রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরীক্ষার হলে বসে আছে। আজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা।
রবীন্দ্রনাথের সীট পড়ছে মাঝখানে। হাতে প্রশ্নপত্র পাবার পর, প্রশ্ন দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজাজ গরম হয়ে গেল। কি সব উল্টা পাল্টা প্রশ্ন আসছে, কিছুই বুঝতে পারছে না।
রবীন্দ্রনাথ আর্সের ছাত্র। তার কাছে মনে হচ্ছে, প্রশ্ন আসছে সায়েন্স থেকে!
প্রশ্ন: লিঙ্গ পরিবর্তন কর?
এই লিঙ্গ পরিবর্তন কি আর্সের ছাত্ররা পারবে! সায়েন্সের প্রশ্ন আর্সের ছাত্ররা কি করে লিখবে। রবীন্দ্রনাথ নিজের মাথা চুলকাচ্ছেন। দুই বেঞ্চ সামনে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, নজরুল।
রবীন্দ্রনাথ ফিস ফিস করে ডাক দিল, এ্যাই নজরুল, এ্যাই নজরুল...?
নজরুল বিরক্ত হয়ে বলল, 'উফ্, পরীক্ষার শুরুতেই বিরক্ত করবে না।'
নজরুলের এমন আচরণে রবীন্দ্রনাথের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে বলল,
ভাব দেখাস! হল থেকে বের হ একবার, তারপর মজা দেখামুনি। গাইড বই পড়তে নিয়া হারায় ফেলছা, সুদে আসলে উসুল করুম।
সাইডের বেঞ্চিতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল জসীমউদ্দীন। রবীন্দ্রনাথ ফিস ফিস করে ডাক দিল, ভাই জসিম....?
জসীমউদ্দীন ঘাড়টা হালকা উচু করে বলল,
কি সমস্যা.....?
রবীন্দ্রনাথ ফিস ফিস করে বলল,
লিঙ্গ পরিবর্তন প্রশ্নের উত্তরটা বলতে পারবি?
জসীমউদ্দীন নিচু হয়ে লিখতে লিখতে বলল,
এইটা লিখতেছিনা, অন্য প্রশ্ন লিখতেছি।
রবীন্দ্রনাথ এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন, আর কার কাছে জিজ্ঞেস করা যায় দেখছি। পেছনের বেঞ্চিতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, বেগম রোকেয়া।
রবীন্দ্রনাথ একবার ভাবলেন, রোকেয়ার কাছে জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলেন, রোকেয়ার কাছে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। মহিলা মানুষ, কি থেকে কি বুঝবে তার ঠিক নেই, তার উপর আবার লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন। লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন শুনলে রোকেয়া রেগে যেতে পারে। ভাবতে পারে, তার সাথে ফাজলামি করছি।
প্রথম বেঞ্চিতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, শরৎচন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ আস্তে করে দুইবার ডাক দিল, শরৎচন্দ্র শুনল না।
দ্বিতীয় বেঞ্চিতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, বঙ্কিমচন্দ্র। তাকেও ডাক দিল। বঙ্কিম আস্তে করে বলল, দাদা, কমন পড়েনি, বানিয়ে বানিয়ে লিখছি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের চার দিকে চেয়ে দেখে, সবাই লিখতেছে শুধু পেছনের বেঞ্চিতে বসা, তসলিমা নাসরিন কান্না করতেছে।
তসলিমা নাসরিনের কান্না দেখে রবীন্দ্রনাথ ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল,
'কি হয়েছে নাসরিন, কান্না করছ কেন?
তসলিমা নাসরিন কান্না থামি বলল,
"রচনা আসছে "ছাত্র জীবন", কিন্তু আমি কি করে লিখব, আমি তো ছাত্রী।"
রবীন্দ্রনাথ কিছু বলল না। প্রশ্নপত্রে পরের প্রশ্ন দেখতেই রবীন্দ্রনাথের চোখ চড়ক গাছ হয়ে গেল...
প্রশ্ন: পাদ কত প্রকার ও কি কি লিখ?
রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা করছে, প্রশ্নপত্র ছিড়ে কুচি কুচি করতে। এমন প্রশ্ন জীবনেও পড়েনি। কোন ব্যাক্কলে গাজা খেয়ে যে এমন প্রশ্ন করছে!!
পাদ কত প্রকার? কার কাছে জিজ্ঞেস করা যায়, হলের চারদিকে চেয়ে দেখতেছিল....
পাশের বেঞ্চিতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, হুমায়ুন আহমেদ। ক্লাশের ফাস্ট বয়। একের পর এক এক্সট্রা খাতা নিচ্ছে। খুব কমন পড়েছে মনে হয় তার।
রবীন্দ্রনাথ ফিস ফিস করে বলল,
'ভাই হুমায়ুন, একটু শোন ভাই।
পাদ কত প্রকার একটু বলবি?'
হুমায়ুন আহমেদ লিখা শেষ করে, মনোযোগ দিয়ে লিখা রিভিউ দিচ্ছিল। বিরক্ত হয়ে বলল,
"আরে পাঠা, পাবজী গেম খেইলা, আর অসভ্য ভিডিও দেইখা চোখের তো বারোটা বাজাই ফেলছস। ভালো করে চেয়ে দেখ, ওটা 'পাদ' নয় 'পদ'।
হায় হায় এটা তো আমি পারি। বলতে বলতে রবীন্দ্রনাথ লিখতে শুরু করবে, অমনি ঘন্টা বেজে উঠল, পরীক্ষার সময় শেষ।
রম্য গল্প: #পরীক্ষার_হলে_রবীন্দ্রনাথ
haha