এক টুকরা জান্নাত৭

0 7
Avatar for Kobita
Written by
4 years ago

#এক টুকরো জান্নাত#

পর্ব- ৭

,,,,,রফিক সাহেবঃ তাহলে তোমার চোখে পানি কেন? তোমার চোখ মুখ ফোলা কেন?

জান্নাতঃ আসলে প্রতিদিন আমি এই সময় মা বাবার সাথে নামাজ আদায় করিতো।তাই তাদের কথা খুব মনে পড়ছে।তাই একটু কান্না চলে এসেছে।

রফিক সাহেবঃ মন খারপ করনা। দুদিন বাদে তো সেখানে যাবেই তাদের সাথে দেখা করতে।রিয়ান বৌমা যখন নামাজ পড়তে ডাকছে তাহলে উঠছিস না কেন? যা ওজু করে আয় নামাজ পড়বি।আর শোন আজকের ঘটনার যেন পুনঃরাবৃত্তি না হয়।কি ভেবেছিস আমি কি কিছু বুঝিনি? আজ কিছু বললাম না শুধু জান্নাত মায়ের কারনে।যে জ্ঞান কোনদিন অর্জন করতে পারনি তা জান্নাত মায়ের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা কর।

এই বলে রফিক সাহেব চলে গেলেন।

জান্নাত আর কোন কথা না বলে নামাজে দাড়িয়ে গেল।রিয়ান আবার শুয়ে পড়ল আর ভাবল এই মেয়ে বাবার কাছে মিথ্যা বলল কেন? আজ যদি সত্যি কথা বলে দিত তাহলে বাবা আমাকে শেষ করে দিত।তবুও বাবা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।যাই হোক বাবা আমার গলায় এমন এক মেয়েকে ঝুলিয়ে দিয়েছে এর জ্বালায় শান্তিতে একটু ঘুমান ও যাবে না।আবার দেখ ভাল সাজার চেষ্টা করছে।যতসব ফকিরনি কোথাকার। এসব ভাবতে ভাবতে রিয়ান আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

জান্নাত নামাজ শেষে হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন সবার জন্য।বিশেষ করে তার স্বামীর জন্য আল্লাহ যেন তাকে হেদায়াত দান করে।মোনাজাত শেষে চেয়ে দেখল রিয়ান আবার ঘুমাচ্ছে। জান্নাতের খুব ইচ্ছে হচ্ছে একটু কোরআন পড়ার কিন্তু এ বাড়িতে কোন কোরআন আছে কিনা কে জানে।তার নিজের কোরআন সে বাবার বাসায় রেখে আসছে।সে প্রতিদিনই কোরআন পড়ত।তার স্বপ্ন ছিল প্রতিদিন সকালে তার প্রিয় মানুষটির সাথে সকালে উঠে নামাজ আদায় করবে এবং নামাজ শেষে দুজনে মিলে কোরআন তেলাওয়াত করবে।কিন্তু আল্লাহ তার কপালে এ কেমন লোক লিখল যে নামাজই পড়েনা।যাক আল্লাহ যা করে বান্দার মঙ্গলের জন্যই করে।যা আজ আপাতত দৃষ্টিতে খারাপ কাল তা ভালোও তো হতে পারে।

জান্নাত রুম থেকে বের হয়ে দেখল তার শ্বশুড় ড্রইং রুমে বসে চুপিচুপি কোরআন পড়ছেন।জান্নাত তার পাশে গিয়ে বসল।কতক্ষণ পরে রফিক সাহেবের কোরআন পড়া শেষ হলো।

রফিক সাহেবঃ কি ব্যপার মা তুমি সকাল সকাল রুম থেকে বের হয়েছ কেন।নামাজ শেষে একটু ঘুমিয়ে নিতে।

জান্নাতঃ না বাবা ঘুমানোর অভ্যাস নাই।আচ্ছা বাবা বাসায় কি শুধু এক কপিই কোরআন শরিফ নাকি আরও আছে?

রফিক সাহেবঃ নারে মা এই এক কপিই।এটা আমার মায়ের ছিল।মা প্রতিদিন সকালে কোরআন তেলাওয়াত করে আমাদের শুনাতেন।সে মারা যাওয়ার পর আমিই পড়ি।আর কেউতো পড়েনা তাই আর কেনা হয়নি।তুমি কি পড়তে চাও? তাহলে আজ আসার সময় তোমার জন্যও কিনে নিয়ে আসব।

জান্নাতঃ না থাক বাবা।আমার এক কপি আছে ওই বাসায়। ওখানে গেলে নিয়ে আসব।

রফিক সাহেবঃ ঠিক আছে মা।তুমি যা ভাল মনে কর।

জান্নাতঃ বাবা আপনি সকালে কি নাস্তা করবেন।আমাকে বলেন আমি বানিয়ে দেই।

রফিক সাহেবঃ থাক না মা।তুমি আমার বাড়িতে কেবল নতুন এসেছো।এখনই তোমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে হবে না।আমি বাহিরে নাস্তা করে নিব।তুমি গিয়ে একটু রেস্ট নাও।

জান্নাতঃ বাবা আপনি না আমাকে মা ডাকেন। তাহলে আপনার মা কি আপনাকে বাসা থেকে না খেয়ে বের হতে দিতেন?

রফিক সাহেব দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

রফিক সাহেবঃ মা মারা যাওয়ার পর আর কখনও বাসায় নাস্তা করা হয়নি।বাসায় কবে শেষ নাস্তা করেছিলাম মনে নেই।কারন কাজের মেয়েটা সব কাজ শেষ করে রাতে বাসায় চলে যায়।আর আসে সকাল ১০ টায় যখন আমার স্ত্রী সন্তানদের ঘুম ভাঙে।

জান্নাতঃ আজ থেকে আপনি বাসায় নাস্তা করবেন।আর যা খেতে মন চায় আমাকে বলবেন।আপনার মা সবকিছু এনে আপনার সামনে হাজির করবে ইনশাহআল্লাহ।

রফিক সাহেবঃ আচ্ছা ঠিক আছে মা।

জান্নাত কথা শেষ করে রান্নাঘরে গেল। সকালের জন্য রুটি ভাজি বানাল আর ফ্রিজ থেকে মাছ সবজি বের করে রান্না করল এবং ভাত রান্না করল।রফিক সাহেব গোসল করে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে খেতে আসলেন।এসে দেখলেন টেবিলে তার সব খাবার সাজানো।খুশিতে তার মনটা ভরে গেল।

রফিক সাহেবঃ মা তুমি কি তরে জানলে সকালের নাস্তায় আমি রুটি ভাজি পছন্দ করি?

জান্নাতঃ আসলে আমার বাবাও খুব পছন্দ করে তাই ভাবলাম হয়ত আপনারও খুব পছন্দ হবে।আর বাবা আমি ভাত, মাছ এবং সবজী রান্না করেছি।সব আমি টিফিন বক্সে দিয়ে দিচ্ছি দুপুরে খাবেন।

রফিক সাহেবের চোখে জল চলে আসলো।

জান্নাতঃ বাবা আপনি কাঁদছেন কেন?

রফিক সাহেবঃ এভাবে আমার মা আমাকে অনেক আদর করে খাওয়াত।মা মারা যাবার পর সবসময় বাহিরেই খাবার খেয়েছি।কেউ আমার জন্য খাবার তৈরি করে দিয়ে দেয়নি মা।

জান্নাতঃ আজ থেকে আর আপনি বাহিরে খাবেন না।আমিই প্রতিদিন খাবার তৈরি করে দেব।

রফিক সাহেবঃ মা তুমিও বস একসাথে নাস্তা করি।

জান্নাতঃ না বাবা আমি পরে খাব

রফিক সাহেবঃ আমি জানি মা রিয়ান খায়নি বলে তুমি খাবে না।কিন্তু ওরা যখন ঘুম থেকে উঠবে তখন প্রায় দুপুর হয়ে যাবে।এত বেলা কি তুমি না খেয়ে থাকতে পারবা?

জান্নাতঃ বাবা সমস্যা নেই। আমি পারব।

রফিক সাহেবঃ আচ্ছা ঠিক আছে মা

রফিক সাহেব মনে মনে ভাবছে এরা কি এই মেয়েটার এই ভালবাসার মূল্য দিবে।খাওয়া শেষ করে সে অফিসে চলে গেল।

সকাল ১০ টা।কাজের মেয়ে এসেছে।এসে দেখে সকালের রান্না শেষ।তাই সে দুপুরের জন্য সব গোছাতে লাগলো।

জান্নাতঃ তোমার নাম কি?

-আমার নাম ময়না।

জান্নাতঃ তুমি কি করবে দাও আমি সাহায্য করি।

ময়নাঃ না থাক ভাবি আমি পারব।আপনাকে কিছু করতে হবে না।

বাসার সবাই ঘুম থেকে উঠেছে।রিয়ান নাস্তা করার জন্য টেবিলে আসলো। জান্নাত রুটি ভাজি টেবিলে সাজিয়ে দিল।এটা দেখে সে চেঁচামেচি শুরু করে দিল।

রিয়ানঃ মা মা এসব কি নাস্তা টেবিলে? এসব কি আমি খাই?

জান্নাতঃ কেন? কি হয়েছে?

ছেলের চেঁচামেচি শুনে রেহানা বেগম রুম থেকে বের হয়ে আসলেন।

রেহানা বেগমঃ কিরে কি হয়েছে? সকাল সকাল এত চেঁচামেচি কেন?

রিয়ানঃ দেখ এসব কি?

রেহানা বেগমঃ তোর বাবা সখ করে ফকিরনীর মেয়েকে বৌ করে এনেছে।তার কাজ কর্ম তো ফকিরনী টাইপেরই হবে।ময়না তাড়াতাড়ি আমাদের নাস্তা বানা।

ময়না তাড়াতাড়ি তাদের জন্য নাস্তা বানালো এবং সেগুলো টেবিলে সাজিয়ে দিল।তারা সবাই নাস্তা করে যে যার মত বেরিয়ে গেল।জান্নাত খেয়েছে কিনা কেউ জিজ্ঞেস ও করল না।সবার খাওয়া শেষে জান্নাত খেয়ে নিল এবং মনে মনে ভাবল মন খারাপ করে...

চলবে....

1
$ 0.00
Avatar for Kobita
Written by
4 years ago

Comments