#হ্রদ হল ভূ-বেষ্টিত লবণাক্ত বা মিষ্টি স্থির পানির বা জলের বড় আকারের জলাশয়। বিভিন্ন ভূ-তাত্ত্বিক কারণে মাটি নিচু হয়ে হ্রদের সৃষ্টি হতে পারে।
বৈকাল হ্রদ বিশ্বের গভীরতম মিষ্টি পানির হ্রদ।
আসুন আমরা এই হ্রদ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।
বৈকাল হ্রদ "সাইবেরিয়ার নীল নয়ন" বা "সাইবেরিয়ার মুক্তা" নামে পরিচিত। সঞ্চিত পানির আয়তন অনুযায়ী এটি বিশ্বের বৃহত্তম মিষ্টি পানির হ্রদ। এখানে মিষ্টি পানির পরিমাণ উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেক্সের সবগুলি হ্রদে সঞ্চিত মিষ্টি পানির চেয়ে বেশি। পৃথিবীর ১৯ ভাগ বিশুদ্ধ পানি এই হ্রদে রয়েছে। বৈকালে পানি রয়েছে ২৩ হাজার কিউবিক কিলোমিটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের সব কয়টি বড় হ্রদের মোট পানির চেয়ে বেশি।
বৈকাল হ্রদ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন হ্রদ। বৈকাল হ্রদ প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর পুরনো; এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদ। এটির চারদিক পাহাড় ঘেরা। ধারণা করা হয়, ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন বছর আগে ‘বৈকাল ফাটল এলাকা’র ভূগর্ভে তীব্র আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে একপ্রকার ফাটলের সৃষ্টি হয়; আর তারই ফলে এই বিশাল জলাশয়— বৈকাল হ্রদের সৃষ্টি।
আয়তনের মতো গভীরতার বিচারেও এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ হ্রদ। বিশালতার কারণে প্রাচীন চীনা পাণ্ডুলিপিতে এই হ্রদকে ‘উত্তর সাগর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫ লাখ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ২ লাখ ১৬ হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এর অবস্থান।হ্রদটির আয়তন প্রায় ৩১,৫০০ বর্গকিলোমিটার।
এই হ্রদ লম্বায় ৬৩৬ কিলোমিটার বা ৩৯৫ মাইল; চওড়ায় সর্বোচ্চ ৭৯ কিলোমিটার বা ৪৯ মাইল।
এর গড় গভীরতা ৭৪৪.৪ মিটার বা ২ হাজার ৪৪২ ফুট; আর সর্বোচ্চ গভীরতা ১ হাজার ৬৩৭ মিটার বা ৫ হাজার ৩৮৭ ফুট। সৈকত বা বেলাভূমির দৈর্ঘ্য ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার (১ হাজার ৩০০ মাইল)। বৈকাল হ্রদ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ১৮৬.৫ মিটার বা ৩ হাজার ৮৯৩ ফুট নিচে।
বহুকাল ধরে ইউরোপের মানুষ সাগরসদৃশ এই হ্রদের খবর জানতো না। রাশিয়া এই অঞ্চলে তাদের রাজ্য সম্প্রসারিত করলে সর্বপ্রথম কুরবাত ইভনিভ নামক এক রুশ অনুসন্ধানী গবেষক ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে এই এলাকায় পৌঁছেন।
এটি প্রকৃতির অপরূপ বিস্ময় ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৈকাল হ্রদ এবং তার পাড় জীব-বৈচিত্র্যের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। হ্রদের পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ১ হাজার ৭০০’রও বেশি জাতের গাছপালা ও জীবজন্তু রয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।
এই হ্রদে রয়েছে ছোট-বড় ২৭টি দ্বীপ। সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম ওলখন, যা লম্বায় ৭২ কিলোমিটার। বৈকাল হ্রদ পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ স্বচ্ছ পানির হ্রদ। তিনশরও বেশি নদীর পানি এসে এই হ্রদে পড়েছে। কেবল মাত্র নিম্ন আঙ্গারা নদীর মাধ্যমে হ্রদের পানি বাইরে নিষ্কাশিত হয়।
প্রকৃতির এক আশ্চর্য বিস্ময় এই হ্রদটি মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ এবং এর আশেপাশের অরণ্য অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের এক বিপুল প্রাকৃতিক সম্ভার।
এখানে রয়েছে ওমূল, গোলেমিংকা, স্যামন প্রভৃতি মাছ এবং নানাজাতের শামুক, শ্যাওলা ইত্যাদি। বৈকাল হ্রদের পানি অত্যন্ত অক্সিজেনসমৃদ্ধ; হ্রদের পাঁচ হাজার ফুট গভীরেও জলজ প্রাণীর বাস আছে।
এর পূর্ব পাড়ে বাস করে বুরিয়াত নামক আদিবাসী সম্প্রদায়। বৈকাল শীতপ্রধান এলাকা। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; আর গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে হ্রদের পানি বরফ হয়ে পুরো আস্তরণ তৈরি হয়; তখন তার ওপর দিয়ে দিব্যি হেঁটে যাওয়া যায়।
প্রকৃতির বিস্ময় বৈকাল হ্রদে সারা পৃথিবীর অনুসন্ধানী গবেষক আর সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে সারাবছর। ১৯৯৬ সালে এটিকে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করা হয়।
তথ্যসূত্র- গুগল, প্রথম আলো।
ছবি- গুগল।