তুরস্ক-ফ্রান্সের রাজনৈতিক সমীকরণঃ বর্তমান এবং আগামী

0 12
Avatar for Khairul28
4 years ago

তুরস্ক-ফ্রান্সের রাজনৈতিক সমীকরণঃ বর্তমান এবং আগামী

তুরস্ক এবং ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম গুলোতে চোখ রাখলেই বুঝা যায় কতটা আক্রমণাত্মক অবস্থান তাদের। দেশ দুটির মধ্যে এতদিন বিরোধ থাকলেও তা এখন পুরো প্রকাশ্য। পূর্ব ভূমধ্যসাগরের সমুদ্র সম্পদকে কেন্দ্র করে তুরস্ক এবং গ্রীসের মধ্যকার সংঘাত এখন তুরস্ক বনাম ফ্রান্স হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সের ম্যাক্রন বেশ সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে গ্রীসের পক্ষে, সম্প্রতি ১২ টি রাফায়েল জেট দিয়েছে গ্রীসকে। ফ্রান্সের চেষ্টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তৈরী করা হচ্ছে তুরস্ককে অবরোধ দেয়ার জন্য। তবে কি ইইউ এমন পদক্ষেপ নিবে, কিভাবে তুরস্ক এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে?

তুরস্ক ইইউভুক্ত না হলেও ইউরোপের রাষ্ট্রের সঙ্গেই তুরস্কের বড় বাণিজ্য হয়। তুর্কিদের সবচেয়ে বৃহৎ ইমপোর্ট পার্টনার জার্মানি, রপ্তানিতেও জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কের এক্সপোর্ট মার্কেটের ৪২% ইউরোপে। যদিও তুরস্ক আমদানি করে এমন রাষ্ট্রের মধ্যে জার্মানির পরপরই রয়েছে অ-ইইউ ভুক্ত যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়া। ইইউ অবরোধ তৈরী করলে তা তুরস্কের জন্য কঠিন হবে, তবে জার্মানি নেতৃত্বাধীন ইইউ সে পথে হাঁটবে কিনা তা প্রশ্নোবোধক।

জার্মানির সাথে রয়েছে তুরস্কের বৃহৎ বাণিজ্য, এর বাহিরে তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মানি এবং দ্বিপাক্ষিক আরও কিছু ব্যাপারে জার্মানির জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ নয়। এখনও পর্যন্ত তুরস্ক-গ্রীস দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে যাচ্ছে এঞ্জেলা মার্কেল, এ প্রচেষ্টায় মার্কেলের আহ্বানে এরদোয়ান সাড়াও দিয়েছিল। তবে গ্রীসের জন্য ফ্রান্সের তড়িৎ গতির হস্তক্ষেপে মধ্যস্থতার সুযোগ নষ্ট হয়ে যায় বললেই চলে।

সিরীয়া, লিবিয়ায় ফ্রান্স তুরস্কের প্রতিপক্ষ হিসেবেই ছিল। ভূমধ্যসাগরে এসে বিরোধ প্রকট হয়। ম্যাক্রনের নেতৃত্বে MED 7 নামের ভূমধ্যসাগর কেন্দ্রীক সাতটি দেশের জোটের মিটিং সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে ফ্রাস স্পষ্টই তুরস্ক রুখতে বাকিদের একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিপরীতে তুর্কি নেতারাও বাকযুদ্ধে নামেন। ম্যাক্রন যখন বললেন তুরস্ককের জন্য অবশ্যই কঠোর হতে হবে, তুর্কি জনগণের জন্য নয় বরং এরদোয়ানের জন্য। পাল্টা এরদোয়ান জানায়, ম্যাক্রন আপনি ইতিহাস ই জানেন না!

কথা হচ্ছে, ইইউ তুরস্কের জন্য অসহযোগিতা দেখালে রাশিয়ার প্রতি আরও ঝুঁকে যাবে তুর্কিরা। এমনিতে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে এরদোয়ানের, তুরস্ক হয়ে রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম গ্যাস লাইন ইইউতে জ্বালানী সরবরাহ বাড়াচ্ছে। তুরস্কের জন্যও প্রধান গ্যাস সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। সম্প্রতি রাশিয়াও গ্রীস-তুর্কি সংঘাতে মধ্যস্থতা করার কথা বলেছে। তুরস্ক রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে গেলে তা ইউরোপের জন্য ভালো কিছু নয়, ন্যাটো তো তুরস্কের রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রীতিমতো উৎকণ্ঠায়।

ন্যাটোর ২য় বৃহত্তম সৈন্য সরবরাহকারী তুরস্ক রাশিয়ার সরণাপন্ন হলে তা ন্যাটো এবং গোটা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্যই হুমকিস্বরূপ।

লিবিয়ায় তুরস্কের এগিয়ে যাওয়া এবং ফ্রান্স, মিশর ও রাশিয়া অক্ষের পিছিয়ে পড়াতে ফ্রান্সের ক্ষোভ রয়ে গেছে। যদিও সিরিয়ায় রাশিয়া তুরস্কের সাথে একপ্রকার ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছে। কিন্তু ফ্রান্সের সফলতা নেই। এখন আফ্রিকায়ও নজর তুরস্কের, যেখানে ফ্রান্সের বেশ প্রভাব রয়েছে। জিবুতি, সেনেগালের সহ কয়েকটি দেশে তাদের ঘাঁটি আছে। আফ্রিকায় তুরস্কের আগমনে ফ্রান্স আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে। ফ্রান্স প্রাথমিকভাবে ইইউ এর কয়েকটি রাষ্ট্র কে তুরস্কের বিপক্ষে জোটবদ্ধ করেছে, তুর্কিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাপ বাড়াচ্ছে ইউনিয়নের প্রতি। তুরস্ক এমনিতেই রাশিয়া মুখী, এখন ভূমধ্যসাগর নিয়ে রাশিয়া-তুরস্ক সংশ্লিষ্টতা আরও বাড়লে অদূরে ম্যাক্রন তুর্কি রোধে ইইউ'র সাথে যুক্তরাষ্ট্র কেও যুক্ত করার আহ্বান জানাতে পারবে। ইতিমধ্যে তুরস্কের বিরোধিতায় গ্রীসকে সহযোগিতা করা আমিরাত, ইসরাইল, মিশরের শক্তি ফ্রান্সকে আরও শক্তি যোগাচ্ছে।

পরিস্থিতি সাপেক্ষে ২৪-২৫ সেপ্টেম্বরের ইইউ'র বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে তা বর্তমান পরিস্থিতিকে নতুন সমীকরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এ ইস্যূতে যুক্ত হতে পারে আরও রাষ্ট্র। ইইউর জন্য এ কাজটা সহজ কিছু নয়, আর শেষ পর্যন্ত আগে-পরে কোন নিষেধাজ্ঞা আসলে তা অবশ্যই এরদোয়ান সরকারের জন্য কঠিন হবে। এরদোয়ান ও ম্যাক্রন দুজনই নিজ দেশে নিরাপদে অবস্থানে আছে এমনটা বলার সুযোগ নেই। অন্যদিকে বৈঠকে তুরস্ক রোধে কোন পদক্ষেপ না নিতে পারলে তা ফ্রান্সের জন্য নেতিবাচক বার্তা, বেশ বিব্রতকরও বটে।

ছবিঃ euronews

6
$ 0.00
Avatar for Khairul28
4 years ago

Comments