ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও ডিল ছিল বার্সার আড়াই বছরের স্কাউটিং এবং তৃতীয়বার অফিশিয়াল বিডের পর সফলতা।
সান্দ্রো রোসেল বা জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ যুগের হেভিওয়েট সাইনিং এর বহর একপাশে রেখে যদি আগের বার্সার ট্রান্সফার পলিসির দিকে খেয়াল রাখি,সেখানে স্কাউট করে লাতিন বা স্পেন এর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্লেয়ার ধরে আনা ছিল বড় ফ্যাক্টর।যুগের পর যুগ এভাবেই কেটেছে,৩/৪ সিজন বা তার বেশি সময় পরও একজন সুপারস্টার সাইনিং হতো,কিন্তু সেই স্কাউট করা সাইনিং গুলো বার্সা বা বাইরের ক্লাবে ঠিকই আলো ছড়াতো।
এই স্কাউটিং এর ক্ষেত্রে বার্সার বিশেষ সুনাম ছিল।ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব বার্সার এই স্কাউটিং পলিসি কপি করতে চেষ্টা করতো।কিন্তু রোসেল এবং তার গ্যাং আসার পর এইদিক থেকে বার্সা কিছুটা হারিয়ে যেতে থাকে,সুপারস্টার সাইনিং ই সেখানে মুখ্য বিষয় হয়ে দাড়ায়।স্কাউটিং এর ক্ষেত্রে আদ্যি কালের বদ্যি কথা বলার কারণ হলো,এই বোর্ডের আমলে যা খুবই বিরল,ঠিক সেভাবেই স্কাউটিং করে ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও কে ব্রাগা থেকে ৩১ মিলিয়ন ইউরোতে কেনা হয়েছে।ইন্টারন্যাশনালি রেপুটেশন না থাকা সত্ত্বেও এই সাইনিং আমরা যারা বার্সার পুরাতন ট্রান্সফার পলিসি খেয়াল করেছি,তাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।
ত্রিনকাও প্রথম নজরে আসে ২০১৭ সালের অ-১৯ বিশ্বকাপে,যেখানে সে দিয়েগো জোতার সাথে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয় ৫ গোল করে।ওই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বার্সা স্কাউট টিমের নজরে আসে ভালোভাবেই এবং ক্লাবের স্পোর্টিং ডিপার্টমেন্টকে এই ব্যাপারে জানায়।সাথে সাথেই পেপ সেগুরা,রামোন প্লেনস এবং হোসে মারি বাকোরা ত্রিনকাও এর এজেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করে।
ত্রিনকাও এর তখনকার বাই আউট ক্লজ ছিল ১২.৫ মিলিয়ন।বার্সার প্ল্যান ছিল প্রাথমিকভাবে বি টিমের জন্য কিনে তারপর মূল দলের জন্য প্রস্তুত করা। বার্সা স্বাভাবিকভাবেই এত টাকা দিতে চায় নি,তাই তারা ৫ মিলিয়ন+৬ মিলিয়ন ভ্যারিয়েবলস এর অফার করে।ব্রাগা তা নাকচ করে দেয়,তারা রিলিজ ক্লজের নিচে বিক্রি করবে না বলে জানিয়ে দেয়।বার্সার প্রথম এপ্রোচ ওইখানেই শেষ হয়।
২০১৯ সালের উইন্টার উইন্ডোতে ত্রিনকাও এর জুভেন্টাস এ যোগ দেয়া সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। কিন্তু অজানা কারণে শেষের দিকে ডিল ব্রেকডাউন হয়ে যায়।২০১৯ এ ছিল অ-২০ ইউরো, পর্তুগাল আশা অনুযায়ী পারফর্ম না করতে পারলেও ত্রিনকাও এর ক্লাস এবং পারফরম্যান্স আবার সবার নজর কাড়ে।
অ-২০ ইউরোর পর আবিদাল এবং রামোস প্লেনস আবার ত্রিনকাও এর জন্য ১৫ মিলিয়ন বিড করে ওই সামারেই দলে ভেড়ানোর জন্য।কিন্তু ব্রাগা আবারো তা রিজেক্ট করে দেয়,তাদের কাছে মনে হয় ত্রিনকাও এর দাম আরো বেশি হওয়া উচিত।ট্রান্সফার ফি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ইতালিয়ান ক্লাব আটালান্টার এপ্রোচও মাঝ পথে থেমে যায়।একের পর এক ট্রান্সফার ব্যর্থতার কারণে ত্রিনকাও ব্রাগার ফার্স্ট টিমে রেগুলার মেম্বার হওয়ার জন্য মনোযোগ দেয় এবং পর্তুগালেই থেকে যায়।
১৯-২০ সিজনের নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের দিকে ত্রিনকাও সিনিয়র টিমে পারফরম্যান্স দিয়ে আবারও লাইম লাইটে আসে।আবার আটালান্টা,বেনফিকার মতো দল তাদের ইন্টারেস্ট দেখাতে শুরু করে।বিভিন্ন টিমের এপ্রোচ তার এজেন্টের কাছে আসার পর তার এজেন্ট বার্সাকে জানায় এবং বার্সা তাকে কিনতে এখনো ইচ্ছুক কিনা সে ব্যাপারে জানতে চায়।উল্লেখ্য বার্সেলোনা ছিল ত্রিনকাও এর প্রথম প্রায়োরিটি এবং অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতো লিওনেল মেসির সাথে খেলাও তার স্বপ্ন ছিল।
ত্রিনকাও ডিল নিয়ে আবারো অফিশিয়াল কথা হয় যখন ব্রাগার প্রেসিডেন্ট বার্সায় আসেন আবেল রুইজের ট্রান্সফারের ব্যাপারে কথা বলতে।কিন্তু বার্সা জানায় তারা ত্রিনকাওকে সামার উইন্ডোতেই কেবল দলে আনতে পারবে।ত্রিনকাও এর রিলিজ ক্লজ ছিল ৩০ মিলিয়ন,কিন্তু বার্সা ডিরেক্ট রিলিজ ক্লজ পে করে দলে ভেড়াতে চায় নি,তারা নেগোসিয়েশন করে ডিল করতে চেয়েছিল।
ত্রিনকাও যেন সামারে জয়েন করতে পারে তাই বার্সা ব্রাগা প্রেসিডেন্টকে ৩১ মিলিয়ন অফার করে যা ছিল রিলিজ ক্লজ থেকে ১ মিলিয়ন বেশি।বার্সেলোনাতেই মৌখিক কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে যায় এবং কিছুদিন পর ক্লাব CEO অস্কার গ্রাউ ব্রাগায় গিয়ে ডিলের কাগজপত্র চূড়ান্ত করেন।
৩১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২০২০-২১ সিজনে ফার্স্ট টিমে জয়েনের শর্তে ত্রিনকাও ডিল অফিশিয়াল করা হয়।
সোর্সঃ All Football এপের একটি লেখা থেকে সাইনিং এর পুরো চিত্র ঘটনা ক্রমানুসারে অনুবাদ করা।
1
Nice