।

--মেয়ে দেখতে এসে মেয়েকে দেখবে না তো তোকে দেখবে?

--দেখার মধ্যে তফাৎ আছে।এই ছেলে যে আস্ত একটা লুইচ্চা আমি লিখে দিতে পারি।

--তুই বাচ্চা ছেলে এসবের মধ্যে আসিস না।

--আমি বাচ্চা ছেলে হলে তানহা কি?ও তো আরো আগে বাচ্চা।ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে কেন লেগেছো?

--মেয়েরা অল্প বয়সেই বড় হয়ে যায়।ছেলেরা নয়।

--এসব পুরনো দিনের মন ভুলানো কথা।ওমন ছেলের সাথে আমাদের বাড়ির মেয়ের বিয়ে হবে না ব্যাস।

কাকিমা রেগে কিছু একটা বলতে যাবে তখনই

বাবাই পিছনে থেকে বললো,

--আহ,,ভাবি।ওর কথা কেন ধরছেন?আর কেনইবা কথা বাড়াচ্ছেন?আমার কথা শুনুন আমি মেয়ে বাবা।আমি বলছি ওই ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেবোনা।আমারব ছেলে পছন্দ হয়নি।ও ফুলের যোগ্য ই না।ওদের মানা করে দিন।

--কি বলছো জামিল?এতো ভালো সমন্ধ আর তুমি মানা করে দিতে বলছো?

--হ্যা কারণ আমার পছন্দ হয়নি।আর যেখানে আমার পছন্দ না হবে সেখানে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেবোনা।

--তানহার ভাগ্য ভালো যে ওরা নিতে চেয়েছিলো।নয়তো যে মেয়ের বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে।যে মেয়ে মায়ের শ্বশুর বাড়ি থাকে সে মেয়ের জন্য এর চেয়ে ভালো ছেলে পাওয়া যাবেনা।

--ফুলের জন্য এর চেয়ে ভালো ছেলেই আসবে।

কাকিমা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো, হুম।আকাশ পাতাল ফেড়ে,পংখীরাজের ঘোড়া চড়ে রাজপুত্র আসছে।

বাবাই আলতো হেসে বললো,

--ঘোড়ার ব্যাপারটা পুরনো হয়ে গেছে ভাবি।আমার রাজকন্যার জন্য প্লেনে চড়ে রাজপুত্র আসবে।

কাকিমা আর কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।

বাবাই,তুহিন,রাহাত হাসছে।মা মন খারাপ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

--কবে যে আমার কলিজার টুকরো সুন্দর একটা জীবন পাবে।

আমি বারান্দায় দোলনায় বসে আছি।ঘোড়ার ডিম ভালো লাগছে না।তখনি রাহাত এসে বসে।

--বিয়ে হচ্ছে না বলে তোর মন খারাপ?

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।

--কাকাই রাজি নয়।তার ও ওই হ্যাংলা কুমারকে পছন্দ হয়নি।মাকে বলেছে যাতে মানা করে দেয়।সো রিলেক্স।

বলেই রাহাত উঠে চলে গেলো।

--যাক ভালো হয়েছে।বিয়েটা তাহলে হচ্ছেনা।অনেক শান্তি লাগছে।

আকাশের দিকে তাকালাম।চিকন একটা চাদ উঠেছে।চাদরাতে যেমন চিকন চাদ দেখা যায়।আচ্চা আগামীকাল কি ঈদ?

কিসের ঈদ??বিয়ে ভাংগার আনন্দে আলতু ফালতু বকছি।

কানাডার এয়ার্পোট--

একটা ছেলে সাদা টিশার্ট,ব্রাউন জ্যাকেট,ব্লাক প্যান্ট,ব্রাউন সু,ব্রাউন বেল্টের হ্যান্ড ওয়াচ,সানগ্লাস,কাধে ব্যাগ,বাম হাতে লাগেজ,ডানহাতে সিল্কি চুলগুলো ব্রাশ করতে করতে হাটছে।হটাৎ বা হাতে থাকা ওয়াচের দিকে চেয়ে বললো,

--শিট!আ'ম লেট।

ও গড,,প্লিজ হেল্প মি,,

বলেই লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্টে দৌড়াতে লাগলো।

"" আমি আসছি বাংলাদেশ,,,,,।"

রাত ১০টা আমি ডিনার করছি।১০টা বাজলেই আমার পেটে ইদুর দৌড়ায়।১১টা বাজলেই ঘুম।পরিক্ষার সময় ১টার বেশি জাগতে পারিনা।আমি আর রাহাত একসাথে পড়তে বসি।আমার কাজ ওকে গাইড করা আর ওর কাজ আমাকে জাগানো।

আমি ভাত খাচ্ছি তখনি সিড়িতে ঠাস ঠাস শব্দ হচ্ছে।কেউ ঝড়ের গতিতে নামছে।চেয়ে দেখি রাহাত।

চলবে.....

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

1
$ 0.00
Avatar for Koly
Written by
3 years ago

Comments

Nice story. Pore khub valo laglo. Valobasar Manus ti sob somoye jotno Kore valobesa agle rakhte hoye. Donnobad writer. Next golper opekhay aci

$ 0.00
3 years ago

Wow nice story. Every person loves someone who stay in their heart. Sometimes they love each other and sometimes it's become one sided love.

$ 0.00
3 years ago

ভালোবাসার মানুষকে সব সময় খুব যত্ন সহকারে তুলে রাখতে হয়।গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।। লেখককে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গল্প আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।।

$ 0.00
3 years ago

প্রত্যেকের হৃদয়ের মানুষ হৃদয়ে থাকুক। এই মানুষকে খুবই যত্ন করে রাখতে হয়।কারণ সে মানুষটির থেকে যদি কেউ একবার খারাপ হয়ে যায় তবে তার ভুল ভাঙানো খুব কষ্টসাধ্য

$ 0.00
3 years ago

What an interesting love story it is! The story was amazing. Thank you bro for this story. Keep writing this kind of story a lot. Support me

$ 0.00
3 years ago