গল্প৮

0 15
Avatar for Koly
Written by
4 years ago

প্রতি রাতে ঠিক দুই টার সময় আমার মাথার কাছে থাকা জানালা দিয়ে হাসনাহেনা ফুলের দারুণ এক ঘ্রাণ আসে।কিন্তু ঘ্রাণ টা আসে কিভাবে?আমার জানালার পাশে তো কোন হাসনাহেনা ফুলের গাছই নেই।তাছাড়া আমার জানালার পাশে কেন,সারা বাড়ীতে কোন হাসনা হেনা গাছের অস্তিত্বই নেই।তাহলে কিভাবে আর কোথা থেকে আসে এই ঘ্রাণ?

ঘ্রাণ টা প্রায় অনেক দিন যাবত ই পাই আমি।

প্রায় এক ঘন্টার মত এই ঘ্রাণ টা জানালা দিয়ে আসতে থাকে।জানালা বন্ধ থাকে,তবুও কিভাবে যেন আসে।

প্রথম প্রথম আম্মুকে আমি বিষয় টা জানাইনি।

কিন্তু এখন আর না জানিয়েও উপায় নেই।

দিন দিন ঘ্রাণের মাত্রা টা বেড়েই চলেছে।

আম্মুকে তাই একদিন সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে বসে সব কিছু জানালাম।

আম্মুর সোজা উত্তর।

হাসনা হেনা ফুলের ঘ্রাণ অনেক দূর পর্যন্ত যায় বা আসে।

হয়তো কারো বাড়ীতে এ গাছ আছে।

রাতে এ ফুল ফোটে আর সেখান থেকেই ওই ঘ্রাণটা আসে।

কি জানি,হতেও পারে।

আম্মুর কথা শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম না।

রাতে আবার একই অবস্থা।

কিন্তু দিন দিন ঘ্রাণ টা এতই বেড়ে যাচ্ছে যে আমি আর ঘ্রাণ টা সহ্য করতে পারছিনা।

তাই আম্মুকে বললাম,

তুমি সায়ানকে (ছোট ভাই) নিয়ে আমার রুমে থাকো।

আমি তোমার রুমে যাই।

_কেন কি হয়েছে?

_আমার এত ঘ্রাণ আর সহ্য হচ্ছেনা।তাই তুমি আমার রুমে থাকো।আমি তোমার রুমে যাই।

আম্মু আমার কথা মত তাই করলো।

রাতে আমার রুমে চলে গেলো।

আমি আম্মুর রুমে চলে এলাম।

কিন্তু এ কি!

রাত দুটোয় আবার সেই ঘ্রাণ।আমিতো আজ আম্মুর রুমে শুয়েছি।

তাহলে এই ঘ্রাণ আসে কোথা থেকে?

সেই আগের মতই যত ক্ষণ থাকার সেই ঘ্রাণ থেকে আবার চলে গেলো।

সকাল বেলা আম্মু আমাকে ডেকেই বলা শুরু করলো,

_কই তোর ঘ্রাণ?

আমি তো কোন ঘ্রাণ ই পেলাম না,

না হাসনা হেনার ঘ্রাণ না কচুর ঘ্রাণ।

কি সব আবোলতাবোল বলিস যে তুই।

_কি বলছো আম্মু?তুমি কোন ঘ্রাণই পাওনি?

_না।কোন ঘ্রাণ পাইনি।

_সায়ান,তুই পেয়েছিস ঘ্রাণ?

_নাতো আপু,কিসের ঘ্রাণ কেমন ঘ্রাণ?

_ধুর।

কেউ পায়নি ঘ্রাণ।

অথচ জানো আম্মু,আমি আজ রাতেও ঘ্রাণ পেয়েছি।

তোমার রুমেও এসেছিলো সেই ফুলের ঘ্রাণ।

_আমি এত ধরে আমার রুমে আছি। একদিনও পেলাম না আমি কোন ঘ্রাণ।

আর তুই এক দিন শুয়েই পেয়ে গেলি?

_উফ আম্মু বিশ্বাস করোনা কেন তুমি আমার কথা?

_আচ্ছা করলাম বিশ্বাস।আজ তাহলে আমরা তিন জন এক রুমে থাকবো,এক সাথে ঘুমাবো।

দেখি পাই কিনা কোন ঘ্রাণ।

আম্মুর কথায় আমি,সায়ান, আম্মু এক সাথে শুলাম।

রাত দুই টা।

তীব্র ভাবে আসছে হাসনা হেনার ঘ্রাণ আমার নাকে।

আমি আম্মুকে ডাকছি,

_এই আম্মু,আম্মু।

উঠোতো,শুঁকে দেখো কি সুন্দর ঘ্রাণ।

_উফফ কই ঘ্রাণ?কিসের ঘ্রাণ?আমিতো কোন ঘ্রাণ ই পাচ্ছিনা।

তুই কি স্বপ্নে ঘ্রাণ শুঁকিস নাকি?

_কি বলছো আম্মু?

তোমার নাকে কোন ঘ্রাণই যাচ্ছেনা?

_নাহ একদম না।

_আচ্ছা ঘুমাও তুমি।সরি।

মনে মনে ভাবলাম,আম্মুকে আর এই ভাবে জ্বালানো ঠিক হবেনা।

যেহেতু আমি একাই পাই এই ঘ্রাণ।

আর কেউ ই পায়না।

সেহেতু আমার এই ঘ্রাণের রহস্য একাই বের করতে হবে।

_কি হলো?কি ভাবছিস?

_না কিছুনা।

ঘুমাও তুমি।আমিও ঘুমিয়ে পড়ছি।

হয়তো স্বপ্নেই আমি ঘ্রাণ টা পাই।অযথা তোমাকে এত টেনশন দিলাম এ কয়দিন।

_তুইও ঘুমিয়ে পড়।

কি হচ্ছে আমার সাথে এসব?

আমি একাই কেন এমন ঘ্রাণ পাই?

আম্মু বা সায়ান কেন পায়না?

সারাদিন চিন্তা করে ভেবে পেলাম না কিছুই।

বিকেলে আম্মুকে বলে সায়ানকে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম।

আসলে হাঁটা টা হচ্ছে একটা বাহানা।

আমি তো বের হয়েছি হাসনা হেনা ফুলের গাছ খুঁজতে।

আমাদের বাড়ীর আশেপাশে যত গুলো বাড়ী আছে সব বাড়ীতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম হাসনা ফুল গাছের কথা।

অথচ অবাক করা বিষয় হচ্ছে কারো বাসায়ই কোন হাসনা হেনা ফুল গাছ নেই।

আমি তাদের বাগান বা ছাদ ও চেক করলাম।ঘুরে ঘুরে দেখলাম,

কিন্তু হাসনা হেনা গাছের বালাইও নাই।

সায়ানকে নিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসলাম সন্ধ্যার আগ দিয়ে।

সায়ানকে বলে এনেছি,ও যেন আম্মুকে কিছু না জানায়।

রাত হয়ে গেছে।

আজ রাতে আমি আর ঘুমাইনি।

অপেক্ষায় আছি কখন রাত দুটো বাজবে।

আজ যেন দুটো বাজছেইনা।

আজ আমি আমার রুমে এসে গেছি।

একা শুয়েছি।

আম্মু বলেছিলো তাদের সাথে থাকতে।

কিন্তু আমার যে তাহলে রহস্য উদঘাটন করা হবেনা।

ঘড়ির কাটায় এখন ঠিক রাত ২ টো।

ওই যে ঘ্রাণের আবির্ভাব শুরু।

ঘ্রাণ টা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে চলেছে।

আজ আর আমি ঘরে বসে থাকবোনা,

বাইরে বেড়িয়ে আমার দেখতেই হবে কোথা থেকে আসে ঘ্রাণ।

আমি ধীরেধীরে আমার রুমের দরজা খুললাম।

খুলে বাইরে বেড়ুতেই দেখতে পেলাম,

একটা সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী পরা এক যুবক,

যার দু হাত ভর্তি হাসনা হেনা ফুল।

আর হাত দুটো তার মুখ বরাবর উঁচু করে তুলে ধরা।

সেই কারণে তার সারা শরীর দেখা গেলেও মুখ টা দেখা যাচ্ছেনা।

আর তার হাতের ওই ফুল থেকেই এই ঘ্রাণের উৎপত্তি।

আমি আস্তে আস্তে তার কাছে গেলাম।

চারিদিক তো এত ক্ষণ জোৎস্নায় পরিপূর্ণ ছিলো।

কিন্তু তার সামনে যেতেই কেন চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো?

এখন তার ধবধবে পাঞ্জাবী আর হাসনা হেনা ফুল গুলো ছাড়া আমার চোখে আর কিছুই পড়ছেনা।

আমি খুব মৃদু কন্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

_কে আপনি?

আর সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দাঁপাতে লাগলো,

আমি তাকে ধরার জন্য যেইনা মাটিতে বসে পড়লাম,

সে আমাকে উত্তর দিলো,

আমাকে ছুঁইওনা। ছুঁইওনা আমায়,ছুঁইওনা প্লিজ।

আমি একটা চিৎকার দিয়ে বললাম,

তিশান,কি হয়েছে তোমার?

এই তিশান!তিশান।

তিশান কথা বলো, কথা বলো তিশান,কথা বলো।

চলবে?

আপনারা পড়তে চাইলে পরের পর্ব লিখবো।

#হাসনা_হেনার_ঘ্রাণ।

#প্রথম_পর্ব।

1
$ 0.00
Avatar for Koly
Written by
4 years ago

Comments

Nice story.. donnobad writer. Atto Sundhor golpo upohar dawar jonno. Pore onake valo laglo. Amon sundhor golpo amader make share korben

$ 0.00
4 years ago

This is really a nice story. You can continue the story. I really like this story. Thank you for writing a good story. You can continue the story 😊

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ লেখককে গল্পটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনার সুন্দর গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।আর আপনি প্রতিনিয়ত এমন গল্প লিখতে থাকুন।

$ 0.00
4 years ago

History was nice and amazing. I like this story very much. Keep writing this kind of story. Thank you for your amazing story best of luck.

$ 0.00
4 years ago