পোস্টে হা হা দেয়ার শাস্তি

4 22
Avatar for Joya1998
3 years ago

পরন্ত বিকেলে টিউশনি শেষে আমি হেলেদুলে ফেসবুকিং করতে করতে বাসায় ফিরছিলাম।ঠিক ঐ মুহূর্তে আমাদের এখানকার সবচেয়ে সুন্দরী।অর্থাৎ আপনার আমার মতো সকল সিঙ্গেল ছেলেদের মিঙ্গেল হওয়ার আশা ভরসা সুন্দরী মৌয়ের ছেঁকা খাওয়ার পোস্ট চোখে পড়লো।খুশিতে নাচতে নাচতে দিলাম হা হা রিয়েক্ট।

এভাবে মনের আনন্দে হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে মৌ'দের বাসার সামন দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম।হাঠাৎ পিছন দিক থেকে কে যেন মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠে আমার নাম ধরে ডাক দিল।আমি পিছনে ফিরতেই ভোরকে গেলাম।

একি! মৌ! না জানি আজ তার সিরিয়াস পোস্টে হা হা দেওয়ার অপরাধে ক'টা চড় খেতে হয়।

এসব ভাবতে ভাবতেই সে কাছে আসলো।তাকে দেখে ভয়ে আমার শরীর ভূকম্পনের মতো কাঁপতে লাগলো।আমি থাপ্পড়ের চিন্তা মাথায় রেখে দুই গালে দুই হাত রেখে আমতা আমতা করে তাকে বললাম, "প্লিজ মৌ আমাকে মেরো না।এবারের মতো আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।আর কখনো তোমার পোস্টে হা হা রিয়েক্ট দিব না।এইযে কান ধরছি।"

আমার এমন ন্যাকাপনা কান্ড দেখে মৌ ফ্যালফ্যাল করে হাসতে হাসতে বলল,

"ধুর বোকা।কখনো দেখেছ হা হা রিয়েক্টের জন্য কেউ কাউকে মারে।শুধু শুধু ভয় পাচ্ছ।ভয় পেয় না।"

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললাম যাক বাবা এবারের মতো বেচে গেলাম।

মৌ এবার গলা খাঁকারি দিয়ে আমার হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে বলল,

"এইযে মিস্টার চিরকুটটা বাসায় খুলে পড়বে।খবরদার ভূলেও এখানে খুলবে নাহ।"

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, "আচ্ছা। "

"ওকে সন্ধা লেগে আসতেছে এখন বসায় যাও।" (কথাটা বলেই সে বাসায় প্রবেশ করলো।)

আমিও পুনরায় বাসার উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করলাম।হাঁটতে হাঁটতে মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাকা খেতে লাগলো।"যে এই চিরকুটের মধ্যে কি আছে? তার মধ্যে যদি তেলাপোকা থাকে? আমি তো আবার মেয়েদের মতো তেলাপোকাকে ভিষণ ভয় পাই।"

এসব ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষন পর বাসায় আসলাম।রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করতেই বৌয়ের দেওয়া থুক্কু মৌয়ের দেওয়া চিরকুটের কথা মনে পড়লো।বুক পকেট থেকে চিরকুটটা বের করে খুলে পড়তেই চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল।বুকের বা পাশে হৃদপিণ্ড তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করলো।

একি!আমার ক্রাশ মৌ আমাকে প্রপোজাল পাঠিয়েছে।ওহ মাই গড!আমি জাস্ট ভাবতে পারতেছি না।মনে হচ্ছে খুশিতে নাগিন ড্যান্স করি।

আচ্ছা আমি কি আগের চেয়ে একটু সুন্দর হয়ে গেছি? যে কারনে মৌ আমাকে প্রপোজাল পাঠিয়েছে।তাদের বাসার সামন দিয়ে তো প্রতিদিন টিউশনি করাতে যাই।কই সে তো আগে কখনো আমার দিকে ভুলেও চোখ তুলে তাকাতো না।

নিজেকে বারবার আয়নাতে দেখতে লাগলাম।হ্যাঁ আসলেই মনে হয় একটু সুন্দর হয়ে গেয়েছি।নিজেকে কেমন যেন ফর্সা ফর্সা লাগতাছে।

কিছুক্ষন পর চিরকুটের অপর পৃষ্ঠায় মৌয়ের দেওয়া নাম্বারটাতে ফোন দিয়ে প্রায় পনেরো বিশ মিনিট মৌয়ের সাথে হেসে আনন্দে কথা বললাম।

পরের দিন সকালে মৌকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গেলাম।সেখানে গিয়ে ফুসকা,চটপটি, আইসক্রিম ইত্যাদি ইত্যাদি খাবার খেলাম।

এভাবে পনেরো দিন কেটে গেলো।

আমাদের দুজনের প্রেমটা জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠলো।আমারও মানিব্যাগের টাকা আকাশে বাতাসে উড়তে লাগলো।

কাল সারারাত মৌয়ের সাথে চ্যাটিং করে ফজরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছি।হটাৎ আমার মোবাইলটার ক্রিংক্রিং আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।মোবাইলটা হাতে নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে দেখি মৌয়ের ফোন।ফোনটা রিসিভ করতেই।

--"হ্যালো বাবু?"

--" হ্যাঁ সোনা বলো।"

--"এখনো ঘুম থেকে উঠো নাই?আজকে না আমরা দুজন শপিং করতে যাবো?"

--"অহ শিট।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।শোন বাবু তুমি রেডি হয়ে মোড়ে থেকো।আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে আসছি।"

--ওকে সোনা বাই।তাড়াতাড়ি এসো।

আমি জলদি ঘুম থেকে উঠে।ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে করতে বের হলাম।

মোড়ে গিয়ে মৌকে দেখতেই আমার মনটা মুগ্ধ হয়ে উঠলো।মৌ লাল শাড়ী পড়েছে।লাল শাড়ীতে মৌকে বউ বউ লাগতেছে।আমি মুসকি একটা হাসি দিয়ে মৌকে বললাম, "ওহে আমার মৌ।তুমি কি হবে আমার বউ।"

মৌ শুধু হাসলো কিছু বলল না।

এরপর আমার দুজন একটা রিকশায় করে টাপুরটুপুর গল্প করতে করতে শপিং করতে গেলাম।

মৌ তিন ঘন্টা ধরে শপিং করলো।এদিকে আমি ব্যাগ নিয়ে হাটাহাটি করে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।তাই মৌকে বললাম, "সোনা শপিং তো শেষ চল এবার বাসায় যাই।"

"ধুর কি যে বলো না তুমি।কেবল তো জামা কাপড় কিনলাম।এখনো তো কসমেটিক কেনায় হয় নি।"

কথাটা শুনে আমি কিঞ্চিৎ আঁতকে উঠলাম।এখন পর্যন্ত যা কিনল সব-ই তার নিজের জন্য। আমার জন্য কিছুই কেনে নি।

অথচ এসব কিনতেই ১০০০০ টাকা চলে গেলো। আর মাত্র ৫০০০ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।

টিউশনি করে ১৫০০০ টাকা জমিয়ে ছিলাম একটা ভালো মোবাইল নেওয়ার জন্য।কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না।এটা ভেবে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

এদিকে মৌ জামা কাপড় কেনা শেষে এক কসমেটিকের দোকানে গিয়ে,মাসসকারা, পারফিউম,হাইলাইটার,প্রাইমার,ফেসপাউডার,লিপস্টিক,কন্সিলার, ব্লাশঅন, আইশ্যাডো ইত্যাদি ইত্যাদি কিনলো।

এবার আমি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে মৌকে বললাম, "এখন খুশি তো?"

সে মুখভার করে বলল," বাবু শপিং করতে করতে খুব খুধা পেয়েছে চলনা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খাই।"

আমি এবার বিষম খেয়ে তাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।মৌ নিজেই তার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো।ওয়েটার নানা পদের খাবার দিলো।দুজনে পেট ভরে খেলাম।

তারপর একটা রিকশা নিয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলাম।

আমার বাসার সামনে এসে আমি রিকশা থেকে নেমে মৌকে বললাম, "আমি রিকশা ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি।তুমি বাসায় পৌঁছে একটা ফোন দিও কেমন।"

সে একটা মুচকি হেসে আমার হাতে পূর্বের মত চিরকুট গুঁজে দিয়ে বলল, "ঠিক আছে বাবু।আর হ্যাঁ চিরকুটটা বাসায় গিয়ে খুলিয়ো। বাই টাটা।"

আমি রিকশার ভাড়া দিয়ে মৌকে বিদায় জানিয়ে বাসায় আসলাম।এসে চিরকুটটা খুলে পড়তেই আমি থ'বনে গেলাম।আমি হাসবো নাকি কাঁদবো কিছুই বুঝতেছি না।

মৌ চিরকুটে লিখেছে,

"তুমি কি সবসময় হাঁদারামই থাকবা? কখনও চালাক চতুর হবে না? তুমি ভাবলে কেমন করে? আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়ে তোমার মতো একটা হাঁদারামের সাথে প্রেম করবে? এতদিন ধরে তোমার সাথে প্রেম করেছি।তোমার টাকায় রেস্টুরেন্টে খেয়েছি।আজও তোমার টাকা নষ্ট করে শপিং করলাম।এসবই ছিলো নাটকীয় অভিনয়। তোমার মনে আছে তুমি একদিন আমার সিরিয়াস পোস্টে হা হা দিয়েছিলে।এতদিন ধরে তার প্রতিশোধ নিলাম।হা হা। ভালো থেকো হাঁদারাম।বাই।

সমাপ্তি

লেখা:- মোঃ নয়ন ইসলাম।

7
$ 0.00
Avatar for Joya1998
3 years ago

Comments

Very nice article....plz like comment subscribe back korben

$ 0.00
3 years ago

Vlo cilo

$ 0.00
3 years ago

Hmmmmm

$ 0.00
3 years ago