আইফোন ১২ এর সঙ্গে চার্জার না থাকা কী পরিবেশ বান্ধব? না টাকা কামানো?

1 18
Avatar for King74
Written by
3 years ago

আমাদের নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যাগগুলো যেভাবে পরিবেশে পলিথিনের বর্জ্য বাড়িয়ে তুলছে, তেমনি অব্যবহৃত এবং ফেলে রাখা ফোনের মত ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলোও প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের (ই-বর্জ্য) তালিকায়। 

মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের তৈরি আইফোনের নতুন সংস্করণ নিয়ে সবসময়ই দারুণ উত্তেজনায় থাকেন মুঠোফোন ব্র্যান্ডটির অনুরাগীরা । সম্প্রতি এসেছে এর নতুন মডেল-আইফোন ১২। কিন্তু, প্রথমবারের মত এতে থাকছে না হেডফোন ও চার্জার। তাতেই উৎসাহ কমে শুরু হয়েছে ক্রেতাদের কঠোর সমালোচনা; এখন যে এসব আলাদা করে বাড়তি খরচে কিনে নিতে হবে!   

ফলে অনেকেই ভাবছেন এটি কেবল অ্যাপলের বাড়তি আয়ের ধান্দা। হেডফোন আলাদা কেনা না লাগলেও, চার্জার ছাড়া চলবে কী করে! 

তবে প্রযুক্তি জায়ান্টটির দাবি, তাদের এমন পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে কার্বন ফুটপ্রিন্ট বা গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর মধ্য দিয়ে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসের দর্শন। 

এ বছরের শুরুতে স্যামসাংয়ের কাছ থেকে কিছুটা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও, অ্যাপলই প্রথম স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক যারা প্রথম বাজারে আনলো চার্জারবিহীন ফোন।

বিতর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে, এটি অ্যাপলের অর্থ লাভকরী উপায়েরই একটি অংশ, তবু এমন উদ্যোগ যে পরিবেশের ওপর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। 

অস্ট্রেলিয়ানদের কথাই ধরুন। তারা গড়ে প্রতি ১৮-২৪ মাসে নতুন মুঠোফোন কিনে থাকে। ধারণা করা যায় যে, এ মুহূর্তে শুধু এক অস্ট্রেলিয়াতেই প্রায় আড়াই কোটি ফোন চার্জারসহ অব্যবহৃত পড়ে আছে। 

আমাদের নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যাগগুলো যেভাবে পরিবেশে পলিথিনের বর্জ্য বাড়িয়ে তুলছে, তেমনি অব্যবহৃত এবং ফেলে রাখা ফোনের মত ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলোও প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের (ই-বর্জ্য) তালিকায়। 

তথ্য-প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের পরিমাণ প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে।

পুনর্ব্যবহারে আপত্তি কোথায়:

এক দশক আগে অস্ট্রেলিয়াতে ব্যক্তি পরিসরে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, যার শুরুটা হয়েছিল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে। একমাত্র নিউ সাউথ ওয়েলস ব্যতীত আজ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি রাজ্য এবং অঞ্চল এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে। আশা করা হচ্ছে, নিউ সাউথ ওয়েলসও ২০২১ এর ভেতরে এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবে। 

২০০৮ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া পলিব্যাগ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার পর থেকে, রাজ্য সরকারের অনুমান অনুযায়ী,  তারা প্রতি বছর ৮,০০০ কেজির মত সামুদ্রিক বর্জ্যের উৎপাদন কমাতে সক্ষম হয়েছে- যা সার্বিকভাবে 4,000 টনের ওপর গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে দিয়েছে।

পলিথিনের ব্যবহার সীমিত করায় পরিবেশের কল্যাণ তো পরিষ্কার। এখানে কেউ প্রশ্ন করছে না, ক্ষোভে ফেটে পড়ছে না। তাহলে ই-বর্জ্য কমাতে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে আমাদের বাঁধছে কোথায়! 

সময় এসেছে ই-বর্জ্য নিয়ে সচেতন হবার:

সহজ ভাষায় ই-বর্জ্য হলো বিভিন্ন নষ্ট, বাতিল, অব্যবহার্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি। মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার, চার্জার, কীবোর্ড, প্রিন্টার, ইয়ারফোন সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। 

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪.৭৮ বিলিয়ন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬১.২ শতাংশ। শুধু মোবাইল ফোনের চার্জার থেকে প্রতি বছর ৫১ হাজার টনের ওপর ই-বর্জ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। 

ব্যবহারকারীরা যদি প্রতিবার নতুন ফোনের সাথে চার্জার না কিনে পুরনো ফোনের চার্জারটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে তবে এই বিপুল পরিমাণ মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছ থেকে পরিবেশ দারুণভাবে উপকৃত হবে। সকল প্রযুক্তি কোম্পানীগুলো একসাথে এগিয়ে এলে চার্জারের উৎপাদন কমে আসবে আবার প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণও মাত্রা ছাড়াবে না। 

পৃথিবীজুড়ে ই-বর্জ্যের পরিমাণ এবং একাধিক চার্জার ব্যবহার নিয়ে ক্রেতাদের হতাশার কথা ভেবে, ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট এখন মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ই-বুক রিডার, স্মার্ট ক্যামেরা এবং অন্যান্য ছোট বা মাঝারি আকারের বৈদ্যুতিক ডিভাইসের জন্য একটিমাত্র মানসম্পন্ন চার্জার (Standardised chargers) প্রচলনের জন্য চাপ দিচ্ছে।  

এতে ব্যবহারকারীকে ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রের জন্য আলাদা করে অনেকগুলো চার্জার কিনতে হবে না। 

ফোন কোম্পানিগুলো নিত্যনতুন মডেলের ফোন আনার মধ্য দিয়ে চায় ক্রেতাদের কাছে আরো বেশি গ্রহণীয় হয়ে উঠতে;  মোবাইল ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে।

অ্যাপলের চার্জারবিহীন ফোনের মধ্য দিয়ে পরিবেশ উপযোগী পদক্ষেপ নেয়াটা তাই অনেকের কাছেই পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত হিসেবে মনে হয়েছে। আগে থেকেই অ্যাপলের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের ফোনের ভেতর এমন ফিচার থাকে যা সময়ের সাথে ফোনের গতি ধীর করে তোলে।
 
তবু অ্যাপলের লক্ষ্য ২০৩০ এর ভিতরে একটি কার্বন নিরপেক্ষ কোম্পানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। অ্যাপলের নতুন আইফোনগুলো যে বাক্সের ভেতরে বাজারজাত করা হবে তার আকার এখন কমে আসবে। ফলে পরিবহনের সময় আগের চাইতেও ৭০ শতাংশ বেশি পণ্য সরবরাহ করা যাবে। এভাবেও চিন্তা করলে দেখা যায় যে, শুধু একটি উদ্যোগ কতভাবে পরিবেশের জন্য ইতিবাচকতা বয়ে আনছে! 

তারবিহীন চার্জারে সমাধান কতখানি:

অ্যাপল সত্যিই ব্যয় কমাতে বা পরিবেশের ক্ষতির কথা ভেবে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে, নাকি এ শুধুই নিজেদের তারবিহীন চার্জারের প্রচার কৌশল! চার্জার কিংবা হেডফোনের পুনর্ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সদ্য অগ্রসর হওয়া কোম্পানীটির মূলধনের একটি বড় অংশই উঠে আসে বাজারে নানা ধরনের হার্ডওয়্যার বিক্রয় থেকে। ক্রেতাদের মনে নানান প্রশ্নের উঁকি দেয়া তাই স্বাভাবিকই বটে। 

তারবিহীন চার্জার নিয়েও বিভিন্ন সময় নানান প্রস্তাবনা এসেছে। এতদিনের প্লাগ-ইন চার্জার (standardised plug-in charger ) ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বদলে হুট করে তারবিহীন চার্জারের প্রচলন বরং পরিবেশের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। 

তারবিহীন চার্জিং পদ্ধতি নিয়মিত চার্জারের চাইতেও ৪৭ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।  

ভবিষ্যতে  চলুক সর্বজনীন চার্জার:

'টেক জায়ান্ট'রা মিলে মোবাইল ফোনসহ সমস্ত ছোট বা মাঝারি আকারের বৈদ্যুতিক ডিভাইসের জন্য একটি সর্বজনীন প্লাগ-ইন চার্জার ব্যবহারে একমত হতে পারলেই ভবিষ্যতে সর্বোত্তম সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।

বাজার বা সুপারশপগুলোতে আমরা প্রায়ই একটিমাত্র সাধারণ অথচ পুনর্ব্যবহারযোগ্য চটের ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করে থাকি। তাতেই মাছ, মাংস, শাকসবজি থেকে শুরু করে প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু ধরে যায়। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেও এমনটি আশা করাই যায়, বছর কয়েকের ভেতরে।
 

2
$ 0.01
$ 0.01 from @TheRandomRewarder
Avatar for King74
Written by
3 years ago

Comments

taka bachanO😋😋😋

$ 0.00
3 years ago