পিচ্চি_বর_Vs_বাচ্চা_বউ
.
পর্ব - ০৬
__________________________________
আমি ছুটে নিচে চলে এলাম।দিশার মাথা থেকে অনেক রক্ত ঝরছে।আমি দিশাকে অনেক ডাকছি কিন্তু সে কোনো সাড়া দিচ্ছে না।মুহূর্তের মধ্যে সাদা ফ্লোর লাল বরন ধারন করলো।
আমি দিশার মাথা আমার কোলে করে ধাক্কাছি সে কোনো রেসপন্স করছে না।
কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।মাথার মধ্যে সব কিছু জ্যাম লেগে গেছে।
দিশাকে কোলে তুলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলাম।আমাকে তারাতারি মেডিকেল যেতে হবে।
!!!!
!!!
!!
!
দিশাকে ওটি তে নেওয়া হয়েছে।আম্মু চাচি আমার পাশেই আছে।তারা দুইজনে অনেক কান্না করছে।আব্বুর আর চাচ্চুও কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে।
আমার চোখ দিয়েও পানি ঝড়ছে কেন ঝড়ছে বুঝতে পারছি না।আগে যখন দিশা চোট পেয়ে বাসায় আসতো আমি তখন খুব হাসতাম, দিশার ব্যাথ্যা আমি আনন্দ পেতাম তবে আজ কেন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে।এমন কেন মনে হচ্ছে কেউ বুকে হাতুর দিয়ে আঘার করছে,এর নামই কি ভালোবাসা? হয়তো!!!
হ্যা আমি দিশাকে ভালোবেসে ফেলেছি খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
ওটি রুমের সামনে বসে বসে ভাবছি এসব।
তখনি আব্বু আর চাচ্চুর আগমন।
চাচ্চু এসেই কান্না শুরু করে দিল।চাচ্চুকে কখনো এইভাবে কাঁদতে দেখিনি।
কাঁদবেই না বা কেন,একমাত্র মেয়ে তার,মেয়ের আদরে যেন কমতি না পরে তাই আর কোনো সন্তান নেননি।অবশ্য আমাকে চাচ্চু, চাচি নিজের ছেলেই ভাবে।
আমার তো মনে হয় আমার আব্বুর থেকে চাচ্চুই আমাকে বেশি ভালোবাসে।
-- কি করে হলো এসব ( আব্বু আমার কাছে এসে)
-- আসলে আব্বু.....।।।
কথা শেষ করার আগেই
ঠাসসসসসসসসসসসসসসস
ঠাসসসসসসসসসসস করে কয়েকটা চর বসিয়ে দিলো।
মেডিকেলের সবাই তখন আমাদের দেখছে।
--তুই কি কখনো মানুষ হবি না।আর কতো জালাবি আমাদের,এখন মনে হচ্ছে আল্লাহ কেন আমাকে বাবা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল,তোর জম্ম না হলেই তো ভালো হতো।তোর জন্য এলাকার মানুষের কাছে কতো কথা শুনতে হয়।আর আজ তোর জন্য আমার মামুনিটা মরতে বসেছে,
তোর সাথে দিশার কেন বিয়ে দিয়েছি জানিস যাতে সে আমাদের থেকে দুরে না থাকে।আর আজ তোর জন্য ঐ টুকু একটা মেয়ে মরতে বসেছে।
আমি চাইনা তোর জন্য ওর কোনো ক্ষতি হোক, আমি আর সিস্ক নিতে চাইনা।তুই আজকেই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি, আর কখনো তোর মুখ যেন আমাদের দেখতে না হয় ( আব্বু কেঁদে দিয়েছি)
-- তুমি এসব কি বলছো।তোমার মাথা ঠিক আছে তো....... ( আম্মু)
-- আমার মাথা ঠিকি আছে।চলে যেতে বলো তোমার ছেলেকে।আমি ওর মুখও দেখতে চাইনা। ( আব্বু)
-- দাদা ফয়সাল আমাদের ছেড়ে কোথায় যাবে।সেও তো ছোট!ছোট মানুষ একটা না হয় ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে তুমি তাকে এতো বড় শাস্তি দিবে ( চাচ্চু)
-- আমি তোদের কোনো কথা শুনতে চাইনা। ও যদি চলে না যায় তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।( আব্বু)
-- না আব্বু তোমাকে কোথাও যেতে হবে না।আমিই চলে যাবো।
-- কি বলছিস আব্বু। কোথায় যাবি তুই। ( আম্মু আমার কাছে এসে)
-- আম্মু শুনলে না আব্বু কি বললো।আমি যদি চলে না যায়,তাহলে সে নাকি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবে।তার বাড়ি গাড়ি সে কেন আমার মতো বাদুরে ছেলের জন্য বাড়ি থেকে চলে যাবে।
-- আহ এতো কথা বলছিস কেন।দুর হো এখান থেকে আর কখনো যেন তোর মুখ না দেখি।
চলে যা এই শহর থেকে দুরে কোথাও চলে যা।
-- হুমমম আব্বু চলে যাবো।শুধু যাওয়ার আগে একটি বার দিশার মুখটি দেখতে চাই।
-- না বাবা তুই কোথাও যাবি না।তুই চলে গেলে আমি কাকে নিয়ে থাকবো।কে আমার সাথে সারক্ষন শয়তানি করবে।
-- আমি আমি তো সারাজীবনের জন্য যাচ্ছি না,এক দিন না একদিন ঠিক ফিরে আসবো।যে দিন ফিরে আসবো সে দিন আব্বুকে মানুষের কাছে কথা শুনতে হবে না।আব্বু গর্ব করে বলবে আল্লাহ যেন আমার মতো সন্তান প্রতেক বাবা মাকে দাই।
-- তোকে দিশার মুখ দেখতে হবে না।তুই এখনি আমার চোখের সামনে থেকে সর।( আব্বু)
-- আব্বু প্লিজ একবার দিশার মুকটা দেখতে দাও,তারপরেই আমি চলে যাবো.....
-- তুই থাক আমিই সব কিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছি.......(আব্বু)
-- আব্বু তোমায় কোথাও যেতে হবে না। আমিই চলে যাচ্ছি।
-- আব্বু যাস না ( আম্মু আমাকে জরিয়ে ধরে।
আমি আম্মুকে ছাড়িয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে এলাম বাড়িতে।
চোখ দুটো কিছুতেই বাঁধ
মানছে না।বুকটা ফেটে যাচ্ছে, কোথায় যাবো, কি করবো? আব্বু কেন আমায় এতো বড় শাস্তি দিল।কি করে থাকবো তাদের ছারা। এসব ভাবছি আর কাদছি।
রুমে এসে আমার জামা প্যান্ট সব একটা ব্যাগে পুরে নিলাম।
সবার কয়েকটা প্রিন্ট করা ছবিও নিলাম যদিও সবার ছবি আমার ফোনে আছে।
পড়ার টেবিলে বসে একটা পাতায় লিখা শুরু করলাম.........
# ভালোবাসি তোকে,
সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি, কোথায় যাবো নিজেও জানি নাহ।তোর অনেক ভালো হবে আমি আর তোকে বিরক্ত করবো না।তোর সাথে ঝগড়া করবো না।
তবে যাওয়ার আগে তোকে কিছু কথা বলে যেতে চাই।
জানি আমি তোকে সারাক্ষন বিরক্ত করি,জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারি।কিন্তু বিশ্বাস কর এসবের মাঝে আমি অদ্ভুত এক ভালোলাগা খুজে পাই।
তোকে রাগাতে আমার খুব মজা লাগে।জানিস রাগলে তোর লম্বা নাকফুলওয়ালা নাক ঘেমে যায়,তখন তোকে দেখতে অনেক কিুউট লাগে,ইচ্ছে করে আমার ভোথা নাক দিয়ে তোর নাকের ঘামগুলো মুছে দিই।
প্রতি রাতে তোকে জরিয়ে না ধরলে ঠিম মতো ঘুমাতে পারিনা। তোকে জরিয়ে ধরলে আমার কেমন জানি অনুভুতি হয়, ঠিক দোলনা খাওয়ার সময় দোলনা যখন খুব উচুতে উঠে আবার নিয়ে নামে তখন বুকে মধ্যে যেমন হয় ঐরকম।
কেন আমার এসব ভালো লাগে বুঝতে পারতাম না।তবে আমার ধারনা আমি তোর প্রেমে পরে গেছি,হাহাহা আমার বাবা বউটার প্রেমে পড়ে গেছি।
আমি সঠিক জানি না প্রেম ভালোবাসা কি?
তবে আজ যখন তুই সিড়ি থেকে পরে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলিস।তোর লাল রক্তে যখন আমার সারা গায়ে তখন আমার সব কিছু অন্ধকার লাগছিল। মাথায় পচুর চাপ অনুভব হচ্ছিল,
তখন বুঝতে পারি তুই আমার কতটা জুরে আছিস। তুই ছারা আমার এক মুহূর্ত ও চলবে না।
আমি ক্লিয়ার হয়ে গেলাম আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।
যাগগে ওসব কথা বাদ দে, আমি তো চলে যাচ্ছি।যাওয়ার আগে তোর কাছে ছোট্ট একটা রিকুয়েস্ট প্লিজ তুই আমার জন্য একটু অপেক্ষা করিস,
তোর মনে আমার জন্য একটু জায়গা রাখিস।আমি যখন ফিরে আসব তখন তুই আমার সাথে বাকিটা জীবন কাটাস।
হ্যা আমি কিন্তু তোর জায়গা কাউকে দিবো না। তোর জন্য আমার মনের দরজা আজীবন খোলা থাকবে।
ভালো থাকিস।নিজের খেয়াল রাখিস সাথে আমাদের পরিবারের সবার।
আর পারলে আমার জন্য অপেক্ষা করিস।
ইতি
তোর শয়তানটা।।।
চিঠি লিখে আমার টেবিলে একটা স্কেল চাপা দিয়ে রেখে দিলাম।
চোখ দিয়ে এখন আরো বেশি পানি ঝড়ছে।সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো ভাবতেই কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।
রুমের চারেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলাম।
চোখের পানি ডান হাতদিয়ে মুছে বেরিয়ে পরলাম বেনামি ঠিকানায়।
ঘড়ির কাটা ৩:৪৫ ছুই ছুই। মেইন রোডেও বেশি গাড়ি চলছে না। মাঝে মাঝে একটা দুইটা ট্রাক, বাস যাচ্ছে।আগে কখনো এতো রাতে বাহিরে থাকিনি।আমার অন্ধকারে খুব ভয় করে যদিও রাস্তায় ল্যাম পোষ্টের আলো,তবুও খুব ভয় করছে।
ফাকা রাস্তায় একা একা হাটছি, ৫-৭ মিনিট পর পর ভো করে ট্রাক নয়তুবা বাস পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।
১ ঘন্টা হাটার পর রেলওয়ে স্টেশন চলে আসি।আমি ঢাকা যাবো।সেখানে গিয়ে কি করবো জানিনা।এর আগেও কয়েকবার পিকনিকে ঢাকা গিয়েছি।চিরপরিচিত শহরস্থ ছেড়ে যাবো ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে।
আমি কাউনটারে গিয়ে একটা টিকিট কাটলাম ট্রেন ৫ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।
আমি আমার টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠে পরলাম।আমার সিট খুজে বের করে সেখানে বসে পরি।
এখনো সবকিছু সপ্নের মতো মনে হচ্ছে,এটা যদি সপ্ন হতো জীবনে সবথেকে বেশি খুশি হতাম।
বাবা তুমি কেন আমাকে এতো বড় শাস্তি দিলে জানিনা।তবে আজ প্রতিজ্ঞা করছি যতদিন না নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবো ততদিন তোমাকে আমার মুখ দেখাবো না।
জানি আমার খুব কষ্ট হবে বাট আমায় পারতে হবে।
পোওওওও করে ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠলো।সাথে সাথে আমার বুক ধাক করে উঠলো।ট্রেন আসতে আসতে চলা শুরু করলো।
ইচ্ছে করছে এখনি ছানালা ভেঙে লাফ দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পরি।
-- এক্সকিউজমি....... ( একটা মে...................।
#___________চলবে_______________
.
#যে_কোনো_গল্পের পর্ব খুজে না পেলে কমেন্ট করবেন।
.