ছোট বেলায় আমাদের স্কুলে একটি মুভি দেখানো হয়েছিল (ইতালিতে প্রায় সময়ই সামাজিক শিক্ষামূলক মুভি দেখানো হতো চিন্তার বিকাশ ঘটাবার জন্য) , মুভিটির নাম এই মুহূর্তে মনে নেই। মুভিটি ছিল science fiction এর ওপর (৭০/৮০ দশকের একটি মুভি হবে , সেই যুগে এই ধরণের অনেক মুভি বানানো হয়েছিল) এবং মুভিতে একটা পর্যায়ে মানুষ দ্বারা নির্মিত টেকনোলজি মানুষের বিপক্ষে চলে যায় ও মানুষের বিপক্ষে বিজয়ী হয়ে মানুষকে তার দাসে রূপান্তরিত করে ফেলে।
বিষয়টি নিয়ে এতো বছর কখনো চিন্তা করিনি। এতো বছর পর এই চিন্তা আমার মাথায় প্রবেশ করেছে Covid এর কারণে বিশ্বব্যাপী ঘটে যাওয়া লকডাউন চলাকালীলন।
লকডাউন চলাকালীন সমস্ত বিশ্বের একটি মাত্র motto ছিল : Social Distance. অর্থাৎ আদম সৃষ্টিকুল থেকে মানুষের যেই প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অর্থাৎ সামাজিক সম্পর্ক এবং একে অপরের সাথে যেই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানুষিক সম্পর্ক থাকে সেটিকে কয়েক মাসের জন্য থামিয়ে দিয়ে মানুষকে ঘরের ভিতর বন্দি করা হলো। এই সময়কালীন শুধুমাত্র এসেনশিয়াল শপ ব্যাতিত বাকি সব ধরণের দোকান-পাট, অফিস-আদালত সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র যারা বাসা থেকে ''স্মার্ট ওয়ার্ক'' করার যোগ্যতা রাখে তারাই তাদের কাজ অব্যাহত রাখলো।
কয়েক কোটি মানুষ একসাথে ঘরে বসা !! মানব ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। কোটি কোটি মানুষ এই লকডাউন চলাকালীন নতুন কিছু বিষয়ের সাথে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলো আর সেটি হচ্ছে ই-কমার্স। মানুষ ঘরের বাহিরে না গিয়ে তার সমস্ত কাজ অনলাইনে করা শুরু করলো : জামা-কাপড় থেকে শুরু করে যা কিছু যখন যেটা প্রয়োজন সেটিই অনলাইনে ক্রয় করা কোনো ব্যাপার না। ক্ষুদা লাগলে খাবারও অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে বাসায় নিয়ে আসা সম্ভব। এই বুঝ হলো যে মানুষের সাথে মানুষের সোশ্যাল রিলেশন আফটার অল না হলেও চলে।
সবাই ঘর কোণে হয়ে গেলো। ঘরে বসেই স্মার্ট ওয়ার্ক, স্মার্ট শপিং, স্মার্ট ফুড।
আচ্ছা এখন আপনার দুই চোখ বন্ধ করে আমার সাথে একটু কল্পনা করুন : মনে করেন একটি টাইম মেশিন দিয়ে ১০০ বছর ফিউচারে চলে গিয়েছেন ; এমন একটি সমাজ দেখতে পাচ্ছেন যেখানে রাস্তা ঘাট একদম ফাঁকা। যেই কয়টি গাড়ি দেখা যায় সেগুলোও ড্রাইভার বিহীন। কোনো দোকান পাট নেই, কোনো মানুষ নেই, নেই কোনো ব্যাস্ততা। সবকিছু ঘটছে টেকনোলজির মাধ্যমে। মানুষ সব কিছু কেনা-কাটা করছে অনলাইনের মাধ্যমে। সেগুলো ডেলিভারিও দেয়া হচ্ছে ছোট ছোট ড্রোনের মাধ্যমে। যেই মানুষ-জন জীবিত রয়েছে তারা সকলেই এখন ''স্মার্ট'' এবং ''স্মার্ট ওয়ার্কিং'' করার মত যোগ্যতা রাখে। অল্প কিছু এই স্মার্ট মানুষের সমস্ত কাজ করে দিচ্ছে টেকনোলোজি অথবা রোবট। এই সমাজে ''নন-স্মার্ট'' মানুষের কোনো মূল্য নেই, কোনো প্রয়োজন নেই। ডারউইনের সূত্র অনুযায়ী শুধু যারা ''স্ট্রং & স্মার্ট'' তারাই এই নতুন সমাজে সারভাইভ করতে পেরেছে।
আপনারা যদি একটু গভীর ভাবে চিন্তা করেন তাহলে দেখতে পাবেন এমন একটি ভার্চ্যুয়াল সমাজ ব্যাবস্থার জন্য কিছুটা প্রস্তুতি দুনিয়া অলরেডি নিয়েই ফেলেছে। Covid এর মাধ্যমে তারই একটি এক্সপেরিমেন্ট আমরা দেখতে পেলাম। আমার কেন যেন ভয় হয় যে ভবিষ্যতে এমন একটি যুগ আসবে যেখানে মানুষ হবে দুনিয়ার সবথেকে ''অপ্রয়োজনীয় বস্তু''। তবে আশা করি সেই যুগটা আমার দেখতে হবেনা।