অগ্রসর

1 14
Avatar for Khairul28
4 years ago

বাসায় ইদানীং অনেক কাজ করতে হচ্ছে। গ্রামে এই সময় টায় সব মানুষই খুব ব্যস্ত থাকে। তার কারণ ধান শুকানো থেকে শুরু করে সব কিছুই নিজেদের করতে হয়। পরশুদিন মাত্র ধান কেটে বাড়ির উঠানে দিয়ে গেসে। সেই থেকেই শুরু কাজ। কোনো থামাথামি নেই।

আজ সকাল থেকেই কেমন যেন কাশি কাশি লাগতেসে। বাড়ির পাশে এক চাচি থাকে উনি আমার এই কাশি দেখে বলতেসে ভালো লক্ষণ না। এই কাশি খুব খারাপ নাকি। আমার শ্বাশুড়ি চাচির কথা শুনে বললো -

~ এমন একটু আধটু কাশি হবেই। তাই বলে কি সেটা ধরে বসে থাকা যাবে? আমাদের তো কতো অসুখ হইছে, দেখার মতো কেউ ছিল না। সেগুলাকে সহ্য করেই দিন গেসে এবং দিব্যি বেঁচে আছি এখনো। মরে তো আর যাই নি।

আমি আর কিছু বলিনি। চলে গেলাম রান্না ঘরে। প্রচুর গরম পড়েছে মনে হচ্ছে যেন, দম আটকে যাবে এই ভ্যাপসা গরমে। তবুও দুই রকম চালের ভাত রান্না করলাম। চিকন চাল শুধু আমার স্বামীর জন্য, আর মোটা চাল শ্বশুর, শ্বাশুড়ি এবং আমার জন্য। তরকারির পদ ছয়টার মতো করলাম তাও সন্তুষ্ট হবে কিনা কে জানে! আমার স্বামীর জন্য সবসময়ই আলাদা করে রান্না করতে হয়। খাওয়া দাওয়ায় উনি একটু বেশি সতর্ক। তিন বেলার খাবার তিন রকম হতে হবে নাহলে খাবে না। আবার গরম গরম চাই সবকিছু, সেটা শীতকাল হোক আর গ্রীষ্মকাল হোক।

দুপুরে উঠানে বসে ধান নাড়ছি তখন আমার স্বামী এসে বললো ঠান্ডা শরবত এনে দিতে। আমি কাজ করতেসিলাম তাই বললাম একটু বসেন পাঁচ মিনিট পরে এনে দিচ্ছি। এই কথা কেন বললাম তার জন্য রাগ দেখিয়ে চলে গেসে। আমি জানি আজকে আর বাসায় খাবে না এবং আমার স্বামী কেন বাসায় খাবে না তার জন্য শ্বাশুড়ি আমার বংশ নিয়ে অনেক কথাই বলবে। এইসব কিছুই দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেসি।

সন্ধ্যায় শ্বাশুড়ি এসে বলতেসে -

~ রিদু দুপুরেও খায় নি, এখন সন্ধ্যা হয়ে গেসে এখনো খেতে আসতেসে না কেন? তুমি কেমন স্ত্রী হইলা? স্বামী না খেয়ে আছে তোমার কোনো চিন্তা আছে? দিব্যি তো নিজে পেট পুরে খেয়ে নিলা। তোমার বাবা-মা এগুলাই শিখাইছে?

যত রকম অবান্তর কথা আছে সব বলে চলে গেসে। আমি শুধু শুনে গেলাম। সারাদিন পর মাত্র বসার সুযোগ পেলাম তাও বসতে না বসতেই শ্বাশুড়ির কথা হজম করছি। আমি জানি আমার স্বামী বাহিরে খেয়েছে এবং এতে তার কোনো কষ্ট হয় নি। এটাও জানি রাতেও খেয়েই আসবে কিন্তু শ্বাশুড়ি কে বলবে খাবো না। মুখস্থ বলে দিতে পারি এই বাড়ির সবার আচরণ।

রাত আটটার দিকে শ্বাশুড়ি বললো তাড়াতাড়ি ধান সব ঘরে নিয়ে আসতে, আকাশে মেঘ ডাকতেসে। আমি হুড়মুড়িয়ে উঠে গেলাম উঠানে। আবছা অন্ধকারে একটা হাড়িকেন জ্বালিয়ে সব ধান একসাথে করছি। আকাশে ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছে। তবুও সবগুলো ধান বস্তায় ভরে, বারান্দায় রাখলাম। আমার শ্বাশুড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো একটাবার এসে বললো না, চলো দুইজন মিলে করি বা তুমি তো বজ্রপাত ভয় পাও আমি আছি এখানে ভয় পেও না। আমি অন্ধকার এবং বজ্রপাত খুব ভয় পাই। এটা এই বাড়ির সবাই জানে তাও শ্বাশুড়ির এমন আচরণ আমার জন্য নতুন না।

একবার এরকমই মেঘের রাতে খুব জোরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছিলো। সেদিন আমার স্বামী ও বাসায় ছিল না। আমার খুব ভয় হচ্ছিলো। আমি ধীরে ধীরে শ্বাশুড়ির দরজার কাছে গিয়ে বললাম-

~ মা,আমার খুব ভয় করছে। একটু আমার সাথে এসে শুয়ে থাকেন না! আমি বজ্রপাত হলে একা থাকতে পারি না।

~ ঢং দেখলে গা জ্বলে। এতো বড় হয়ে গেসো এখনো কিসের বজ্রপাতের ভয় বুঝিনা বাপু! একা থাকতে থাকতেই ভয় কাটবে। যাও গিয়ে সূরা পড়ে শুয়ে থাকো।

সেদিন আমি অনেক কান্না করেছিলাম এরকম আরো অনেকদিন হয়েছে একবারের জন্যও কেউ আমার পাশে আসে নি।

পরদিন সকালে জ্বরে আমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তাও ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়েই রান্না শুরু করলাম। রাতে আর বৃষ্টি হয় নি কিন্তু ভোরের দিকে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। তখনো ভিজে ভিজে সব কাজ করতেসিলাম। হুট করেই খুব খারাপ লাগতেসে। আমার মাথাটা ঝিম ধরে আছে। মনে হচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। এদিকে শ্বাশুড়ি ডাকছে উনাকে রুটি দিতে। নড়তেও পারছিলাম না তাও কোনোমতে রুটি নিয়ে গিয়ে শ্বাশুড়ি কে দিলাম।

চেয়েছিলাম আমার স্বামীকে বলবো কিন্তু উনার রাগ এখনো আছে, উনি এখন আমার এসব কথা শুনবে না। তাই আমি নিজেই মাথায় একটু পানি দিয়ে শুয়ে আছি। একটু পরই শ্বাশুড়ি এসে বলা শুরু করলো-

~ কাজকাম কি নাই? সারাদিন শুয়ে থাকলে হবে নাকি। কতো কাজ পড়ে আছে, কে করবে এসব? ভাত তো ঠিকই পেট পুরে খাও তাহলে কাজে ফাঁকি দিচ্ছো কেন?

~ মা আমার শরীর টা খুব বেশি ভালো নেই। জ্বর এসেছে মনে হচ্ছে। একটু পর সব করতেসি আমি। আপনি বিশ্রাম করেন।

~ এরকম জ্বর থাকবেই, তাই বলে কাজ ফেলে রাখা যাবে না। উঠে গিয়ে সব কাজ শেষ করে শুয়ে থাকো। তখন কেউ আর কিছুই বলবে না। যত্তসব কাজ ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা!

এসব কথা শুনে বুক ফেটে কান্না আসছিলো তাও চেপে রেখে কাজ করতে গেসি। কাশতে কাশতে এক পর্যায়ে রক্ত বের হয়ে গেলো তাও কাউকে কিছু বলি নি। তার কারণ বললেই কথা শুনতে হবে।

বিকালের দিকে পাশের বাসার চাচি এসে বললো চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। তোমার শ্বাশুড়ি জীবনেও তোমাকে নিয়ে যাবে না। এতো জ্বর বাধিয়েছ এখন তো যেতেই হবে। আমি উনার হাত টা ধরে বললাম চাচি আমাকে একটু দোয়া দেন যেন এসব সহ্য করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। আমি যাবো না ডাক্তারের কাছে তবে এদের কে ও কিছু বলবো না।

ভিতরে ভিতরে আমি শেষ হচ্ছি জানি, কিন্তু এই শরীর এর সমাপ্তি হওয়ার থেকেও বড় সমাপ্তি ঘটছে আমার মনে। যা আমি কোনোদিনও কাউকে বলতে পারবো না। হয়তো সব রোগ নিয়েই বেঁচে থাকবো মরার মতো যেন পরবর্তী প্রজন্মরা বলতে পারে আমার দাদি বা নানি এতকিছু সহ্য করার পরেও মারা যায় নি।

চাচি আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে রেখে আফসোস করতে করতে চলে গেল। হায়! এই আফসোস এর শব্দ কবে আমার মতো মেয়েদের শ্বাশুড়ি এবং স্বামীরা বুঝবে! কবে একতরফা কাজের দক্ষতা অর্জন না করতে পারলে সে নারী নয় এমন মনোভাব বদলাবে। কবে নারী মানেই কাজের ঝুড়ি নয় সেটা বুঝবে সোনার হাড়িতে ভাত খাওয়া পুরুষেরা।

6
$ 0.00
Avatar for Khairul28
4 years ago

Comments

Geram banglar bishoy ta khub valo, potita manus a mukhdho kore tole, bangalir poti manus ke mugdho kore to, khub ecca kore sei agere gram bangalr din gula fira petam tahole khub valo lagto onek onek Enjoy kortam, poti ta bisoy ta khub enjoy kortam, amar pirio banglar geram bangla...i Love my country gram Bangla... Plz follo me

$ 0.00
4 years ago