ড্রিবলার লিওনেল মেসি- আনলাইক এ্যনি আদার

1 16
Avatar for Khairul28
4 years ago

ড্রিবলার লিওনেল মেসি- আনলাইক এ্যনি আদার

At Heart, Messi is fundamentally a dribbler.

বার্সেলোনায় সাইন করানোর আগে আর্জেন্টিনায় ছোট্ট লিওনেল মেসি রোজারিও মাঠে তার থেকে আকার-আকৃতিতে অনেক বড় সাইজের প্লেয়ারদের সাথেই পিচের ডীপে বল কালেক্ট করে একের পর এক চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে, একের পর এক প্লেয়ারকে ড্রিবল করে, কখনো কখনো নিজের টিমমেটদেরকেও ইগনোর করে দুর্দান্ত সব সোলো গোল দিচ্ছে এমন ভিডিও ইউটিউবে আমরা সবাই দেখেছি।

ন্যাচারালিই আর্জেন্টিনা বা কাছাকাছি লাতিন দেশগুলাতেও এরকম এটাকিং ফুটবলটাই বেশি কমন, বেশি টিপিক্যাল; যেটা ইউরোপের স্পেন বা হল্যান্ডে পুরোদস্তুর আলাদা। ৮৬'র বিশ্বকা জয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলার, প্লেয়ার & কোচ হিসাবে রিয়াল মাদ্রিদে লম্বা সময় কাটানো জর্জ ভলদানো এ-ই ব্যাপারটাকে বলেছিলেন "An Essentia factor in Argentine Football" ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, "একটা আর্জেন্টাইন এটাকিং প্লেয়ারের জন্য ভালো পাস দিতে পারার চেয়ে ভালো ড্রিবল করতে জানাটা বেশি জরুরী।

কিন্তু বার্সেলোনায় এসে যখন ক্রুইফের টোটাল ফুটবল ফিলোসোফিকে নিজেদের আইডিওলজি করে নেয়া লা মাসিয়ায় যোগ দিলেন মেসি, ইউথ টিমের কোচরা মেসিকে এক- দুই টাচের ফুটবলের দিকে এনকারেজ করতে লাগলেন! কিন্তু সাইড লাইনে থাকা মেসির বাবা জর্জ মেসিকে সর্বদা নিজের মত করে ওল্ড স্কুল আর্জেন্টাইন ফুটবল খেলতে সাহস জুগিয়েছেন। গুলিয়াম বালাগের বায়োগ্রাফিতে মেসিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লা মাসিয়া ইউথ টিমের কোচ ভিক্টর ভাস্কেজ বলেন -" লিও অবিশ্বাস্য ছিলো, একটু ডিপে এসে বল রিসিভ করেই সবাইকে ড্রিবল পাস্ট করা শুরু করতো। ডাজেন্ট মেটার অপনেন্টে কে, সবাইকে ড্রিবল করে যাওয়া, অত্যাশ্চর্য সব গোল করা; এভাবেই প্রতিটা ট্রেনিং সেশন শেষ করতো। যেহেতু আমরা মূলত পাসিং নির্ভর ক্লাব ছিলাম আমরা ওর মত কাউকে আগে দেখিনি ইউথ টিমে"।

মেসি যত বড় হতে লাগলেন মেসির অলরাউন্ড গেম ততোই ডেভলাপ করতে লাগলো কিন্তু মেসি ছিল বর্ন ড্রিবলার এবং সৌভগ্যবশত লা মাসিয়ায় আসার আগেই সে নিজের ড্রিবলিং স্কিলকে এমনভাবে ইউজ করতে শিখে গিয়েছিল যে লা মাসিয়ার কোচরাও আর মেসিকে ড্রিবল করতে বারণ না করে বরং তার অস্ত্রাগারের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র হিসাবেই দেখতে লাগলেন।

ইয়ং লিওনেল মেসি মূলত দুইভাবে ড্রিবল করতো, আইদার স্পীড ইউজ করে, এক্সেলারেশনের দুর্দান্ত ইউজ করে স্পেসে বল ক্যারি করা অথবা আরো দৃষ্টিনন্দন ভাবে বডি-ফেইন্ট, ফেক মুভমেন্ট, টার্নিং সহ আরো অসংখ্যা ফুট স্কিল দিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে চোঁখের পলকে বল নিয়ে বেরিয়ে চলে আসা।

মেসি নিজেই একটা ইউটিউব ভিডিওতে এক্সপ্লেইন করে বলেছিল - "আমি ডিফেন্ডারকে ট্রিক করে স্পেস খুজে নিয়ে বল সহ বেরিয়ে আসতে চেস্টা করি। প্রথমে নিজের মুভমেন্ট দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভেতরের দিকে বা বাইরের দিকে মুভ করে তারপর বডি ফেইন্ট করে সাইডওয়াইজ মুভমেন্ট। এরপর সে তখন ইম্ব্যালেন্সড হয়ে যাবে তখন বল নিয়ে পালিয়ে আসার চেস্টা করি"।

মেসির ড্রিবলিং এবিলিটি কতটা অবিশ্বাস্য সেটা বুঝার জন্য যদি কোন ডাটা থাকে সেটা হলো এটা- "লিওনেল মেসি এ ডাটা বায়োগ্রাফি"তে প্রোভাইড করা ৪৫২টা ম্যাচের ডাটার মধ্যে ৪৪৪ টা ম্যাচেই মেসি অন্তত একটা ড্রিবল এটেম্পট করেছে, মানে ৯৮.২% ম্যচেই মেস এক বা অধিক ড্রিবল করেছে।

ওয়ান v ওয়ান প্রতিটা ডিফেন্ডারকে বিট করতে পারার এবিলিটি অলোয়েজই মেসির ক্যারিয়ারের অন্যতম আকর্ষনীয় দিক। দ্বিতীয় ছবিতে স্ট্যাট দেখে মনে হতে পারে মেসির ড্রিবলিং স্ট্যাট ডিক্লাইনিং কিন্ত ইউ মাস্ট নো, ১.মেসিরই আনটাচেবল, আনম্যাচড গড লাইক ড্রিবলিং ডাটার সাথে তুলনা করছেন। ২.এটা মেসির প্লেয়িং ক্যারিয়ারের ক্রমাগত চ্যাঞ্জেরই ফসল (এটা নিয়ে বড় লেখা আসছে)। আশ্চর্যের কথা কারেন্ট ১৯/২০ সিজনেও মেসি ওয়াল্ডের বেস্ট ড্রিবলার।

ড্রিবলিং থেকে ফোকাস সরে যাবার পরেও মেসি কেন বিশ্বসেরা ড্রিবলার সেটা আরো ভালো ভাবে বুঝানোর জন্য একটা স্ট্যাট দিই; স্ট্যাটিক্যালি মেসির ক্যারিয়ারের ড্রিবলের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ সিজন ছিল ২০১৭/১৮ (২০০৪ সালে মেসি মাত্র ৯২ মিনিট খেলেছিল তাই সেই সিজন ইগনোর করলাম)। ১৭/১৮তে মেসি প্রতি ৯০ মিনিটে ৭.৩ টা ড্রিবল এটেম্পট করেছে যেটা ইউরোপের টপ ফাইভ লীগে শুধুমাত্র নেইমার এবং ফিলিপে এন্ডারসন অতিক্রম করতে পেরেছিল (ডাটা StatBomb)। চিন্তা করেন, ড্রিবলিং নাম্বারের দিক দিয়ে মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সিজনেও ইউরোপের টপ থ্রিতে সে!

অন্যদিকে ড্রিবলিং -এর দিক দিয়ে মেসির সেরা সিজন ছিল প্রায় একযুগ আগে ২০০৭-০৮ সিজনে। বার্সেলোনার জন্য খুবই খারাপ এ-ই সিজনে লীগে তৃতীয় হতে হয়েছিল বার্সাকে সেই সুবাদে কোচ ফ্রাংক রাইকার্ডের বিদায় & লিজেন্ডারি পেপ গার্দিওলার আগমনও হয়েছিলো যেটা কিনা পরে মেসিকে & বার্সেলোনাকে সাফল্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার নিয়ে গিয়েছিল। ধুকতে থাকা রাইকার্ডের লাস্ট সিজনের একমাত্র পজেটিক দিক ছিল লিওনেল মেসি, যদিও সে সিজনের ৬টা নন পেনাল্টি গোল মেসির সিনিয়র ক্যারিয়ারের সর্বনিম্ন ট্যলি।

সেই সিজনে মেসি অবিশ্বাস্য ১১.৮ টা ড্রিবল এটেম্পট করেছিল প্রতি ৯০ মিনিটে তার মধ্যে ৮.৬টা সাক্সেস ছিল মানে ফ্রিকিং ৭৩% সাক্সেস রেট। আরো আশ্চর্যের বিষয় ৭৩% সাক্সেসরেট ছিল ক্যারিয়ারের থার্ড বেস্ট, ২০০৫/৬ সালের ৭৬% ছিল হায়েস্ট। অবেক পরিমান ড্রিবলিং সাথে অবিশ্বাস্য সাক্সেসরেট বাদ দিলেও আরো ইন্টারেস্টিং দিক হলো ড্রিবলগুলার লোকেশন এবং কিভাবে ওভার দ্য ইয়ার মেসির ইভ্যুলেশনের সাথে ড্রিবলিং এটেম্পটের লোকেশনও চ্যাঞ্জ হয়েছে। (তিন নাম্বার ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন)

এখানে বলে রাখা ভালো মাঠের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ড্রিবল করার জন্য ভিন্ন স্কিলসেট লাগে, ওয়াইড পজিশনে ড্রিবল করার জন্য যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্পিড, ডি বক্সের বাইরে টাইট পজিশনে দরকার ক্লোজ কন্ট্রোল, টাচ এবং মুভমেন্ট।

২০০৭/০৮ ছিল মেসির পিউর ট্রেডিশনাল উইং সিজন এরপরে যতই সময় অতিক্রম হয়েছে মেসিও আস্তে আস্তে ডি-বক্সের দিকে পজিশনওয়াইজ মুভ করেছে।

যাইহোক হাই ড্রিবলিং নাম্বার থাকাটা ভালো কিন্তু হাতেম বিন আরফা, এলান সেইন্ট মেক্সিম, এডানা ট্রায়োরে কিংবা হালের ডেউলাফিউ- ভিনিসিয়াচদের দেখলেই বুঝতে পারবেন হাই ড্রিবলিং নাম্বারের চেয়েও ড্রিবলিংকে ইউজ করে কি আউটপুট বের করছেন সেটাই বেশি ইম্পরটেন্ট।থ্যাংকফুলি মেসি এক্সট্রাঅর্ডিনারি ড্রিবলারইনা মেসির আউটপুটও এক্সট্রাঅর্ডিনারি।

চার নাম্বার, ছবিতে এ-ই সিজনের ড্রিবলিং ইউজ করে চান্স ক্রিয়েটের চার্টটা দেখলেই বুঝতে পারবেন, মেসি যেখানে পার নাইনটি ৯টার মত ড্রিবল করে পার ড্রিবল ০.২৩ চান্স ক্রিয়েট করেছে সেখানে ৫+ ড্রিবল এটেম্পট করা কেউও মেসিকে ছুতে পারেনি। নেইমার, ভিনিসিয়াচ, এডামা ট্রায়োরের মত হাই ভলিউমের কেউতো ০.১৪ চান্স ক্রিয়েট পার ড্রিবলিংই পেরুতে পারেনি। তাছাড়াও মেসির এক্সট্রঅর্ডিনারি গোল আফটার ড্রিবল স্ট্যাট আছে

(ছবি পাঁচ)
ড্রিবলিং এ-র মাধ্যমে আউটপুট প্রডিউস করার ক্ষেত্রে মেসির সেরা সিজন ছিল ২০১১/১২ এবং ২০১২/১৩। ও-ই দুই সিজনে লীগে ৫০+৪৬ গোল করেছিল মেসি যার মধ্যে অন্তত ২১ গোল ড্রিবলিং এ-র মাধ্যমে মানে নিজেই ড্রিবল সম্পন্ন করে অতঃপর শর্ট নিয়ে গোল করেছে আরো ৬টা এসিস্টো আসে সরাসরি ড্রিবলের মাধ্যমে। ১১/১২তে ড্রিবলিং এর মাধ্যমে ০.৩৭ গোল কন্ট্রিবিউশন, ১২/১৩ তে ক্যারিয়ার হায়েস্ট ০.৩৮ পার নাইনটি। যারা এসব স্ট্যাট নিয়মিত দেখেন তাদের চোঁখ যে কপালে সেটা বুঝতে বাকি নেই আমার। বাকিদের জন্য, এতো বেশি ভলিউমে ড্রিবল করব এটা একটা গডলাইক স্ট্যাট, আন ম্যাচড, আনহার্ডঅফ, আন থিংকেবল। অথচ ওই সময়টাতেই হ্যাটাররা অহেতুক ড্রিবল বলতো! ভাবা যায় কি লেভেলের গর্ধব।

এসব স্ট্যাটের গন্ডি থেকে বেরুলেই আসলে লিওর ড্রিবলিং এ-র সৌন্দর্যটা চোঁখে পড়ে।মেসির ড্রিবলের পাটার্ন বর্ননা করার কিছু নেই তবুও তিনটা গোলের করা মনে করিয়ে দিই ; প্রথমটা এল ক্লাসিকোতে বুস্কাটের ইজিয়েস্ট এসিস্টে করা মেসির সোলো রান! যাথারীতি নিচে নেমে এসে বুস্কাটের থেকে বল পায় এরপর কি অস্বাভাবিক ক্ষিপ্রতায় একের পর এক সার্চ, ট্যালেক বডি ব্লক অতিক্রম করে ইকার ক্যাসিয়াসের জালে স্লাইড করে দেয়া বলটা। এরকম গোল মেসির অনেক আছে তাও গেটাফের সাথে সেই ম্যাজিকেল গোলটাও , বিলবাওয়ের সাথে কোপার ফাইনালেটা এই প্যাটার্নের সেরা গোলগুলার মধ্যে থাকবে।। তবে সময়ের সাথে লম্বা ভার্টিক্যাল স্পেস গোল কিছুটা কমেছে মেসির।

সেকেন্ড গোলটা টাইপের গোল হলো মেসির রাইট উইং বা মাঠের রাইট সাইডে বল রিসিভ করে বক্সের বাইরে আড়াআড়ি ড্রিবল করে বক্সের বাইরে থেকে শর্ট, এমন অসংখ্য গোল আছে মেসির।

থার্ড টাইপের গোলের উদাহরণের জন্য চব্বিশ ঘন্টাও যাওয়া লাগেনা। বক্সের ঠিক বাইরে বা বক্সে বল রিসিভ করে ড্রিবল করে নিজেকে শুটিং পজিশনে নিয়ে গিয়ে ম্যাজিক্যাল টাচ।কখনো চীপ, কখনো কীপারকে বোকা বানিয়ে একদিকে ডাইভ করে বাধ্য করে অন্যপাশে শর্ট, কখনো কিপারকেও ড্রিবল করে বা টিপিক্যাল স্পিডি শর্ট যেটা থামানোর সাধ্য নেই কারো।

মেসির ড্রিবলের আরেকটা দিক ড্রিবলের স্প্রিড, ডাজেন্ট ম্যাটার কোথায় বল পেয়েছে, ডাজেন্ট ম্যাটার কি আউটপুট চাচ্ছে সে, বল পেয়েই এমন ক্ষিপ্রতায় দৌড়ে যায় যেন মেসি নিজেই গোলটা কোরিওগ্রাফ করেছে। যেন সে জানে কোন দিক থেকে ট্যাকেলটা আসবে, কে তাকে বডি ব্লক দিবে। স্পিডের ব্যাপারটা স্টেটেও লক্ষ্যনিয়, ২০১১/১২ & ২০১২/১৩তে ড্রিবল করে করা ২১টা গোলের কোনটাতেই মেসি ৮ সেকেন্ডের বেশি বল নিজের কাছে রাখেনি।

লিওনেল মেসির ড্রিবলিং ফুটবলের সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলার একটা। কী সুন্দর , কী সাবলীল, কতো ন্যাচারাল অথচ কি ভয়ংকর ❤

2
$ 0.00
Avatar for Khairul28
4 years ago

Comments

wonderful writing

$ 0.00
4 years ago