মানবীয় আচার- পদ্ধতি, শিক্ষা-দীক্ষা, মানসিক উন্নতি, পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব, এসবের ধারা সমন্বয়ে সৃষ্টি এক অপূর্ব জীবন ধারাই হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি সমগ্র সমাজের যৌথ সৃষ্টি, সম্মিলিত সফলতা, জাতির প্রানচ্ছন্দের কর্মময় অভিব্যঞ্জনা।
যে জাতি জীবিত আছে সে জাতি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলছে একটি জীবন্ত সংস্কৃতির বহমান ধারা। সংস্কৃতিই জাতিয় প্রানময়তার সামগ্রীক অভিব্যক্তি। মানুষ তার চলনে ,পোষাকে, খেলা-ধুলায়, ধর্ম-নীতিতে প্রতি মূহুর্তে বিচিত্র সংস্কৃতির ধারা রচনা করে চলছে। রক্ষা করছে সংস্কৃতির প্রবহমানতা।
প্রকৃতির আবারিত প্রসন্ন অঙনেই ছিল সংস্কৃতির বিচিত্রমুখী অভিব্যক্তি। এখানে ষড়ঋতুর বিচিত্র নৃত্যলীলা। সৃষ্টি ও ধ্বংসের লীলা চপল প্রকৃতির কোলে জীবন ও মরনের অনন্ত দোলার মধ্যে বেঁচে থাকে সংগ্রামশীল মানুষ। প্রকৃতির বিচিত্র মহিমাই বাংলার সংস্কৃতিকে বিশিষ্ট মর্যাদায় ভূষিত করেছে। দিয়েছে স্বতন্দ্র মানসিকতা।
ধর্ম সংস্কৃতির এক অন্যতম প্রানবস্তু। বাঙালী সংস্কৃতির মূলে রয়েছে এক সুগভীর ধর্মবোধ ধর্মপ্রবনতা। ধর্মই সমাজের অন্যতম নিয়ন্ত্রন শক্তি।ধর্মকে আশ্রয় করে তার সংস্কৃতির বিকাশ ও সমৃদ্ধি । পারস্পারিক বিরোধ নয়, সমন্বয়ের বিশ্বাসেই গড়ে উঠেছে এক সুবিশাল সংস্কৃতি।
বাঙালীর সংস্কৃতির অমলিন স্বাক্ষর তার পট-অঙ্কনে, গৃহ নির্মান পদ্ধতিতে, মৃৎ শিল্পে, অলঙ্কার শিল্পের নিপুন কারুকার্যে, চাল-চিত্রের রঙে- রেখায়, আলপনায়, গৃহশয্যায়। বাংলার মেয়েদের নকশি কাঁথা আজো অপতিদ্বন্দী। এ ছাড়া হাড়ি কলসি বাসন বস্রের সূক্ষ শিল্পকর্মে, স্বর্নকারের জরোয়া শিল্পে,শাখারীর শঙ্খ শিল্পকর্মে রয়েছে বাঙালী সংস্কৃতির স্মরনীয় স্বাক্ষর।
তবে বাঙালীর দুঃখ রাত্রির পরিক্ষা আজো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে জানা নেই। তাই দুর্বল দেহ যেমন রোগের সহজ শিকার হয়, অপসংস্কৃতি ঠিক তেমনি বাংলার সমাজ দেহকে প্রভাবিত করছে। আশা করছি বাঙালী হৃদয়ে যে সহজাত সংগ্রামী মনোভাব রয়েছে তার প্রভাবে সে তার সুদীর্ঘ কালের সংস্কৃতির ঐতিয্যের ধারাটিকে নতুন যুগের নতুন পটভূমির উপর দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে প্রভাহিত করতে পারবে