তিতিকাকা নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা মুশকিল। তবে হ্রদের এই নামটি সূর্যদ্বীপের সাথে জড়িত কাহিনী থেকেই উদ্ভূত। আইমারা ভাষার দুটি শব্দ তিতি (বড় বিড়াল, অর্থাৎ পুমা) এবং কাকা (পাথর বা শিলা) থেকে এর উৎপত্তি বলে কাহিনী প্রচলিত আছে। অর্থাৎ, পুরো নামটির অর্থ পুমাকৃতি পাথর। প্রচলিত গল্প অনুসারে প্রথম ইনকা মানকো কাপাক ও তাঁর বোন তথা স্ত্রী মামা ওকলো সূর্যদ্বীপের একটি শিলাস্তূপের উপরেই জন্মগ্রহণ করেন (উপকথা অনুযায়ী ওই শিলাস্তূপের উপরই তাঁদের পিতা ইনতি বা সূর্যদেবতা তাঁদের পৃথিবীতে প্রেরণ করেন)। এই শিলাস্তূপটির আকৃতি অনেকটা একটি পুমার মাথার মতো। তাই থেকেই নাকি প্রথমে দ্বীপটির নাম হয় তিতিকাকা ও পরে গোটা হ্রদটিকেই ওই নামে ডাকা হতে থাকে। আজকের উপগ্রহ থেকে তোলা হ্রদটির দিকে তাকালেও অবশ্য একটি শিকারী পুমার আকৃতির সাথে কিছুটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণের ছোট হ্রদাংশটি অর্থাৎ, লাগো পেকুইনোকে একটি খরগোশ বলে কল্পনা করাই যায়। হ্রদটির এই বিশেষ আকৃতিও নামটির উৎস বলে কিছু মানুষের অভিমত। আবার কেচুয়া ভাষায় তিতি শব্দের অর্থ সিসা বা সিসা-রঙ। আশেপাশের পাথরের (কাকা) এই ধরনের রঙও নামটির উৎস হওয়াও তাই বিচিত্র নয়।
★অবস্থান ★
তিতিকাকা হ্রদ পূর্ব -মধ্য দক্ষিণ আমেরিকার একটি হ্রদ। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু হ্রদ। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা ৩৮১০ মিটার।এটি আন্দিজ পর্বতমালার আলতিপ্লানো উচ্চভূমিতে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ নৌচলাচলযোগ্য হ্রদ।এটি দক্ষিণ আমেরিকার ২য় বৃহত্তম হ্রদ। এই হ্রদ দক্ষিণ -পূর্ব পেরু থেকে পশ্চিম বলিভিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিমের ৪৯১৬ বর্গকিলোমিটার রয়েছে পেরুতে আর পূর্ব দিকের ৩৩৭২ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বলিভিয়ায়।
এই হ্রদটি দুটি অংশে বিভক্ত। উত্তরের অংশটিকে বলা হয় লাগো গ্রন্দে আর দক্ষিণের অংশকে বলা হয় লাগো পেকুইনো।এই দুই অংশকে তিকুয়িনা প্রনালী নামে এক সংকীর্ণ প্রনালী সংযুক্ত করেছে।
এই হ্রদে ছোট বড় ২৫ টিরও বেশি নদী এসে পড়েছে তার মধ্যে পাঁচটি বড়।এই হ্রদ থেকে উৎপন্ন একমাত্র নদী হল রিও দেসাখুয়াদেহো।
এই হ্রদের অভ্যন্তরে ছোট বড় মোট ৪১টি দ্বীপ রয়েছে। এগুলির অনেকগুলিই ঘনবসতিপূর্ণ। এগুলির অনেকগুলিতেই আবার ইনকা যুগের নানা নিদর্শনও রক্ষিত আছে। বিশেষ করে ইসলা দেল সোল (সূর্যর দ্বীপ বা সূর্যদ্বীপ) দ্বীপটির নাম এই বিষয়ে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বেশ কটি উপদ্বীপও এই হ্রদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এদের মধ্যে কোপাকাবানা উপদ্বীপটি সবচেয়ে বড়। এই উপদ্বীপটিই হ্রদটিকে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ভাগ করে ফেলার জন্য দায়ী। এই উপদ্বীপের প্রায় সমগ্রটাই বর্তমানে বলিভিয়ার মধ্যে পড়ে।
★জলবায়ু★
হ্রদে এসে পড়া নদীগুলোর উৎস অনেক উপরে হওয়ায় তাদের বরফঠাণ্ডা জল ও উঁচু পর্বতের উপর অবস্থিতির কারণে ঠাণ্ডা হাওয়া - এই দুই'এর প্রভাবে হ্রদের জলের উপরিতলের গড় উষ্ণতা থাকে ১০°-১৪° সেন্টিগ্রেড। কিন্তু অত উচ্চতা সত্ত্বেও শীতকালেও হ্রদের জল গলে যায় না। কারণ এই সময় (জুন-সেপ্টেম্বর) উপরিতলের ঠাণ্ডা জলের সাথে হ্রদের নিচের অংশের জলের ক্রমাগত মিশ্রণ ঘটতে থাকে। হ্রদের নিচের অংশের জলের উষ্ণতা সারাবছরই থাকে মোটামুটি একই - ১০°-১১° সেন্টিগ্রেড।[১১] উচ্চতার কারণে এই অঞ্চলে সারা বছরই তাপমাত্রা কমই থাকে। দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে মোটামুটি ১৬°-১৭° সেন্টিগ্রেড ও রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা - ১.৫° থেকে ৩.৫° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সারা বছরে ৬১০ মিলিমিটার মতো বৃষ্টি হয়। এর বেশিরভাগটাই সাধারণত গরমকালেই হয়ে থাকে। শীতকালে আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও শুষ্ক।
★প্রজাতি ★
তিতিকাকা হ্রদ ৫৩০টিরও বেশি জলজ প্রজাতির আবাসস্থল।এদের মধ্যে আবার অনেকগুলিই বিরল ও স্থানিক প্রজাতি। এছাড়াও এই হ্রদ ও সংলগ্ন এলাকায় প্রচূর সংখ্যক জলচর পাখিও বাস করে।এই অঞ্চলের যেসব বিরল ও স্থানিক প্রাণী সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, তার কয়েকটি হল -
তিতিকাকা ব্যাঙ,তিতিকাকা গ্রীব, তিতিকাকা ওরিয়েস্টিয়াস।
এছারাও এই হ্রদের জলে আরও কিছু স্থানিক প্রজাতির মাছের দেখা মেলে, যাদের তিতিকাকা হ্রদ ও আশেপাশের কিছু অঞ্চলেই শুধু দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু পেনসিল ক্যাটফিস, যেমন ট্রাইকোমাইকটারাইডি বা ট্রাইকোমাইকটারাস রিভিউলেটাস উল্লেখযোগ্য।এখানে হ্রদের জলে পাওয়া মাছেদের মধ্যে ৯০ শতাংশই হল স্থানিক প্রজাতির।