কবিতাখানি

1 9
Avatar for Khairul28
4 years ago

এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।'

কবি জসীম উদ্দীনের এই কবিতাখানি পড়ে সেক্যুলার, অতি-আধুনিক নিধার্মিকেরা বিরহে কাতর হয়ে যায়। বাংলাভাষার অন্যতম সেরা এই কবিতায় তারা খুঁজে পায় স্ত্রীর জন্যে স্বামীর অকৃত্রিম, আদি, নিখাদ প্রেম আর ভালোবাসা। গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতায় রচিত এই কবিতা পড়ে তারা কোনোদিন প্রশ্ন তুলেনি, 'একটা কিশোরি বালিকা মেয়ে, যার কি না সবে পুতুল খেলার বয়স, পুতুলের বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় যে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলে, খেলাচ্ছলে সারা বাড়িতে যে অলংকার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বেড়ায়, অতোটুকুন বয়সে তার কিভাবে বিয়ে হতে পারে? তাকে যে বিয়ে করলো সে-ই বা কেমন অমানবিক?

কবি জসীম উদ্দীনকে, কিংবা তার কবর কবিতাকে কোনোদিন এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে তো হয়-ই নি, বরঞ্চ এই কবিতা বাংলাভাষার-ই অন্যতম সেরা কবিতার খেতাব লাভ করেছে।

এই কবিতার প্রশংসায় যারা গদগদ, সেই অতি-আধুনিক নিধার্মিকেরা যখন বুখারীর হাদিস থেকে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং 'আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিবাহের হাদিস ক'খানা পড়েন তখন তারা জাত গেলো জাত গেলো রব তুলে হৈচৈ ফেলে দেন। ছয় বছরের একজন কিশোরী, যার কি না পুতুল খেলার সময় তখন, তাকে কিভাবে বিয়ে করলো ইসলামের নবি?

গ্রামীণ বাস্তবতায় রচিত 'কবর' কবিতায় দাদীর কিশোরী-কালের বিবাহ-পরবর্তী পুতুল খেলার আহ্লাদী বর্ণনায় যেসব প্রগতিবাদীরা হেসে কুটিকুটি হয়, তারাই আবার নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং 'আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহার বিয়ের হাদিস পড়ে জাত গেলো বলে মূর্ছা যান।

আগ্রহী পাঠক বলতে পারেন, এ তো সাহিত্য আর বাস্তবতার তুলনা। এ তুলনা বেজায় বেখাপ্পা! কিন্তু সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন, সাহিত্যের সব রস, সব অনুষঙ্গই নিতান্ত মস্তিষ্কপ্রসূত কিংবা কাল্পনিক ধ্যান-ধারণার লিখিত রূপ নয়। সাহিত্য মাঝে মাঝে বাস্তবেরও অধিক। সাহিত্য মাঝে মাঝে সময়েরও দলিল। সেই নিরিখে জসীম উদ্দীনের 'কবর' কবিতা যতোখানি না কাল্পনিক, ততোখানিই তৎকালীন সমাজ-বাস্তবতার স্বরূপ।

মূলত বাল্য বিবাহ তথা ছোট বয়সে কন্যাদের বিয়ে দেওয়াটা আমাদের একেবারে নিকট অতীতের বাস্তবতা। নবিজীর বিয়ে নিয়ে যারা নাক সিঁটকোয়, তাদের পূজনীয় ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন, তখন দেবী মৃণালিনীর বয়স ছিলো দশ বছর। নিজের তিন কন্যাকেই রবীন্দ্রনাথ একেবারে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়েছিলেন। আর বাংলা সাহিত্যের জনক বঙ্কিমবাবু তো পাঁচ বছর বয়েসী কিশোরিকে বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন। এগুলো এই সেদিনের কথা।

আমাদের প্রগতিপাড়ার সুশীলেরা নিত্য উঠাবসায় যাদের পূজো করে ধন্য হোন, তাদের 'কিশোরি-বিবাহ' প্রথা সম্পর্কে কোন উচ্চবাচ্য কারো মুখে শোনা যায় না; দূর্নাম তো বহু দূর। কিন্তু ইসলামের নবি সেই পনেরো শ বছর আগে কেনো ছ'বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে করেছে, তার কাফফারা হিশেবে তাঁকে আজীবন নিন্দামন্দ শুনে যেতে হবে। আমাদের সুশীলীয় সুবিচার এটা!

2
$ 0.00
Avatar for Khairul28
4 years ago

Comments