.
.
Part: 75
.
আদ্রিয়ান আর না করলো না মিষ্টিকে বেছে দিতে দিতে নিজেও খেতে লাগল। বাবা মেয়ে একসাথে বসে বাদাম খাচ্ছে আর আমি চোখ ভরে সেই দৃশ্য দেখছি। চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। এবার আমি বুঝে গেছি আমাকে কী করতে হবে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের? একবার যখন দেশে এসে পরেছো। আমি আর তোমাকে ফিরতে দিচ্ছি না। নাউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি। এসব ভাবতে ভাবতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি, দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। আদ্রিয়ান বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মিষ্টির হাতে দিচ্ছে আর মিষ্টি সেগুলো মাথা উচু করে মুখে দিচ্ছে। আর ফাকে ফাকে আদ্রিয়ান এ দুয়েকটা মুখে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল
.
- এবার একা একা বকবক কর আমি গেলাম।
.
মিষ্টি মুখ কালো করে বলল
.
- চলে যাবে?
.
- যেতে হবে কাজ আছে।
.
মিষ্টি মুখটি কিছুক্ষণ গোমড়া করে রেখে তারপর হালকা হেসে বলল
.
- একটু কোলে নেও!
.
আমি বুঝতে পারছি এই মেয়ে এখন কী করবে তাই হাসছি। তুমি যতোই নিজেকে অনুভূতিহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করোনা কেনো নিজের সন্তানের সংস্পর্শে এসে তুমি নিজের ভেতর তৈরী হওয়া অনুভূতিকে দমাতে পারবেনা। আদ্রিয়ান এবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
.
- কেনো?
.
মিষ্টি কিউট করে বলল
.
- নাও নাহ।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকেই ওকে কোলে নিলো তারপর বলল
.
- নিলাম তোকে কোলে এবার?
.
মিষ্টি হেসে আদ্রিয়ানের গলা জরিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
- বাই
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো, মিষ্টি হেসে বলল
.
- আমি আমার মাম্মাকে এভাবেই বাই বলি!
.
- তাই আমাকেও এভাবে বললি?
.
মিষ্টি মাথা দুলিয়ে বলল
.
- হুম
.
আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল
.
- আর কিছু?
.
- আরেকটা জিনিস বাকি আছে।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ঠোটে হাসি রেখে বলল
.
- সেটা কী?
.
- দেখাচ্ছি
.
বলেই জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে, আদ্রিয়ানের মুখের রিয়াকশন দেখে বুঝলাম ও পুরো থমকে গেছে। ওর ভেতরে যে কিছু একটা কাজ করছে ওর মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছি। আমার চোখও একটা আলাদা প্রশান্তি পাচ্ছে ওদের এভাবে দেখে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিষ্টি সরতে চাইলেও আদ্রিয়ান সরতে দিলোনা দুই হাতে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল, তাই মিষ্টিও আদ্রিয়ানের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে শান্ত হয়ে রইল। আমি একটু অবাক হলাম, মিষ্টি এমনিতে সবার সাথে ফ্রি হলেও এতোটাও না, কিন্তু কী সুন্দর আদ্রিয়ানের বুকে মিশে আছে যেনো কতো চেনা ওর। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান ওকে নামিয়ে বেঞ্চের ওপর দাড় করিয়ে বলল
.
- প্রতিদিন আসিস এখানে?
.
মিষ্টি হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল
.
- আচ্ছা গেলাম আমি
.
মিষ্টি মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বেশ কয়েক কদম উল্টো হেটে তারপর ঘুরে চলে গেলো। আর মিষ্টিও হেসে ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বল নাড়তে লাগল। আদ্রিয়ান চলে যাবার পর আমি দ্রুত হেটে গেলাম মিষ্টির কাছে ওর কাছে গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও বল থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো, তাকিয়ে আমায় দেখে হেসে বলল
.
- তুমি চলে এসছো? এতো দেরী করলে কেনো?
.
আদ্রিয়ানের বেছে রেখে যাওয়া বাদাম মুখে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বললাম
.
- সরি সোনা একটু ব্যস্ত ছিলাম। তুমি কী করছিলি এতোক্ষণ?
.
মিষ্টি ফিক করে হেসে দিয়ে বলল
.
- একটা সিংহের সাথে কথা বলছিলাম।
.
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ওর কথা শুনে, বাদাম আর চিবোতে পারলাম নাহ। তাই অবাক হয়ে বললাম
.
- মানেহ?
.
মিষ্টি এবারেও হেসে কুটিকুটি হয়ে বলল
.
- মানে হলো লাওন লাওন
.
- হ্যা কিন্তু লাওন কে? লাওন ই কেনো?
.
মিষ্টি বাদাম মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল
.
- ভীষণ রাগী... বাপড়ে কী ধমক দিয়েছিল, লাওন এর গর্জনের মতো..তাইতো নাম দিয়েছি মিঃ লাওন
.
আমার এবার খুব বেশিই হাসি পাচ্ছে কী মেয়েরে বাবা নিজের বাপকেই লাওন বানিয়ে দিলো। যদিও ঠিকই আছে, যেমন বাবা ঠিক তার তেমনই মেয়ে। আমি হাসি আটকে সিরিয়াস মুড করে বললাম
.
- আর কী করেছে লোকটা? আর বকলো কেনো?
.
- সিগারেট ও খাচ্ছিলো লোকটা আমি ফেলে দিয়েছি
.
আমি রেগে যাওয়ার ভাব করে বললাম
.
- তোমায় ধমকেছে? আমার মিষ্টি সোনাকে? তারমানে লোকটা খুবই খারাপ?
.
মিষ্টি এবার খাওয়া থামিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল
.
- উমহুম একটুও খারাপ না খুব ভালো, কিন্তু একটু রাগী লাওন
.
আমি হাত ভাজ করে বললাম
.
- এমন কী করলো যে তোমার ভালো মনে হলো।
.
- আমাকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিয়েছি, যাওয়ার আগে আদর ও করে গেছে।
.
- ওহ তাই?
.
- হুম
.
- আচ্ছা এবার যাওয়া যাক?
.
- হ্যা
.
আমি হেসে ওকে কোলে করে নিয়ে চলে এলাম।
.
রাতে মিষ্টি ঘুমোচ্ছে আর আমি ভাবছি মিষ্টি আর আদ্রিয়ান এর কথা। প্রথম দেখাতেই কতোটা মিশে গেছে দুজনে, এবার দেখি মিঃ আদ্রিয়ান তুমি কীকরে তোমার অভিমান টিকিয়ে রাখো! তোমার আজকের বলা শেষ কথাতে যা বুঝলাম তাতে তুমি হয়তো রোজ ওই পার্কে আসবে। আর আমি আমার মেয়েকে খুব ভালো করেই চিনি ও এতো সহজে তোমাকে ছাড়বেনা। এবার ওদিকে মিষ্টি মিষ্টির কাজ করবে আর এদিকে আমি আমার কাজ।
.
আজ সন্ধ্যার পর হসপিটালে অনুষ্ঠান আছে নতুন প্রযেক্ট নিয়ে। তাই মিষ্টিকে সাথির কাছে রেখে গেলাম অনুষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে চারপাশে আদ্রিয়ানকে খুজতে লাগলাম, হঠাৎ অভ্র এসে বলল
.
- কী ম্যাম এসে গেছেন?
.
- হুম
.
- স্যারকে খুজছেন?
.
- হ্যা কোথায় ওও?
.
অভ্র হাতের ইশারায় দেখালো, আমিও ওর ইশারা করা দিকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান এক কোণায় দাড়িয়ে ড্রিংক করছে। আমি ধীর পায়ে ওর কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে না দেখার ভান করেই গ্লাসে চুমুক দিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি বললাম
.
- বাড়ির সবার সাথে কথা বলেছো?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে গ্লাসের আরেকটা চুমুক দিয়ে বলল
.
- কোন বাড়ির?
.
- তোমার নিজের বাড়ির, তোমার বাবা মা, বন্ধুরা!
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে খানিকটা হেসে পুরো গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করল। আমি একটু চড়া গলায় বললাম
.
- আমি হাসির কী বললাম।
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চলে গেলো ওখান থেকে। খুব বিরক্ত লাগছে আমার এখন কী পেয়েছেটা কী ও? যা খুশি তাই করছে। আর এইসব কিছুতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে ও নিজেই। এভাবে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করার মানে কী? তাকিয়ে দেখলাম অভ্রের সাথে কথা বলছে ওও। আমিও এক কর্ণারে দাড়িয়ে সফ্টড্রিংক খেতে খেতে ভাবছি যে কী করবো এরপর? এরপর সারা পার্টিতে ওকে দূর থেকেই দেখে যাচ্ছি। আমি যেই পাশে থাকি ও ঠিক তার বিপরীত পাশেই থাকে। ইচ্ছে করেই ইগনোর করে চলেছে আমাকে আর সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।
.
হঠাৎ সবাই আদ্রিয়ানকে গান গাওয়ার জন্যে রিকোয়েস্ট করতে লাগল। কারণ হসপিটালের সবাই মোটামুটি জানে যে আদ্রিয়ান ভালো গান করে। কিন্তু আদ্রিয়ানের এককথা যে ও গান গাইবেনা। কিন্তু সবাই এমনভাবে চেপে ধরেছে যে সৌজন্যতা রক্ষার জন্যেই সবার জোরাজুরিতে বাদ্ধ হয়ে গান গাইতে রাজি হলো। অভ্রের খুশি দেখে কে? ছয় বছর পর গান করবে আদ্রিয়ান তাই ছুটে গিয়ে গিটার এনে ওর হাতে দিলো। ও গিটারটা হাতে নিয়ে নিজের মতো কিছুক্ষণ টুংটাং করলো কারণ অভ্যেস নেই অনেকদিন ধরে। বেশ কিছুক্ষণ টুংটাং করার পর আদ্রিয়ান সুর ওঠালে, এরপর শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করল
.
Mujhse kehte to the, Na Kabhi Ruthoge
Na kabhi hoge mujhse tum khafa
Aisa keya ho geya, tu kaha kho geya
Keya nehi the mere dilme wafa
hai yeh kaisi ghari jo badal ti nehi
Ho geyi duriyaan kyun be baja
Juda juda yeh huye kyun hum yeh bata
Hajoom yaadon ka huya hai har jaga
In aankoon mein mile tujhe jo apna aap to..
to aake de na mujhe bhi hausla...
.
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এই মুহুর্তে এই গান কেনো গাইছে বেশ বুঝতে পারছি। এরপর আমার থেকে চোখ সরিয়ে চোখ বন্ধ করে গাইলো
.
Keya maine khoya, keya nehi paya
iska koyi mujhe gam nehi..
Tujhse jure the silsilein sare
Par hum rahe to ab hum neji
Tujhe yadoon se bhula du, mein kaise yeh saja do
Khudko yeh bata de jara
Hai yeh kaisi kami, puri hoti nehi
Peyaar tujhse kiya tha bepanha..
Juda juda se hiye kyun hum yeh bata
Hajoom yadoon ka huya hai har jaga
In ankhoon mein mile tujhe apna aap to..
Tu aake de na mujhe bhi hausla..
.
আমার চোখ এবার ছলছলে করে উঠছে, নিজে ভেতরে চেপে রাখা কষ্টাই যেন ও প্রকাশ করছে গানের মধ্যে। ও এবার গিটারে চোখ রেখে গাইলো
.
Khudse khafa hoon, tujhse juda hoon
Roothe huye hai sab asarein..
Har justu main karto chuka hoon
mitte nehi kyun yeh fasalein..
Tujhe khoya hoon pake, kaha dhundu main jake
Saans chalti nehi,aakhein thamti nehi
hos bhi ab huye hai la pata
Juda juda se huye kyun hum yeh bata
Hajoom yadoon ka huya hai har jaga
In ankhoon mein mile tujhe jo apna aap to...
Tu aake de na mujhe bhi hausla..
.
সবাঈ জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো আর সেই আওয়াজে আমার ঘোর কাটলো, আমি সাথেসাথেই নিজের চোখের কোনের পানিটা মুছে ফেললাম। আদ্রিয়ানের আজকের গানের প্রতিটা লাইন আমার বুকে গিয়ে লেগেছে। প্রতিটা লাইন যে আমার প্রতি ওর ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসা থেকে পাওয়া কষ্টকে চিৎকার করে প্রকাশ করছিলো সেটা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছি। এর আগেও ও ওর মনের অনুভূতিকে মিশিয়ে গান গেয়েছিলো আমার সামনে কিন্তু অবিশ্বাস আর রাগ এমনভাবে আমার হৃদয়কে ঘিরে রেখেছিলো যে সেই গান আমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। এসব ভেবেই বুকের ভেতরটা ভার হয়ে এলো। সারা পার্টিতে আমি আর ওকে জালাতে যাইনি, গানটা গাওয়ার পর ওও একদম চুপ ছিলো। ভাবলাম আজ একটু স্পেস দি ওকে।
.
আজকেও হসপিটাল থেকে বিকেলে মিষ্টিকে আনতে গেলাম তবে ধীর পায়ে সাবধানে। কারণ আমার সিক্স সেন্স বলছিলো যে আদ্রিয়ান এখানে আসবে, মিষ্টির টানে, যখন আদ্রিয়ান মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করলো যে, ' তুই এখানে রোজ আসিস?' তখনই কিছুটা ধারণা করেছি। তবে গিয়ে দেখি মিষ্টি খেলছে কিন্তু আদ্রিয়ান আসেনি এখোনো। আমি আবারো সেই গাছে পিছে লুকিয়ে ভাবছি আজকে আসবে না নাকি? ও না আসলে তো আমি যেটা করতে চাইছি সেটা হবেনা। তবে কী আমার ধারণা ভূল ছিলো? এসব ভেবে ভেবেই সামনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে আসতে দেখে চমকে গেলাম, খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। যাক তাহলে এবার আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো। এসব ভেবেই দেখলাম আদ্রিয়ান সেই বেঞ্চে বসে একটা সিগারেট জালিয়ে টানছে। যাহ আমিতো ভাবলাম মিষ্টিকে খুজবে এটা কী হলো? যাই হোক মিষ্টিতো আছে ও না খুজলে কী হবে কিছুক্ষণের মধ্যে মিষ্টি নিজেই দেখতে পাবে ওকে। তারপর যা করার ওই করবে। এসব ভাবতে না ভাবতেই মিষ্টির চোখ পরল আদ্রিয়ানের দিকে কিন্তু আদ্রিয়ানকে দেখেই মিষ্টি কপাল কুচকে ফেললো। হয়তো আজকেও সিগারেট টানছে তাই। মিষ্টির লম্বা লম্বা পা ফেলে আদ্রিয়ানের সামনে ভ্রু কুচকে দাড়ালো। মিষ্টির দিকে চোখ পরতেই আদ্রিয়ান ঠোট থেকে সিগারেট সরিয়ে বলল
.
- আরেহ ধানিলঙ্কা?
.
- মিস্টার লাওন? আজকেও এসছো?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো হয়তো মিস্টার লাওন নামটা শুনে অবাক হয়েছে, তাই ভ্রু কুচকে বলল
.
- এই লাওন কে হ্যা?
.
- তাহলে ধানিলঙ্কা কে?
.
- কেনো তুই ছোট প্যাকেট হলে কী হবে বড় বড় ধামাকা নিয়ে হাজির হোস।
.
মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল
.
- তুমিও তো দেখতে এতো সুন্দর হলে কী হবে? লাওনের মতো গর্জন করতে থাকো!
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে বোকার মতো মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
.
- দেখ আজ এমিতেই মাথায় আগুন জলছে একদম জালাবিনা আমাকে। যা গিয়ে খেল।
.
মিষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল
.
- আমার ব্যাগে পানির বোতল আছে মাথায় ঢেলে দেবো।
.
আমার এবার ব্যাপক হাসি পাচ্ছে বাবা মেয়ের এই ঐতিহাসিক ঝগড়া দেখার ভাগ্য কজনের হয়? আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল
.
- কী বললি?
.
মিষ্টি মুখটা সিরিয়াস করে বলল
.
- আগুন তো পানি দিয়েই নেভায় সেইজন্যেই বলছিলাম।
.
- তুই চুপ করবি? ( ধমকে )
.
মিষ্টি সাথে সাথেই ঠোটে আঙ্গুল দিলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিষ্টি হাত বাড়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান সেটা দেখে ভ্রু কুচকে বলল
.
- বেঞ্চে বসালে দুষ্টমি করবিনা তো?
.
মিষ্টি ভদ্র মেয়ের মতো না বোধক মাথা নাড়লো। তারপর আদ্রিয়ান মিষ্টিকে বেঞ্চে বসিয়ে দিলো। আর তারপর নিজের মতো সিগারেট টানতে লাগল। হঠাৎ করেই মিষ্টি টান মেরে সিগারেট ফেলে দিলো। আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
- তুই কিন্তু বলেছিলি দুষ্টমি করবি নাহ
.
মিষ্টি হাসতে হাসতেই বলল
.
- আমি দুষ্টমি করবোনা বলেছি সিগারেট ফেলবোনা কখন বললাম
.
আর আমি? হাসি আটকে রাখা কতো কষ্টের সেটা এখন বুঝতে পারছি। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিষ্টির দিকে তারপর বাকা হেসে জিন্সের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে বলল
.
- গোটা প্যাকেট আছে আমার কাছে! এবার কী করবি?
.
মিষ্টি ওটা নিতে গেলেই আদ্রিয়ান হাত উচু করে ফেললো। মিষ্টি এবার বেঞ্চে দাড়িয়ে ওটা নিতে গেলেই আদ্রিয়ান হাত দূরে সরিয়ে নিলো। মিষ্টি শত চেষ্টা করেও আদ্রিয়ানের থেকে ওটা নিতে পারলোনা। একপর্যায়ে নাক ফুলিয়ে বসে পড়ল, আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
- ধানিলঙ্কার ঝাজ শেষ?
.
মিষ্টি ভ্রু কুচকে তাকালো। আদ্রিয়ান যেই আরেকটা সিগারেট নিয়ে জালিয়ে টান দিতে যাবে মিষ্টি আবারো টেনে ফেলে দিয়ে হেসে বলল
.
- প্যাকেট নিতে না পারলে কী খেতে গেলেই ফেলে দেবো।
.
বলেই মিষ্টি একটা নাক ঘষা দিলো। আদ্রিয়ান এবার মুখ গোমরা করে বসে থেকে নিজেই জিদ করে প্যাকেটটা ফেলে দিলো। মিষ্টি বিজয়ের হাসি দিয়ে বলল
.
- এবার লাওনের গর্জনও শেষ।
.
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। মিষ্টি বার বার ঊকি দিয়ে দেখছে আদ্রিয়ানকে। তারপর আঙ্গুল দিয়ে আদ্রিয়ানের পেটে খোচা মারতেই। আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
- সমস্যা কী তোর?
.
- ওটা খেলে অসুখ করে ফুসফুস আর হা..কী জেনো?
.
- হার্টে?
.
- হুম ওখানে
.
আদ্রিয়ান একটু শব্দ করে হেসে বলল
.
- হার্ট থাকলেতো হার্টে অসুখ করবে
.
মিষ্টি অবাক হয়ে বলল
.
- তোমার হা হার্ হার্ট নেই?
.
- উমহুম আই এম হার্টলেস।
.
মিষ্টি চিন্তিত মুখ করে বলল
.
- কিন্তু মাম্মা যে বলে মানুষ ওটা ছাড়া বাচে না? তুমি বেচে আছো কীকরে?
.
- ভূল বলে। এই দেখ আমি দিব্বি বেচে আছি।
.
- আমার মাম্মা মিথ্যে বলেনা হুহ। তুমি জানোনা তোমারও আছে।
.
- কেনো? তোর মা কী এন্জেল?
.
- হুম তাই
.
আদ্রিয়ান হাসল। আদ্রিয়ানের কথাটা আমার বুকে তীরের মতো বিধছে। মিষ্টি নাক ফুলিয়ে বলল
.
- তুমি ওটা যদি আবার খাও না তাহলে আমি, তাহলে আমি...
.
- তাহলে আমিতে আটকে গেলি কেনো? এরপর বল?
.
মিষ্টি আবারো নাকে ঘষা মেরে বলল
.
- আমিহ আমি খামচি দেবো, কামড় দেবো ঘুষিও মারতে পারি।
.
- তুই আমায় মারবি? ( ভ্রু কুচকে)
.
- হ্যা
.
আদ্রিয়ান এবার হেসে দিয়ে বলল
.
- তোর সাইজ দেখ আর আমার সাইজ দেখ।
.
মিষ্টি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান বলল
.
- আর আমি জীবনে একটা মেয়েরই মার, খামচি, কামড় সহ্য করেছি বুঝলি?
.
- তাহলে আমার টাও করবে।
.
- ওই মেয়েটা আমার বউ তাই করেছি। তুই আমার কে রে যে তোরটা করব?
.
মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলল
.
- হুহ।
.
তারপর হাত ভাজ করে মুখ ঘুরিয়ে বসে পরল। আদ্রিয়ানো হাত ভাজ করে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে। দুজনেই দুজনের ওপর বেশ বিরক্ত। আর আমি হাসছি এদের দেখে। আদ্রিয়ানকেও এখন একটা বাচ্চা মনে হচ্ছে। ওদের দুজনের মধ্যকার বন্ডিংটা এক্কেবারে অন্যরকভভাবে শুরু হলো। কেউ কাউকে চেনেনা অথচো কী সুন্দর মিশে গেছে একে ওপরের সাথে। রক্তের সম্পর্কের টান হয়তো একেই বলে যাকে কোনো যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
.
.
To be continue..
.
#infinite_love
.
0
30