গল্প: বড়লোকের মেয়ে
পর্ব: ৩
।।
.
.... ঋতু কাঁদতে কাঁদতে চাপা কন্ঠে বলল... ঠিক আছে ।
।
.... নীলকে তারা ছেড়ে দিলো আর নীল বাসার উদ্দেশ্য যাত্রা করল। এদিকে ঋতু মনে মনে বলছে....
।
- ভাইয়া আজ তোমরা যেটা করলে নীলের সাথে সেটা মোটেও ভালো করলে না।
এমনিতেই আমি অনেক বড় অপরাধী হয়ে আছি ওর কাছে আর আজকে যেটা হলো তার নীল ক্ষমা করবে বলে আমার মনে হয় না। ভাইয়া তোমাদের ক্ষমতা আছে বলেই যে কাউকে এমন করতে পারো না। কথা গুলো মনে মনে বলল ঋতু আর চোখ
থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝরে পরল।
কিছুক্ষন পর সব কিছু ঠিক হয়ে গেলো। কিন্তু ঋতুর মনের মাঝে যে ঝড়ো হাওয়া
বয়ে যাচ্ছে সেই ঝড়ো হাওয়া কোনভাবেই
থামছে না। মনে হচ্ছে হৃদয় টা ভেঙে চুড়ে খান খান হয়ে যাচ্ছে অনুতাপে। ঋতুর
মনের কথা এমনিতেই ছেলেটা আমাকে
ক্ষমা করেনি তার উপর আজ আমাদের
বাসায় যা ঘটলো এখন ও আর ক্ষমা করবেই না। না না না এই অপরাধের বোঝা আমি মাথায় বয়ে বেরাতে পারব না। এমন নানান রকম কথা ভাবতে লাগলো ঋতু।
।
... এদিকে নীল তার বাসায় এসে গেছে
তার মা তাকে দেখে দৌড়ে আসলো আর
নীলের গালে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল
তার মা। মায়ের কান্না দেখে নীল বলল...
।
- ঐ জানু তুমি না অনেক ভালো আর কিউটি তাহলে এভাবে কাঁদছো কেনো? (নীল তার মা কে ভালোবেসে জানু আর কিউটি বলে ডাকে কারন তার মা নাকি সব মায়ের থেকে কিউট)
।
- বাবা তোর কিছু ক্ষতি করেনি তো ওরা?
।
- আরে মা না কোন ক্ষতি করেনি আমার।আমার আবার কি ক্ষতি করবে?
।
- তাহলে কেনো ওরা তোকে এভাবে ধরে নিয়ে গেলো?
।
_.......? (নিশ্চুপ)
।
.... মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে নীল কিছুটা
থমকে গেলো। ভাবছে কি উওর দিবো।
।
- মা খুব খিদে পেয়েছে চলো তো খেতে
দাও?
।
- আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে?
।
- আরে জানু আমার। কিচ্ছু না চলোতো?
।
- আরে আরে কি করছিস ছাড় বলছি ছাড় আমাকে?
।
.... নীল আর কোন কথা না বলে তার মাকে কোলে তুলে নিলো। আর তারপর ঘরে চলে গেলো মা কে নিয়ে। প্রায়ই তার মাকে কোলে তুলে নীল। নীল ও তার মা কে অনেক ভালোবাসে। নীল তার মাকে
খাটের পাশে বসালো আর তারপর নীল খাটে শুয়ে পড়ল.....
।
- কি হলো বসে আছো যে? (নীল)
।
- তো কি করব? (মা)
।
- আরে কান্না টা বন্ধ করে যাও খাবার
নিয়ে আসো আর আমাকে খাইয়ে দাও?
।
... নীলের মা উঠে খাবার আনতে গেলেন
রান্না ঘরে। আর নীল শুয়ে শুয়ে মেয়েটার কথা ভাবছে মানে ঋতুর ।
নীল নিজেকে একটু অপরাধী মনে করল।
নীল ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে ঋতুর
দিকে আর তার চোখ লাল হয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। নীল ভাবছে একটা মেয়ে এতো সুন্দর হয় কি করে। সে আমার দিকে তাকালে আমার এমন হয় কেনো। আমি আবার মেয়েটার প্রেমে ট্রেমে পরে গেলাম না তো? আরে না না এ কি সব ভাবছি আমি এ হতে পারে না। এমন সময় নীলের ভাবনার ইতি ঘটিয়ে দিলো তার মা....
।
- এই যে নিন হা করুন? আর কত খাইয়ে দিতে হবে আপনাকে? এবার একটা বিয়ে করে বউয়ের হাতে খাবেন? (নীলের মা)
।
- আচ্ছা মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো? কি চোখ, কি তাকানোর চাহুনি, মনে হচ্ছে পরীইইইইইই...!
।
- ঐ কি সব বাজে বকছিস? কোন মেয়ে কার কথা বলছিস?
।
.... মায়ের কথা শুনে ঘোর কাটলো নীলের। মনে মনে বলছে এই রে কি হতে কি বলে ফেললাম আমি, তারপর তোতলাতে তোতলাতে বলল....
।
- না না মা কই কিচ্ছু নাতো! এমনি ই
বললাম আর কি?
।
- হইছে এবার নে হা কর আমার অনেক কাজ আছে?
।
..... নীল তার মায়ের হাতে খেতে লাগল আর শুধু মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলো। ঋতুকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে মায়ের হাতে
কামর বসিয়ে দিলো নীল..
।
- ঐ কি হয়েছে তোর? হাতে কামর দিলি কেনো?
।
- না না আসোলে কেমন করে যে কামর
দিলাম...... ! (একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল)
।
.... রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছে নীল
এমন সময় একটা অপরিচিতা একাউন্ট হতে রিকুয়েস্ট আসলো নীলের কাছে। নীল ভাবছে এটা কি গ্রহন করব নাকি করব না শেষে গ্রহন ই করল। আর সাথে সাথে
মেসেজ আসলো.....
- আই এম সরি
নীল রিপ্লে করল......
- কিন্তু কেন? আপনি আমাকে সরি বলছেন কেনও? আপনি কে
- আমি রিতু.
।
...... যখন মেয়েটি বলল আমি ঋতু তারপর সাথে সাথে মেয়েটিকে ব্লক করলো নীল। আর ঘুমিয়ে গেলো।
ঋতু ওপাশ থেকে মোবাইলের স্কিনের উপর তাকালো আর দেখতে নীল তাকে ব্লক মেরে দিছে
।
....ঋতুর আর বুঝতে বাকি রইলো যে আমাকে ব্লক করা হয়েছে। ঋতুর অনেক খারাপ লাগলো নীল ব্লক করাতে। সে নিজেকে আরো বেশি অপরাধী মনে করলো? ঋতু রাতে জেগে জেগে ভাবছে কি করা যায় অনেক চিন্তাধারার পর ঋতু
সিদ্ধান্ত নিলো কলেজ চেঞ্জ করার। নীল
যে কলেজে পরে সেই কলেজে পড়ার তবেই
এর কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে। বাবা
মাকে অনেক বোঝানোর পর রাজি হলেন।
আর সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করলো
ঋতু। এখন শুধু কিছু সময় অপেক্ষা....
।
..... ৭ দিন পর......
......প্রতিদিনের মতো আজকে ও নীল
ক্লাসে দাড়িয়ে আছেন। এটা প্রতিদিনের রুটিন ।নীল দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছে
মেয়টাকে কি ব্লক করাটা আমার ঠিক
হয়েছে। সেদিনের পর আমার কাছে ও
আসেনি আর কোন প্রকার যোগাযোগ ই
করেনি। এসব ভাবতে লাগল আনমনে এমন সময় কে যেনো বলে উঠল....
।
- আসতে পারি ম্যাডাম?
।
.... মেয়েলি কন্ঠ আর কন্ঠা টা ও কেমন
চেনা চেনা লাগছে নীলের। তারপর
দরজার সামনে চোখ মেলে নীল হাজার
ভোল্টেজের ইলেকট্রিক শকড খেলো। আর বলছে মনে মনে
- আরে এ তো সেই মেয়েটা যে আমার
কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো আর পরে আমি
ক্ষমা চেয়েছি। এমন সময় ম্যাডাম বলে
উঠলেন....
।
- জ্বি আসো?
।
...... ঋতু ক্লাসের ভিতর প্রবেশ করলো আর ব্রেঞ্চে গিয়ে বসল। ক্লাসের সকলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ঋতুর দিকে শুধু মাত্র নীল ই তাকাচ্ছে না তার দিকে। সত্যি বলতে ঋতু অনেক সুন্দর দেখতে যে কোন ছেলে পাগল হয়ে যাবে। ক্লাসের বাকি মেয়েরাও মনে হয় তার উপর ক্রাশ খেয়েছে নাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকে? ক্লাসের ম্যাডাম বিষয়টা বুঝতে পেরে বললেন
।
- ব্লাকবোর্ড এর দিকে তাকাও? (সবাইকে
বলল)
।
.... ম্যাডামের কথা শুনে সবাই তাকালো
ব্লাকবোর্ড এর দিকে। ঋতুর মাথায় একটা জিনিস আসছে না আর তা হলো ক্লাসের
সবাই বসে ক্লাস করছে আর নীল ই
দাড়িয়ে। আর মনে মনে বলল সেদিন ক্লাস এসেও দেখছি দাড়িয়ে থাকতে আর আজকেও দেখতেছি দাড়িয়ে থাকতে ব্যাপার টা কি পায়ে আবার কোন সমস্যা নেই তো ছেলেটার আরে না না পায়ে সমস্যা হলে তো হাটতেই পারবে না আর ও তো হাটতে ও। পারে তাহলে কাহিনি টা কি
।
.. ঋতু নীলের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে আর নীল সেটা লক্ষ্য করে
অনেক লজ্জা বোধ করছে। কারন সে ই
দাড়িয়ে আছে দেখে।
।
.... এদিকে ম্যাডাম ভাবছেন কি ব্যাপার
নীল তো প্রতিদিন ই ৩০ মিনিট যাওয়ার
পর আমাকে বসার জন্য বলে আর আজ ৪০ মিনিট হয়ে গেলো তবুও বসছে না।
তারপর ম্যাডাম নীল কে বসতে বলল আর
নীল ও ভদ্র ছেলের মতো বসে পরল.....
।
বলতে গেলে একরকম নিস্তব্ধতায় ক্লাস
শেষ হলো আর নীল তো একবারেই পিন ড্রপ সাইলেন্ট হয়ে ছিলো।
।
... ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে নীল
ম্যাডামের পিছু পিছু গেলো আর ঋতু নীল
কে ফলো করলো। নীল পিছন থেকে ডাক দিলো ম্যাডাম অথ্যাৎ তার মা কে....
।
- মা....? (নীল)
।
.... নীলের মা পিছন ফিরে বলল....?
।
- কি হয়েছে?
।
- কিছু টাকা হবে?
।
- কেনো টাকা কি করবি?
।
- নানা মানে লাগতো!
।
- কারো প্রেমে পড়লি না তো আবার যে
এমন ভাবে এখানে টাকা চাচ্ছিস?
।
-ঐ জানু প্রেমে পরেছি তো?
।
- তা শুনি মেয়েটা কে?
।
- কে আবার আমি যাকে জানু বলে ডাকি তার?
।
- হইছে আর আমার প্রেমে পড়তে হবে না পারলে কোন সুন্দরীর প্রেমে পর?
।
- তোমার মতো সুন্দরী একটাও নেই তাই তো তোমার প্রমে পরেছি?
।
.... নীলের মা নীলের কথা শুনে বলছে পাগল ছেলে একটা। নীলের মা ব্যাগের
ভিতর দেখলো একটা ই মাত্র ৫০০ টাকার নোট আছে আর সেটা নীলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল......
।
- এই নে ধর?
।
- আমার এতো লাগবে না ৫০ টাকা হলেই হবে?
।
- আচ্ছা এইটা রাখ তোর হাতখরচ চালিয়ে নিস?
।
- মা তুমি আমাকে ৫০ টাকা দাও?
।
- বাবা শোন না বলছিলাম আমার কাছে খুচরা নেই। তুই পুরোটাই রাখ তোর কাছে?
।
....... নীল তার মায়ের কথা শুনে মায়ের হাত থেকে ব্যাগ টা কেড়ে নিয়ে দেখল ব্যাগে আর কোন টাকা নেই। এই নোটটাই
ছিলো শুধু আর সেটাই এগিয়ে দিয়েছে.....
।
- মা তোমার কাছে তো টাকা নেই আর তবুও তুমি শেষ টাকাটা আমায় দিয়ে দিতে চাইলা?
।
- আরে পাগল তুই তো আমার সব কিছু তোকে দিবো না তো কাকে দিবো বল?
।
- না মা আমি এ টাকা নিতে পারব না। এই টাকা নিলে তুমি বাসায় যাওয়ার টাকা পাবে না। তার থেকে বরং আমি হেটে
হেটে চলে যাচ্ছি ....
.
Next part coominG Soon..
0
10