-----------------------------------------------------------------
এক গ্রামের শেষ প্রান্তে বাস করতো এক বুড়ি মা। তার ছিল এক ছেলে,ছেলের বউ ও একটা নাতি। বুড়ি গরীব হলেও সুখেই তার দিন কেটে যাচ্ছিল। ক'বিঘে জমি,বাড়ির উঠোনের আনাজপাতি আর ছোট্ট কুয়ো পুকুরের মাছ দিয়ে তাদের বছরান্তের খোরাক বেশ জুটে যেত।
একদিন বুড়ির সেই নিশ্চিন্ত সংসারে বড় ফাঁড়া দেখা দিল। প্রায় প্রতি রাতে তার কুঁড়ে ঘরের চালে কে যেন ইয়া বড় পাথর ছুঁড়ে মারত, চলত চালের উপর দাপাদাপি। বুড়ি আর তার ছেলে,ছেলের বউ, নাতি ভয়ে কুঁকড়ে যেত।
বুড়ি বয়স হলে কি হবে,ছিল অনেক সাহসী। একরাতে বুড়ি গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে, কে তুমি,কেনই বা বাপু আমার ঘরের চালে এমন পাথর ছুঁড়ে মারছো? আমি গরীব মানুষ, নুন আনতে পান্তা ফুরোয়,কারো সাতেপাঁচে তো থাকি নে!
তখন নাঁকি সুরে কে যেন বলে উঠলো, শোঁনো বুঁড়ি,আঁমি ভূত, তোঁমার বাঁড়িটা আঁমার মঁনে ধঁরেছে, নঁদীর ধাঁরে,শুনশান, নিঁরিবিলি,মাঁছ ধঁরব আঁর মঁনের সুঁখে খাঁবো....হেঁ..হেঁ..হেঁ...!
এই শুনে বুড়ি ভাবলো,"আচ্ছা,তাই বুঝি,আমার ছেলের বাবা,তারও বাবা,তারও বাবা এই বাড়িতে বাস করে ইহলীলা সাঙ্গ করলো আর তিনি এয়েছেন এখন মঁনের সুঁখে থাঁকতে! দেখাচ্ছি মজা!
এই বলে বুড়ি এক ফন্দি আঁটলো। সেই মতো, বুড়ি পরের রাতে ভূতের উৎপাত শুরু হলে বললো, "শোনো বাপু,ভূত, তোমার যখন এতই পছন্দ আমার ভিটে তবে তুমিই থাকো। তবে চলে যাওয়ার আগে আমি তোমায় একরাতে ভরপেট খাওয়াতে চাই।তুমি আমার আতিথ্য গ্রহণ করলে আমি বড় খুশি হই।"
তাই শুনে ভূত তো মহা খুশি! বললো, হুঁম,তাঁই কঁর,কঁত দিঁন ভাঁলো মঁন্দ কিঁছু খাঁই নেঁ বাঁপু...!
বুড়ি জিজ্ঞেস করলো, তা ভূত,তুমি কি কি খেতে চাও?
খুশিতে আটখানা হয়ে ভূত বললো, তা করো, কড়কড়ে করে ক'খানা ইলিশ, আর খুব করে কষিয়ে রসা রসা করে তপসের ঝোল...আহা! খাইনে সে কত কাল!
বুড়ি বললো,তবে তাই হোক, আসছে অমাবস্যার রাতে আমার কুঁড়ে ঘরে তোমার নেমন্তন্ন।
অতঃপর সেই অমাবস্যার রাতে বুড়ি ভূতের পছন্দের সব খাবারের সাথে হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লা খাওয়াবে বলেও কথা দিয়েছিল।
সেই অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে বুড়ি বাহির বাড়ির দাওয়ায় ভুতের পছন্দের সব খাবার খাওয়ালো।
তারপর পূর্ব পরিকল্পনা মতো বুড়ি,রসগোল্লার আস্ত হাঁড়ি ভুতের সামনে দিলো।বললো, নাও,বাপু,শেষ পাতে রসগোল্লা খাও,যত খুশি তত।
এদিকে ভুত তো মহা খুশি! একেবারে কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে এবার হাত বাড়ালো রসগোল্লার হাড়ির দিকে। যেই না ভুত হাড়িতে হাত দিল অমনি শুরু করল,চিৎকার।
আসলে বুড়ি হাড়িতে রসগোল্লা না,রেখেছিল গনগনে আগুনে পোড়া কয়লা! সেই কয়লায় পুড়ে ভুত মরে গেল।
পরদিন সকাল বেলা বুড়ি দেখল,দাওয়ায় পড়ে আছে একটি মরা কাক।
ভুত পুড়ে মরে কাক হয়ে পড়ে রইলো।
তারপর বুড়ি নিশ্চিন্তে তার স্বামীর ভিটেই ছেলে আর নাতিপুতি নিয়ে বাস করতে লাগলো।
------------------------------------------------------------------
শেষ... এবার ঘুমাও...!
Khub valo post via back koro like comment