অপ্রত্যাশিত ➖
Part:8
এমন ভাবে মামীকে(নীলার আম্মু) চোখের সামনে দেখবো ভাবতে পারিনি, মামি অনেক রাগান্বিত চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না, নীলা এখনো আমার বুকে অশ্রু ঝরাচ্ছে,,
অপ্রস্তুত ভাবে নীলাকে আমার বুক থেকে ছাড়িয়ে নিলাম ( হঠাৎ করে ছাড়িয়ে নেওয়াতে নীলা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়) কিন্তু যেই না তার চোখ সামনের দিকে যেতেই অনেক টা অবাক আর ভয়ে দুইপা পিছনে চলে যায়। নীলা একদৃষ্টিতে মামির দিকে তাকিয়ে আছে, ভেবে পাচ্ছে না সে কি করবে। অনেকটা ভয়ের রেখা নীলার মুখে দেখা যাচ্ছে-
আমার শরীর শীতল হয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছিনা মামিকে কি জবাব দেবো, আমার পরিবারের কাছে কিভাবে মুখ দেখাবো,
মামি ধীরে ধীরে আমাদের দিকে আসছে, মামির চোখ দিয়ে যেনো আগুনের ছিটা বের হচ্ছে, নীলা ভয়ে একবার আমার দিকে একবার মামির দিকে করুন ভাবে তাকাচ্ছে।ভয় পাচ্ছি পরবারের কথা ভেবে, ভয় পাচ্ছি নীলার কথা ভেবে-
ঠাসসসস ঠাসসসসস..............
চোখটা বন্ধ করে আছি, থাপ্পড় টা আমার পাওনা ছিলো কিন্তু না থাপ্পড় টা মামি নীলাকে দিয়েছে,
নীলা কিছুই বলছে না,গালে হাত দিয়ে কান্না করছে আর কিবা বলবে কিছু বলার মুখ নেই,,
আমি: মামি আ,,,,,,,,,,,,,,,
মামি: চুপ,, ছি..
তোমাকে আমার ছেলের মতো ভাবতাম আর তুমি কিনা শেষ পযর্ন্ত এমন একটা কাজ করতে পারলে
আমি: মামি আসলে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি(মাথাটা নিচু করে বললাম )
মামি: আর একটা কথাও বলবে না তুমি, তোমাকে অনেক ভালো ভাবতাম কিন্তু তুমি যে এতটা নিচ সেটা জানা ছিলো না। এখন মনে হচ্ছে তোমার পরিবার তোমাকে ভালো করতে পারিনি
(আমার পরিবারকে কেউ খারাপ বললে আমি সহ্য করতে পারিনা কিন্তু আজ যেনো কিছুই বলতে পারছি না )
মামি: আর তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি? শেষ পযর্ন্ত আমাদের সম্মান টাও রাখলি না
আমি: মামি নীলার কোনো দোষ নেই, সব দোষ আমার। দয়া করে নীলাকে কিছু বলবেন না,
মামি: আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলছি, আমি চাচ্ছি না এর মধ্যে তুমি কথা বলো(কিছুটা জোরে বললো)
চল আমার সাথে, বলে নীলার হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো, নীলা একটাও কথা বলছে না - কি বলবে আসলেই তো আমরা তাদের সম্মান রাখিনি,,
অবাক হয়ে তাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, হাজারটা প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরছে, কোনো প্রশ্নেরই উত্তর পাচ্ছি না। চোখ দিয়ে আর পানি পড়ছে না, শরীরটা অনেক দূর্বল লাগছে মনে হচ্ছে এখনোই জ্ঞান হারাবো -
ভয় পাচ্ছি বাসায় যাবো কিভাবে, আব্বু কি বলবে আম্মু কি বলবে, তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে, আব্বু আম্মু সহ্য করতে পারবে না। আর যে মামা আমাকে এতটা ভালোবাসে আমি তাকেও ঠকালাম? অনেক খারাপ লাগছে এইটা ভেবে যে আব্বু আম্মু না চাওয়াতেই আমার সমস্ত চাওয়া পূরন করেছে আমি তাদেরকে কিভাবে মুখ দেখাবো। আজ নিজেকে অনেক সার্থ্যপর মনে হচ্ছে।
আজ আমার জন্য নীলাকে আনেক কথা শুনতে হবে, অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।
মাথাটা ঘুরছে, পাজড়টা ছিড়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। এমনটা আমি কোনোদিন ও আশা করিনি, এমন মুহূর্ত আমি প্রত্যাশা করিনি তবুও কেন এমন হয় আমার সাথে।
আর ভাবতে পারছি না, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে বুকের ভিতর টা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, গলাটা শুকিয়ে গেছে। একটু বসতে হবে না হলে এখনোই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবো, চোখটা ঝাপসা লাগছে কিছুই পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাচ্ছি না। ঝাপসা চোখ আপসা সন্ধ্যায় কিছুই যেনো দেখতে পাচ্ছি না তবুও দেখতে পেলাম কিছুদুরে একটা চায়ের দোকান। হাটার শক্তি তেমন নেই তবুও কষ্ট করে দোকানে যেয়ে দেহের ওজন টা বেন্চের ওপর এলিয়ে দিলাম।।
মামা একপ্যাকেট সিগারেট দিয়েন তো, সিগারেট টা আজ মন জয় করতে পারবে না তাই আরো একপ্যাকেট সিগারেট আর দিশলায় নিয়ে হাটতে লাগলাম। একেরপর এক জলন্ত সিগারেটের ধোয়া শীরের মধ্যে পাথরের আঘাত করছে তবুও থামার পথ অবলম্বন করবো না। বাইকের ওপর বসে একমনে ধোয়া টানছি আর ভাবছি বাসায় গিয়ে কি বলবো?
মামি কি বাসায় বলবে? না বলবে না এমন প্রশ্ন আমাকে ভয়ের শেষ সিমান্তে পৌছে দিচ্ছে। বাসায় গিয়ে কি হবে সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত নয় কিন্তু ভাবছি একটা শেষ চেষ্টা করতে হবে শত যন্ত্রনা হলেও। দরকার হলে আব্বু- আম্মুর পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইবো আর ভিক্ষা চাইবো আমার ভালোবাসাকে।
নীলাকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না, তাকে ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ন থেকে যাবে -
প্যাকেটে আর দুইটা সিগারেট অবশিষ্ট আছে, পকেটে রেখে বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম অজস্র ভয় আর হারানোর কষ্ট নিয়ে। অনেক কিছুই ভাবতে ভাবতে গেটের সামনে এসে গেলাম, ভিতরে ঢুকতেই বুকের ভিতর টা কেপে উঠলো অজানা এক ভয়ে।
বাইকটা লক করে দরজার দিতে যেতে লাগলাম, সমস্ত শরীর কাপছে, গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে -
কাপা কাপা হাতে কলিংবেল টা চাপ দিলাম, বুকের মধ্য অনেকটা ভয় নিয়ে অপেক্ষায় আছি।
অনেকটা সময় হলো কিন্তু কেউ দরজা খুললো না ভয়ে ভয়ে আর একবার কলিংবেল চাপ দিতে যাবো আর তখনই দরজটা খুলে দিলো,
এমন কেউ দরজটা খুলবে আমি আশা করিনি.........
0
7
অপ্রত্যাশিত গল্পটি অনেক সুন্দর গল্পের ভিতর অনেক হাসি লুকিয়ে ছিল। ধন্যবাদ গল্পের লেখক কে।