গল্পঃ বোকা _বাবুই

0 5

:- কাঁদছিস কেন দিদি ভাই?

:- বুবু'র জন্য খুব খারাপ লাগছে।

:- আমার তো তোর জন্য খারাপ লাগছে। বড় দিদিভাইয়ের জন্য তো তুই কাঁদছিস, যখন তোর বিয়ে হয়ে যাবে তখন তো কেউ থাকবেনা এভাবে নাক মুছে মুছে কান্না করার। হি হি হি,,,,,

:- চুপ করো বুড়ি, আমি জানি এ বাসায় আমাকে কেউ আদর করেনা, তাই বলে আমাার কষ্টের সময়ও হাসতে হবে? আরেকবার হাসলে তোমার প্লাস্টিকের দাঁত খুলে নিয়ে স্টোর রুমে রেখে আসবো। বুবু নাই, খুঁজে দেবে কে? তাই সাবধান বুড়ি!

:- 'কেউ আদর করেনা' কথাটা কিন্তু বড় দিদিভাইও বলতো। কিন্তু দেখ, তোর মা রান্না করছে আর তার মেয়ের জন্য চোখের পানি মুছে মুছে আচল ভেজাচ্ছে। তোর বাবা দেরি করে বাসায় ফেরেও অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে বসে আছে। আর তুই,, যে কিনা সারাটাজীবন মেয়েটাকে জ্বালিয়েছিস, এখন বসে কেঁদে কেঁদে চোখ-নাক সব লাল করে ফেলেছিস। ভালোবাসাটা এমনই রে দিদিভাই, অক্সিজেন এর মতো। সঙ্কটেই মর্ম উপলব্ধি হয়।

:- আচ্ছা দাদিমা, বুবুও কি আমাদের মতো কষ্ট পাচ্ছে? খেতে বসে, টিভি দেখার সময়, রাতে ঘুমানোর আগে আমাদের কথা মনে করে কান্না করছে?

:- না, বিধাতা মেয়েদের মাঝে রাজ্যের কোমলতার সাথে নির্মম রূঢ়তাও দিয়েছেন। দিয়েছেন ভুলে যাওয়ার ভয়ংকর পারদর্শিতা। প্রিয়জনের বাহুতে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার উষ্ণতা পেয়ে আজন্মকালের বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নিমিষেই ভুলে যেতে পারে মেয়েরা। তুইও ভুলবি, টেনশন নিস না! হি হি হি,,,

:- বুড়ি, আবার?

:- তবে রে, বড় নাতজামাইটাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। এই ছেলে আমার দিদিভাইকে কষ্ট দেবেনা।

:- তুমি কী করে বুঝলে?

:- অভিজ্ঞতা, বুঝলি? অভিজ্ঞতা! বিয়ের পর দিদিভাই প্রথম যখন নাইয়র এসেছিলো, জামাই তাকে একটা চিঠি লিখেছিলো। চিঠিটা আমি আর বড়দিদিভাই একসাথে বসে পড়েছিলাম। হাতের লেখা ও কথাগুলো একদম তোর দাদুভাইয়ের মতো। চিঠিটা আমি আমার কাছে রেখে দিয়েছি। পড়বি?

:- হায়রে দুষ্টু বুড়ি! তুমি একটা জিনিশ! কই দাও দাও পড়ি!

:- তার আগে আমাকে ফ্রিজ থেকে একটা চমচম এনে দে। তোর বাবা যেন না দেখে।

:- সেয়ানা বুড়ি! আচ্ছা বসো আনছি।,,,,,, এই নাও তোমার চমচম, এখন দাও।

:- এই নে, জোরে জোরে পড়, আমিও শুনি। কথাগুলো যত শুনি ততো ভালো লাগে।

"হ্যালো,,হ্যালো,,,

হ্যালো ওয়ান টু থ্রি ফোর মাইক্রোফোন টেস্টিং,, নীলিমা শুনতে পাচ্ছো? শুনতে পাইলে পাও না পাইলে নাই, আমার বলা আমি বলে যাই, বেশ কয়েকদিন বলতে না পারায় কথাগুলো প্রেসক্লাবের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে মানব বন্ধন করা শুরু করে দিয়েছে। মানব বন্ধন শেষে কয়েক সেকেন্ডের আল্টিমেটাম দিয়েছে, এর ভেতরে না বললে নাকি শাহবাগ মোড় বন্ধ করে দেবে। একজন নিরীহ দেশপ্রেমী আদমি হয়ে কী করে শহরের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট বন্ধ হয়ে যেতে দিতে পারি বলো? তাই সঙ্গে সঙ্গে ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে তোমাকে বলা শুরু করলাম। এর মাঝে অবশ্য অফিসের পিয়ন আক্কাস হাল্কা ডিস্টার্ব করতে এসেছিলো, তার নাক বরাবর একটা ঘুষি না দিয়ে বিনয়ের সুরে বলে দিয়েছি 'গেট লস্ট'। এখন আসি কাজের কথায়, যে কথা গুলো আত্মপ্রকাশের দাবি নিয়ে মানব বন্ধন করেছে ও শাহবাগ দখল নেবার আল্টিমেটাম দিয়েছে, সেই কথাগুলো হলো, 'আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ,'আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ,'আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ,'আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ,'আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ!'

আর শেষের আন্দোলনকারী কথাটা বাংলায় অনার্স করা শান্তিনিকেতনি ভাবধার লোক, সে'ই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলো। সে হলো 'আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি নীলিমা।'

যাক, এবারের মতো শাহবাগ বেঁচে গেলো।

ইতি,

তোমার বোকা বাবুই!"

চিঠি পড়া শেষ। দাদি-নাতনী দুজনের গালেই হাসি, তবে চোখ ভেজা। লজ্জায় কেউ চোখে লেপ্টে থাকা আনন্দাশ্রু মুছতেও পারছেনা। দাদিমা তার ছোট দিদিভাইকে বলছে:- এমন ভালোবাসা পাবার জন্যই প্রতিটা মেয়ের জন্ম। খাদ্যের অভাবে মানুষ হয়তো মরেনা কিন্তু ভালোবাসার অভাবে আত্মার মৃত্যু ঘটে নিশ্চিত। এর অভাব কোনো মেয়ের জীবনে না আসুক! পৃথিবী ভালোবাসায় তলিয়ে যাক!

গল্প- #বোকা_বাবুই.

1
$ 0.00

Comments