গল্পের নাম: নীলিমা.
এই গল্পটা আমার লেখা প্রথম গল্প। অনেকদিন থেকে লিখতে ছিলাম কিন্তু শেষ করতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে আজকে ভাবলাম গল্পটা শেষ করি।
এই গল্পটার বিশেষ কিছু কথা আছে সেগুলো না বল্লে গল্পটা হয়তোবা র্পূনতা পাবে না। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ এক দিন এই গল্পটার মত একটা সপ্ন দেখতে পাই (তখন আমি ঢাকাতে চাকরি করতাম)। পর দিন সন্ধাই গল্পটার কিছু অংশ লিখি। গল্পটা যে খাতাতে লিখেছিলাম ওই খাতাটা একটা অ্যাঙ্কেল দেখতে পাই(আমার রুমমেট ছিলো)এবং সে পড়ে। পরে আমাকে বলে গল্পটা অনেক ভালো হয়েছে। এর পর ১৫,০৩,২০২০ আমি আমার ছোট চাচার ছেলে সজিব আর ছোট চাচী বসে গল্প করছি হঠাৎ সজিব বল্ল আম্মু ভাইয়া সব সময় গল্পের বই পড়ে। ছোটমা বল্ল ভালো তো কী ধরনের বই পড় আমি বল্লাম সব ধরনের বই পড়ি তবে রোমান্টিক গল্প পড়তে বেশি ভালো লাগে আর আমি নিজেও কিছু গল্প লিখেছি। ছোটমা বল্ল তাহলে তোমার একটা গল্প শুনাও। এই গল্পটা শুনাই। শুনে বলে অনেক ভালো লেগেছে তবে গল্পটা আর একটু বড় হলে আরও বেশি ভালো লাগবে। তার পর দিন রাতে গল্পটা আবার লিখি এবং শেষ করি।
আমার লেখা গল্প সমূহ: ১: নীলিমা.
২: খন্ডহীন কথা.
৩: ছদ্মবেস.
গল্পের চরিত্রে আছে: রাজ, নীলিমা চৌধুরী, নীল চৌধুরী, মালেক চাচা, রহিম সাহেব, ও CNG ড্রাইভার।
রাজ সবেমাত্র পড়ালেখা শেষ করে ঢাকাতে এসেছে চাকরির জন্য। তার চাকরি পেতে অনেক কষ্ট হবে সে জানে কারণ রাজের তেমন কোনো আত্মীয়-সজন নেই তাকে চাকরি দিবে। আবার রাজের এমন কোনো আত্মীয়ের বাসা নেই সেখানে সে কিছুদিন থাকবে। রাজ ঢাকাতে আসার পরে একটা বাসা খুঁজে পেলো।আপনারা জানেন ঢাকাতে ব্যাচেলারদের বাসা সবাই দিতে চাই না। রাজ খুব কষ্টে একটা বাসা পেলো তিন তলা ছাদের উপর একটা রুম। রাজ একাই থাকে নিজে রান্না করে খাই। বাসার মালিকের নাম রহিম সাহেব তিনি খুব ভালো মানুষ। রাজের কথাবাত্রা চলাফেরা দেখে রাজকে খুব পছন্দ করে ফেলেছে। এমনিতেও রাজ অনেক ভালো ছেলে। রহিম সাহেব জানতো রাজ শিক্ষিত। চাকরির জন্য ঢাকাতে এসেছে চাকরি পাচ্ছে না। রহিম সাহেব রাজের জন্য দুইটা ছাত্র ঠিক করে দিলেন। ছাত্রের বাবা রহিম সাহেবের পরিচিত। রাজ তো অনেক খুশি সে কিছু একটা করার সুযোগ পাচ্ছে। আপনারা জানেন বেকার ছেলেদের দিনগুলো খুব কষ্টে যায় কারণ তাদের অনেক চাহিদা থাকে সেগুলো পূরণ করা সম্ভব হয় না। কিছু একটা করতে পারলে তাদের চাহিদা গুলো কিছুটা পূরণ হয়। রাজের কাজ সকালে ঘুম খেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্না করে খাওয়া শেষ করে ছাত্র পড়াতে যাওয়া রাজ প্রথম দিন পড়াতে যাচ্ছে রাজের কাছে সেই সময় খুব বেশি পরিমাণে টাকা নেই। কারণ আপনারা জানেন রাজ বেকার। রাজের পড়ানোর সমই 9 টা। রাজ বাসা থেকে বের হলো আটটাই। কারন রাজকে হেঁটে যেতে হবে তার জন্য এক ঘন্টা আগে বেরোলো। রাজের বাসা থেকে একটু দূরে নীলিমাদের বাসা।
নীলিমার কথা বলি, নাম নীলিমা চৌধুরী, বাবার একমাত্র কন্যা। নীলিমা ইউনির্ভাসিটেতে পড়ে। নীলিমার জন্মের সময় নীলিমার মা মারা যায়। নীলিমার বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি কারণ উনি মনে করেন দ্বিতীয় বিয়ে করলে হয়তোবা নীলিমাকে সে পছন্দ করবে না বা ভালোবাসবে না। তার জন্য নীলিমার বাবা নীল চৌধুরী আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। খুব আদরের একটা মেয়ে। নীলিমা যখন যেটা চেয়েছে নীলিমার বাবা সেটাই দিয়েছে। নীলিমার বাবার অনেক টাকা অনেক সম্পত্তি। ঢাকাতে নিজের বাড়ি গাড়ি আছে। নীলিমা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ৮ টার সময়। নীলিমা সকালে ঘুম থেকে উঠে তার প্রথম কাজ ব্রাশ হাতে ছাদে হাটাহাটি করা আর গাছগুলোকে পানি দেওয়া। নীলিমা ছাদ থেকে মানুষের চলাফেরা দেখতে খুব পছন্দ করে। রাস্তা দিয়ে কে কখন যাচ্ছে এটা দেখতে তার খুব ভালো লোগে। হঠাৎ দেখতে পেলো একটা ছেলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এই ছেলেটাকে সে র্প্রথম দেখছে। নীলিমা সেরকম কিছু মনে করল না। দ্বিতীয় দিন নীলিমা আবার দেখল, সকালে ওই ছেলেটি যাচ্ছে। নীলিমা মনে মনে ভাবছে ছেলেটা আজকেও যাচ্ছে একই সময়ে? কে এত সুন্দর ছেলেটা? এইভাবে দেখতে দেখতে অনেকটা দিন কেটে গেলো। রাজ নীলিমাকে দেখেনি এখনো। কারণ রাজ রাস্তা দিয়ে যায় আর নীলিমা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে। নীলিমার হঠাৎ করে কী যেন হলো কিছু দিন খেকে ছাদে আসে শুধু রাজকে দেখতে। নীলিমা একটা প্রশ্নের উত্তর কোথাও পাচ্ছে না রাজকে দেখতে তার এ ভালো লাগে কেন? নীলিমা সকালে রাজকে দেখতে ছাদে গেলো রাজ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে নীলিমা ভাবতেছে সে কি করে কোথাই যায়? তাকে দেখি প্রত্যেকদিন সকালে যেতে কখন ফিরে সেটা দেখি না কিন্তু আজকে দেখবো সে কখন ফেরে।
এর কছিুখন পর মালেক চাচা নাস্তা করার জন্য ডাকল। নাস্তা শেষ করে কিছুখন পর আবার ছাদে এসে বসে থাকল। সে ভাবতেছে কখন আসে দেখব।
রাজ সকালে পড়াতে যায়। ছাত্রদের পড়ানো শেষ করে সে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে চাকরির জন্য বিভিন্ন অফিসে যাই এবং তার বায়োডাটা জমা দেয় এমনকি অনেকের সাথে কথা বলে তার চাকরির জন্য। এইভাবে কিছু সময়টা কেটে যায়। রাজ যখন ফিরছিলো তখন দুইটা বাজে।
রাজ যখন ফিরে আশে নীলিমা দেখতে পেলো মনে মনে বল্ল সে এখন আসতেছে কেন? সে যদি চাকরি করতো তাহলে আসতো। বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যেতো। তাহলে কি সে চাকরি করে না? নীলিমা বাসায় চলে গেলো পরের দিন একই ভাবে আজকে আবার দেখবো সে কখন আসে।
রাজের আজকে একটু বেশি সময় লেগে গেছে কারণ তার একটা ইন্টারভিউ ছিলো ফিরতে ফিরতে চারটার মতো বেজে গেছে।
নীলিমা ভাবতেছে কি ব্যাপার আজকে ফিরতে এত দেরি হলো কেন? সে কোথায় ছিলো? নীলিমা আবার ভাবল। ওই ছেলে সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে সে কি করে তার নাম কি কোথায় থাকে? নীলিমাদের বাসায় একটা চাকর আছে তার নাম মালেক।
মালেক চাচা সম্পর্কে বলতে গেলে, নীলিমাকে ছোট থেকে মানুষ করেছে। নীলিমার জন্মের আগ থেকেই মালেক চাচা নীলিমাদের বাসায় কাজ করে। মালেক চাচা নীলিমাকে অনেক ভালোবাসে। সে তার মেয়ের মত দেখে।
নীলিমা মালেক চাচাকে ডাকলো।
মালেক চাচা: মামনি আসতেছি। মামনি তোমার কিছু লাগবে।
নীলিমা: না চাচা তেমন কিছু লাগবে না নীলিমা আবারও বল্ল চাচা দেখোতো ওই ছেলেটাকে চেনো কী না।
ওই সময় রাজ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তার ছাত্রদেরকে পড়ানোর জন্য।
মালেক চাচা: না, আমিতো তাকে চিনিনা।
নীলিমা: তুমি কি পারবে তার সম্পর্কে খোঁজ নিতে।
মালেক চাচা: কেন মামনি ওই ছেলে কি তোমাকে ডিস্টার্ব করে?
নীলিমা: না, চাচা সে আমাকে ডিস্টার্ব করবে কেনো? তাকে তো দেখে মনে হয় অনেক ভালো ছেলে।
মালেক চাচা: হ্যা, মামনি দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক ভালো ছেলে।
নীলিমা: চাচা তুমি পারবে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আসতে।
মালেক চাচা: হ্যা, মামনি চেষ্টা করব।
নীলিমা: চাচা তুমি আজকেই যাও।
মালেক চাচা: হ্যাঁ, মামনি আমি একটু পরেই যাচ্ছি।
এই কথা বলে মালেক চাচা বাসার ভিতরে চলে গেলো।
নীলিমাও বাসার ভিতরে আসলো এসে নাস্তা করল। নীলিমাকে আবার ইউনির্ভাসিটেতে যেতে হবে।
মালেক চাচা রাজের সম্পর্কে জানার জন্য রহিম সাহেবের বাসায় গেলেন। রহিম সাহেব তখন বাসায় ছিলেন। মালেক চাচা রহিম সাহেবের সাথে কিছু কথা বলার জন্য অনুমতি চাইলেন রহিম সাহেব তাকে বাসার ভিতরে ডেকে নিয়ে বসালো।
রহিম সাহেব: আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
মালেক চাচা: আপনাদের বাসায় একটা ছেলে ভাড়াটিয়া থাকে তার সম্পর্কে কিছু জানতে চাই?
রহিম সাহেব: কোন ছেলের কথা বলছেন রাজের কথা?
মালেক চাচা: আমি তো তার নাম জানিনা তাকে প্রত্যেকদিন সকালে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখি।
রহিম সাহেব: হ্যাঁ, ওই ছেলেটি আমার বাসায় থাকে নাম রাজ। প্রত্যেকদিন সকালে ছাত্র পড়াতে যায়। মালেক চাচা: আপনি ওর সম্পর্কে আমাকে কিছু বলেন।
রহিম সাহেব: ও অনেক ভালো ছেলে অনেক ভদ্র এবং শিক্ষিত। রাজ ঢাকাতে এসেছে চাকরির জন্য চাকরি পাচ্ছিল না তাই তাকে আমি ছাত্র পড়ানোর জন্য বলেছি। আমার বাসায় থাকে তিন তালায়। শুনেছি রাজের নাকি ঢাকাতে তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই তাই সে কারো কাছে যেতে পারেনি। আবার এটাও শুনেছি রাজের আর কোন ভাইও নেই।
মালেক চাচা: তাহলে তো ছেলেটা অনেক ভালো মনে হচ্ছে।
রহিম সাহেব: হ্যাঁ, ছেলেটা অনেক ভালো।
মালেক চাচা: তাহলে আমি আজকে উঠি।
রহিম সাহেব: নাস্তা করে যান।
মালেক চাচা: না আজকে না অন্য একদিন করব।
রহিম সাহেব: আচ্ছা আবার আসবেন।
মালেক চাচা বাসায় ফিরে নীলিমাকে সবকিছু জানালো। নীলিমা অনেক খুশি হলো আর বল্ল রাজ অনেক ভালো ছেলে তাকে দেখলেই বঝা যায়। নীলিমার কেনো জানি রাজের কথা বার বার মনে পরতেছে। মনে অজান্তে রাজের ছবি ভেসে আসতেছে। সে রাজকে নিয়েই চিন্তা করছে। এখন নীলিমার সব কিছু জুরে রাজ। নীলিমা ভাবতেছে রাজের সাথে যদি কথা বলি তাহলে কেমন হয়? তার সামনা সামনি যাবো তার সাথে কথা বলব এটা ভাবতেই মন আনন্দে ভরে উটছে। নীলিমা এটা ভাবছে কিভাবে যাবো? সে তো আমাকে কখনো দেখেনি। সে তো আমাকে চেনে না। সে আমার সাথে কি কথা বলবে? হয়তোবা বলবেনা খুব ভয় পাচ্ছে। সে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। পরদিন সকালে নীলিমা ছাদে রাজকে দেখার জন্য ওয়েট করছে। হঠাৎ রাজ রাস্তা দিয়ে গেলো না, নীলিমা অনেক সময় বসে থাকল কি হলো রাজ আজকে আসলো না রাজের কি হয়েছে? নীলিমা মনকে সান্তনা দিলো হয়তোবা আজকে অন্য কোন কাজে আটকে পড়েছে তার জন্য যাচ্ছে না। পর দিন নীলিমা ছাদে বসে আছে রাজকে দেখার জন্য। নীলিমা ওয়েট করছে রাজ কখন যাবে তাকে একটুখানি দেখব। রাজ আজকেও আসলোনা নীলিমা ভাবতেছে কি হলো সে আজকেও আসলো না রাজকে আর দেখতে পাবোনা। রাজতো এমন করে না। সে কি আর আসবে না? নীলিমা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। নীলিমা ভাবছে তাকে একটুখানি দেখতে পারলে আমি শান্তি পেতাম কিন্তু রাজ আসেনি। নীলিমা আবার ভাবছে হয়তোবা কালকে আসবে। আবার পরের দিন নীলিমা বসে আছে রাজকে দেখবে রাজ আজকেও আসেনি। নীলিমা ভাবতেছে সে কি আর আসবে না? তাকে কি আর আমি দেখতে পারবোনা? সে কোথায় আছে কি করছে? এটা নিয়ে অনেক চিন্তা করছে রাজের কি হলো? আমি রাজের বাসায় যাবো আমি দেখব সে বাসায় আছে কিনা। হঠাৎ মনে হলো সে কী চলে গেছে? যদি চলে যায় তাহলে আমি তাকে কোথায় খুজে পাবো? রাজকে আমার দেখতেই হবে।
নীলিমা রাজের বাসায় গেলো দেখলো রাজ শুয়ে আছে।
নীলিমা রাজ কে বল্ল আপনি শুয়ে আছেন কেনো?
রাজ: আপনি কে? আপনি আমার বাসায়?
নীলিমা: আপনি আমাকে চিনবেন না আমি আপনাকে চিনি।
রাজ: আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন?
নীলিমা: আপনি প্রত্যেকদিন সকালে আমার বাসার সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যান।
রাজ: ওহ, আমি সকালে হাঁটতে হাঁটতে আমার ছাত্র পড়াতে যায়।
নীলিমা: আমি আপনার ওখান থেকে চিনি।
রাজ: আমি তো আপনাকে চিনি না।
নীলিমা: আপনাকে চিনতে হবে না আপনি আগে বলেন আপনি এই তিনদিন যাননি কেনো?
রাজ: আমার শরীলটা ভালো নেই তাই আমার যাওয়া হয়নি।
নীলিমা: কি হয়েছে আপনার?
রাজ: হয়তোবা একটু জ্বর ঠান্ডা হবে।
নীলিমা: ডাক্তার দেখিয়েছেন?
রাজ: এটাতে আবার কেউ ডাক্তার দেখায় এত এমনিতেই সেরে যাবে।
নীলিমা: ডাক্তার দেখাবেন ওষুধ খাবেন। না হলে যে শরীল আরও বেশি খারপ করবে। নীলিমা আবারও বল্ল আমি কি আপনার কপালে হাত দিয়ে দেখতে পারি জ্বরটা কম না বেশি?
রাজ: আপনি আমার কপালে হাত দেবেন কেনো? আপনি একটা অপরিচিত মেয়ে।
নীলিমা: সমস্যা নেই দেখি আপনার জ্বর টা কি অবস্থায় আছে।
জোর করেই নীলিমা তার কপালে হাত দিলো হাত দিয়ে দেখল তার শরীল জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। নীলিমা আবারও বল্ল আপনি ডাক্তারের কাছে যান নাহলে যে আপনার বড় ধরনের রোগ হয়ে যাবে।
রাজ: না থাক এমনিতেই সেরে যাবে।
নীলিমা: আপনি আরও অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।
রাজ তার কথা শুনল না। নীলিমা কিছুক্ষণ থাকার পরে বাসায় চলে আসলো। আসার পর মালেক চাচাকে দিয়ে কিছু ওষুধ কিনে পাঠালো।
নীলিমা: মালেক চাচা তুমি এই ওষুধগুলো রাজের বাসায় পৈৗছিয়ে দাও তার অনেক শরীল খারাপ।
মালেক চাচা: আচ্ছা মামনি আমি তাকে দিয়ে আসতেছি।
রাজের কাছে যখন ওষুধগুলো নিয়ে পৌঁছালো রাজ জানতে চাইল ওষুধগুলো কে পাঠিয়েছ।
মালেক চাচা: আমার নীলিমা মামনি পাঠিয়েছে।
রাজ তখন বুঝতে পারল একটা মেয়ে আসছিল হয়তোবা উনি নীলিমা উনি পাঠিয়েছেন।
মালেক চাচা ওষুধগুলো রেখে চলে গেলেন। রাজ ওষুধ খাওয়ার পর কিছু দিন পর সুস্থ হয়ে উঠল আবার আগের মত পড়াতে যাচ্ছে। নীলিমা আবার সকালে দেখতেছে রাজ যাচ্ছে কখন ফিরছে সেটাও দেখছে।
একদিন রাজ বাসায় ফিরলো তিনটার সময় রাজ বাসায় আসার পরে। নিজে রান্না করলো , গোসল করলো তারপর খাবার খেলো। রাজ বিকেলে ছাদে বসে চা খাই।
হঠাৎ নীলিমা রাজের বাসায় আসলো নীলিমা এসে বল্ল আপনি তো সুস্থ হয়ে গেছেন দেখছি।
রাজ: আপনার পাঠানো ওষুধ খেয়ে আমি সুস্থ হয়েছি।
নীলিমা: আপনি শরীলের যত্ন নিবেন।
রাজ: হ্যাঁ, চেষ্টা করব। রাজ আবারও বল্ল আপনি চা খাবেন?
নীলিমা: হ্যাঁ, খাওয়া যেতে পারে।
রাজ চা করে নিয়ে আসলো এসে দুজন ছাদে বসে খাচ্ছে আর গল্প করছে।
নীলিমা: আপনি কি এখানে একা থাকেন?
রাজ: হ্যাঁ, আমি এখানে একা থাকি।
নীলিমা: আপনার এখানে রান্না করে কে?
রাজ: কেনো আমি?
নীলিমা: আপনি রান্না পারেন?
রাজ: হ্যাঁ, পাড়িতো কেনো আপনি পারেন না?
নীলিমা: আমি রান্না করতে পারি না।
রাজ: কেনো মেয়েদের তো রান্না জানা দরকারি কারণ মেয়েরা তার বাবার বাড়ি ছেড়ে যখন স্বমীর বাড়িতে যায় সেখানে তাদের রান্না করতে হয় এবং অনেক কাজ করতে হয়, আপনি এগুলো পারেন না?
নীলিমা: না, আমাকে কখনো কেউ শেখায়নি বা আমি কখনো করিনি।
রাজ: আপনার মা শেখাই না?
নীলিমা: মা আমার জম্নের সময় মারা গেছেন।
রাজ: কিছু মনে করবেন না আমি জানতাম না। রাজ আবারও বল্ল আপনি যদি শিখতে চান আমি শিখাতে পারি।
নীলিমা: হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি শেখালে আমি শিখব।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
রাজ: আমি এখন রান্না করবো আপনি দেখবেন আর শিখবেন।
নীলিম: আচ্ছা ।
রাজ রান্না ঘড়ে ডুকে দেখে তেমন কিছু বাজার করা নেই।
রাজ: আজকে থাক অন্য আরেকদিন দেখাবো।
নীলিমা: কেনো?
রাজ: আমার তেমন ভালো কিছু বাজার করা নেই।
নীলিমা: আপনি যেটা রান্না করবেন সেটাই দেখব।
রাজ তবুও বল্ল থাক না আজকে।
নীলিমা তার কনো কথা শুনল না।
রাজ: আচ্ছা ঠিক আছে।
রাজ তারপরে রান্নার জন্য কিচেন রুমে গেলো রাজের আজকের রান্নার আইটেম ভাত আর আলু ভর্তা রাজ রান্না করছে নীলিমা দেখছে। রাজ বলতেছে ভাতে এই পরিমান দিতে হয়। তারপর ভাতের মধ্যে আলু ছেড়ে দিতে হবে। যখন পানি সব শুকিয়ে যাবে তখন ভাত টিপে দেখতে হবে। রাজ আলু ভর্তা কিভাবে করতে হয় সেটাও দেখাল।
নীলিমা যাওয়ার আগে রাজকে বল্ল আপনি কি রাতে এটা খাবেন?
রাজ: হ্যাঁ, আমি এটাই খাবো।
নীলিমা: আপনার কষ্ট হবে না?
রাজ: কেনো কষ্ট হবে এটা তো অনেক ভালো খাবার।
নীলিমা কিছু না বলে চলে গেলো।
নীলিমা রাত্রে যখন খেতে বসেছে তখন বারবার রাজের কথা মনে পড়ছে নীলিমা ভাবতেছে রাজ ওইটা দিয়ে খাবে কি করে তার কষ্ট হবে না? নীলিমার সামনে অনেক খাবার নীলিমা ভাবতেছে এখন যদি আমি রাজকে এই খাবারগুলো খাওয়াতে পারতাম আমার অনেক ভালো লাগত কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।
নীলিমার বাবা নীল চৌধুরী নীলিমাকে বল্ল মা তুমি খাচ্ছ না কেনো?
নীলিমা: আব্বু আমার ক্ষুধা নেই।
নীল চৌধুরী: মামনি তুমি যদি না খাও তোমার শরীর খারাপ করবে।
নীলিমা: আব্বু আমার ক্ষুধা নেই আজকে অনেক কিছু খেয়েছি তো তার জন্য।
নীল চৌধুরী আর কিছু বললেন না। সে ভাবলেন নীলিমা অন্য কিছু খেয়েছে তার জন্য তার ক্ষুধা নেই। নীল চৌধুরী মালেক চাচাকে ডেকে বললেন তুমি নীলিমার ঘরে রাত্রে খাবার রেখে দিবা ওর যদি ক্ষুধা পায় ও খাবে।
মালেক চাচা: আচ্ছা আমি রেখে দিবো।
পরেরদিন নীলিমা বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে রাজের বাসায় গেলো।
রাজ: কি এনেছেন এগুলো?
নীলিমা: আপনার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছি।
রাজ: কি দরকার ছিলো এগুলোর। আপনি এটা ঠিক করেননি।
নীলিমা: কেনো ঠিক করিনি আপনার জন্য খাবার এনেছি আর তো অন্য কিছু আনিনি।
রাজ: এগুলো আমার পছন্দ না।
নীলিমা: এত কথা বললেন না তো খেয়ে নেন।
নীলিমার অনেক জোর করার ফলে রাজ কিছু বলতে পারলো না তাকে খেতে হলো। খাওয়ার পরে তারা অনেকখন গল্প করল গল্পের মাঝে।
নীলিমা: আপনি কখনো সমুদ্র দেখেছেন?
রাজ: না, সেভাবে কখনো যাওয়া হয়নি।
নীলিমা: সমুদ্র দেখবেন?
রাজ: এখন না, পরে অন্য কোন সময়।
নীলিমা: চলেন না একদিন সমুদ্র দেখতে যায়?
রাজ: এই সময় যাওয়া তো সম্ভব না পরে অন্য কোন সময় ভেবে দেখব।
নীলিমা: এত ভাবা লাগবে না আমি যেতে বলেছি যেতে হবে।
এখানে একটা কথা আছে নীলিমা অনেক আদরের একমাত্র মেয়ে সে অনেক জেদি সে যেটা বলে সেটাই করে।
রাজ জেতে চাচ্ছে না কারণ রাজের কাছে খুব বেশি পরিমান টাকা নেই।
নীলিমা বুজতে পেরেছে রাজের কাছে খুব বেশি পরিমান টাকা নেই।
নীলিমা বল্ল যা খরজ হবে সব আমি দিবো।
রাজ: তবুও থাক।
নীলিমা: আচ্ছা বাবা এখন টাকা আমি দিচ্ছি পরে সুধ সমেধ ফেরত দিয়েন। আমরা কক্সবাজার যাবো সমুদ্র দেখতে। নীলিমা আবারও বল্ল কাল সকাল দশটায় আমরা বের হব কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠবো আপনি কিন্তু কাল দশটার আগেই স্টেশনে পৌঁছাবেন।
রাজ: আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো।
এই কথা বলে নীলিমা বাসায় চলে গেলো। নীলিমা অনেক খুশি তারা ঘুরতে যাবে।
রাতে খাওয়ার সময় নীলিমার বাবাকে নীলিমা বল্ল আব্বু আমি আগামীকালকে কক্সবাজার যেতে চাচ্ছিলাম সমুদ্র দেখার জন্য।
নীল চৌধুরী: এখন কেনো কিছুদিন পরে যাও আমি তোমার সাথে যাবো।
নীলিমা: না, আমি এখন যেতে চাই।
নীল চৌধুরী: আচ্ছা, সাথে কে যাচ্ছে?
নীলিমা: একাই যাচ্ছি।
নীল চৌধুরী: না, তোমাকে তো একা যাওয়া হবে না তুমি কাউকে সাথে নিয়ে যাও।
নীলিমা: না, আব্বু আমি একা যেতে পারব।
নীল চৌধুরী: না, তুমি তোমার মালেক চাচা কে সাথে নিয়ে যাও।
নীলিমা: আচ্ছা।
নীলিমা তার বাবাকে রাজের কথা বলতে চাইলো না কারণ নীলিমা চাচ্ছে না যে এখনই তার বাবা জানুক রাজের কথা।
নীল চৌধুরী: মালেক এদিকে আসো।
মালেক চাচা: জি বলেন।
নীল চৌধুরী: তুমি কালকে নীলিমার সাথে কক্সবাজার যাবে। তাড়াতাড়ি সব গোছাও।
মালেক চাচা: আচ্ছা ঠিক আছে আমি সবকিছু গোছাচ্ছি।
নীলিমা খাওয়া শেষ করে তার রুমে গেলো। তার কিছুক্ষণ পর বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে আর ভাবছে রাজ এখন কি করছে একটু খোঁজ নিই। নীলিমা রাজকে ফোনে কল দিলো। রাজ কল রিসিভ করল।
নীলিমা: কি করছিলেন?
রাজ: চাঁদ দেখছিলাম, আপনি?
নীলিমা: আমিও চাঁদ দেখছিলাম। মনে আছে তো কাল কখন ট্রেন?
রাজ: হ্যাঁ, মনে আছে দশটায় ট্রেন।
নীলিমা: আচ্ছা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন সকালে উঠতে হবে।
রাজ: হ্যাঁ, আপনিও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন।
এই বলে নীলিমা কলটা কেটে দিলো।
(নীলিমা মনে মনে ভাবছে সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলব রাজ আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
ওই দিকে রাজ চাঁদ দেখছে আর মনে মনে ভাবছে সে সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলবে নীলিমা আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি)
এটা ভাবতে ভাবতে তারা দুজন দুজনার রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সকাল হলো।
নীলিমা: মালেক চাচা তুমি কি এখনো সবকিছু গোছাওনি?
মালেক চাচা: হ্যাঁ, মামনি হয়েছে।
নীলিমা: চলো তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।
মালেক চাচা ও নীলিমা দুজন গাড়িতে করে রওনা দিলো কমলাপুর রেলস্টেশন এরদিকে।
রাজের রাতে ভালো মত ঘুম হয়নি সারা রাত নীলিমার কথা ভেবেছে। শেষ রাতে একটু ঘুম এসেছে তাই সকালে উঠতে দেরি হয়েছে। রাজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯.২০ বাজে। রাজ
ভাবতেছে এখন আমি কী করব? কীভাবে পৈৗছাব? মনকে বুজদিলো আমাকে যেভাবেই হক পৈৗছাতে হবে। খুব তারাতরি করে সব কিছু গোছালো। বের হয়ে দেখে একটাও গাড়ি নেই। রাজ কী করবে কিছু বুজতে পারছে না। দূরে দেখল একটা CNG। রাজ যেয়ে CNG ড্রাইভারকে বল্ল মামা জাবেন?
CNG ড্রাইভার: কই জাবেন?
রাজ: কমলাপুর রেলস্টেশন?
CNG ড্রাইভার: জামুনা।
রাজ: কেনো? কিছু টাকা বেশি নিয়েন।
CNG ড্রাইভার: কত দিবেন?
রাজ: আপনি কত চান?
CNG ড্রাইভার: চারশো।
রাজ: এখান থেকে ২০০ টাকা ভাড়া আপনি ৪০০ নেবেন এটাকী ঠিক হবে?
CNG ড্রাইভার: ৫০ টাকা কম দিয়েন আসেন।
রাজ: কী আর করার যেতেই হবে। আচ্ছা চলেন। মামা ৯.৩০ বেজে গেছে যেভাবেই ১০ টার আগে পৈৗছে দেবেন।
CNG ড্রাইভার: মামা আপনে টেনশন করেন না।
নীলিমা পৌঁছালো তখন 9:30 বাজে ট্রেন দশটায় নীলিমা রাজকে কল করলো রাজ কল রিসিভ করল না। নীলিমা ভাবলো হয়তোবা সে রাস্তার মধ্যে তার জন্য কল রিসিভ করতে পারিনি। আবার যখন 9:35 বাজে তখন আবারও কল দিলো রাজ তবুও কল রিসিভ করল না। নীলিমা ভাবতেছে রাজের কি হলো কল রিসিভ করছে না কেনো? যখন 9:40 বাজে নীলিমা আবারও কল দিলো কল রিসিভ করল না। আবারও 9:45 কল দিলো রিসিভ করল না।
মালেক চাচা: মামনি ট্রেন ছেড়ে দিবে আর কিছুক্ষণ পরে।
নীলিমা: উঠবো আরেকটু পরে।
মালেক চাচা: মামনি কারো কি আসার কথা আছে?
নীলিমা: হ্যাঁ, চাচা রাজের আসার কথা আছে।
মালিক: সে এখনো আসেনি কেনো?
নীলিমা: আমি তো সেটাই ভাবতেছি সে কেনো এখনো আসেনি।
যখন 9:50 বাজে তখন নীলিমা আবার কল দিলো রাজ কল রিসিভ করল না।একটা মেসেজ করল আপনি কোথায় এখনো আসছেন না কেনো? ট্রেনটা তো ছেড়ে দিবে।
তার মেসেজের কোন রিপ্লাই নেই যখন 9:55 বাজে আবার কল দিলো এবার রাজের ফোনটা বন্ধ আছে তার ফোনে কল গেলো না। নীলিমা ভাবতেছে কি হলো তার ফোনে কল যাচ্ছে না কেনো? বারবার কল দিচ্ছে আর কল যাচ্ছে না এদিকে দশটা বেজে যাচ্ছে ট্রেন ছেড়ে দিবে নীলিমার চোখে অজান্তেই পানি চলে এসেছে যখন দশটা বাজল ট্রেনটা ছেড়ে দিলো কিন্তু রাজ আসলো না নীলিমা স্টেশনে বসে অনেক কান্না করছে মালেক চাচা তাকে অনেক বোঝাচ্ছে মামনি তুমি কেঁদোনা তুমি কেঁদোনা নীলিমা তার কান্না থামাতে পারল না। নীলিমাদের আর কক্সবাজার যাওয়া হলো না। নীলিমা বাসায় ফিরে আসলো এসে রাজের বাসায় যেয়ে দেখল রাজের ঘড়ে তালা বন্ধ করা। নীলিমা কান্না করছে আর বলতেছে রাজ কোথায় গেলো তার না আজকে আমার সাথে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিলো আমরা সমুদ্র দেখব।নীলিমা রাজের রুমের সামনে অনেক সময় বসে থাকল রাজ আসবে ভেবে।....(বাকি অংশটা আগামী পর্বে)