Rock star

🔥#RoCk_StaR🔥

...

…

Part ---- 19 😎

...

রাফিনসহ আরো দুই জন পুলিশ আরাফদের গোডাউনের ভিতরে প্রবেশ করে। কেমন যেন একটা অন্যরকম গন্ধ নাকে আসতে থাকে রাফিনের। গন্ধটা সে চেনে। এই গন্ধটা ব্লিচিং পাউডারের। আর গোডাউনের ভিতরটাও অনেক পরিষ্কার। রাফিন যতদুর জানে গোডাউন টা অনেকদিন যাবত পরিত্যক্ত ছিল। তাহলে এখানে এত পরিষ্কার থাকার কথা না। আবার ব্লিচিং পাউডার দেয়া। তারমানে এখানে কোনো না কোনো ডেন্জার বয়েজ গ্যাং এর খুজে পাওয়ার সুত্র নিশ্চয় ছিল। কিন্তু এভাবে সব পরিষ্কার করা কেনো? কোনো রহস্য তো আছেই।

রাফিন কথাগুলো মনে মনে বলে গোডাউনে কয়েকবার পায়চারি করে ঘুরে নিল। হঠাৎ ওর চোখ আটকে যায় গোডাউনের শাটারে তালা ঝোলানোর জায়গাতে। তালা ঝোলানোর আংটা পুড়ে ভেঙে আছে। রাফিন কনস্টেবল কে ইশারা করে শাটারটা কিছুটা নিচে নামাতে।

শাটার যখন নিচে নামানো হয় তখনি রাফিনের নাকে কেমন একটা বিদঘুটে গন্ধ চলে আসে। আর সেই গন্ধটা স্পষ্ট রাফিনের চেনা। বুলেটের গন্ধ। আর তাছাড়া ওর আশে পাশে এখনো গান পাউডার পড়ে আছে। রাফিন হাতে হাত কভার পরে নিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করে। রাফিন আন্দাজ করেই ফেলেছে প্রমাণ লোপাটের জন্য এমন হুট করে সবকিছু পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে তাড়াহুড়োতে এইখানের প্রমান মুছতে সে ভুল করেছে। স্পষ্ট হয়ত এই শাটারেই ঐ গ্যাং এর লোকেদের হাতের ছাপ থাকবেই। আর যদি না থাকে তাহলে বদ্ধ গোডাউনে তারা এলো কি করে? অবশ্যই এটা খোলা বা লাগানোর জন্য হাত ব্যবহার করা হয়েছে।

রাফিন থমকে দাঁড়িয়ে শাটারের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে চলেছে বিড়বিড় করে। তারপর স্বাভাবিক হয়ে সে সেই স্থান ত্যাগ করে।

.

বেশ কিছুক্ষন সময় হল রিজনদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল বেজেই চলেছে। সুজন প্রায় দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে রিয়ানা আর অনু। সুজন ওদের দুজনকে দেখে হাসি দেয়। কিন্তু ওদের দুজনের মুখটা বেশ গম্ভীর। সুজন অনুর হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করায়। খুব পরিপাটি একটি বাড়ি ও রুম। রুমের মধ্যে সবকিছুই বেশ দামী। যেগুলো রিয়ানা বা অনুদের বাড়িতেও নেই।

রিয়ানার চোখ চলে যায় বেলকনির চেয়ারে বসে কেউ বই পড়ছে। রিয়ানা সেদিকে এগিয়ে যায়। দেখে রিজন বই হাতে বসে আছে। চোখে গোল চশমা। মায়াবি দুটি চোখ ও তনুশ্রী। রিয়ানাকে দেখে রিজন বলে...

- কেমন আছো রিয়ানা ? তুমি আসবে ভাবতেই পারেনি। বসো।

রিয়ানা মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। রিজন একবার তা খেয়াল করে কিছু না বোঝার ভান করেই রিয়ানাকে আপ্যায়নের উদ্ধৃত হল। রিয়ানা তখনি প্রশ্ন করে..

- তোমার সাথে আদনান সাহেবের কি সম্পর্ক?

রিজন -- মানে?

রিজন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। রিজন বুঝতেই পারে না রিয়ানা কেনো তাকে হুট করে এমন প্রশ্ন করবে। রিজন মুচকি হেসে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে..

রিজন -- সেদিন উনি আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছিল বলে এমন প্রশ্ন করছো? আরে ওনার আর আমাদের গ্রামের বাড়ি পাশাপাশি, ওনার মায়ের সাথে আমার মায়ের অনেক সখ্যতা। আর ওনা দৌলতেই এখানে আসা আর এই বাড়িতে থাকা। না হলে কোথায় পাবো এতকিছু? তাই আরকি....

রিজন কথাগুলো বলে রুমে চলে আসে। অনুও ঠিক এই প্রশ্নটি সুজনকে করে। সুজনও রিজনের মতই উত্তর দেয়। রিজন ওদের সবাইকে বলে.."তোমরা গল্প করো আমি চা করে আনি।"

রিজন চলে যায় চা বানাতে। কিছু সময় পরেই রিয়ানা রিজনের পাশে এসে দাঁড়ায়। রিজন মুচকি হেসে কিছু একটা বলতে যাবে তখনি রিয়ানা বলে...

- সব ঠিক আছে, কিন্তু তোমাদের কাছে ঐ দামী বাইক কোথা থেকে আসলো? আবার বাইকের পিছনে বসে সিগারেটও খাও। আদনান সাহেবের বাড়ির ভিতর থেকে বাইক চালিয়ে চলে আসো? রহস্যটা কি??

রিজন বোকার মত তাকায় রিয়ানার দিকে। রিজন জোরেই কেঁশে ওঠে। শুনতে পায় সুজনও জোরে কাঁশছে। তখনি শুনতে পায় কলিং বেলের আওয়াজ। সুজন দরজা খুলতে অগ্রসর হয়। রিজনও চলে আসে। সুজন দরজা খুলতেই দেখে রাফিন দাঁড়িয়ে আছে। সুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিয়ে বলে..

রাফিন -- কেমন আছো তোমরা? আরে এখানে অনু আর রিয়ানাও আছে দেখছি। যাক তোমাদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগল।

রাফিন কথাগুলো বলে ভিতরে প্রবেশ করে। রিজন রিয়ানার থেকে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। রাফিন কিছু বলতে যাবে তখনি আবার কলিংবেল বেজে ওঠে। সুজন আবার দরজা খুলতে যায়। রাফিন তখনো প্রায় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। সুজন দরজা খুলতেই চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কারন বাড়ির নিচে চায়ের দোকানের রমিজ চাচা এসে দাঁড়িয়ে আছে। আর হাতে ছোট্ট একটি শপিং ব্যাগ ও দুটো কালো গোলাপ। সুজনের অবাক হওয়ার কারন এই কালো গোলাপ। সুজন কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তখনি রমিজ চাচা বলল..

- বাবা, কালো জামা পইরা দুজন লোক আইলো আমার হাতে এই যে পাঁচশ টাকা নোট গুজে দিয়ে কইল "সরাসরি রিজনের কাছে যেন এইগুলা দিই।" তারপর তারা গাড়িতে কইরা চইলা গেল। এইগুলা তোমাদের জিনিস নাও বাবা।

সুজন -- কারা সেই লোক?

রমিজ চাচা -- আমি তো চিনি না বাবা। তই যাওয়ার আগে কইল "নতুন....." কি যেন নাম ভুইলা গেছি। কইল "নতুন... নতুন.. ডেন বয়" না কি যেন কইল ভুলে গেছি।

সুজন -- ওকে, বুঝতে পারছি। আপনি যান চাচা।

সুজন সেগুলো হাতে নেই। সুজনের কথামত রমিজ চাচা চলে যায়। সুজন ওগুলো নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে। সুজন কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাফিন বলে..

রাফিন -- নতুন ডেন্জারস বয়েজ মানে?

সুজন রিজনের দিকে তাকায়। রিজন শান্ত চোখে সুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলল..

রিজন -- এটা নিশ্চয় ডেন্জার বয়েজ গ্যাং এর কেউ পাঠিয়েছে। ওরা তো আমাদের বাঁচিয়েছে তাই।

রাফিন -- হুমম তা ঠিক আছে। কিন্তু কালো গোলাপ কেনো দিয়েছে? কই দেখি কি জিনিস।

রাফিন কালো গোলাপ দুটো হাতে নিল। কিছুক্ষন গম্ভীর চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থেকে শপিং ব্যাগটি হাতে নেয়। তারপর নেড়ে চেড়ে দেখে। ভিতরে হাত দিয়ে কিছু একটা বের করে। সবাই রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই দেখে রাফিনের হাতে একটি ছোট খাম। আর সেই খামটি রাফিন ছিড়তেই বেরিয়ে আসে অনেকগুলো ছবি। রাফিন ছবিগুলোর প্রথমটাই দেখে আটজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। সবার হাতে একটা করে পিস্তল। আর আটজনের মুখ লম্বা টুপিতে ঢাকা।

সবাই হাতে পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। আর প্রথম যে দাঁড়িয়ে আছে তার মাথায় ছোট্ট করে লেখা "R"। তারপর পাশের টা "S", তারপরের গুলো হল "T", "A", "S", "R", "A", S"। রাফিন পরের ছবিটা উল্টাই। দেখে আবারো সেই আটজন লোক, তবে এবার প্রত্যেকের গায়ে সাদা লম্বা টুপিওয়ালা পোশাক পরা। কারো মুখ কোনো ভাবেই দেখা যাচ্ছে না। আর সেই সাদা জামাতে রক্ত লেগে আছে। এভাবে অনেকগুলো ছবি রাফিন উল্টাতে থাকে। শেষের দুটো ছবির আগের ছবিটা দেখে রাফিন অনেক্ষন বোবার মত তাকিয়ে থাকে সে দিকে।

কারন, শেষের দুটো ছবির ঐ আগের ছবিটা ছিল রাফিনের অনেক পরিচিত। যা রাফিন কখনই ভুলতে পারবে না। ছবিটাতে কেউ একজন বসে আছে। আর তাকে ঘিরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। যে বসে আছে তার সামনেই দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতেও পিস্তল। যে বসে আছে তার দিকেই পিস্তল তাক করে সেই দুজন দাঁড়িয়ে আছে।

ছবিটাতে অনেক বেশি লাইটিং করা সত্তেও যে বসে আছে তার চোখে মুখে ভয়ের আর কৌতুহলের ছাপ স্পষ্ট তা রাফিন ছবি দেখে বুঝতে পারছে। আর তখনি রাফিনের গায়ের লোমগুলো যেন দাঁড়িয়ে যায়। কারন এই ছবিতে যে বসে আছে সে হল রাফিন নিজেই। নিজেকে সে এভাবে দেখবে কখনই তা ভাবতে পারেনি।

রাফিন পরের ছবিটা দেখে। দেখে একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। মেয়েটাকে যে রাফিন চেনে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারন মেয়েটা হল রিয়ানা। আর তার সামনেই শিমুলের কপাল ভেদ করা লাশটি যেন কাঁত হয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ছে। আর কিছু দুরে দাঁড়িয়ে আছে কালো টুপি পরা সেই লোক,পিছনে একটা বাইক। বাইকটা বেশ দামি। তবে কেমন যেন রাফিনের বাইকটা একটু চেনা চেনা মনে হল। তবে লম্বা টুপি ওয়ালা লোকটার পরিচিতি ডেন্জারস বয়েজ গ্যাং এর কেউ একজন।

তারপর শেষের ছবিটা রাফিন দেখে। আর দেখে অবাক হয়। কারন ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড এ যে জায়গাটা আছে সেটা রাফিনের খুব ভালো করেই পরিচিত। ছবির পিছনের জায়গাটা হল আরাফদের বাড়ির পরিতাক্ত গোডাউন। আর যে দুজনকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে তারা পিছনে ঘুরে আছে। আর গোডাউনের দরজার তালা, গুলি করে যেন ভাংছে। দুজনের মুখ দেখা যাচ্ছে না। রাফিন আরো কিছু সময় ধরে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।

.

রিজন ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। রাফিন রিজনের দিকে তাকিয়ে বলল...

রাফিন -- কয়েকটা প্রশ্ন আমার মাথায় আসছে। তুমি ছবিগুলো দেখার আগেই সেই প্রশ্নগুলো করতে চাই। কেনো এই ছবিগুলো তোমাদের কাছেই আসলো? ছবির সাথে তোমাদের কি কোনো সম্পর্ক আছে?

রিজন চুপ হয়ে যায়। শান্ত মস্তিষ্কের মানুষটা যেন কেমন অস্বস্থি বোধ করতে লাগল। অনেক ঝামেলা পেরিয়ে রিজন আজ এই অবস্থানে এসেছে। সামান্য এই পুলিশ অফিসারের কাছে নিজেকে সে এভাবে প্রজ্জলিত করতে পারবে না। কখনই না। রিজন ছবিগুলো হাতে নেই। একে একে ছবিগুলো সব দেখতে থাকে। ছবির সাখে থাকা অক্ষরগুলোর রহস্যও রিজন জানে।

ছবিগুলো দেখে কিছু বলতে যাবে তখনি রিজনের ফোন বেজে ওঠে। রিজন পকেট থেকে ফোন বের করতে দেখে আননোন নাম্বার। রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ বলে ওঠে...

- নিশ্চয় আমাকে ভূলে যাওনি মি. রকস্টার।

রিজন থমকে যায়। কথা যেন তার মুখ দিয়ে বের হতে চাইছে না। সবকিছু যেন কেমন অপ্রত্যাশিতই লাগছে তার। চারপাশটা যেন অকারনেই কেমন বিষাদ লাগছে। কারন কণ্ঠটার সাথে রিজনের বেশ সখ্যতা ছিল। খুব ভালো করেই জানে ও। রিজন একটু হেঁসে বলে..

- সরি কে বলছেন?

- হাহাহা,, রিজন, মি. রকস্টার কখনো কাউকে ভোলে না। আর আমাকে তো সে ভুলতেই পারবে না। তবুও তোমাকে বলছি আমি সেই না থাক বলবো না, তুমি খুজবে কে আমি।

রিজন কিছু বলতে যেয়েও পারে না। কেমন যেন সব ওল্টা পাল্টা হয়ে যাচ্ছে তার। কণ্ঠটা খুব পরিচিত রিজনের। কিন্তু কেনো আবার ফিরে আসবে সে। কেনোই সে এমন করছে? রিজন তো তার কাছে দায়বদ্ধ নয়। তবে কি চাই সে? রিজন কিছু বলবে তার আগেই অপাশ থেকে বলে..

- বলেছিলাম না তোমাকে, আমি তোমার থেকেও বড় একজনকে রকস্টার হিসেবে তোমার সামনেই নিয়ে আসবো। আমি তাকে পেয়ে গিয়েছি। তুমি জানলে অবাক হবেই সে কে। তোমার খুব খুব কাছের আর পরিচিত মানুষ। যখন সে তোমার সামনে আসবে তুমি তাকে দেখে হা হয়ে যাবে। কিন্তু সে কে তোমাকে তো বলবো না। তুমি নিজেই খুজে নাও। তবে এটা সিওর তোমার মত শান্ত শিষ্ট রকস্টারের চিন্তার দিন শুরু।

ফোন কেটে দেয় ওপাশ থেকে। রিজন সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোনটা পকেটে রাখল। সুজন উৎসুখ দৃষ্টিতে রিজনের দিকে তাকিয়ে বলল...

সুজন -- কি রে কার ফোন ছিল? গ্রাম থেকে ফোন এসেছিল?

রিজন -- হুম হুম।

রিজন বুঝে গিয়েছে ছবিগুলো কে পাঠিয়েছে। তবে জানে না নিলা কোথায় আছে। আর কেনোই বা সে ছবি পাঠিয়েছে। আর রিজন ভালো করেই জানে নিলা যা বলে তা করেও দেখায়।

.

রাফিন -- আচ্ছা, রিজন , ছবিগুলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। লাষ্টের এই ছবিটা রাকিব আর জয়ের নিখোজ হওয়ার রহস্য উদঘাটনে সাহায্য করবে। থাকো তোমরা।

..

এদিকে,,

'কেমন আছিস?"

অভির এমন প্রশ্ন শুনে আরাফ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে অভির দিকে। অভির পিছনে অভির গ্যাং এর লোক দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য অভির নিজের গ্যাং থাকলেও অভিকে লিড দেয় রিজন। এমন অনেকগুলো অভি আছে যা প্রতিটা শহরেই রিজনের জন্য কাজ করে।

আরাফ -- হাহাহা... ভাইয়া তোমরা মেরে আবার জিজ্ঞাসা করছো কেমন আছি?

অভি -- আমরা মারছি?

আরাফ -- হুমম। তোমাদের গ্যাং এর লোক মারা মানে তুমিও মারছো আমাকে।

অভি -- বাদ দে ওসব। কেমন আছিস বল?

আরাফ কোনো কথা বলে না। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে নীলচে পানি ঘেরা স্বচ্ছ সুইপিং পুলে। আরাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে...

আরাফ -- আচ্ছা ভাইয়া, রিজনকে মারতে কত টাকা বাজি ধরা যাবে?

আরাফের মুখে এমন কথা শুনে অভি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নিশ্চিত আরাফ যদি আহত অবস্থায় না থাকতো তবে অভি এতক্ষনে আরাফকে কয়েকটা চড় কষে দিত। কিন্তু অভি এখন কিছুই বললো না। মাথা ঠান্ডা রেখে বলল...

অভি -- দেখ ভাই, যা হয়েছে ভুলে যা।

আরাফ -- ভুলে যাবো?? আমি??? কখনই না ভাইয়া। এই আরাফকে তো ছোট থেকেই জানো কেমন ছিল। আই ক্যান নট ফরগেট ইট। এই আরাফ রিজনকে মারবেই। তোমাকে একটা অফার করছি, তুমি ওকে মারতে, কি চাও? টাকা? কত টাকা চাও?

অভি -- আরাফ সহ্যের সীমা পার হয়ে যাচ্ছে। তুই মাথা ঠান্ডা কর। ভুলে যা প্লীজ।

আরাফ আবারো চুপ হয়ে যায়। সমাপ্তময় সিগারেটে কয়েকটান দিয়ে সিগারেটে এ্যাশে সিগারেটের পিছনটা রেখে দিয়ে বললো..

আরাফ -- তুমি কি হতে চাও, পুরো দেশের রকস্টার? তোমাকে আমি রকস্টার বানাবো। ভয় নেই, তোমার, রিজনকে তোমার মারতে হবে না। ওকে আমিই মারবো। আর তোমাকে বানাবো রকস্টার।

অভি আরাফের গালে কয়েকটা চড় দেয়। তারপর কোমর থেকে পিস্তল বের করে আরাফের দিকে তাক করতে যাবে তখনি আরাফ জোরে হেসে ওঠে। আরাফের এমন বিদঘুটে হাসি শুনে অভি বেশ খানিকটা বিচলিত হয়। অভি আরাফের দিকে পিস্তল ধরতেই আরাফ হাসতে হাসতে বলে...

- নো ভাইয়া নো, তুমি রকস্টারের লোক হতে পারো কিন্তু আমার কাছে রিজন বা তুমি এমনকি ডেন্জারস বয়েজ গ্যাং কিছুই না। পিছনে তাকাও।

অভি পিছনে তাকায়। ওর সাথে থাকা লোকজন এমনকি অভি ডান ও বাম হাত ফয়সাল এবং জিহাদ অভির মাথার সোজা পিস্তল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অভি হাবার মত তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। কি বলবে সে খুজে পাচ্ছে না। কিছু বলার মত কথাও তার মাথায় আসছে না। কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আরাফ হাসতে থাকে আবার। উচ্চস্বরে হাসে। হাসতে হাসতেই বলে..

আরাফ -- পিস্তল নিচে নামিয়ে রাখো। এরাকম দাবা খেলার ছোট্ট বড়িকে খেয়ে কি হবে। খেতে হবে তে রাজা, মন্ত্রীকে।

আরাফ আবারো চুপ হয়ে যায়। ছোট ছোট ধাপ ফেলে ফ্রীজ থেকে কয়েকটি দামি বিয়ারের বোতল বের করে আনে আরাফ। শান্ত ভঙ্গিতেই একটা বোতল অভির দিকে এগিয়ে দেয়। অভি প্রথমে না নিতে চাইলেও আরাফ ঝাড়ি দিয়ে ওঠায় তা হাতে নেয়। তারপর একে একে অভির পিছনে থাকা ছেলেগুলোকেও বিয়ারের বোতল দেয়। সোজা এসে আগের জায়গাতে আরাফ বসে। বিয়ারের বোতলের ছিপি খুলে কয়েক ঢোক গিলে মুচকি হাসতে থাকে।

অভি আরাফের এমন আচরন আগে কখনো দেখেনি। একদম ডেন্জারস বয়েজ গ্যাং এর লিডার রিজনের মতই আচরন। শান্ত শিষ্ট, মুখে অসাধারন এক মুচকি হাসি। এমন একটা ভাব, যেন কিছুই হয়নি। যা হবে তা গোপনেই। কিন্তু কেনো সে এমন করছে। আরাফ বলে...

- ঘরে বসেই তোমার লোকদের কিনে নিলাম ভাইয়া। খুব সিম্পল বিষয়, একটা করে মেয়ে আর বাড়তি কিছু টাকায় ওদের জন্য যথেষ্ট। তোমার লোকদের নিজের দলে নিতে আমার মাত্র সময় লেগেছে তিন ঘন্টা। তুমি মোটেও তা জানতে পারোনি। আর রিজনকে মারতে সময় লাগবে এক ঘন্টা। সেও জানতে পারবে না।

অভি -- দেখ আরাফ, রিজন কোনো ছোট খাটো রকস্টার না। সে সাধারন কোনো পাঁতি মাস্তানও না। তোর এক ঘন্টা সময় লাগলেও তোকে মারতে তার ৫ মিনিটও লাগবে না রে। তুই ওকে চিনিস না। শুধু শুধু ওনার সাথে শত্রুতা করে নিজের প্রান ও পরিবারের সবার উপর ঝড়ো হাওয়া টেনে আনিস না। ও আছে ওর মত। শান্তিতে তাকে থাকতে দে।

আরাফ -- ভাই, আমি শান্তিতে নেই। আমি শান্তিতে থাকতে চাই। সে কেনো রকস্টার? আমি বা তুমি কেনো না? এর শেষ আমি দেখে ছাড়বোই। কেউ তো আছে আমার মত যে রিজনের শেষটাই দেখতে চাই....

তারপর......

.★

.★

.★

To be continue.......