আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ সালের এই দিনে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালী কথা সাহিত্যিক , ঔপন্যাসিক এবং জনপ্রিয় গল্পকার শরৎচন্দ্র চট্রৌপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেন । বৃটিশ ভারতের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।তাঁর পিতার নাম মতি লাল চট্রৌপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। মা ও বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান ।মা আদর করে তাঁর নাম দিয়েছিলেন ন্যাড়া ।
পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির কাছের প্যারী পন্ডিতদের পাঠশালায় পড়াশুনা শুরু করেন । শরৎচন্দ্র স্কুলে পড়ার সময় দাবা খেলায়, গান গাওয়ায়, ও বাঁশি বাদনে ক্ষমতা অর্জন করে।
আমি জীবনের প্রথম অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় শরৎচন্দ্র চট্রৌপাধ্যায়ের বামুনের মেয়ে বইটি পড়ি অসম্ভব ভালোলাগা এবং ভালোবাসা তৈরি হয়। যখন আমি দশম শ্রেনীর ছাত্রী তখন দেবদাস এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে । দেবদাস পড়ার পর আজও মনে পড়ে আমি খুব কেঁদে ছিলাম । তারপর আরও অনেক বইয়ের সাথে পরিচয় হয় এবং পড়তে থাকি ।পরিনীতা, চরিত্রহীন, পথের দাবি , পল্লীসমাজ সবই যেন এখনও মনের মধ্যে গেঁথে আছে।তাঁর বই পড়তে গেলে সব সময় মনে হয় শেষ হয়েও যেন হইলো না শেষ। শরৎচন্দ্র যেন আমার সেই ছোট বেলার বন্ধু ওনার বইয়ের সাথে আমার আত্মার মেলবন্ধন রয়েছে, মন খারাপ হলেই তাঁর একখানা বই হাতে । একজন লেখক ই পারে আজীবন বন্ধু হয়ে থাকতে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তার অনেক উপন্যাস ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলোতে অনূদিত হয়েছে। বড়দিদি (১৯১৩), পল্লীসমাজ (১৯১৬), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), শ্রীকান্ত (চারখণ্ডে ১৯১৭-১৯৩৩), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), পথের দাবী (১৯২৬), পরিণীতা (১৯১৪), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) ইত্যাদি শরৎচন্দ্র রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার দরুন তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে খ্যাত।
শরৎচন্দ্র চট্রৌপাধ্যায়ের বাংলা ছাড়াও তাঁর লেখা বহু ভারতীয় ও বিদেশি ভাষায় অনুদৃত হয়েছে । তিনি কখনও কখনও অনিলা দেবী, শ্রীপশুরাম, অনুপমা এসব ছদ্মনামে ও লিখতেন।
তার সাহিত্য-কর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্র বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে।
এবং শরৎ চন্দ্র চট্রৌপাধ্যায়ের
সাহিত্য কর্ম নিয়ে বাংলাদেশে ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ।
রাজ্জাক শাবানা অভিনীত রাজ লক্ষ্মী শ্রীকান্ত,
বুলবুল আহমেদ কবরী অভিনীত দেবদাস ,
রাজ্জাক সুচন্দা অভিনীত চন্দ্রনাথ নির্মিত হয়েছে । এছাড়া ও আরও অনেক নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ।
এছাড়া ১৯২৩ সালে বরিশালে প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে যোগদান করেন।এবং বরিশাল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক অভিনন্দিত হোন।
১৯২৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিলিকান্দা অভয় আশ্রমে এ পশ্চিম বিক্রমপুর যুবক ও ছাত্র সম্মিলনীতে সভাপতিত্ব ও অভিভাষণ প্রদানের করেন।
১৯৩৪ সালে ফরিদপুর সাহিত্যে সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৩৬ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি গ্রহণ করেন ।৩১ জুলাই ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও অভিভাষণ প্রদান করেন । এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতা দান করেন।
১৯৩৭ সালে তাঁর যকৃতে ক্যান্সার ও পাকস্থলীতে পচন ধরায় তাকেঁ নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়।
১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ( ২ মাঘ ১৩৪৪) রবিবার সকাল ১০: ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় শুভদা, ছেলেবেলার গল্প, এবং শেষের পরিচয় উপন্যাস
আজ এই অমর কথাসাহিত্যিকের জন্মদিনে আমরা
তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ।