মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন এবং সম্পূর্ণ শরীরের মেকানিজমও এখনও বিজ্ঞানের কাছে রহস্যের সৃষ্টি করে। আমরা আমাদের নিজের শরীরের ব্যাপারেই বা কতটুকু জানি? আমরা যারা বায়োলজি লাভার, তারা হয়তো অন্যান্যদের থেকে অনেকটাই বেশি জানি, কিন্তু সবাই না! যাইহোক, এতকিছু ভুমিকা না করে সরাসরি মেইন টপিকে যাই। আজকে একটু টেক রিলেটেড টপিক থেকে বেরিয়ে অন্য ইন্টারেস্টিং কিছু নিয়ে আলোচনা করা যাক। আজকে আলোচনা করতে চলেছি আমাদের অর্থাৎ মানুষের শরীর সম্পর্কে ১০ টি মজার ফ্যাক্ট নিয়ে, যেগুলো হয়তো আপনি জানতেন না!
১। মানুষের ব্রেইন এতটা এনার্জি জেনারেট করতে পারে যা একটি ছোট লাইট বাল্ব জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট। আমরা যখন জেগে থাকি, তখন আমাদের ব্রেইন সবসময় ১৫ থেকে ২০ ওয়াট এনার্জি জেনারেট করতে থাকে। আর এই পরিমান এনার্জি একটি লো পাওয়ারড এলইডি লাইট বাল্ব জালানোর জন্য যথেষ্ট। এনার্জি জেনারেট করার পাশাপাশি আমাদের ব্রেইন র্যান্ডম চিন্তা জেনারেট করে এবং তা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০,০০০ (প্রায়) পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর আরেকটি কথা, আপনি হয়তো এমন একটি গুজব শুনে থাকবেন যে মানুষ তার ব্রেইনের সর্বোচ্চ ১০% ব্যাবহার করতে পারে। কিন্তু এটি সত্যি নয়! এমনকি মানুষ ঘুমানোর সময়ও তার ব্রেইনের অনেকটা ব্যাবহার করে, যা ১০% এর অনেক বেশি!
২। মানুষের দাঁত একটি শক্তিশালী হাঙরের দাঁতের মতোই শক্ত। হাঙরের মুখের প্রত্যেকটি চোয়ালে ১৫ টি করে দাঁতের সারি থাকে। হাঙর মুলত জন্মই নেয় শক্ত দাতসহ যেগুলোর সাহায্যে বাচ্চা হাঙররা নিজেদেরকে প্রোটেক্ট করতে পারে। আর এখানে মজার ফ্যাক্টটি হচ্ছে তাদের দাত এবং আমাদের দাত একইরকম স্ট্রং! আর আপনি কি জানেন আমাদের শরীরের সবথেকে শক্ত পার্টটি কি? আমাদের দাতের ওপরের দিক বা গোড়ার দিক যে এনামেল দিয়ে তৈরি এই পার্টটিই হচ্ছে আমাদের শরীরের সবথেকে স্ট্রং পয়েন্ট!
৩। আপনার পাকস্থলির অ্যাসিড যদি আপনার শরীরের স্কিনের সংস্পর্শে আসে, তাহলে এটা আপনার স্কিনে একটি ছোট গর্ত করে দিতে পারে! হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মানুষের পাকস্থলির একটি সাধারন উপাদান। আমাদের পাকস্থলিতে যে টাইপের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে তা ইন্ডাসট্রিয়াল গ্রেডের যা এমনকি মেটালকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। তবে মানুষের পাকস্থলিতে এই অ্যাসিড মুলত খাবারে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলোকে মেরে ফেলার কাজ করে। এছাড়া এই অ্যাসিড একটি স্পেশাল এনজাইমকে সাহায্য করে যেটি আমাদের খাবার গ্রাইন্ড করতে সাহায্য করে যাতে আমাদের শরীরে সেটি সহজে হজম হতে পারে।
৪। মানুষ সর্বোচ্চ প্রায় ৭০০০ রকমের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন তৈরি করতে পারে! তবে সায়েন্টিস্টদের মতে, মানুষের প্রধান ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ৪ টি। খুশি, দুঃখিত, বিস্মিত, ভীত এবং রাগান্বিত। এগুলো প্রধান ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন হলেও এগুলোকে মিলিয়ে আরও অসংখ্য রকমের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন তৈরি করতে পারে মানুষ। এই প্রধান ৪ টি ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের ওপরে ভিত্তি করেই আরও প্রায় ৭০০০ রকমের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন তৈরি করতে পারি আমরা।
৫। মানুষের চোখের রেজুলেশন টেকনিক্যালি বলতে গেলে ৫০০ মেগাপিক্সেলেরও বেশি। এই হিসাবে মানুষের চোখ যেকোনো মডার্ন স্মার্টফোন ক্যামেরার তুলনায় প্রায় ৬০-৭০ গুন বেশি প্রিসাইজ এবং যেকোনো মডার্ন ক্যামেরা সিস্টেমের তুলনায় অনেক অনেক বেশি ডিটেইলস ক্যাপচার করতে সক্ষম। আর আমাদের চোখ প্রায় ১০ মিলিয়ন আলাদা রঙ-এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার ক্ষমতা রাখে!
৬। আপনি যতক্ষন জেগে থাকেন, তার প্রায় ১০% সময়ই আপনার চোখ বন্ধ থাকে। এই ১০% সময় হচ্ছে সেই সময়গুলোর যোগফল, যেসময় আপনি চোখের পলক ফেলেন। একজন অ্যাভারেজ মানুষ মিনিটে ১৫ বার চোখের পলক ফেলে থাকেন। আর মেয়েরা মিনিটে প্রায় ৩০ বারের মতো চোখের পলক ফেলেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সম্পূর্ণ চোখ বন্ধ থাকার টাইমটি ওয়েকিং টাইমের সর্বোচ্চ ৩২% পর্যন্তও হতে পারে। তবে বাচ্চারা এত বেশি চোখের পলক ফেলে না। ছোট বাচ্চারা মিনিটে মাত্র কয়েকবারই চোখ বন্ধ করে বা পলক ফেলে।
৭। কিডনি যে শুধুমাত্র পানি ফিল্টার করে তা নয়। আপনার কিডনি আপনার শরীরের সমস্ত রক্ত ডেইলি প্রায় ২৫ বার ফিল্টার করে যা সব মিলিয়ে প্রায় ৪.৭৫ গ্যালন পরিমান রক্ত। আর যেসব রক্ত ফিল্টার করা হয়, তার মাত্র ১% ইউরিনে পরিনত হয়। বাকিটা আবার আপনার শরীরে ডিসট্রিবিউট করে দেওয়া হয়। আরেকটি ব্যাপার, মানুষের কিডনি কিন্তু খুব ছোট। একজন প্রাপ্তবয়স্ত মানুষের হাত মুষ্টিবদ্ধ করলে যেমন সাইজ হয়, প্রায় তেমন সাইজের। এখন ভেবে দেখুন, মানুষের কিডনিতে জন্মানো সবথেকে বড় পাথরটি ছিলো ২.৫ পাউন্ড ওজনের এবং এর সাইজ ছিলো একটি নারকেলের সমান!
৮। আমাদের শরীরের কিছু অ্যাটম হচ্ছে স্টারডাস্ট, যেগুলো বিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরনো। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, শুধুমাত্র মানুষের শরীরেই বিলিয়ন বছরের পুরনো স্টারডাস্ট থাকে না। বরং আমরা আমাদের সামনে যা কিছু দেখি, যেমন গাছপালা, খাবার, গাড়ী, বিড়াল, কুকুর সবকিছুর শরীরেই ডিসট্যান্ট কোন বিলিয়ন বছর পুরনো নক্ষত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্টস আছে। মুলত নক্ষত্র যখন এক্সপ্লোড করে তখন তারা যেসব ম্যাটেরিয়ালের তৈরি সেগুলোকে ইউনিভার্সের দূরের বিভিন্ন কোনায় শুট করে। এভাবেই এই কনাগুলোর সৃষ্টি হয় যেগুলোকে স্টারডাস্ট বলা হয়।
৯। একজন অ্যাভারেজ মানুষের লাইফটাইমে তার হার্ট প্রায় ৫৩ মিলিয়ন গ্যালন রক্ত পাম্প করে। এইজন্যই মানুষের দেহের সবথেকে হার্ড ওয়ার্কিং অরগ্যান হচ্ছে মানুষের হার্ট। মানুষের হার্ট প্রত্যেকদিন প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার বার বিট করে। আর একজন মানুষের হার্ট তার সম্পূর্ণ লাইফটাইমে প্রায় ৩০০ কোটি বার বিট করতে পারে।
১০। শুনে আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, তবে মানুষের হার্টবিট তার শোনা মিউজিকের বিট-এর বা ছন্দের সাথে সিংক করতে পারে! রিসেন্ট একটি মেডিক্যাল রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষের হার্টবিট তার শুনতে থাকা এবং উপভোগ করা মিউজিকের Rhythm এর সাথে বা বিট-এর সাথে সিংক হয়। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যি! আর এটা মিউজিসিয়ান এবং মিউজিক লাভার সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে!