Please subscribe me fast
মিশরের কথা উঠলেই মনে ভেসে ওঠে ধুঁ ধুঁ করা মরুভূমিতে দাড়িয়ে থাকা শত বছরের সাক্ষী পিরামিড। কিংবা মমি করে রাখা এক সময়ের প্রবল প্রতাপশালী রাজ রাজরার দল। তবে আপনি যদি ফুটবল ফ্যান হন, আপনি মিশরকে চিনবেন একটু, অন্যভাবে, ‘মোহাম্মদ সালাহর’ দেশ হিসেবে।
কে এই সালাহ্? এই একটা বছর আগেও ইতালিতে খেলতে আসা গড়পড়তা আরেকজন ফুটবলার সালাহ কিভাবে পরিণত হলেন গ্লোবাল সুপারস্টারে, আসুন সালাহর গল্পটা শোনা যাক।
লিভারপুলের রাইট উইং এ ঝড় তোলা সালাহ জন্মেছিলেন মিশরের ছোট গ্রাম ‘বাসিয়নে’। তার গ্রামে ফুটবল ক্লাব ছিল না,ছিল না অনুশীলনের কোন জায়গা। ছয়টা বাস পরিবর্তন করে কায়রোতে পৌছে অনুশীলন করতে হতো তাকে। সদা হাস্বোজ্জল সালাহকে দমাতে পারেনি কিছুই। ভোরবেলা উঠে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ট্রেনিং গ্রাউন্ডে সবার প্রথমে সালাহকেই বল নিয়ে জাগলিং দেখা যেত। হয়তোবা মেসির মতো অতিমানবীয় প্রতিভা সালাহর ছিল না, কিন্তু একটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে অদম্য পরিশ্রম করে যাওয়ার অভ্যাসটা তার ছিল।
সম্প্রতি লিভারপুলে অফিসিয়াল সাইটে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সালাহ বলেন,”সকাল নয়টায় কায়রোর পথে রওনা দিয়ে দুপুর দুইটা-আড়াইটায় পৌঁছাতাম আমি, সপ্তাহে পাচ দিন আমাকে ট্রেনিং করতে হতো, বাসায় ফিরতাম রাত দশটায়, এসে ঘুমিয়ে পড়তাম।”
অদম্য পরিশ্রম ফল কোন না কোন সময় এনেই দেয়।সালাহ সুযোগ পেলেন কায়রোর একটা ক্লাব এল মওকলুনের অনুর্ধ্ব-১৭ দলে।প্রতিনিয়ত প্রতিভার সাক্ষর রেখে যাওয়ার ফলশ্রুতিতে সুযোগ পেলেন মিশর জাতীয় অনুর্ধ্ব -১৭ দলে।সে আসরে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে একটি গোল আদায় করেন সালাহ।সেসময় মিশর ভ্রমণে ছিলেন সুইস ক্লাব এফসি বাসেলের একজন এজেন্ট।তরুণ সালাহ দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজ ক্লাবকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাইন করাতে উপদেশ দেন তিনি। এজেন্টের কথা শুনে মিশরের অনুর্ধ্ব-২৩ দলের সাথে একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের আয়োজন করে বাসেল। সে ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোল করেন সালাহ। ব্যস! আর সময় নষ্ট না করে সালাহকে দলে লুফে নেয় এফসি বাসেল।সুইজারল্যান্ডের ফুটবল লিগ মাতানো সালাহর দিকে মনোযোগ দেয় ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি।ঠিক একই চিত্রনাট্যে, ইউরোপিয়ান কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির বিরুদ্ধে অসাধারণ পার্ফমেন্স দেখিয়ে চেলসিকে নিজেকে সাইন করাতে যেন এক প্রকার বাধ্য করেন সালাহ।
২০১৪ সালে চেলসির হয়ে সাইন করার পর উড়তে থাকা সালাহর ক্যারিয়ারে দেখা দেয় দু:সময়ের ঘনঘটা।চেলসির হয়ে দশ ম্যাচে মাত্র দুই গোল করে বাদ পড়ে যান চেলসির তৎকালীন কোচ জোসে মৌরিনহোর গুড বুক থেকে।পরের সিজনে ইতালিয়ান ক্লাব ফিরোন্টিনার হয়ে ধারে খেলেন তিনি।সিরিআতে ভালো পার্ফমেন্সের জন্য সালাহ কে দলে ভেড়ায় এফসি রোমা।
এ পর্যন্ত সালাহ মিশরের সেরা খেলোয়াড় হলেও,ইউরোপিয়ান ফুটবল আঙ্গিনায় ছিলেন মিডিওকার আরেকজন ফুটবলার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ব্যার্থতার ট্যাগ তো রয়েছেই। ২০১৭ সালে লিভারপুল বস ক্লপ হটাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেন,মিশরীয় জাদুকরকে তার দলে লাগবে।লিভারপুলের ট্রাডিশনাল সমর্থকদের আপত্তির মুখে সালাহকে দলে ভেড়ান ক্লপ।
প্রিমিয়ার লীগে যেন নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করেন সালাহ। বছর পাঁচেক আগে চেলসির হয়ে চরম ভাবে ব্যর্থ সালাহ,পাঁচ বছর পরেই যে লিভারপুলের হয়ে গোল্ডেন বুট নিয়ে টেক্কা দিবেন লিওনেল মেসির সাথে,এমন গল্পটা হয়তো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গল্পকারও লিখতে পারতেন না। যে লিভারপুল ফ্যানরাই তার সাইনিং নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল,তারাই তাকে নিয়ে গর্ব করে।কিছু কিছু জরিপের মতে সালাহ গ্রেট ব্রিটেনে মুসলিম হেইট কমিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই।
ফুটবলার সালাহ ও ব্যক্তি সালাহ পুরোপুরি একই। ব্যক্তিজীবনে নিজের দাতব্য কর্মকান্ড এবং মহাভুবনতার জন্য তিনি যেখানেই খেলেছেন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সালাহ এর ধার্মিকতা সকলের নজর কেড়েছে। ইউরোপে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করা ফুটবলার হয়েও নিজেকে আবদ্ধ রেখেছেন ইসলামের শৃঙ্খলার মধ্যে। সালাহর হাতে অনেক সময় দেখা যায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরীফ। বিমান ভ্রমণ সময়ের সময় নিয়মিত পাঠ করেন কুরআন। নিয়মিত পড়েন নামাজ।
খ্যাতির শীর্ষে উঠে, চরম ব্যস্ততার মাঝেও যে নিজের ধর্ম পালনে অবিচল থাকা যায় তা দেখিয়ে চলেছেন মোহাম্মদ সালাহ। ক্রিকেটে যেমন দেখাচ্ছেন দঃ আফ্রিকার হাশিম আমলা। মাঠে মোনাজাতরত সালাহকে দেখা খুব একটা দুর্লভ দৃশ্য না। গোল করে তার অন্যতম উদযাপন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সিজদাহ দেয়া
দীর্ঘ দুই যুগের প্রিমিয়ার লীগ খড়া কাটানোর জন্য সালাহকে দলে ভিড়িয়েছিল অল রেড রা। সালাহকে ঘিরে স্বপ্ন বোনা শুরুও করেছে ফ্যানরা। সালাহ পারবেন কি তাদে স্বপ্ন পূরণ করতে নাকি তার আগেই পাড়ি জমাবেন রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সার মত বড় দলে, এই প্রশ্নের জবাব সময়ই দিয়ে দিবে।
কেমন লাগলো মোহাম্মদ সালাহ কে ??
তার খেলা এবং তার এসব আচরণ
আপনার কেমন লাগে তা কমেন্ট করে
জানান👇👇
ভালো লাগলে লাইক দিন ধন্যবাদ 😍
Nice