অবহেলায় পাল্টানো জীবন

0 6
Avatar for Koly
Written by
3 years ago

## গল্প ঃ অবহেলায় পাল্টানো জীবন ##

.

পর্ব ঃ দশম পর্ব

( নবম পর্বের পর থেকে শুরু করা হয়েছে)

,,

,,

,,

রিয়া আমার কাছে এসে আমাকে ডাকে কিন্তু আমি তখন ওকে দেখার ঘোরে আছি তাই ওর ডাক শুনতে পাইনি, তার ডাকের কোন জবাব না পেয়ে আমায় আলতো ধাক্কা দিলো আর আমি ওর ধাক্কা খেয়ে বাস্তবে ফিরে এলাম আর কিছুটা লজ্জাও পেলাম। রিয়া যে কখন আমার কাছে চলে এসেছে তার টেরও পেলাম না।

রিয়া আমার এ অবস্থা দেখে বললো,,,

রিয়াঃ কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল? এতখন ধরে ডাকতেছি কোন খবর নেই।

আমিঃ না মানে,,,ইয়ে,,

রিয়াঃ কি মানে মানে করছো? বলো,,,

আমিঃ একটা চিন্তা করছিলাম আর একটা পেত্নীর দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পেত্নী টা কখন যে আমার কাছে চলে আসলো বুঝিনি।

রিয়া রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,

রিয়াঃ কী আমি পেত্নী তাই না,,

আমিঃ হুমম তুমিতো একটা পেত্নী ই।

রিয়াঃ আমি পেত্নী দাড়াও দেখাচ্ছি মজা,,

বলেই আমাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুশি মারতে লাগলো।

ওর নরম হাতের দুষ্ট মিষ্টি মার খেতে ভালোই

লাগছিলো আমার তবে ওর রাগটা ভাঙিয়ে পার্কে যেতে হবে। তাই আমি বললাম,,,,

আমিঃ একটু মজা করে বললাম তোমায় আর তুমি রাগ করলে। আমি কি একটু মজাও করতে পারবো না।

রিয়াঃ জানো আমায় কেউ পেত্নী বললে কতটা

খারাপ লাগে আমার।

আমিঃ আচ্ছা বাবা সরি। এই যে কান ধরলাম আর হবে না। এবার চলো তোমার মনের মানুষটাকে দেখবো।

রিয়াঃ হুমম চলো,,,

তারপর আমি আর রিয়া তাদের গাড়ি করেই গেলাম পার্কে। আমি ড্রাইভ করেছি আর ও আমার পাশে বসেছিলো তবে আমরা কেউই কোন কথা বলি নি রাস্তায়

আমদের পার্কে আসতে আনুমানিক ১৫ মিনিট লাগে।

পার্কের ভিতর একটা নির্জন জায়গায় বসে আছি আমরা দু'জনে, এখনও কেউ কিছু বলছিনা। কিছুটা সময় চুপ থাকার পর আমিই নিরবতা ভেঙে রিয়াকে বললাম,,,

আমিঃ রিয়া অনেক্ষন হলো তোমার সেই মনের মানুষকে কে তো দেখছি না কোথায় সে কখন আসবে?

রিয়াঃ এতো অস্থির হলে চলে। একটু অপেক্ষা তো করতেই হবে।

আমিঃ অনেকটা সময় তো হলো,,

রিয়াঃ তুমি একটা কাজ করো যাও আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসো।

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি তবে পরে আর দেরি করবো না৷।

রিয়াঃ ওকে আইসক্রিম আনতে আনতে সে চলে

আসবে আর আমিও কথাগুলো বলেই চলে যাবো।

আমিঃ হুমমম।

আমি আইসক্রিম আনতে চলে গেলাম, আমি রিয়ার পছন্দের আইসক্রিম টা নিলাম তবে একটা নিলাম। কারণ আমি খাবো না তাই, আবার অন্য কিছু ভাববেন না। আমি আইসক্রিম নিয়ে এসে দেখি রিয়া একা

বসে আছে তাই আইসক্রিম টা দিতে দিতে বললাম,,,

আমিঃ কই তোমার মজনু এখনও তো আসলো না?

রিয়াঃ আসছে তো এখানেই আছে আমার সামনেই,,,

আমি এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম কিন্তু কোথাও কাউকে পেলাম না, তাই রিয়াকে বললাম,,,

আমিঃ তুমি কি আমায় বোকা পেয়েছো যে মজা নিতেছো, নাকি আমি অন্ধ যে আমরা ছাড়া কেউ আছে এখানে কিন্তু তাকে আমি দেখতে পারতেছিনা।

রিয়াঃ তুমি অন্ধ নও তবে বোকা।

আমিঃ দেখো আমার কিন্তু মজা করা একদম ভালো

লাগছে না, কি বলবা বুঝিয়ে বলো,,,

রিয়াঃ বলছি আগে আইসক্রিম টা খেয়ে নিই।

আমিঃ আচ্ছা খাও তারপর বলো,,,

রিয়াঃ তোমার টা কোথায়?

আমিঃ আমার জন্য আনিনি আমি খাবোনা।

রিয়াঃ কেনো খাবে না?

আমিঃ খেতে ইচ্ছে করছে না তাই,,,

রিয়াঃ তুমি না খেলে আমিও খাবো না।

আমিঃ তুমি খাবে না কেনো? এখনি তো বললা খাবে,,,

রিয়াঃ ইচ্ছে করছে না খেতে,,,

আমিঃ খাও বলছি আমি খাবো না আমার জ্বর আসবে এখন আইসক্রিম খেলে। তাই খাবো না,,,

রিয়াঃ আমারও জ্বর আসবে তাই আমিও খাবো না।

আমিঃ খেতে বলছি খাবে ব্যাস,,,

রিয়াঃ খাবো তবে একটা শর্তে?

আমিঃ কি শর্ত? বলো,,,

রিয়াঃ আমি অর্ধেকটা খাবো আর তুমি বাকিটা খাবে।

আমিঃ বুঝছো না কেনো আমি খাবো না।

রিয়াঃ তাহলে আমিও খাবো না।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে খাবো।

বাধ্য হয়ে আইসক্রিম টা খেতে হলো, আমি নিশ্চিত আজ রাতে জ্বর আসবে। তবে কিছুই করার নেই, খেতে হবে তাই খেলাম। খাওয়ার পর রিয়া আমায় বললো,,,

রিয়াঃ তুমি একটু বসো আমি এখনি আসছি,,

আমিঃ কোথায় যাবে আমি আসবো তোমার সাথে?

রিয়াঃ না তোমাকে আসতে হবে না, তুমি একটু বসো আমি যাবো আর আসবো কোথাও যেও না

এখান থেকে। ওকে!

আমিঃ যথার্থ যাও আমি এখানেই থাকবো।

রিয়া একটু মুচকি হেসে কোথায় জেনো গেলো, ওহ আপনাদের একটা কথা বলে ফেলি কালকে যা শপিং করছিলো সবই ছিলো আমার জন্য। আর সকালে এগুলো আমায় দিলো,যা-ই হোক রিয়াকে আসতে দেখা যাচ্ছে তবে ওর হাতদুটো পিছনের দিকে কেনো?

কী আছে ওর হাতে আর ও এতোটা খুশি কেনো? কিছুই বুঝলাম না, রিয়া আমার কাছে এসে আমাকে বললো,,,

রিয়াঃ উঠে দাড়াওতো একটু,,,

আমিঃ কেনো বসে থাকলে কি হবে?

রিয়াঃ তোমার মাথা আমার মুন্ডু হবে।

আমিঃ একই তো হলো,,,

রিয়াঃ উফ্ফ দাঁড়াতে বলছি দাড়াও,,,

আমি অবস্থা একটু বেগতিক দেখে দাড়িয়ে গেলাম,

আর তখনি রিয়া একটু হাসি দিয়ে আমার সামনে হাটু গেরে বসে একগুচ্ছ গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে

দিয়ে আমাকে বললো,,,

রিয়াঃ নিলয় আমি জানিনা তুমি ভাবছো এখন আমায় তবে এখন আমায় কথাগুলো বলতেই হবে,এখন না বললে পরে হয়তো কখনো সুযোগ পাবো না তোমায় বলার। তাই এখন বলছি,,,নিলয় আমি যেদিন তোমায় প্রথম দিন দেখি সেদিন থেকেই শুধু তোমায় নিয়ে ভেবেছি, চোখ দুটি বন্ধ করলে শুধু তোমার মুখটা ই ভেসে উঠে। আমি আমার এই মনটাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছি যে এটা সাময়িক মোহ ছাড়া কিছু না। কিন্তু, আমি আমার এই বেহায়া মনটার কাছে হেরে গেছি জিতে গেছে আমার মনের ভালোবাসা।

নিলায় তুমি কি আমায় একটা সুযোগ দিবে সারাজীবন তোমায় ভালোবাসার? দিবে কি সবসময় তোমার পাশে থাকার একটা সুযোগ? বানাবে কি আমায় তোমার গল্পের রাণী? গল্প শুনাবে কি চাঁদনী রাতে চাঁদ দেখতে দেখতে?

পাশে রাখবে আমায় সারাটাজীবন তোমার জীবন সঙ্গী করে? দিবে কি সেই সুযোগটা তোমার বুকে মাথা রেখে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস টা ত্যাগ করার? আগলে রাখবে আমায় তোমার ভালোবাসা দিয়ে? হবে কি আমার

মন খারাপের সঙ্গী? দেবে কি তোমায় রান্না করে বাংলার বউদের মতো বেড়ে খাওয়াবার? হবে কি আমার সন্তানের বাবা? জানি না কাউকে কী করে প্রপোজ করে

তবে আমি আমার মন যা বলছে৷ আমি শুধু তাই বললাম নিলয় আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার নিজের চেয়েও বেশি। হয়তো তুমি বিশ্বাস করতে নাও পারো তবে এটাই সত্যি এ কয়দিনে আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো, রক্ত ছাড়া যেমন কেউ বাঁচেনা ঠিক তেমনি আমিও তোমায় ছাড়া বাচবো না। তাই তোমায় বলছি,,,

Niloy i love you. I love you very much...

রিয়া একবারে কথাগুলো বলার পর থামলো, আর রিয়ার কথাগুলো শুনে আমি শক খাওয়ার পর যেমন মানুষ জমে যায় আমিও ঠিক তেমনি করে জমে

গেছি মনে হচ্ছে। আবার অতীতের কথাগুলো মনে হতে লাগলো, আমিও প্রায় এমন করেই প্রপোজ করছিলাম জারাকে, আর এটাই ছিলো আমার সবচেয়ে বড় ভুল।

এসব ভাবতে লাগলাম আর আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো রিয়ার ডাকে, রিয়া আমায় বললো,,,

রিয়াঃ কোথায় হারিয়ে গেলে আবার? জবাব দাও আমার কথার।

রিয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ঐ কথাগুলো ভেবে চোখে জল এসে যায় এখনি মনে হয় গড়িয়ে পরবে তাই আমি উল্টো ঘুরে চোখের জল মুছে বললাম,

আমিঃ রিয়া কি বলছো তুমি এসব ভেবে বলছো তো? আর আমার জীবনটা অনিশ্চিত তাই আমি চাইনা আমার সাথে জড়িয়ে তুমি তুমার লাইফটা নষ্ট করো।

আর তুমি আমার চেয়ে হাজারগুণে ভালো ছেলে পাবে।

রিয়াঃ আমি সব কিছু ভেবেই বলছি,,,

আমিঃ দেখো এ হয়না আর তুমি আমার সম্পর্কে কি জানো? এ কয়দিনের পরিচয় আমাদের।

রিয়াঃ ভালোবাসা কখন হয়ে যায় কেউই জানে না। আর তুমি বললে না তোমার চেয়ে ভালো ছেলে পাবো।

আমার শুধু তোমাকেই চাই আর কিছু লাগবে না। আর বাকি রইলো তোমার বিষয়ে জানা তাইতো,,

আমিঃ হে তাই! আর এটাই হলো সবচেয়ে বড় কারণ,,

রিয়াঃ আমি জানি তুমি আমাদের কে যা বলেছো ঐগুলো সবই মিথ্যা কথা। কারণ ঐদিন তুমি যখন বলছিলে তখন তোমার চোক গুলোই বলে দিচ্ছিলো তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি আগে কখনো মিথ্যা কথা বলো নি তাই তুমি সেদিন বলার সময় একটু আমতা আমতা করছিলে। ঠিক তাই তো,,,

আমিঃ সেদিন আমি কোন মিথ্যা বলিনি, যা বলেছি

সবই সত্য কথা বলেছি।

রিয়াঃ কেনো মিথ্যা বলছো, আমি তোমার লেখা ডায়রিটায় একটু পরেছি কিন্তু সব পরতে পারিনি। আমি জানি তোমার মা বাবা বেচে আছে। so please, অভিনয় না করে সত্য টা বলো আমি জানতে চাই কেনো তুমি

আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছো? কেনো বিশ্বাস করতে পারছো না আমায়? কি সেই ভয়াবহ অতীত যা তুমি এতদিন লুকিয়েছো? বলো নিলয় বলো আমায়,,,,

এভাবে রিয়া আমায় জোরাজোরি করতে লাগলো আমার অতীতের বিষয়ে জানতে। অনেক জোড়াজোরি তে কাজ না হওয়াও ও ব্যাগ থেকে একটা ব্লেড বের

করে বললো,,,

রিয়াঃ তুমি যদি না বলো তাহলে আমি হাতের শিরা কেটে ফেলবো,,,

তাই আমি বাধ্য হলাম রিয়াকে সবকিছু বলতে। রিয়ার কাছ থেকে ব্লেড টা নিয়ে আমি রিয়াকে সবকিছু বললাম , জারার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ।

সবকিছু শুনার পর,,

রিয়াঃ আমি তোমার জীবন থেকে জারার দেয়া সব কষ্ট- অবহেলা সবকিছু আমার ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দেবো তুমি শুধু আমায় একটা সুযোগ দাও ,,, আর আমি তোমাকে আবার তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো।

আমিঃ না তুমি আমার মাকে চেনো না।

রিয়াঃ আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ। ( এটা বলে আমার পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো )

আমিঃ এই কী করছ কী,,, উঠো বলছি।

রিয়াঃ না,,, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ প্লিজ। ( এটা বলে আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।

( পরে কি হলো জানতে চাইলে আমার সাথেই থাকুন )

( আশা করি ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর লাইক কমেন্ট করে পাশে থাকবেন)

পাশে থেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, আশা করি ভালো থাকবেন সকলেই।

## ধন্যবাদ ##

1
$ 0.00
Avatar for Koly
Written by
3 years ago

Comments